নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একদা এসেছিলাম তোমাদের সান্নিধ্যে। ভালো মন্দ মিশিয়ে কেটেছে বেলা। বিদায় বেলায় শুধু এটাই জানিয়ে যাওয়া বড় ব্যথা জাগে মনে পেলে অবহেলা।

ইসিয়াক

আমার লেখা কবিতা আপনার পছন্দ হলে হোয়াটসঅ্যাপ এই চ্যানেলটি ফলো করুন প্লিজ Follow the রফিকুল ইসলাম এর কবিতা সমগ্র। channel on WhatsApp: https://whatsapp.com/channel/0029VbBPuTzBA1epLIRBZX1x

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ গুজব

৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১২:২৯

যশোর শহরের  কুখ্যাত মাফিয়া ভূমিদস্যু শাহীন চাকলাদারের ফাইভস্টার হোটেলে যখন আরিফ মোটামুটি মানের একটা কাজ পেল ।তখন অর্পার মত আনন্দিত  আর কেউ  হয়নি। যাই হোক না কেন, সরকারি চাকরির জন্য  অনেক  চেষ্টাই তো৷ করা হলো।
সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও যখন  ভাগ্যের শিঁকে  ছিড়লোই না তখন বেসরকারী  চাকরি মন্দের ভালো।
দুজনেরই বয়স বাড়ছিল।অর্পা ছোট বোনের কারণে   অর্পার বাড়ির দিক থেকে চাপও বাড়ছিল।
যাহোক চাকরি যখন জুটলো তখন চারহাত এক হতে দেরি হলো না ।মোটামুটি ভালোই কাটছিলো দিনগুলো।যদিও করোনা পরবর্তীতে দেশের পরিস্থিতি এই দম্পতিকে বেশ উদ্বিগ্ন করে তুলছিল।দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি, অনিয়ম দূর্নিতীর লাগামহীনতায় সাধারণ মানুষের জীবন মানের সূচক  ক্রমশ নিচে নামছিল। আরিফ-অর্পার চারজনের সংসার সাথে আরিফের  বৃদ্ধা মা।নানাবিধ খরচা বাড়তে বাড়তে সংসার আর চলছিল না সে রকমভাবে।
দম বন্ধ করা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল ক্রমশ। ধার দেনা বাড়ছিল। সেই সঙ্গে বাচ্চারা বেড়ে ওঠাতে নানাবিধ  চাপ বাড়ছিল।
এর মধ্যে পরিচিত  একজন ফ্রী ল্যান্সারের পরামর্শে ফেসবুকে একটা পেজ খুলে থ্রি পিস এর ব্যবসা শুরু করলো অর্পা।
চলে না চলে না করেও চলছিল এভাবেই। দিন বদলের পরিক্রমায়  শুরু হলো কোটা বিরোধী আন্দোলন। চাকরির সবক্ষেত্রেই বঞ্চিতরা বোঝে বঞ্চনার কি জ্বালা। সংগত কারণে তারা দুজনই সমর্থন দিয়েছিল বৈষম্য বিরোধী এই আন্দোলনে।হত্যা রক্ত কার্ফু সহিংসতা আন্দোলন.. অবশেষে অগাস্টের পাঁচ তারিখ এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ।হাসিনার পলায়নে   কাক্ষিত মুক্তি স্বাদ মিলল যেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো জাতি। দম বন্ধ করা পরিস্থিতির থেকে হঠাৎ মুক্তি।
আহ! স্বাধীনতা।
হাসিনার বিদায়ে অনেকের মত অর্পাও উল্লসিত হয়ে "আলহামদুলিল্লাহ" বলেছিল।
সেই দুপুরে "পালাইছে পালাইছে হাসিনা পালাইছে " শ্লোগান মুখরিত   মিছিলের আওয়াজে  সেও  ব্যলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে সদ্য প্রাপ্ত  মুক্তির মিছিলকে মৌন সমর্থন দিচ্ছিল।
কিন্তু হায়!
কে জানতো ভাগ্যের নির্মম ফেরে এই উন্মত্ত  মানুষগুলো তার স্বামীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারবে।
সেদিন দুপুরে যথারীতি  আরিফের ডিউটি ছিল জাবির ইন্টারন্যাশনাল  এর সাত তলায়।কাজ পাগল মানুষ নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত ছিল।
সদ্য পাওয়া স্বাধীনতা স্বাদ ভাগ করে নিতে এক ফাঁকে ফোনালাপে একে অন্যকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। কে জানতো সেটাই ছিল আরিফ আর অর্পার শেষ কথোপকথন।
ঠিক তার দশ মিনিটের মাথায় শাহীনের ফাইভস্টার হোটেল "জাবির ইন্টারন্যাশনাল" এর স্বরণকালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। অর্পার সাজানো বাগান সেই আগুনের আঁচে মুহুর্তেই  তছনছ হয়ে গেলো। জলজ্যান্ত মানুষটা ভোজবাজির মতই উবে গেল। এটা কি করে সম্ভব?
ফিরলো না তো৷ আর ফিরলোই না।
এমন কি হয়?
এত বড় অগ্নিকান্ড কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার কোন উদ্ধার তৎপরতা ছিল না সেখানে। মানুষ সবাই নির্লিপ্ত। চেয়ে চেয়ে দেখছেন।কোন বিকার নেই।একটার পর একটা। কত ঘটনা চারপাশে। ওয়েব সিরিজ ও হার মানবে এমন পরিস্থিতি চারপাশটায়।সঠিক ভাবে বলতে গেলে সমগ্র দেশে একই চিত্র ।
উদ্ধার কাজে একটা হেলিকপ্টার নাম কা ওয়াস্তে এসে ছাদ থেকে কয়েকজনকে নিয়ে চলেও গিয়েছিল দ্রুতই ।চোখের সামনে মানুষ পুড়ে গেল।  কারো কোথাও কোন দায়বদ্ধতা নেই যেন। পরে ফায়ার বিগ্রেড এসে আগুন নেভাতে শুরু হলো নির্বিচারে লুটপাট।
না মেলেনি আবিরের কোন খবর পরবর্তী দুদিনেও।অর্পা শুনেছে আগুন লাগার প্রাথমিক অবস্থায়  ফায়ার ব্রিগেড এর গাড়ি আসতে দেওয়া হয়নি জাবির ইন্টারন্যাশনাল এ আগুন নেভাতে। গান পাউডার ব্যবহারের কারণে আগুন ছড়িয়েছিল খুব দ্রুত। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্তের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অজস্র মানুষও গিয়েছিল জাবিরে। ফেরেনি কেউ আর। আকাশে বাতাসে বোবা হাহাকার শুরু। একটাই প্রশ্ন। নিরীহ স্টাফ আর নানা কাজে আসা লোকগুলোর কি এমন দোষ ছিল? ওদের বের করে তারপর না হয় আগুন  দিলে দিতো।  এতগুলো প্রাণ অন্তত  বেঁচে থাকতো । সবচেয়ে আশ্চর্য  পুলিশ আর্মি বিজিবি কেউ আসেনি সেদিনের সেই বিপর্যয়ের মুহুর্তে   উদ্ধার কাজে।
লোকজন বলছিল কোন মিডিয়াতে তেমনভাবে এ সংক্রান্ত খবরও প্রকাশিত হয়নি।মৃতের সংখ্যা নিয়েও রয়েছে নানা ধন্ধ। আসলে পরবর্তী তিনদিনের অরাজকতায় কে কার খবর রেখেছে তেমনভাবে?
কিন্তু জীবন বয়ে চলে জীবনের নিয়মে।
অর্পা ছেলেমেয়ের কথা ভেবে নিজেকে সামলেছিল খুব  দ্রুত। 
সোস্যাল মিডিয়ায় ফিরে এলো জীবিকার তাগিদেই ।মন হালকা করতেই জানালো তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার আদ্যপান্ত।
কিন্তু কিছু সময় বাদে  কমেন্ট বক্স চেক করে সে স্তম্ভিত হয়ে গেল।কোথায় সহানুভূতি? 
কটাক্ষের তীর ছোড়া হলো প্রথমে" এ ক'দিন কোথায় ছিলেন? "
কমেন্ট বক্সে ভরে গেল নানা ব্যঙ্গ বিদ্রুপে।
কেউ লিখেছে
আপা গুজব ছড়ান কেন? কই কোন মিডিয়ায় তো হোটেলে আগুন দেবার ঘটনা দেখলাম না।
একজন মন্তব্য করলো। আপনার স্বামীর নাম তো কোথায় নেই। কেন মিথ্যা ছড়ান। ও বুঝেছি আপনি ফ্যাসিবাদের দালাল।
অর্পা জেনেছে   নিউজটা জাতীয়ভাবো ফলোআপ হয়নি এদিকে অদৃশ্য কোন কারণে স্থানীয় পত্রিকায়ও দায়সারা ভাবে খবর ছেপেছে।দেশ তো মুক্ত তাহলে আবার কোন জুজুর ভয়! কে জানে?
অর্পা চোখ মুছতে মুছতে কমেন্ট পড়ছিল।
জান্নাতুল নামে একজন লিখেছে
এত বড় মিথ্যা কথা মানুষ কিভাবে লেখে। আজিব! এরা সব স্বাধীনতার শত্রু। দালাল।
আরো কিছু  মন্তব্য এমন ছিল
আপা আড়াই শত লোক কিভাবে মারা যায়।একটা হেটেলে কি এত লোক থাকে? গুজব ছড়ায়েন না আপু।
- আপনার হাসবেন্ডের কোন পুড়ে যাওয়া কোন ছবি আছে? প্লিজ শেয়ার করুন। 
ছবি কোথায় পাবে অর্পা। প্রমান কিভাবে করবে?
গান পাউডার। সিলিন্ডার বিস্ফোরণ।দাউ দাউ আগুন।আগুন পরবর্তী সীমাহীন লুটপাট। সবই তবে মিথ্যা? সব গুজব!?তারপরও..
অর্পা কমেন্টগুলো পড়ছিল আর নিঃশব্দ চোখের পানি ফেলছিল।সেও মনে প্রাণে চায়। পুরো ব্যপারটা গুজব প্রমাণিত  হোক।অনন্ত আরিফের মৃত্যু সংবাদটা গুজব হোক। লোকটা আবার  ফিরে আসুক যে কোন উপায়ে।ছোট ছোট ছেলে মেয়েকে সে আর স্বান্তনা দিয়ে সামলাতে পারছে না। কি বলবে ওদের?  কি বলার আছে?
এত কিছুর পর অর্পার এখনও  ভাবতে গেলে অবাক লাগে।বিশ্বাস ই হয় না কখনও কখনও।  একজন মানুষ মারা গেল অথচ তার দেহের কোন চিহ্ন মাত্র নেই কোনখানে, এটা কি করে সম্ভব।সব ছাই হয়ে গেল নিমেষেই!
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াটুকুও জুটলো না মানুষটার কপালে! এমনই ভাগ্য।
মানুষের আর দোষ কী  এমন মৃত্যুকে লোকে তো গুজব বলবেই।যে মৃত্যুর কোন প্রমান নেই।নেই কোন চিহ্ন !
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:৪৪

কামাল১৮ বলেছেন: দেশি অনেক দিন পর ব্লগে আসলেন।খবর ভালো।

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:৪৯

কামাল১৮ বলেছেন: দুঃখ জনক ঘটনা।এই ভাবে যেখানে সেখানে আগুন দেয়া ঠিক না।অনেক কলকারখানা পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।একেতো মানুষের কাজ নাই আরো বেকার বাড়ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.