নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

গায়েন রইসউদ্দিন

গায়েন রইসউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক ভয়ঙ্কর ষড়য্ন্ত্র\'র ময়নাতদন্ত (গুজরাত ফাইলস)...ক্রমশঃ ৩

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:৩৬

কোনো ক্ষতি মোকাবিলার নানান উপায় আছে। কেউ একটানা বিলাপ ফিরিয়ে কাজের মধ্যে ডুবে গিয়ে সান্ত্বনা খোঁজে।আমি দ্বিতীয় পন্থাটা বেছে নিয়েছিলাম। শাহিদের মৃত্যুর তিনদিন পর নাগপুর যাচ্ছিলাম। যেজন্য যাচ্ছিলাম সেটা আমার সাংবাদিক জীবনের একটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতে চলেছিল।কাজটা ছিল নকশালপন্থী হিসেবে অভিযুক্ত ছাত্রদের গ্রেপ্তারি সংক্রান্ত, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল অনুন্নত শ্রেণির। তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণগুলো ছিল নিতান্তই হাস্যকর; তাদের কাছে ভগৎ সিং এবং চন্দ্রশেখর আজাদের লেখাপত্র পাওয়া গেছে। কাজটা যেন আমার জন্যই নির্দিষ্ট ছিল, কেননা এই ধরনের মামলা লড়তে গিয়েই জীবন দিয়েছে আমার বন্ধু শাহিদ।এটা যেন অনেকটা তার স্মৃতির প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন। কিন্তু ভবিতব্য অন্য কিছু ভেবে রেখেছিল। এক দুর্বোধ্য অসুস্থতা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হল আমাকে, পরে যা ডিপ্রেশন হিসেবে নির্ণীত হয়।
আমার ব্যাকুল বাবা-মা আমার সব ধরনের পরীক্ষা করানোর পর রোগটা চিহ্নিত হয়; ব্রঙ্কোস্কপি থেকে এম আর আই পর্যন্ত কিছুই বাদ যায়নি। অন্য একজন চিকিৎসক বলেন আমার যক্ষ্মা হয়েছে, আমার বাবা-মার উচিত আমাকে ধ্যানের অভ্যাস করানো। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সাউথ বম্বে হসপিটালে মুম্বেইয়ের একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক আমাকে পরীক্ষা করেন। আমার রিপোর্টগুলো দেখে ডা: চিটনিস কিছু প্রশ্ন করেন আমাকে। তারপর বড়ো ক'রে শ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'কোন্ বিষয়টা সারাক্ষণ ভাবিয়ে চলেছে আপনাকে? প্রশ্নটা শুনে যেন অচৈতন্য অবস্থা থেকে জেগে উঠলাম। 'কিছুই না ডাক্তারবাবু। আসলে আমি বড্ড ক্লান্ত, খুব দুর্বল লাগছে, কী যে হচ্ছে ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।'
হালকা হেসে ডাক্তারবাবু বললেন, 'নিজেকে এই দুঃখী দুঃখী বানিয়ে রাখাটা ছাড়তে হবে। এইসব রক্ত পরীক্ষা-টরিক্ষা করিয়ে নিজের দুঃখের ঢাকঢোল বাজানোটা বন্ধ করতে হবে। আপনি একদম সুস্থ আছেন। কাজে যোগ দিন, সেটাই আপনার ওষুধ। সবটাই আপনার মনের ব্যাপার।
আমি বললাম, 'হাইপোকনড্রিয়া?' নিজের অবস্থা নিজেই যাচাই করার চেষ্টা করতে গিয়ে কয়েকদিন আগেই শিখেছিলাম শব্দটা। ডা: চিটনিস শান্ত স্বরে বললেন, 'না। আপনি স্রেফ অলস হয়ে পড়েছেন আর নিজের দায়দায়িত্ব থেকে পালাতে চাইছেন। পরের দিন ডা: চিটনিসের কথাগুলো নিয়ে ভেবে চললাম। এইরকম একটা অলস দিনেই অনুঘটকের কাজ করতে এগিয়ে এলেন আমার মা। মাকে আমি আম্মা বলে ডাকি। আম্মা আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত একজন বন্ধু। কোনোদিন আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিতা হননি। আব্বাই ছিলেন তাঁর শিক্ষক। আম্মা বলতেন, নিজের স্বপ্নগুলো আমাকে দিয়ে পূরণ করতে চান তিনি। আমি বেঁকে বসতাম।, আম্মা হাল ছাড়তেন না, প্রশ্রয় দিতেন, শেষমেশ বাড়ির সবাই এসে জুটত। সেদিন আমাকে কফি দিয়ে আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, চাকরিটা তাহলে ছেড়ে দিচ্ছিস?’
একটু কাঁধ ঝাঁকিয়ে শুধু কফির কাপটার দিকেই মন দিলাম । তখন বরাবরের মতোই বিছানায় আমার পাশে বসে ‘ইনকিলাব’ (বিশিষ্ট ঊর্দু সংবাদপত্র) পড়তে শুরু করলেন তিনি । মিনিট দশেক কাগজ পড়ার পর সবে আমাকে কিছু বলতে যাবেন, মাঝপথেই তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ‘আম্মা, কাগজে যদি উপদেশ দেওয়ার মতো কিছু থাকে তাহলে বলতে হবে না । কাগজ না-পড়ে বেশ আছি আমি। আম্মা বললেন, ‘আরে না । তুই কি সোরাবুদ্দিনের ঘটনাটা পড়েছিস?’ নামটা আমাকে কৌতুহলী করে তুলল। হ্যাঁ সোরাবুদ্দিনের কথা আমি অবশ্যই জানি। তার সূত্রেই আমাদের সময়ের সবথেকে বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্যতম নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রথম দেখা হয় আমার ।
২০০৭ সালে নিজেদেরই একজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী রজনীশ রাইয়ের হাতে বন্দি হয়ে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন গুজরাতের তিনজন উচ্চস্তরের পুলিশকর্তা । ভুয়ো সংঘর্ষে পাতি জুয়াচোর সোরাবুদ্দিনকে হত্যা করেছিলেন তাঁরা ।
জেলে যেতে হয়েছিল ডি.জি.বানজারা আর রাজকুমার পান্ডিয়ানকে । মোদি সরকারের সবথেকে বিশ্বস্ত অফিসার ছিলেন তাঁরা । জেলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত অত্যন্ত প্রতাপশালী ছিলেন । প্রতিদিন তাঁদের সংবাদ সম্মেলনের ছবি বেরোত কাগজে । ২০০৪ সালে জিহাদিরা যখন ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ নরেন্দ্র মোদিকে হত্যা করতে যাচ্ছিল, তখন এই অফিসাররাই তাদের খুঁজে বের করে হত্যা করেছিলেন । তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই সারা দেশের নজর আকৃষ্ট হয়েছিল এই খবরের দিকে ।
২০০৭ সালে একটা টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলে রাজনৈতিক সাংবাদিকের চাকরি পাই আমি । আমার প্রথম কাজটা ছিল ২০০৭ সালের গুজরাতের নির্বাচন সংক্রান্ত রিপোর্টিং করা । অধিকাংশ বিশ্লেষকই বলেছিলেন , গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবার নিরঙ্কুশভাবে জিততে চলেছেন । ২০০২ সালের গুজরাতের দাঙ্গা সমাজকে স্পষ্টতই বিভক্ত ক’রে দিয়েছিল এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের নায়কে পরিণত করেছিল । ২০০৭ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করা তাঁর পক্ষে খুব কঠিন ব’লে মনে হচ্ছিল না।
একজন আলোকচিত্রীর সঙ্গে তাঁর প্রথম নির্বাচনী সমাবেশে গেলাম । ঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবত গুজরাত চেম্বার অফ কমার্স-ই ছিল এই সমাবেশের উদ্যোক্তা । মঞ্চে বসে ছিলেন নরেন্দ্র মোদি, পাশে তাঁর ডান হাত অমিত শাহ । অন্য কিছু মন্ত্রীও ছিলেন ।
এর আগে অন্যান্য রাজনৈতিক সমাবেশও কভার করেছি আমি। প্রথমটায় এই সমাবেশকেও সেগুলোর থেকে আলাদা মনে হচ্ছিল না । তবে আমার দিল্লির প্রযোজকরা আগেই বলে দিয়েছিলেন, প্ররোচনামূলক বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষমতা আছে মোদির । সেদিনও তিনি হতাশ করলেন না । ‘সোরাবুদ্দিন, ওরা জিজ্ঞেস করছে সোরাবুদ্দিনের মতো সন্ত্রাসবাদীর ব্যাপারে কী করেছি আমি’। জনতা উল্লাস করে উঠল । সামনের সারির মহিলারা হাততালি দিলেন । সামনের সারিটা সর্বদাই মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকত, কেননা, মনে করা হত গুরাতের মহিলাদের মধ্যে মোদি অত্যন্ত জনপ্রিয় । কলাম-লেখক আকর প্যাটেল তো একটা কলামে এমনও লিখেছিলেন যে, গুজরাতি মহিলাদের কাছে মোদি হচ্ছেন সেক্স সিম্বল ।
জনতার মধ্যে থেকে প্রত্যাশিতভাবেই আওয়াজ উঠছিল, ‘মারো, মারো, মেরে ফ্যালো ওটাকে’। মনে হচ্ছিল কোনো রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটারে বসে আছি।‘মিয়াঁ মুশারফ’ আর ‘দিল্লি কা সালতানাত’-এর মতো নানান কুৎসিত মন্তব্য সহযোগে ভাষণ চলতে লাগল । ভাষণ শেষ করে মোদি মঞ্চ থেকে নামতে তাঁকে মালা পরালেন গুজরাতের চেম্বার অফ কমার্সের সদস্যরা । তাঁর চারপাশে মানুষের ভিড়, নিরাপত্তা রক্ষীদের বেড়া টপকে ঠেলেঠুলে এগোতে এগোতে আমার আলোকচিত্রীর জন্য উৎকন্ঠিতভাবে চিৎকার করছিলাম । আমার পিছনে আসার জন্য রীতিমতো ধস্তাধস্তি করতে হচ্ছিল তাকে ।
‘মোদিজী, মোদিজী, একটা প্রশ্ন ছিল’। ভাগ্যই বলতে হবে, অনুরাগী ও সঙ্গীসাথীতে পরিবৃত মানুষটি ফিরে তাকালেন আমার দিকে, সম্ভবত কোনো রাজনৈতিক প্রশ্ন প্রত্যাশা করেছিলেন ।‘মোদিজী, গুজরাতে তিনজন অফিসারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ভুয়ো সংঘর্ষে সোরাবুদ্দিনকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের নামে । এর পরেও কি আপনি বলবেন, বক্তৃতায় আপনি যা কিছু বললেন সবই সঠিক?’ উত্তর পাওয়ার জন্য মাইকটা তাঁর দিকে এগিয়ে দিলাম । পুরো ১০ সেকেন্ড আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ফিরে চলে গেলেন নরেন্দ্র মোদি । ঘৃণার চোখে আমার দিকে তাকালেন তাঁর মন্ত্রী । দেশের সবথেকে লোভনীয় পদ অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর আসনে বর্তমানে অধিষ্ঠিত মানুষটির সঙ্গে এটাই ছিল আমার প্রথম দেখা ।.....(ক্রমশ:)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৬

আনু মোল্লাহ বলেছেন: চমৎকার অনুবাদ।
রানা আইয়ুবের সাহসী সাংবাদিকতার কথা আগেও শুনেছি।
বইটা পড়ার ইচ্ছে আছে।

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:০৪

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আনু মোল্লাহ, আপনার মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য !

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: এ বই নিয়ে কোনো মুভি হয়েছে কি?

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:৩৮

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: প্রিয় রাজীব নুর ভাই,
আপনি দারুন একটি প্রশ্ন তুলেছেন। মুভির কথা এখনও শুনিনি। তবে আপনি এবং অন্যান্য কিছু ভাল মানুষ একবার চেষ্টা করে দেখুন না, এবিষয়ে চলচ্চিত্রায়ণ করা যায় কিনা। যদি সম্ভব হয়, তাহলে অন্য এক ইতিহাস তৈরি হবে।...সঙ্গে থাকবেন, ভাল থাকবেন!

৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:১৬

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আপনার কি মনে হয়?
এবার ক্ষমতায় কে আসবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.