![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নতুন বছর মানে নতুনভাবে জেগে উঠা, নতুন স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেওয়া। নতুন বছর চলে এলে চারপাশে সাড়া পড়ে যায়। তবে বিশেষ করে কেন যেন ইংরেজি নতুন বছর এলে সবাইকে বেশি আনন্দিত থাকতে দেখা যায়, থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন এর জন্য ছেলেমেয়েদের আগ্রহের শেষ থাকে না, তার কারণ হিসেবে যা বুঝলাম হিজরী মাসে বিদাতিরা মিলাদ আর ওরশ ছাড়া কিছু করতে পারে না, ১লা বৈশাখে ও বাঙালী সাজতে গিয়ে হিন্দী ও ইংরেজী গান আর ওয়েষ্টার্ণ পোশাকের সাথে নিজেকে মেলে ধরতে পারেনা । কিন্তু থার্টি ফাস্ট নাইটে যা চাই তার কোনকিছুই অপুর্ণ থাকে না। সেদিন রেষ্টুরেন্ট, হোটেল, নাইট ক্লাব, পর্যটন স্পটগুলোতে এত ভীড় থাকে যে অনেকে জায়গা না পেয়ে বাসার ছাঁদ বা কোন বন্ধুর বাসায় আয়োজন করে। বিভিন্ন র্যাম্প মডেল, কল-গার্ল, ডিজে, সংগীত শিল্পী সবাই সেদিন ছড়া দামে বিক্রি হয়। মুলত এটা থার্টি ফাস্ট নাইট বা নতুন বছর না বলে ভ্যলেন্টাইন নাইট বললে বেশি মানায়। অনেক কাপলরা সেদিন নিজেদের কুরবানী (বিয়ের আগে লীভ টুগেদার নামে যা হয়) করার প্রতিজ্ঞা করে । শুনলাম চিটাগাং এর কিছু আবাসিক হোটেল রুম দিতে না পেরে প্রতি ৩ ঘন্টা করে ছড়া দামে কাপলদের (অবিবাহিত) রুম ভাড়া দিয়েছে। আর একটা কাপলের কুরাবানী হওয়ার জন্য ৩ ঘন্টা যথেষ্ট। এর বাইরেও উইশে উইশে ভরে যায় ফেসবুকের ওয়াল, মেসেজ ইনবক্স, মেইলের ইনবক্স। বন্ধু-ভাই-বোনদের সাথে দেখা হওয়ার পর প্রথমে সালাম দেয়ার আগেই সেদিন “হ্যাপি নিউ ইয়ার” শুনে “টু ইউ ঠু” বা নিজেও “হ্যাপি নিউ ইয়ার” না বললে নিজেকে খেত বা গেউ মনে হয়।
ফেসবুক ও মোবাইলে আমাকে অনেকে উইশ করেছে । কিন্তু কারো উত্তর দিতে পারিনি বলে আমি লজ্জিত। আসলে ইংরেজী নতুন বছর আসলে আমার অনুশোচনা বেড়ে যায় । আল্লাহর কাছে নিয়মিত তওবা করতে থাকি । কারণ বাঙাল হয়েও নিজেকে আধুনিকরণের নামে গত ৭-৮ বছর যে মিউজিকের তালে নেচে গেয়ে আমিও সময় নষ্ট করেছি । তখন বুঝিনি, কেউ ভাল করে আমাকে বুঝাতে ও পারেনি । তাইতো নতুন বছর আসলে আল্লাহর কাছে তওবা করি, ক্ষমা প্রার্থনা করি, নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়।
“ধ্বংস তার জন্য যার আজকের দিনটি গতকাল থেকে উত্তম হলো না”
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে-রাতে অনেকবার তাওবাহ করতেন এবং তাওবাহ করার শিক্ষা আমাদের জন্য রেখে গেছেন। এই তাওবাহ আমাদের জন্য একটি আশাবাদী পদক্ষেপ। ভুল আর অপরাধের অতীতকে ফেলে শুভ্র-সুন্দর আত্মা নিয়ে নতুন করে শুরু করা এবং আমার অতীত ভুলের অনুশোচনার ফলশ্রুতিতে মুক্তি পাওয়ার আশা করা যেতে পারে।
আমার কাছে প্রতিটি দিনই নতুন। আমি তাই প্রতিটা দিনই নতুন করে শুরু করতে চাই। একটা উপলক্ষ্য পেলেই নতুন করে শুরু করি সবকিছু। যেমন ঐ দিন থেকে আর মিথ্যা বলবো না, চোখকে সংযত রাখবো, বাজে কথা বা অনর্থক কথা একবারেই বলবো না, কাজে মনোযোগী হবো, ভালো কাজ বা অসহায় মানুষের উপকার করব, অযথা ফেসবুকে সময় নষ্ট করবো না, ফেসবুকে ছবি বা সেলফী আপলোড দিমু না, কোনভাবে জামাত ত্যাগ করব না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফল ও হয়েছি, কিছু ক্ষেত্রে মধ্যপন্থায় আবার কিছু ক্ষেত্রে এখন ও আগের মতই আছি । তবে নিজের নফসের সাথে সবসময় লড়াই করে ও ঠিকে থাকতে পারিনা। কারণ আমি শয়তানকে ছেড়ে দিলেও শয়তান আমাকে ছাড়েনি। ‘নতুন করে, নতুন উদ্যমে শুরু করা’ নিয়ে কিছু ভুলভ্রান্তির কারণে অনেকের কাছে আমি খোঁটা খেয়েছি। অথচ সেই দুমুখোরা কেবল খোঁচা দিয়ে নিজেদের আত্মাকে হয়ত ক্রমাগত নোংরা করতে থাকে। তারা নিজেরা যেমন পরিবর্তন হতে রাজি না, তেমনি কেউ পরিবর্তিত হতে চাইলে সেটা তাদের সহ্য হয় না। তারপর ও নতুন করে শুরু করার জিনিসটা একটা প্রেরণা যোগায়। হতে পারে নতুন ব্যবসা, বা নতুন বউ আনা, কিংবা নতুন সন্তানের জনক — এরকম যেকোন উপলক্ষ্যেই মনে করব যে নতুন জিনিসটা পাওয়ার রহমত আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, এই রহমত পাওয়ার সুন্দর সময়টার বদৌলতে আমি একদম শুধরে নিবো নিজেকে, হয়ে যাবো যেমন হতে চাই, যেমন হওয়া উচিত।
নিউ ইয়ার এলেই পত্রিকার প্রথম পাতায় বাঁধন নামের এক মেয়ের কাপড় নিয়ে টানাটানির দৃশ্যসমৃদ্ধ ছবি দেখেছিলাম, তখন ছোট ছিলাম বলে হয়ত বুঝিনি। তবে সেই বিভীষিকা এখনো স্মৃতিকে ধাক্কা দেয়। এরপর থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি নিউ ইয়ারে এরকম নোংরা ঘটনা দেখা যায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। উদ্দাম আনন্দ আর সীমারেখা — দুয়ের অভাবেই কেউ না কেউ, কোন না কোনভাবে অবশ্যই ইজ্জতকে পথের ধারে ফেলে রেখে আসছে। এই নিউ ইয়ার জিনিসটা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের একটা অংশের সৃষ্টি ছিলো প্রথমে — এটির উদযাপন জিনিসটাও ওদেরই সৃষ্ট। অন্য ধর্মের সৃষ্ট আনন্দ বিনোদনের দিনগুলোকে গ্রহণ করার ব্যাপারে হাদিস-কুরআনের রেফারেন্সে স্কলারগণ বড়দিন-নিউইয়ার পালনকে নিষিদ্ধ বা হারাম বলেছেন ।
৩১ শে ডিসেম্বর বিকেলে ডিএমপির মাইক পাবলিসিটিতে বিকেল ৫ টার পর সব দোকানপাট বন্ধ ও এই উপলক্ষে সব ধরণের অনুষ্ঠান বন্ধের কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম । মনে করেছিলাম আল্লাহ ডিএমপি কমিশনারকে আমার মত হেদায়েত করেছে । কিন্তু পরে যা বুঝলাম আসলে মুলত সেটা নিকুঞ্জের হোটেল #লা-মেরিডিয়ান ও রিজেন্সীর সুবিধার্থে করেছে । নিকুঞ্জ এলাকায় সব বন্ধ থাকায় অনেক ব্যাচেলর ছেলে রাতে ভাত খেতে পারে নাই অথচ এই ২টা হোটেলের আতশবাজি পুরো নিকুঞ্জ এলাকা গরম করে রাখছে।
যেসব ভাইরা নিজেদের মুসলিম মনে করেন তাদের জন্য কিছু কথাঃ
থার্টি ফার্স্ট নাইট এবং হ্যাপি নিউ ইয়ার (নববর্ষ) উৎযাপন করা মুসলিমদের সংস্কৃতি নয়। বরং এটা হচ্ছে বিজাতীয়-বিধর্মীয় কাফির, মুশরিকদের সংস্কৃতি।
মনে রাখতে হবে সংস্কৃতির নামে প্রচলিত কিছু রীতিনীতি এবং আচার-আচরণ, অনুষ্ঠান ইসলামের মৌলিক চিন্তা বিরোধী।
একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় বর্তমান সময়ের অধিকাংশ মুসলিম শুধুমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর চর্চা করা খাঁটি মুসলিম নয়। তারা হচ্ছে বিজাতীয়-বিধর্মীয় কাফির মুশরিকদের সংস্কৃতির চর্চা করা মিশ্রিত মুসলিম।
কাফির, মুশরিক, ইহুদী, খ্রিষ্টানদের (অমূসলিমদের) পালনকৃত উৎসব উৎযাপন করা হারাম। কেননা এইগুলো উৎযাপন করা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত নয়। আর যে সকল বিষয় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত নয় সে রকম কোন কিছু উৎযাপন করা মুসলিমদের জন্য হারাম।
এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা স্পষ্ট করে আমাদের বলে দিয়েছেন:- “রসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা গ্রহণ কর এবং যা দেননি যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।”
[সূরা হাশর -০৭]।
সুতরাং রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত নয় এ রকম কোন উৎসব মুসলিমদের উৎযাপন করা যাবে না। কারণ এগুলো বিধর্মীদের ধর্মীয় উৎসব আর মুসলিমদের জন্য বিধর্মীদের অনুসরণ করা সরাসরি হারাম।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও নাসারাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে, নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।”
[সূরা আল-মায়িদাহ-৫১],
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি- তামাসা ও খেলার বস্তু হিসাবে গ্রহণ করে তাদেরকে এবং কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর যদি তোমরা মুমিন হও।”
[সূরা আল-মায়িদাহ-৫৭]।
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য কোন সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য/সাদৃশ্য রেখে চলে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত।”
[আবূ দাঊদ হাঃ ৩৫১৪],
আব্দুল্লাহ বিন আমর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি অমুসলিম/অনারবীয় (কাফির) দেশে বসবাস করে সে যদি সে দেশের নববর্ষ মেহেরজান উৎযাপন করে এবং বাহ্যিকভাবে তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখে, এমনকি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে তাদের (কাফিরদের) সাথে হাশর করা হবে।
[বায়হাকী, সনদ সহীহ/বিশুদ্ধ, মাজমুয়াতুত তাওহীদ ২৭৩]।
সুতরাং নতুন বছরের আগমন এবং চলতি বছরকে বিদায় জানানো উপলক্ষে অনুষ্ঠানাদি করা বিধর্মীয় সংস্কৃতি। এগুলোর সাথে ইসলামের কোনরূপ সম্পর্ক নেই।
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম কখনো এসব পালন করেননি। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি বিধর্মীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে।”
[আবূ দাঊদ হাঃ ৪০৩১; মিশকাত হাঃ ৪৩৪৭]।
অতএব এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করার অর্থ হলো সরাসরি আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আদেশ অমান্য করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:- “তোমরা পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না।”
[সূরা আল-মায়িদাহ আয়াত নাম্বার:- ০২]।
©somewhere in net ltd.