নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হতাশাগ্রস্ত মানুষের কদর্যতাই একমাত্র অস্ত্র।

ইসিয়াক

যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিকথাঃ আমার প্রথম গল্পের বই পড়া

১৩ ই মে, ২০২৩ সকাল ১১:৫৭



আমার ছেলেবেলার বন্ধুদের মধ্যে চঞ্চল ছিল আমার খুব কাছের একজন।ওর সাথে ই আমার বেশির ভাগ ওঠা বসা,শুধু ওঠাবসা নয়, খেলাধূলা, মারামারি, দুষ্টুমি সবই চলতো সমানতালে। ওর সব ভালো ছিল শুধু একটাই দোষ ছিল, সেটা হলো ওর হিংসুটে মনোভাব। ভীষণ হিংসুটে ছিল ও। আমার সাথে অবশ্য সবসময় হিংসা না করলেও,কখনও কখনও করতো বৈকি।

সেদিন কি একটা উৎসবের জন্য স্কুল ছুটি ছিল। আমি পড়াশোনা শেষ করে সকাল দশটার দিকে গেলাম চঞ্চলদের বাসায়, উদ্দেশ্য ওর সাথে ক্যারাম খেলবো।
আমাকে উঠানে দেখেই চঞ্চলের মা খালাম্মা ইশারায় ডাকলেন,
আমি ভাবলাম কিছু খেতে দিবেন হয়তো তাই ডাকছেন।বেশ খুশি মনে এগোলাম। খালাম্মার রান্নার হাত দারুণ ছিল আর তার থেকে মাঝে মাঝে আমার জন্যও বরাদ্দ হতো। তবে আজ সেসব দিকে না গিয়ে বেশ কাটা কাটা স্বরে বললেন
- ও এখন বাইরে যাবে না অপু।পারসোনাল কাজে ব্যস্ত আছে ।ওকে তুমি এখন বিরক্ত করো না। তারচেয়ে ভালো হয় বরং ওবেলায় এসো। এখন বাড়ি যাও।
আমি খালাম্মার কথা আমলে না নিয়ে কৌতুহলঃবশত চঞ্চলের ঘরে উঁকি দিলাম। পড়াশোনার চাপ নেই আপাতত তাহলে কি এমন রাজকার্য করছে যে খেলতে পারবে না সে।জানালা দিয়ে তাকাতে ই দেখি চঞ্চলের হাতে একটা গল্পের বই। ও সেই বইটা পড়ছে আর খিলখিল করে হাসছে । কি পড়ছে কে জানে? আমি চুপিচুপি ওর ঘরে ঢুকলাম।
এই কিছু দিন আগে ও রিডিং পড়তে পারতো না,এখন বেশ উন্নতি করছে।তখন খালাম্মা আমাকে প্রায় বলতেন
- শোন অপূর্ব তুমি রোজ সময় করে আমাদের বাসায় আসবে? আসবে কিন্তু।
- কেন খালাম্মা?
- তুমি তো ভালো রিডিং পড়ো চঞ্চলকে একটি রিডিং পড়তে সাহায্য করবে।তুমি না ওর বন্ধু।
- জ্বী।
- তুমি দেখিয়ে দিলে ও রিডিং পড়া তাড়াতাড়ি শিখতে পারবে ।
তো সেই দিন থেকে চঞ্চলদের বাসায় আমার অগাধ যাতায়াত শুরু হলো।
হিসাব করলে আমিই চঞ্চলের গুরু মশাই । তো সেই গুরু মশাইয়ের এমন অমর্যাদা!মনে পড়ে গেল সেই বিখ্যাত প্রবাদ বাক্য "কাজের বেলায় কাজী কাজ ফুরালে পাঁজী "।
স্বাভাবিক ভাবে ই খালাম্মার এমন ব্যবহারে আমার আঁতে ঘা লাগলো।
এদিকে খালাম্মার কথা অমান্য করে চঞ্চলের রুমে ঢুকতেই চঞ্চল বইটাকে লুকাতে চাইলো তখন আমার জেদ আরও বেশি চড়ে গেল।
আমি বললাম,
-দেখ চঞ্চল আজকাল তোর দেখি খুব দেমাগ হয়েছে।হঠাৎ এমন বাক্যবানে সে বেশ হকচকিয়ে গেল। আমিও বুঝলাম বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তাই গলা নামিয়ে মধুর স্বরে জানতে চাইলাম
- কি বই পড়ছিস?
কিন্তু চঞ্চল আমাকে পাত্তা না দিয়ে বরং বেশ বিরক্ত হয়ে তাকালো। আমি সে সব উপেক্ষা করে বইয়ের দিকে হাত বাড়ালাম।
-দেখি দেখি কি এমন ঘোড়ার মাথা বই যা পড়লে শুধু হাসি পায়। দেখি তো....
আমি হাত বাড়িয়ে বই নিতে যেতেই চঞ্চল তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো
- মা অপু আমাকে মারছে।
সাথে সাথে খালাম্মা বলে উঠলো,
অপু তোমাকে না বললাম ওকে বিরক্ত করা যাবে না কেন ওকে বিরক্ত করছো। এখন তুমি যাও তো যাও। পরে এসো।
ভীষণ অপমানিত বোধ করলাম। তবে মনে মনে ঠিক করলাম আমাকে জানতেই হবে ওই বইতে কি আছে যা পড়লে হাসি আর থামানো যায় না।
কথায় আছে সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল একটু বাঁকাতেই হয়।
আমি বিকালে আবার গেলাম ওদের বাসায়।গিয়ে দেখি দরজা খোলাই আছে। চঞ্চল বিছানায় ঘুমোচ্ছে। আমি যখনকার কথা বলছি তখন ঢাকাতে আমাদের এলাকা অমন ই ছিল।চোরের তেমন উপদ্রব ছিল না বললেই চলে।
যাহোক ঘরে ঢুকে দেখি চঞ্চলের মাথার কাছে সেই বইটা। বইয়ের নামঃ বাছাই করা হাসির গল্প সংকলন।
আমি সুযোগ মত আস্তে করে বইটা নিজের আয়ত্বে নিলাম।সুকৌশলে ঝটপট সোয়েটারের নীচে লুকিয়ে ফেললাম।তারপর একছুটে বাসায় এসে গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম আর হো হো করে হাঁসতে লাগলাম।সত্যি বেশ মজার ছিল বইটি। আর গল্পের বই পড়া এত মজার সেটাও জানা ছিল না এর আগে। সর্বোপরি নতুন একটা দিকও সহসা উন্মোচিত হলো আমার জীবনে।
পরদিন দেখি চঞ্চল মনমরা হয়ে খেলতে এসেছে।আমি তো জানি ওর সমস্যাটা কোথায়। কিন্তু এমন স্বাভাবিক ব্যবহার করলাম যেন কিছু ই জানি না। ওকে স্বান্তনাও দিলাম। চোরের গুষ্টির শাপ শাপান্তর করতেও কম করলাম না।পরে অবশ্য কৌশলে বইটা ওর ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম ঠিক ই। সেও আরেক মজার ঘটনা। আজ থাক অন্য দিন করা যাবে আজ এ পর্যন্ত ই...

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯

শায়মা বলেছেন: যতগুলি স্মৃতিকথা পড়লাম এটা সবার মাঝে মজার হয়েছে ভাইয়া।

এক্সেলেন্টো!!!

১০০ তে ১১০ দিলাম।


লেখার পুরোটা সময় মনযোগে ছিলাম ফার্স্ট টু লাস্ট।


লেখকের কৃতিত্বে পাঠকের মনোযোগ আটকে থেকেছে। :)

১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ৯:৫৯

ইসিয়াক বলেছেন:





অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।
ভালো থাকুন সবসময়।
শুভেচ্ছা রইলো।

২| ১৩ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:১০

শায়মা বলেছেন: প্রথম বই পড়া বলতে আমার প্রথমেই মনে পড়ে গেলো ডিজনীর ফেইরী টেলসের যেই বইটা সেই বইতে আমার আসল নিকনেমটা আছে।

সেই নেমটাই আমি পড়তে পারতাম তাই একদিন অনেকগুলো গল্পের বই এর মাঝে সেই নেমটা খুঁজে পেয়ে শুরু হলো আমার ম্যারাতন বই পড়া শুরু থেকে আজ পর্যন্তের ইতিহাস।

১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:০৩

ইসিয়াক বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারণ। আশা করি ব্লগে খুব শীঘ্র ই আপনার ইয়া লম্বা স্মৃতি কথা পড়তে পারবো।
আবারও শুভেচ্ছা।
ভালো থাকুন সব সময়।

৩| ১৩ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৪:০২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বই চুরি করে বা ধার করে পড়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। মার্ক টোয়েন এই ভাবে বই চুরি করে পড়তেন। কিন্তু বইয়ের শেলফ তো আর চুরি করে আনা যায় না তাই বইগুলি রুমের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতেন।

আমার জন্য প্রথম কেনা বই হোল বন্দে আলী মিয়ার একটা রূপ কথার গল্পের বই। এছাড়া একটা পুরানো ঠাকুর মার ঝুলি বাসাতে আগেই ছিল। ক্লাস ওয়ানে এগুলি পড়ি। না বুঝলে আমার মা সাহায্য করতেন। আর পুরানো কিছু রাশিয়ার রূপকথার বই বাসাতে আগে থেকেই ছিল।

১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:০৫

ইসিয়াক বলেছেন: আমিও ছোটবেলায় প্রচুর রূপকথার বই পড়েছি। আহা সোনালি সে সময়। আর ফিরবে না।
পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।
শুভকামনা রইলো।

৪| ১৩ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৫:০২

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

মানুষের হাসিতে অনেক কিছু ধরা পড়ে। আপনার হাসি সুন্দর না।

১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:০৬

ইসিয়াক বলেছেন:






কি করবো সুন্দর করে হাসতে পারি না যে। এটা আমার ব্যর্থতা বলতে পারেন ।
ভালো থাকুন।

৫| ১৩ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৫

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: চঞ্চলের হাসির গল্পের বই লুকিয়ে বাসায় গিয়ে মজা করে পড়েছেন আর আমরা সেদিনের কাহিনী পড়ে মজা পেলাম। অনেক শুভেচ্ছা প্রিয় ইসিয়াক ভাইকে।

১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:০৮

ইসিয়াক বলেছেন: আপনার প্রতিও অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
ভালো থাকুন প্রিয় ব্লগার।
শুভেচ্ছা
আপনার পোস্ট চাই.....

৬| ১৩ ই মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৫

শাওন আহমাদ বলেছেন: আমরা বই ফিরিয়ে দেবার গল্পটাও শুনতে চাই। ভালো লাগলো পড়ে, অন্যরকম স্মৃতিচারণ। আপনার জন্য শুভ কামনা।

১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:০৯

ইসিয়াক বলেছেন:





লিখতে চাই অনেক কিছুই। লিখবার জন্য ই ব্লগে আসা।
সময় সুযোগ মত নিশ্চয় লিখবো। পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা রইলো।
শুভেচ্ছা সতত।

৭| ১৩ ই মে, ২০২৩ রাত ৯:৫৪

নাহল তরকারি বলেছেন: সুন্দর

১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:১০

ইসিয়াক বলেছেন:







ধন্যবাদ প্রিয় ইমরোজ ভাইয়া।শুভেচ্ছা।

৮| ১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ৮:০৭

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: বই চুরি করে কেউ কোনদিন চোর হয় না, সুন্দর লেখা।

১৫ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:৪৩

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার।শুভেচ্ছা রইলো।
ভালো থাকুন সব সময়।

৯| ২৩ শে মে, ২০২৩ রাত ১২:০৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এত সংক্ষেপে সুন্দর করে প্রথম গল্পের বই পড়ার স্মৃতি প্রথম পড়লাম মনে হয়। আরও বোঝা গেল আপনি সহজে হাল ছাড়ার পাত্র না।

২৩ শে মে, ২০২৩ সকাল ৭:০৫

ইসিয়াক বলেছেন: হা হা হা... আমি কিন্তু ভীষণ অলস প্রকৃতির মানুষ।
চমৎকার মন্তব্যে ভালো লাগা জানবেন।
শুভেচ্ছা রইলো।

১০| ১৩ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: যদিও আমার স্মরণশক্তি মোটামুটি ভালোই বলা যায়, আজ এতদিন পরে আর মোটেও মনে পড়ছে না, আমার পড়া প্রথম বইটি কী ছিল!
বইটি কিভাবে ফেরত দিয়েছিলেন, সে গল্পটি লিখেছিলেন কি? লিখে থাকলে লিঙ্ক উল্লেখ করুন।

১৭ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৮

ইসিয়াক বলেছেন: এত পুরানো পোস্টে আপনার উপস্থিতি ভালো লাগলো।
না আলসেমিতে পরের অংশ আর লেখা হয়নি। লিখলে আপনাকে অবশ্যই জানাবো প্রিয় ব্লগার।
ইদের শুভেচ্ছা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.