নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধরে দিবানি!

আমার অনেক স্বপ্ন...আমি বাস করি স্বপ্নের মাঝে...রঙ্গিন রঙ্গিন সব স্বপ্ন...

অপরাজেয় বিদ্রোহি

ধরে দিবানি!

অপরাজেয় বিদ্রোহি › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ চিঠি, শেষ গল্প

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০৭

রফিক আমার বন্ধু। বেশ ভালো রকমের বন্ধু। আমি বরাবরই অসামাজিক ধরনের মানুষ। ইট-কাঠের খাঁচা ছেড়ে এই শহরের রাস্তায় খুব একটা বের হই না। কোনো কোনো রাতে নিতান্ত অনিচ্ছায় চা খেতে টং দোকানে যাই। এসব টং এর চায়ে নাকি আফিম মেশানো থাকে। নেশা নেশা হয়। যাই মেশানো হোক। এই চা আমার ভালো লাগে। টং দোকানে বসে অকারণে রাস্তায় তাকিয়ে থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দেই আমি। দোকানের পরিচিত মামা বিরক্তি চেপে সিগারেট অফার করে বসে। আবছাভাবে 'না' বলে আমি আমার কাজে মন দেই আবার।



তো এমনই এক রাতে রফিকের সঙ্গে পরিচয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সে। ইংরেজিতে অনার্স করছে। থাকে কলতাবাজারের লবনের গোডাউনের গলিটার শেষ মাথার এক বাড়িতে। যার বাসায় থাকে উনি সম্পর্কে ওর মামা হয়। পরিচয়ের সূত্রপাতটা বেশ মজার।



-ডাক্তারগুলা সব কসাই। বুঝলেন ভাইজান। গেলাম চ্যাম্বারে মামারে নিয়া। এতোগুলা টাকা নিলো আবার ব্যাবহারও এতো বাজে।

-কোন হাসপাতালে গেছিলেন?

-পপুলারে।

-মিডফোর্ড তো কাছেই ছিলো। প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়ার কি দরকার ছিলো।

-সরকারিতে কোনো চিকিৎসা আছে নাকি। ট্রলিতে রোগী মরে পরে থাকে। ডাক্তারদের কোনো খবর নাই। এক একটা খা**র পোলা।



এসব অবস্থায় তর্ক করে লাভ নেই। আমি চুপ করে চা পানে মনোযোগ দিলাম। একটু পর আবার তার কথা বলা শুরু হলো। এবার বিষয় রাজনীতি। সে আবার সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির বিশাল ভক্ত। মার্কস,চে,লেলিনের আদর্শ এই দেশে বাস্তবায়ন করতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে-এ তার দৃঢ় বিশ্বাস। শ্রেণিবৈষম্য নিয়ে কথা বলার সময় দেখলাম অতি উত্তেজনায় তার ঘাড়ের রগ ফুলে উঠেছে।



সেদিনের মতো বিল চুকিয়ে উঠে এলাম। এভাবেই প্রায় প্রতিদিনই তার সঙ্গে দেখা হতো লাগলো। টুকটাক কথা বলি। এক সময় পরিচয় পর্বের পাঠ চুকলো। বেশ ভালো রকমের বন্ধু হয়ে উঠলাম।

কথা প্রসঙ্গে একদিন জানতে পারলাম যে সে একটি মেয়েকে পছন্দ করে। একুশ-বাইশ বছরের একটা ছেলে কোনো মেয়েকে পছন্দ করবে এটা কোনো বড় ঘটনা নয়। তবে, নিম্ন-মধ্যবিত্তঘরের রফিকের সেই ভালোবাসার মানুষ ধনীর দুলালী। একদিন মেয়েটার সঙ্গে আমার দেখাও করিয়ে দিলো। অতি রূপবতী মেয়ে। এসি গাড়িতে চড়া প্রতিটা মেয়েই বোধহয় অন্য রকম এক রূপের অধিকারী। এই রূপ জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই নিয়ে আসে নাকি অত্যধিক আদর যত্নের কারণে গড়ে উঠে তা আমার জানা নেই। এই ধরনের রূপবতীদের দেখলে আমার মনে ভয় হয়। কেন যেন কখনোই এদের আপন মনে হয় না।



মেয়েটার সঙ্গে আমার হালকা কথাবার্তা হলো। আদুরে গলায় রফিকের বদব্যাসের ব্যাপারে অভিযোগ করলো আমার কাছে। এতে অভিমানের চেয়ে মায়াই বেশি উপচে পরছে। রফিকও খুব একটা রাগ করছে না। আমি কিছুটা লজ্জ্বা পেয়ে দূরে সড়ে আসলাম।



এভাবেই সময় কেটে যেতো লাগলো। আষাঢ়ের এক বিকেলে রফিক মুঠোফোনে বললো জরুরী কথা আছে। আমি গেলাম।

-সামিয়ার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা করা লাগবে। সে বলেছে পালিয়ে বিয়ে করবো আমরা। আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা।

- আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়।

সামিয়ার সঙ্গে দেখা করলাম। চোখের নিচে কালি জমে গেছে। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে বোধহয়।

-পালিয়ে বিয়ে করে থাকবে কোথায় তোমরা? এখনো তো রফিক পড়াশোনাই শেষ করেনি। কিছু ভেবেছো?

- আমি বাসা থেকে টাকা নিয়ে আসবো কিছু। আমার নামে ব্যাংকে আলাদা একাউন্ট করা আছে। সেখান থেকে কিছু দিন চলা যাবে।

-ভেবে দেখো। অন্য কোনো রাস্তা কি আছে?

-ভেবে দেখেছি। এটাই শেষ সিদ্ধান্ত। পরশু বিকেলে আমি বাসা ছেড়ে চলে আসছি। আপনি একটা বাসার ব্যাবস্থা করুন। প্লিজ আমাদের একা ফেলে যাবেন না।



আমি আমার সীমিত সামর্থের সবটুক ঢেলে চেষ্টা করলাম। বন্ধুদের কাজে লাগিয়ে বাসাও ম্যানেজ হয়ে গেলো। বিয়ের সব ব্যাবস্থাও তৈরি।



বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। সামিয়া আসে নি। রফিক অস্থিরভাবে পায়চারি করছে। ওর অস্থিরতা আমার মধ্যেও জেঁকে বসেছে। রাত হয়ে এলো। সে আসে নি। খবর নিতে আমি ঠিকানা নিয়ে গেলাম সামিয়াদের বাড়িতে। বিশাল বাড়ি। গেটে দারোয়ান এবং কুকুর। ভিতরে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। কনে সাজে সামিয়া। হেসে হেসে পাশেরজনকে কি যেনো বলছে। আমি তার সামনে এসে দাঁড়ালাম।

-কি অবস্থা ভাইয়া? আপনি এখানে!

-এমন কেন করলে তুমি?

-আমার কিছু করার নেই ভাইয়া। জগতের যে কোনো মেয়েই আমার জায়গায় একই কাজ করতো।



কথা বলছিলাম আস্তে। কেউ শুনতে পায় নি। তবে রফিক বোধহয় শুনেছিলো। কলতাবাজারের টং দোকানে বসেই। আমি ফিরে তার মুখোমুখী হতেই বললো,

'ওর বিয়ে হয়ে গেছে তাই না?'



'রোগীর পালস দ্রুত লস হচ্ছে। এমন রোগী রাখা রিস্কি। মিডফোর্ডে পাঠানোর ব্যাবস্থা করতে হবে। দ্রুত'- বন্ধু নিষাদের কথা আমার কানে ঢুকছেনা। তবুও ট্রলি ঢেলে এম্বুলেনসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

রফিকটা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

'কেন সে এমন করলো?'



আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। আমার বলার কিছু নেই। তবে একটা চিঠি আছে। সামিয়ার দেয়া চিঠি। ওর চোখের সামনে মেলে ধরলেও লাভ নেই। এমন অবস্থায় চোখের ঝাপসা দৃষ্টি দিয়ে সে কিছুই দেখবেনা।তাও চিঠিটা তার হাতে দিলাম। ফ্যালফ্যাল করে সে চিঠির পানে চেয়ে ওপারে পাড়ি জমালো বোকাটা। পাশ থেকে নিষাদের কন্ঠ শুনতে পেলাম- ইন্নালিল্লাহি...



চিঠিটা আমি পড়িনি। পড়তে ইচ্ছেও করেনি। ড্রয়ারের এক কোনায় পরে ছিলো অনেক দিন। চিঠির প্রেরককে ফিরিয়ে দেবার মতো পরিস্থিতিও তখন নেই।



পরিস্থিতি তৈরি হলো অনেকদিন পর। সাদা রং এর গাড়ি থেকে নামতে দেখলাম সামিয়াকে। সঙ্গে বোধহয় বর। প্রেগনেনসি টেস্ট করাতে নাকি এদিকে আসা। সাধ্যের মধ্যে খাতির-যত্ন করার চেষ্টা করলাম। চলে যাওয়ার সময় সামিয়াকে আড়ালে ডেকে বললাম, 'আচ্ছা,রফিককে কি তোমার মনে পরে?'

'কোনো কাপুরুষকে আমার মনে পরে না। ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে না পারলে বিষ খেয়ে মরতে হবে-এটা কোনো কথা নয়।'



সামিয়ার কথায় যুক্তি আছে। তবে আমার দু' চোখ সে যুক্তি মানলো না। ঝরঝর করে পানি পরতে লাগলো। হাতের ভাজে লুকিয়ে রাখা চিঠিটাও বোধহয় কাঁদছে। বোকা রফিকটা সে কান্না না দেখলেই হয়!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:০০

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লেগেছে ।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৫১

অপরাজেয় বিদ্রোহি বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.