নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধরে দিবানি!

আমার অনেক স্বপ্ন...আমি বাস করি স্বপ্নের মাঝে...রঙ্গিন রঙ্গিন সব স্বপ্ন...

অপরাজেয় বিদ্রোহি

ধরে দিবানি!

অপরাজেয় বিদ্রোহি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন থেকে নেয়া (একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প)

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩০

নিকোটিনের বিষাক্ত ধোঁয়া গিলছে ছেলেটি....কতই বা বয়স হবে তার ১৯-২০,পরনে রংচটা জিন্স আর কম দামি টি-শার্ট... ঘন্টার পর ঘন্টা বসে রয়েছে ছোট্ট চায়ের দোকানটিতে।মনের কোনে একটিই আশা,একবারের জন্য হলেও দেখা পাবে তার..!হয়তো সে দেখা পাবে হয়তোবা না পাবার হতাশাকে নিকোটিনের বিষাক্ত ধোঁয়ার সঙ্গেই উড়িয়ে দিবে।



এইতো বারান্দার কার্নিশে দেখা গেলো মেয়েটিকে তবে তাকে দেখেই আবার চলে গেলো কাচঘেরা ঘরটিতে। মেয়েটির নাম মীম। অনেক আগে থেকেই ছেলেটির অনেক ভাল বন্ধু তবে কাল থেকে এই বন্ধুত্বের শেষরেখা বোধহয় টানা হয়ে গেছে। ঘটনা খুব বড় কিছু না, আবার তুচ্ছ করার মত কোনো বিষয়ও নয়। কাল বিকেলে ক্ল্যাশ শেষে কলেজ থেকে ফেরার পথে সোহান মীমকে কিছু কথা বলেছিলো। ও হ্যাঁ! ছেলেটির নাম সোহান! আপনাদের সুবিধার্থে নিচে ওদের কথোপকোথনের অংশটুকু তুলে দিচ্ছি,



-মীম তোমাকে একটা কথা বলবো,তুমি মাইন্ড করবেনা তো?



-আররে! কি হয়েছে তোমার! এভাবে এত গম্ভীরভাবে কথা বলতেসো কেন?!!! মনে হচ্ছে আমাকে ভয় পাচ্ছো!! কাহিনি কি তাড়াতাড়ি বলে ফেলো।



-নাহ ভয় পাবো কেন? ওহ আচ্ছা! কাল সেকেন্ড পিরিউডে যেনো কি ক্ল্যাশ??



-কাল শুক্রবার! ক্ল্যাশ থাকবে কেন?! আচ্ছা তোমার হয়েছেটা কি শুনি!! এমন তোতলাচ্ছো কেন কথা বলতে গিয়ে!!?



-মীম, আমি তোমাকে ভালবাসি!





এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে নিজেই যেন কিছুটা অবাক হয়ে গেলো সোহান। সোহানের এমন প্রস্তাবে চুপ হয়ে গেলো মীম, কিছু না বলেই একা একা চলে গেলো বাসায়।



ঐ তো মীমদের বাসার পিচ্ছি কাজের ছেলেটাকে দেখা যাচ্ছে,এদিকেই তো আসছে মনে হয়! একটা চিরকুট ওর হাতে দিয়ে বললো,

-ভাইজান,আফামনি এইডা আপনারে দিসে,আর আফনারে কইসে সিগারেটটা হাত থাইকা ফালাই দিতে।

-আচ্ছা তুমি যাও...



চিরকুটে লেখাঃ" আজ বিকেল ৫টায় লেকের পাড়ে আসবা, তোমার ঐ নীল শার্টটা পরে আসবা। সকাল থেকেই দেখি এখানে বসে রয়েছো,বাসায় যাও!”



মীম কথা রেখেছিলো, বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি পরে এসেছিলো সে। অস্তমিত সুর্যের আভায় রঙ্গিন সোনালি সন্ধায় লেকের পাড়ে সবুজ ঘাসের উপর বসে সোহানের বুকে মাথা রেখে কান্নাভেজা কন্ঠে শুধু বলেছিলো,



-আমাকে ছেড়ে চলে যাবা না তো কোনো দিন?!!



-জীবনেও না!



গভীর অন্ধকার,কুয়াশা ঘেরা চারদিক। গায়ে চাদর চাপিয়ে মেঠোপথ ধরে হাঁটছি,বাতাসে নিকোটিনের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে দিতে দিতে ব্রিজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আচমকা পিছন দিক থেকে ভরাট কন্ঠে কে যেন ডাক দিল।

-বাবা,তোর খুব কস্ট হচ্ছে আমি জানি। কি করব বল,আমিও তো অনেক দিন ধরে একা থাকতে থাকতে ক্লান্ত।বাবা,আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিস।



পিছনে ফিরলাম,কোথাও কেউ নেই!তবে কন্ঠটা অপরিচিত লাগছে না,কন্ঠটা আর কারো নয় আমার বাবার!



অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম,এটাকে কোনো ভাবেই দুঃস্বপ্ন বলা যাবে না। বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা হাতে নিলাম,রাত ৩টার কিছু উপরে বাজে। সিগারেট ধরালাম একটা,মাথাটা বড্ড বেশি ব্যাথা করছে আজ। ৫-৬ মিনিট পরেই কাশির শব্দে বোধশক্তি ফিরে আসল।



-এত রাতে কেউ সিগারেট ধরায় মিয়া! মানুষ এত ননসেন্স হয় কিভাবে!



রফিক সাহেব,আমার মেসমেট,সিগারেটের ধোঁয়া উনার একদমই সহ্য হয় না। মানুষ খারাপ না তবে কেন জানি মনে হয় আমাকে দেখতেই পারে না! কি আর করা! সিগারেটে শেষটানটা দিয়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়ালাম। মায়ের কথা খুব মনে পরছে।



আমার মা, মারা গেছেন ৫দিন হল। কত সহজেই বলে ফেললাম তাই না? বলার সময় গল্প-উপন্যাসের নায়কদের মত আমার চিবুক বেয়ে অশ্রুর ধারা নেমে আসেনি দেখে অবাক হয়েছেন-তাই না? মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই আমি আবেগ অনুভূতিহীন কয়েকগুচ্ছ মাংশপিন্ডে পরিনত হয়েছি যেনো।গত কয়েকদিন ধরে গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠি,এরপর সারা রাত নির্ঘুম বসে থাকি।মেডিকেল সায়েন্সে এটার একটা নাম আছে “ইনসোমনিয়া”। হুমায়ূন আহমেদের হিমু হলে হয়তো ঘরে বসে না থেকে গভীর রাতে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতে বের হতাম, কিন্তু আমি যে হিমু না। জীবনের কোনো পর্যায়েই হিমু হবার কোনো শখ আমার জাগেনি। কেন জাগে নি? কারণ, আমার বাবার যে হিমুর বাবার মত মহাপুরুষ বানানোর কোনো স্কুল ছিল না! ওহ হ্যাঁ! আমার বাবাও আর বেঁচে নেই। উনি মারা গেছেন অনেক বছর হয়ে গেলো। একদিন হঠাৎ স্কুল থেকে এসে আমাকে বললেন,



-বাবা এক গ্লাস পানি নিয়ে আসতো। শরীরটা খুব খারাপ লাগছে...



আমি পানি এনে দেখি বাবা তার প্রিয় কাঠের চেয়ারটায় চুপচাপ বসে রয়েছেন। বারবার ডাকলাম কিন্তু কেন যেন কোনো সাড়া দিলেন না আমার ডাকে। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেন বাবা,মা তখন ছিল পাশের গ্রামে এক আত্বীয়ের বাড়িতে। বাবার মৃতদেহ দেখে চিৎকার করার পরিবর্তে বধিরের মত অস্ফুটে গোঙ্গিয়ে উঠলাম। বাবার মৃত্যুর পরই পারিবারিক ভিটা ছেড়ে আমরা মফস্বল শহরে আসি,আমি ভর্তি হই শহরে অন্যতম সেরা সরকারী স্কুলটিতেই। পরিবারে বাবার পেনশনের কিছু টাকা ছাড়া তেমন কোনো উপার্জন নেই তারপরও মাসের প্রথম দিকেই কিভাবে যেন টাকা পেয়ে যেতাম ঠিকই!মা ছোট পরিসরে টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করতেন,এতেই টেনেটুনে সংসার চলতো আমাদের। শুধুমাত্র মায়ের প্রচেষ্টায় ১বছর হল আমি পাশ করে বের হয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেই থেকে আমার ঠিকানা খিলগাওয়ের এই নোংরা মেসে। এই মেসে পানি থাকলে গ্যাস থাকে না, গ্যাস থাকলে দেখা যাবে ক্যারেন্ট নেই! তারপরও বেশ ভালই আছি কারণ মেসের মানুষ গুলোর মধ্যে শহুরে মানুষের চিরিচেনা কৃতিমতাটুকু নেই। এই ধরুন রফিক সাহেবের কথাই,এই লোকটা আমাকে দুচোখে দেখতে পারে না বললেই চলে তারপরও সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে আমার ৮হাজার টাকা মাইনের একটা চাকরির ব্যাবস্থা উনিই করে দিয়েছেন! কি দরকার ছিলো আমার জন্য উনার এত কষ্ট করার! এই জগত সংসারে এখন আপন বলতে এই মেসের মানুষগুলোই। আরেকজন ছিলো,যে কিনা পারতো আমার সমস্ত দু;খ-সুখের ভাগিদার হতে-মীম! কিন্তু আজ তা হয়তো সম্ভব নয়,আবার হয়তোবা সম্ভব! কারণ,কাল মীমের গায়ে হলুদ! মা মারা যাবার অনেক আগে থেকেই মীম বিয়ের ব্যাপারে আমাকে তাগাদা দিচ্ছিলো,



-বাসা থেকে আব্বু-আম্মু বিয়ে নিয়ে অনেক প্রেশার দিচ্ছে। আমি বাসায় তোমার ব্যাপারে বলেছি...তুমি গিয়ে একবার আব্বুর সাথে দেখা করুনা প্লিজ!



-৮হাজার টাকা বেতনের চাকরী করা ছেলের সাথে কি তোমার আব্বু তোমার বিয়ে দেবে! এরচেয়ে বরং কয়েক দিন উনাদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখো,আমি ভালো মাইনের একটা চাকুরী খুজছি...এরপর আমাদের বিয়া ঠেকায় কে!



-আমি এত কিছু বুঝি না,তুমি কাল যাবা এটাই শেষকথা! নয়তো ওই কানাডার সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গেই আমার বিয়ে হবে!



-কি! আমার বউকে বিয়ে করবে! মে কাভি নেহি হো দেয়োঙ্গা! আমি কালই শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে দেখা করে বলবো,”আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই,আপনার কোনো আপত্তি আছে?”



-হইছে হইছে! পালোয়ান সাজতে হবে না তোমার! তোমার দৌড় কতদূর পর্যন্ত তা আমার জানা আছে!



মীমের বাবার সাথে আমি দেখা করেছিলাম ঠিকই,কিন্তু যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। একটা বাপমরা সামান্য বেতন পাওয়া ছেলের সঙ্গে উনি উনার মেয়েকে বিয়ে দেবেন-এতটা বোকা উনি নন! তাও যদি আমার বংশমর্যাদা ভালো হত-তাতে এক কথা ছিলো! মীম বলেছিলো পালিয়ে বিয়ে করতে,আমি রাজি হইনি।মায়ের সঙ্গে এটা নিয়ে অনেক কথা হতো। এরমধ্যে মাও চলে গেলো আমাকে ছেড়ে। মা মারা যাবার পরদিনই মীমের ফোণ পাই,ওর বাবা ওর বিয়ে কানাডার ওই পাত্রের সঙ্গেই ঠিক করেছে! এক দিকে মাকে হারিয়ে আমি এমনিতেই দিশেহারা, এর ওপর এমন সংবাদ! আমি মীম কে কিছুই বলতে পারিনি সেদিন, শুধু মুখ ডুকরে কেঁদে উঠেছিলাম। ওপাশ থেকে কাণ্ণা ভেজ়া কণ্ঠে মীম বললো,



-তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকায় আসো!



এর মধ্যেই মীমের গায়ে হলুদ-বিয়ের তারিখ ফিক্সড হয়ে গেলো। আজ গায়ে হলুদের আগেই মীম বাসা ছেড়ে আমার কাছে এসে উঠবে-প্ল্যান এমনটাই।দুপুর ১টায়, টিএসসির মোড়ে থাকবো। কিন্তু আজ রাতটা এত বড় মনে হচ্ছে কেন?!



কোনো রকমে রাতটা পার করলাম। ব্যাগ থেকে মীমের প্রিয় নীল রঙ্গের শার্টটা বের করলাম। শার্টটা গায়ে চাপিয়ে মেস থেকে বের হয়ে রিক্সা নিয়ে শাহবাগ গেলাম। রাস্তার ওপাশের ফুলের দোকান থেকে মীমের প্রিয় একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিতে হবে। রাস্তায় ট্র্যাফিক সিগনাল দিয়েছে,রাস্তা পার হচ্ছি।কিন্তু,একি! সিগনাল অমান্য করে একটা বাস তো দেখি আমাদের দিকেই তেড়ে আসছে! এটা কি মগের মুল্লুক নাকি! সবাই দৌড়াতে শুরু করলাম,কিন্তু পাশের ছোট শিশুটা ঘটনার আকশ্মিকতায় ভয় পেয়ে ঠায় আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে পরলো! আররে এত নির্ঘাত মারা পরবে! দৌড়িয়ে শিশুটাকে কোলে তুলে ছুড়ে ফেলে দিলাম দূরে,বাসের চাকাগুলো চলে গেল আমার এই শরীরের উপর দিয়ে! গড়গড়িয়ে রক্ত পরছে সারা শরীর থেকে,নীল শার্টটা লাল লাগছে কেন? কেউ কি হাসপাতালে নিয়ে যাবে না আমায়? আমি কি তাহলে মারা যাচ্ছি? জ়গতটা বারবার আমাকে কেন আঘাত দেয়? প্রকৃতির সাথে আমার কি এমন এত বিরোধ?



পরদিনের খবরের কাগজের এক কোনে ছোট্ট করে একটি শিরোনামঃ



শাহবাগে ঘাতক বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারালো যুবক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.