নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাসময়ে কিছু না বলা কথা বলতে চাওয়ার ইচ্ছাই লেখায় পথ খুঁজে পায়।

খন্দকার শাহজাহান রাজ

খন্দকার শাহজাহান রাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীলচে মৃত্যু

৩০ শে জুন, ২০১৭ ভোর ৪:৪৯

দশ বছর পরের এক গ্রীস্মের সকাল; যেখানে সুনীল কে ত্যাগ করা মিতালী তার স্বামীর সাথে BMW কে নিয়ে কোন পাঁচতারায় যাচ্ছে তাদের প্রথম মধুচন্দ্রিমায়। স্ত্রীকে সহধর্মিনী বলা হয়। কেন? জানিনা। একই ধর্মের, তাই? নাকি অন্য কোন কারন আছে?স্বামীকে কেন এমন কোন নাম দেয়া হয়না? স্বামী কী তাহলে অন্য ধর্মের হলেও চলে? সুনীল এসব নিয়ে আর ভাবেনা। ভাবতে চায় না। চাইলেও পারবে না। যে পারবে সে কি চায়? ধূ ধূ করছে চারিদিক। প্রচন্ড গরম। গাড়ী চলছে তো চলছেই। মিতালির গায়ে সুন্দর লাল পাড়ের সিফনের শাড়ি লেপ্টে আছে, আর জানান দিচ্ছে যে শাড়িটি তাকে দখল করেছে যেমনি করেছে মিতালীর পাশে বসে থাকা এই ডানাঅলা গাড়ীখানার মালিকটি-রেহমান। রেহমান তার Cellox এ একবার তাকিয়ে সময়টা দেখে নিল। বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘গরম কি আজ বেশি লাগছে?’
মিতালী বলল, ‘হ্যাঁ, একটু না , অনেক বেশী।’
‘কিছু খাবে?’
‘না, একেবারে হোটেলে পৌঁছে খাব।’
রেহমান মনে মনে খুশি হল। খাওয়ার চেয়েও ‘হোটেল’ শব্দটা বোধহয় তার ইন্দ্রীয়কে আরেকটু সুক্ষ করে তুলল। তার ভেতরের ২১জোড়া ক্রোমোজমই বোধহয় উদ্দিপীত হল। রেহমান আস্তেকরে তার বাম হাতটা সীটে পড়ে থাকা মিতালীর ফর্সা হাতটার উপর রাখল। মিতালি আবার তাকাল সেদিকে। মিতালির মুখের অনুভূতি রেহমানের অদেখাই রয়ে গেল। ভেঙ্গে যাওয়া পুরানো কিছু খসড়া স্মৃতি মিতালির স্মৃতিতে বুল্ডোজার চালিয়ে গেল। এমনি এক দৃশ্য মিতালি দেখেছে পূর্বে; সুনীলের সাথে। সুনীলের হাতের উপর রাখা তার সেই হাত লাইব্রেরীর হাল্কা আলোছায়ার মাঝে গভীর কোন উপলব্ধীর আবির্ভাব ঘটিয়েছিল। মিতালি বুঝতে পারছিলো এ দৃশ্য আর সম্ভব নয়...

হঠাৎ করেই মিতালি বুঝতে পারল তার বেশী ঠান্ডা লাগছে। অথছ, বাইরে প্রচন্ড রদ্দূর। ধীরে ধীরে মিতালির বোধহয় জমে যায়, এ ভেবে সে রেহমানকে জিজ্ঞাসা করল।
‘ তোমার কি ঠান্ডা লাগছে?’
‘হ্যাঁ, কেন বলত? বেশ অদ্ভুত ব্যাপার না!’
‘হ্যাঁ, অদ্ভূত তো বটেই । আমার হাত জমে যাচ্ছে।’
রেহমান মিতালির হাতটা আরও শক্ত করে ধরলো। মিতালির মনে হল, রেহমান আর একটু চেপে ধরলেই হাতটা বোধহয় গূঁড়ো গূঁড়ো হয়ে যাবে। মিতালি হঠাৎ দেখতে পেল গাড়ির কাঁচের উপর তুষার পড়ছে। তুলোর মত শূভ্র তূষার। মিতালির খুব ইচ্ছে ছিল সে বাংলাদেশে তুষারপাত দেখবে । তার ইচ্ছেটা পূরণ হচ্ছে... কিন্তু কেন যেন তার এটা দেখতে ইচ্ছে হলনা। সে দেখল গাড়ির পেছন দিকটা সম্পূর্ন তুষারে আবৃত। কিছু দেখা যাচ্ছে না। তার গা শীউরে উঠল। বুঝতে পারল হঠাৎ যে তার ভেতরটা জমে যাচ্ছে। ভয় পেয়ে রেহমানকে ডাকল, ‘এই, তোমার কি ঠান্ডা লাগছে না?’
‘অসহ্য ঠান্ডা, আমার ড্রাইভ করতে কষ্ট হচ্ছে।’
‘তাহলে একটু থামাও , আমি জমে যাচ্ছি।’
‘দাঁড়াও, থামাচ্ছি।’
রেহমানের ভেতরে অশরিরী এক আনন্দ চমক দিয়ে যায়। সে উষ্ণতার প্রয়োজন বোধ করে। তার এখন অনেক উষ্ণতার প্রয়োজন। সে মিতালির পাশ ঘেঁষে যায়। মিতালির মাথায় হাত দিয়ে তার হাতটি উষ্ণতার প্রথম পদহ্মেপটি নেয় এবং ধীরে ধীরে তা নিচে নামতে থাকে। লাল শাড়ীর ভেতরে থাকা ব্লাউজের ভেতর শক্ত, লোমশ হাতটা ঢুকে যায়। মিতালির মনে হয় কোন ঠান্ডা সরীসৃপ তার বুকের ভেতর ঢুকে পড়েছে। রেহমান সে বুকের ডান স্তনটায় হাত রাখে, এরপর বামটায়। ডানস্তনতাকে তার একটু বড় মনে হয়। কিন্তু এসব পরিমাপ নিয়ে সে এখন ভাবতে রাজি নয়। হঠাৎ সে বুঝতে পারে ডানস্তনটা শক্ত হয়ে জমে যাচ্ছে। তাতে কোন উষ্ণতা নেই। বরফ হয়ে গেছে ডানস্তনটা। ভয় পেয়ে রেহমান হাতটা বের করে নেয়। মিতালি বুঝতে পারে তার ভেতর উষ্ণতা নেই। সে ধীরে ধীরে ঠান্ডাতর থেকে ঠান্ডাতম হচ্ছে। আস্তে আস্তে বামস্তনটাও জমতে থাকে। ভয় পেয়ে মিতালি তার ব্লাউজ খুলে তার স্তনদ্বয়কে উন্মুক্ত করে। রেহমান তাতে কোন উষ্ণতা খুঁজে পায় না।মিতালি হঠাৎ দ্যাখে তার নাভী বেয়ে যোনী পর্যন্ত শীতল তুষারের আচ্ছাদন পড়ে গেছে। মিতালি অষ্পষ্ট স্বরে কিছু এক্তা বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে গেল। রেহমান বুঝতে পারেনা সে কি করবে। তার নিজেকে অপুরুষ মনে হতে থাকে। একটু উষ্ণতার জন্য সে কঁকিয়ে উঠে। কোন উষ্ণতম পুরানো স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করে সে। পারেনা। একপর্যায়ে সেও জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়।


অন্ধকার একটা রাস্তায় মিতালি দৌড়াচ্ছে। সামনে গিয়ে , ডানে গেলেই সুনীলের ঘর। তার ভয় করছে, যদি এত রাতে সুনীল জেগে না থাকে। যদি বাড়ির মেইন গেইট কেউ না খোলে? মিতালি তো সাথে মোবাইলটাও আনেনি, যে কল দিয়ে তাকে ডেকে তুলবে। আবার মনে হতে থাকে যে , নাহ সুনীল ত এত তাড়াতাড়ি ঘুমায় না। হয়ত সবসময়ের মত সাড়ে তিনটার আগে ঘুমাবেই না। এই বিশ্বাস নিয়ে সে ছুটে যায়। সুনীলের ঘরের কাছে এসে দেখে গেইট টা খোলাই আছে। ভেতরে ঢুকে আরেকটু অবাক হয় যে ঘরের দরজাটাও খোলা। সুনীল তার টেবিলে বসে কী একটা খয়েরী ডায়রী নিয়ে নাড়ছে। তার কোন এক পাতায় কোন একদিন মিতালিই লিখে দিয়েছিল,
‘ আমি তোমাকে ভালবাসি...’
মিতালি সুনীলকে পেছন দিক থেকে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ মনে হয় সুনীলের বুকের বাঁপাশটা একটু ফুলে গেছে। মিতালি সুনীলকে ধরে খাটে বসিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে সুনীলের মাথাটা তার পেটে চেপে ধরে। সুনীলের মাথাটা অনেক ছোট মনে হতে থাকে মিতালির। মিতালি পাগলের মত তাকে চুমু খেতে থাকে। সুনীলের মাথায়, গালে, চোখে, নাকে... ... কিন্তু মিতালির প্রতিবারই মনে হয় সুনীলের প্রতিটা অংশই ক্ষয়ে যাচ্ছে। বাঁ গালটা সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয়ে গেছে। বাঁ গালের একটা হাঁড় বেরিয়ে গেছে। মাংস ঝরে পড়ছে গালটা থেকে। মিতালি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। সুনীলের উন্মুক্ত ছোট ফরসা বুকটায় মাথা ঘষতে থাকে। বুকটা অনেক ফাঁপা মনে হয় মিতালির। বোধহয় বুকটা খুলে দেখলে কিছুই পাওয়া যাবে না, এমন। হঠাৎ সে দেখল বুকের বাঁপাশটায় একটা কিসের যেন আঘাতের চিন্হ। বুকের স্পন্দন শোনার জন্য মিতালি সুনীলের বুকে মাথাটা চেপে ধরে। মিতালির মাথাসহ সুনীলের বুকটা নিঃশব্দে নিচে দেবে যায়। মিতালির মুখে শুধু রক্তের ই দাগ। বুকের ভেতরটায় সত্যিই কিছু নেই। অজস্র নীলচে পোকা হৃৎপিন্ডটাকে খেয়ে নিজদের পুষ্ট করেছে এ কটা দিনে। মিতালি জোরে একবার আর্তনাদ করে উঠল... ...




... BMW এর ভেতর জমে থাকা মিতালির, দেখতে থাকা এ বিভৎস স্বপ্নটি তাকে অসহ্য পীড়া দিয়ে জাগরনের সষ্ণার করে। মিতালি তার চোখদুটো আস্তে করে খোলে। সে বুঝতে পারে তার সমস্ত শরীর তুষারাবৃত। নুন্যতম নড়াচড়া করার শক্তিটাও নাই। শুধু চোখটা খুলে নিজের দিকে তাকানো ছাড়া আর কোন কাজই নেই তার করার মত। মিতালির খুব ইচ্ছে হয় পুরো অতীতটাকে পাল্টে দিতে।সে জানে তার এ মাত্র মুছে যাওয়া স্বপ্নটা মোটেও স্বপ্ন না, এ সত্যই। মিতালি তার স্তনের , নাভীর, উরুর , যোনীর দিকে তাকায়। সেখানে তাকালে কেউই কিছু পাবে না। শুধু মিতালি দেখতে পায় তার এ বিকৃত শরীরে সুনীলের রেখে যাওয়া সোনালী স্বপ্ন। এ বুকেই সুনীল থেমে যাওয়া সময়ের মত থেমে থাকত, এ নাভীতেই সুনীল নাক দিয়ে গন্ধ নিতো অজানা কোন রজনীগন্ধার, এই যোনীতেই সুনীলের প্লাবিত স্বপ্নগুলো বাস করত, যেমন কোন শুভ্র কবুতরের দল বাস করে কোন মন্দিরের ঘন্টার উপর। মিতালির খুব ইচ্ছে করে গাড়ির দরজাটা খুলে এক দৌড়ে সুনীলের কাছে চলে যেতে। কিন্তু এখন যে অনেক দেরী হয়ে গেছে। মিতালি এক্তু বাইরে তাকানোর চেষ্টা করে । তার হঠাৎ মনে পড়ে স্বপ্নে সুনীল তার সাথে একবার ও কথা বলেনি। শুধু তার চোখে লেখা ছিল অজস্র প্রশ্ন, যার উত্তর দেয়ার সাহস মিতালি এখন আর পায়না। মিতালি এখনো দেখে যে বাইরে প্রচন্ড রোদ। কিন্তু সে একটু উষ্ণতাও খুঁজে পাচ্ছেনা। হঠাৎ গাড়ির পাশ দিয়ে একটা CNG গাড়ি চলে যায় ধীরগতিতে। মিতালি দেখে সেখানে , এতো গরম এর মধ্যেও, একটা কম বয়েসি ছেলে একটা মেয়েকে চাদরে লেপ্টে জড়িয়ে আছে। মেয়েটার মুখটা দেখার চেষ্টা করে মিতালি। কিন্তু কারো মুখই দেখতে পারে না। শুধু বুঝতে পারে তাদের চারটি ওষ্ঠ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম অনুভূতির স্বাদ গ্রহন করছে। ছেলেটি ডান হাত দিয়ে মেয়েটির মাথায় বিশ্বাসের ছোঁয়া সাজিয়ে দিচ্ছে। মিতালির চোখ হতে শেষ দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সেটাও বোধহয় তুষারিত হয়... ...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.