![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বুড়িগঙ্গা নদী ও ঢাকা শহরের দৃশ্য, ডিকিনসন, ১৮৪৭।
মনে রাখা ভাল, এই ছবিগুলা আঁকা হয়েছিল এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ পট পরিবর্তনের সময়ে, যখন এককালের মহাপরাক্রমশালী মুঘল সাম্রাজ্যের সূর্য প্রায় অস্তাচলে বসেছে। ইংরেজদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে ক্ষমতা হারিয়ে সমগ্র ভারত উপমহাদেশ তখন ধুকছে। মুঘল আমলের দালানকোঠা, মসজিদ, মিনার সবকিছুর ধ্বংসপ্রায় অবস্থা।
এখানকার বেশিরভাগ ছবি এঁকেছেন ব্রিটিশ অফিসার ও সৌখিন চিত্রকর চার্লস ডয়েলি। বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের চাকুরিসূত্রে তিনি ১৭৯৭ থেকে ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতা, ঢাকা, ও পাটনায় অবস্থান করেন। তরুণ বয়সে তার আকা ভারতবর্ষের ছবিগুলো তাকে বিখ্যাত করে তোলে। ১৮০৮ থেকে ১৮১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকার কালেক্টর হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি জলরঙে ঢাকার বেশ কিছু ছবি আকেন। এগুলোর মূল উপজীব্য ছিল মুঘল আমলের ধ্বংসপ্রাপ্ত বিভিন্ন স্থাপনা, জনমানুষের জীবনযাত্রা, ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য। ডয়েলি সাহেব ১৮১৪ সালে প্রকাশ করেন তার প্রথম ছবির ফোলিও এলবাম "এন্টিকুইটিস অফ ঢাকা" নামে। এরপরে ১৮২৭ সালের মধ্যে আরো তিনটি ভলিউম প্রকাশ করেন। ব্রিটিশ আর্মিতে চাকুরিরত সার্জন জেমস এটকিনসন ছবিগুলোর সাথে ঐতিহাসিক পটভূমি ও বর্ণনা যুক্ত করেন। চার্লস ডয়েলি চেয়েছিলেন সর্বমোট ছয়টি ভলিউম প্রকাশ করতে; কিন্তু যতদূর জানা যায় শেষ দুইটি ভলিউম কখনোই আলোর মুখ দেখেনি।
এখানের বাকি তিনটি ছবির দুইটির শিল্পী বিখ্যাত জার্মান-ইংরেজ শিল্পী জোহান যোফানি (১৭৩৩-১৮১০)।
বুড়িগঙ্গার তীরে মসজিদ (১৮১৪), এন্টিকুইটিস অফ ঢাকা, চার্লস ডয়েলি
এই মসজিদটি এতোটাই সুন্দর দেখতে ছিল যে একে ইতালির ভেনিস শহরের বিল্ডিংগুলোর সাথে তুলনা করা হত। ভগ্নপ্রায় দশা সত্ত্বেও এর বিশালতা, সৌন্দর্য, ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য মন্ত্রমুগ্ধ করার মতো।
তাঁতী, চার্লস ডয়েলি, (১৮২৭) ।
তাঁতীর হাতের বুননে ফুটে উঠছে ঢাকার বিখ্যাত মসলিন কাপড়। এই মসলিন তৈরীর জন্যে প্রয়োজন পড়ত এক বিশেষ ধরনের তুলার যা কিনা শুধু এই বাংলাতেই পাওয়া যেত।
Douillac Nulla (ধোলাই খাল) এর দিক থেকে দেখা ঢাকার দৃশ্য, চার্লস ডয়েলি, ১৮২৭
ধোলাই খাল থেকে সোজা পশ্চিমে ঢাকার দৃশ্য। বর্ষার ধোলাইখাল ফুলেফেপে উঠতো এবং প্রায়ই আশেপাশে এলাকা প্লাবিত করে দিত।
ঢাকা শহরের ভিতরের একটি দৃশ্য, চার্লস ডয়েলি, ১৮১৪
ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি জলাধার, যার তিনদিকে ইট দিয়ে ঘেরা। এখানে ঝড়ের সময় ছোট ছোট নৌযান আশ্রয় নিত। সামনে একটি পায়েহাটা ব্রিজ।
মগবাজার রোডের একটি মসজিদ, ঢাকা, চার্লস ডয়েলি, ১৮২৭
বেগম বাজারের কাছাকাছি মগবাজার রোডে তুলনামূলক নতুন একটি মসজিদ। কছেই বুড়িগঙ্গা নদী। অপরূপ নকশায় তৈরী এই মসজিদের ঠিক সামনেই দেখা যায় একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রাচীন মন্দির।
লালবাগের কেল্লা, চার্লস ডয়েলি ১৮১৬
লালবাগ কেল্লার দক্ষিণ প্রবেশপথ, জোহান যোফানি, ১৭৮৭।
পাকিস্তানের দ্যা ডন সংবাদপত্রে গবেষক ওয়াকার এ খান কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৬ সালের একটি আর্টিকেল থেকে।
নাগাফন ঘাট, জোহান যোফানি, ১৭৮৭।
পাকিস্তানের দ্যা ডন সংবাদপত্রে গবেষক ওয়াকার এ খান কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৬ সালের একটি আর্টিকেল থেকে। জ্যোৎস্না রাতে নদীতীরে মৃতদেহ সৎকারের দৃশ্য। সম্ভবত নাগাপঞ্চমী উৎসবের রাতে।
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ঢাকা শহর, ফ্রেডেরিক উইলিয়াম আলেকজান্ডার ডি ফাবেক, ১৮৬১।
পাগলা পুল, চার্লস ডয়েলি ১৮১৬।
ধ্বংসপ্রাপ্ত পাগলা পুল (ব্রিজ)। রাজকীয় একটি স্থাপনা যা দুঃখজনক ভাবে গঙ্গা নদীর বন্যা ও যুদ্ধের কারনে ভেঙ্গে পড়ে।
পাগলা পুল ও দূরে ঢাকার দৃশ্য, চার্লস ডয়েলি, ১৮১৬
পুলের আশেপাশে আলোছায়ার খেলা ও অদূরে ঢাকা শহরের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। দূরের সাদা ভবনগুলোতে ইউরোপীয়দের বসবাস।
তাঁতি বাজারের কাছে ভগ্নপ্রায় ব্রীজ, চার্লস ডয়েলি ১৮১৪।
জেমস এটকিনসন লিখেছেন, এই খালের অবস্থা বেশ খারাপ, আগাছা দিয়ে পরিপূর্ণ। খুবই ছোট নৌকা নিয়েও চলাচল করা এখন বেশ দুরূহ। ঢাকার এই এলাকা নৌকা নির্মাণ, এবং কাঠশিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল।
বড় কাটরা, ঢাকা,চার্লস ডয়েলি, ১৮২৩
বুড়িগঙ্গার পূর্ব তীরে অবস্থিত বড় কাটরা স্থাপিত হয়েছিল ব্যবসায়ীদের উটের কাফেলার বিশামের স্থান হিসাবে। সামনেই একটি বিশালাকার কামান, যার অর্ধেকটা বালির নিচে পোতা, আর বর্ষাকালে সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে যায়। আটকোনা টাওয়ার বিশিষ্ট তাবুর মট দেখতে অত্যন্ত সুবিশাল ও মনোরম একটি স্থাপনা ছিল এটি।
দূর্গ ও বড় কাটরার উত্তর দিকের প্রবেশদ্বার, চার্লস ডয়েলি, ১৮২৭
টঙ্গী ব্রিজের ধ্বংসাবশেষ, চার্লস ডয়েলি, ১৮২৫।
ঢাকার ইংরেজ অধিবাসিরা দল বেধে শিকার করতে আসতেন এই ব্রীজের কাছে। আরো আগে মুঘল আমলে ঢাকার উত্তর সীমানা ছিল এই ব্রীজটি। আর দক্ষিণ সীমানা ছিল বুড়িগঙ্গা নদী। কিন্তু কালের বিবর্তনে ব্রীজটি হয়ে গিয়েছিল ধ্বংসস্তুপ, বেয়াড়া আগাছা আর বটগাছ দিয়ে পরিপূর্ণ।
ঢাকার শহরতলীর একটি মসজিদ, চার্লস ডয়েলি, ১৮২৫।
জেমস এটকিনসন লিখেছেন, অতীব সুন্দর এই মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানা যায়না। এই মসজিদটি ঢাকা থেকে টঙ্গী যাওয়ার রাস্তায় পড়ে। আরো অজস্র স্থাপনার মতোই এই মসজিদও আগাছা দিয়ে পরিপূর্ণ, পরগাছাদের শিকড় যেন সবদিক থেকে ঘিরে ধরে এখন গম্বুজের দিকে হাত বাড়িয়েছে।
সাইয়ুফ খানের মসজিদ, চার্লস ডয়েলি, ১৮১৪
আরো একটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ। আগাছা-পরগাছা যেন দখল করে নিয়েছে। সামনের দরজায় তিনজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এই জায়গায় আসলে মন্দির হওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বানানো হয় একটি মসজিদ। ১৮১১ সালের বর্ষার সময় তিন-গম্বুজ ওয়ালা এই মসজিদের ছাদ ধ্বসে পড়ে যায়।
তথ্যসূত্রঃ
উইকিমিডিয়া কমন্স
ব্রিটিশ মিউজিয়াম অনলাইন আর্কাইভ
নিউজলিংকঃ https://www.dawn.com/news/1286497
নিউজলিংকঃ Click This Link
২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৫১
দারুচিনি পাতা বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:০৪
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। আপনি অন্যান্যদের পোস্টে কমেন্ট করুন
তাহলে প্রথম পাতায় আসতে দেরী হবে না