নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসময়ে কিছু না বলা কথা বলতে চাওয়ার ইচ্ছাই লেখায় পথ খুঁজে পায়।

খন্দকার শাহজাহান রাজ

খন্দকার শাহজাহান রাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ শূন্য থেকে পূর্ণের যাত্রা

২১ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:৩০

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ শূন্য থেকে পূর্ণের যাত্রা
-খন্দকার শাহজাহান

ভাষা ! অদ্ভুত এক মায়াজালে বন্দী এ ভাষা। হায়রে ভাষা , বাংলাভাষা, হায় বাক্য, হায় শব্দ! কতোটা সীমিত যে, কতরকম বাঁধাবাঁধির মধ্যে থাকে- একটা অভিধানেই যার অর্থের সরলতা, তাতেই শুরু, তাতেই শেষ, একটা ঝঞ্ঝাটে ব্যাকরণেই যার নিয়ম কানুনের ফর্দ শেষ। তবুও অনন্ত আর অসীমের বাস তাতেই। আমি অনন্ত কি জানিনা, অসীম কি তাও জানিনা। জানার নয় বলেই জানিনা। কত হাজার পাখি আছে জানিনা, কত রঙের ফুল ফোটে জানিনা। জানিনা বলেই অনন্ত অসীম বলতে ভাল লাগে। জানার প্রতি ভালবাসা জন্মায়। দুচোখে স্বপ্ন মেখে বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে, অজানার পথে; যেখানে কিছুই জানিনা আমি, যে পথের অন্ত নেই। বৃক্ষের পর বৃক্ষ, তার পর মহাবৃক্ষ, শেষ হতে চায় না। অথচ ক্লান্তি নেই পথে। মহাবৃক্ষের ভেতর হতে বেরিয়ে যায় একের পর এক পাখি। সাদা পাখি, নীল পাখি, সবুজ পাখি। উড়ছে তো উড়ছেই। পশ্চিম আকাশে যেন তারা এক রংধনু এঁকে এর। স্বপ্নের মত লাগতে থাকে। স্বপ্নের শেষ নেই, পাখিরও শেষ নেই।
নেই রবীবাবুর গানেরও। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানগুলোও ঠিক এমনই, একই পাখি হাজার রঙ এ রাঙ্গানো। দুহাজার পাখি লক্ষ লক্ষ হয়ে যাচ্ছে। সীমিত সংখ্যক গান হয়ে ওঠে লক্ষ লক্ষ চিন্তা চেতনার খোরাক। অন্যদিকে, এই লক্ষ লক্ষ পাখিরাই গোল হয়ে ঘুরছে, একটা কিছুকে কেন্দ্র করে। ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রের কাছে চলে আসে, মিলে যায়। নিঃশেষ? নাহ্‌। তখনই যে পূর্ণতার স্বাদ। তাকে নাই বলি কিভাবে? আমার বলতে ইচ্ছে করে, “ভাষা দেখি তোমার কতটা সাধ্যি, কি আছে তোমার পেটিকায়! বুঝিয়ে দাও আমায় এই শূণ্যতার পূর্ণতাকে।“ আমি বলতে পারি না , কিন্তু রবীবাবু বলে ফেলেন, ‘শেষ নাহি যে, শেষ কথা কে বলবে।‘
শেষ নেই, কিন্তু শুরু তো আছে। সেই যে, ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ দিয়ে। এরপর জল পড়িতেই থাকিল, পাতা নড়িতেই থাকিল, নিত্য নতুন পাখিরা আসিতেই থাকিল। ‘মধুরও, মধুরও ধ্বনি’ বাজতে লাগল, ‘ ‘শূন্যেরে পূর্ণ করি’ জীবনপাত্র উছলে উঠল, ‘প্রাণে খুশির তুফান’ উঠতেই লাগল। প্রাণ জেগে উঠল, স্পন্দন দেখা দিল অণু-পরমাণুতে । শিরশির করে বইতে লাগল পাতায় পাতায়, ঘাসে ঘাসে। ‘ভয়-ভাবনার বাধা’ সব গেল শূন্যে মিলিয়ে। আর সে কি শুধু প্রকৃতিতে? শুধুই কি ‘মধুময় পৃথিবীর ধূলি’ তে? না । তা ছড়িয়ে গেল মর্ত ছেড়ে ঊর্ধ্বাকাশে। মানুষে-মানুষে। তিনি পূর্ণপ্রাণে তাকান মানুষের দিকে, একটাই আকুতি ,’এ জীবন পূর্ণ কর,’ একটাই মিনতি, ‘নিত্য তোমার যে ফুল ফোটে ফুলবনে, তারি মধু কেন মনমধুপে খাওয়াও না?’ একটাই ব্যাকুলতা, ‘তোমার ও অসীমে , প্রাণ মন লয়ে, যত দূরে আমি যাই, কোথাও মৃত্যু , কোথাও দুঃখ নাই।‘
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শূন্যকে সারাজীবনে কখনোই প্রশ্রয় দেননি। কোন শূন্যতাকেই নয় বা হৃদয়-দুয়ার পার হয়ে নিজের হৃদয়-ভান্ডারের শূন্যতাকেও নয়। এক কথায় তিনি আধুনিক দার্শনিক, ভাষাতাত্বিক বা বিশ্লেষক, সাহিত্যসমালোচকদের কেউ নন। অস্তিবাদীরা যেখানে ‘অর্থহীনতা’ আর ‘নাথিংনেস’ কে প্রমাণ করতে ব্যাস্ত, সেখানে রবীবাবুর লক্ষ্য ছিল শুন্যতাকে কানায় কানায় অমরত্বের পূর্ণতায় পূর্ণ করা। জীবনে ‘পূর্ণতা’ কেই শেষ সত্য শুধু নয়, শেষ আশ্রয় নয়, একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ধরেই পথ পাড়ি দিয়েছেন। এ পথ অনেক কন্টকাকীর্ন, অনেক বৈরী, অনেক বন্ধুর। পথ চলতে চলতে পদাঙ্কের দাগ হয় আরো গভীর, আরো দৃঢ়, স্থায়ী, স্থির। ছোটখাট তুচ্ছ কথার কথাতেও মজা করে বলেছেন, ‘প্রকৃতি শুন্যতা ঘৃণা করে- Nature averse vacuum.’
প্রাণ-মদিরা আর অপরাহ্নের রোদ বাতাস আলোকিত জীবন ও এক সময় ঢলে পড়ে আসন্ন-সায়াহ্নের অস্তরাগে। মৃত্যুই যে নশ্বর। হেই নশ্বরতা ভেঙে দেয় সকল অহমিকা , সকল অনুভূতির কঠিন দেয়াল। সকল বিশ্বাসের শেকড় উঁপড়ে বেরিয়ে আসে একমহাবৃক্ষের আঘাতজর্জর, যন্ত্রণাদীর্ণ, বিরুপ বিশ্বের মুখোমুখি-হওয়া, রুক্ষকঠিন আকশি-কাঁটায় পরিপূর্ণ দীর্ঘ জীবন পার করার মহাকাব্য। রবীঠাকুরের শেষ দিনগুলোর কবিতা মনে এক বিষাদের ছায়া ফেলে যায়, তাতে মধুরতার কমতি যেমন ধরা পড়ে তেমনি ধরা পড়ে জীবন নিয়ে পৌনঃপুনিক স্বীকৃতির কথা। খুব ছোট কবিতা, তবুও বহুলপঠ্য এ কবিতাটির চারটি পঙতি তুলে দেওয়াই যথেষ্টঃ
রুপ-নারাণের কূলে
জেগে উঠিলাম
জানিলাম এ জগত
স্বপ্ন নয়।
কে ঘুমিয়ে ছিলেন এতকাল? ছিলেন আন্তবিস্মৃত, বিবশ, শেষ-উপলব্ধিতে পৌঁছুতে না-পারা ঘুমে অচেতন হয়ে? লিখছেন যিনি কবিতা বলছেন যিনি এই কবিতা গোলমেলে, স্থির-অস্থির, স্বচ্ছ-অস্বচ্ছ চেতনার ভেতর থেকে তো তিনি রবীন্দ্রনাথই। বড়ো কঠিন হয়ে এল সত্য-
‘সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম-
সে কখনো করে না বঞ্চনা।'

লিখলেন প্রায় একই কথা শেষ কবিতাটিতেওঃ
তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করে
বিচিত্র ছলনাজালে
হে ছলনাময়ী।
মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুণ হাতে
সরল জীবনে।
এই প্রবঞ্চনা দিয়ে মহত্বেরে করেছ চিহ্নিত ;
তার তরে রাখনি গোপন রাত্রি...
আনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে
সে পায় তোমার হাতে শান্তির অক্ষয় অধিকার।

কিন্তুএই আশ্বাসটুকুও যেন ডুবে যায় তৃতীয় কবিতাটিতেঃ

প্রথম দিনের সূর্য
প্রশ্ন করেছিল
কে তুমি?
মেলে নি উত্তর।
বৎসর বৎসর চলে গেল।
দিবসের শেষ সূর্য
শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল
পশ্চিমসাগরতীরে
নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়-
কে তুমি?
পেলনা উত্তর।


না আর কোন স্বান্তনা নেই, মায়া নে, শূন্যতা-পূর্ণতার বালাই নেই, শুরু নেই, শেষ নেই, আদি নেই, অন্ত নেই। শূন্যতার পূর্ণতায় অপূর্ণ রয়ে যায় মানস। জেগে থাকে মহাকাল। সোনার তরী নিয়ে কবি চলে গেছেন আজ সার্ধশত-ছয় বছর। মহাকাল কেড়ে নিতে পারেনি সেই সোনালী ফসল।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:৩৬

আরজু পনি বলেছেন:
আপনার প্রবন্ধ লেখার হাত বেশ ভালো মনে হচ্ছে।
শুভকামনা রইল।
ব্লগ যাত্রা শুভ হোক।

২| ২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৩৩

খন্দকার শাহজাহান রাজ বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।লেখালেখির সাথে অনেক ভাবেই জড়িত আছি অনেক আগে থেকেই। এখানেও আমার একাউন্ট ছিল আগে। বাট পাসওয়ার্ড মনে নেই।
এনিওয়ে পাশে থাকবেন আশাকরি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.