![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজস্ব প্রতিবেদক
তারিখ: ১৫ মার্চ, ২০১৩
দেশের হাজার হাজার শিশু ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেও সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্জলা মিথ্যাচারের নেপথ্য কাহিনী ফাঁস হয়ে গেছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ওষুধ খেয়ে হাজার হাজার শিশু ভর্তি হয়েছে। তাদের অনেকেই এখনো মৃত্যুর সাথে লড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতবড় একটি ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সরকার যেন স্বীকারই করতে চাইছে না যে, এ ধরনের কোনো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে। সরকার প্রচার করছে শিশু অসুস্থ হওয়ার পুরো বিষয়টিই পরিকল্পিত ও গুজব। কিন্তু যেসব মিডিয়া সরকারের সাথে তালমিলিয়ে ঘটনাটিকে গুজব বলে প্রচার করেছিল, বিলম্বে হলেও সেসব মিডিয়াও এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে। তাদের লেখনির মধ্য দিয়েই এখন প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসছে।
যেখানে দেশের হাজার হাজার শিশু অসুস্থ হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছে সেখানে সরকারের ত্বরিত ব্যবস্থার পরিবর্তে পিঠ বাঁচানোর অপচেষ্টার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ নানা ধরনের আপত্তি ও অনিয়মের প্রমাণ সত্ত্বেও ভারতীয় কোম্পানি থেকে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হয়েছে শিশুদের খাওয়ানোর জন্য ভিটামিন-এ। আর এ ভিটামিন ক্যাপসুলের বাংলাদেশী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটির মালিক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
সূত্র জানিয়েছে, ভিটামিন ‘এ’ সরবরাহের পূর্বঅভিজ্ঞতা দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়া ভারতীয় প্রতিষ্ঠান অলিভ হেলথ কেয়ারকে কার্যাদেশ দেয়ার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের আপত্তিকেও পাত্তা দেয়া হয়নি। ভারতীয় অলিভ হেলথ কেয়ারের বাংলাদেশী এজেন্ট ঢাকার জনতা ট্রেডার্সের জনতা হেলথ কেয়ার। এ জনতা হেলথ কেয়ারের অন্যতম মালিক মাহবুব উল আলম হানিফ।
চতুর্দিক থেকে আপত্তি সত্ত্বেও অনভিজ্ঞ ভারতীয় অলিভ হেলথ কেয়ারকে কার্যাদেশ দেয়ার পেছনেও আওয়ামী লীগের এই শীর্ষস্থানীয় নেতার প্রভাব কাজ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশুকে। এই শিশুরা গত মঙ্গলবার ভিটামিন খাওয়ার পর থেকে বমি করতে শুরু করেছে। গতকাল রাতেও বমি অব্যাহত রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কোনো কোনো শিশুর সে দিন থেকেই জ্বর শুরু হয় এবং গতকাল পর্যন্ত তাদের জ্বর ছিল। সরকারি হাসপাতালে ভিটামিন খাওয়া এ শিশুদের ভর্তি করতে চাচ্ছে না। ফলে বেসরকারি হাসপাতাল অথবা চিকিৎসকদের চেম্বারে যেতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অন্য কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় অলিভ হেলথ কেয়ারকে কার্যাদেশ দেয়ার আগে যোগ্যতার সার্টিফিকেট জমা দিতে বললেও তারা সার্টিফিকেট জমা দেয়নি। ফলে ঠিকাদারি পাওয়ার আগেই অর্থ সরবরাহকারী বিশ্বব্যাংক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা ভিটামিন সরবরাহের জন্য ভারতীয় ‘অলিভ হেলথ কেয়ার কতটুকু যোগ্য’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু এসব আপত্তির প্রতি কান দেননি সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ’৭০-এর দশক থেকে বাংলাদেশ সরকার কানাডার ব্যানার ফার্মা করপোরেশন কাজটি যথাযথ যোগ্যতাসহকারে করে আসছিল। এবার ফার্মা করপোরেশনকে কার্যাদেশ না দেয়ায় তারা নিজেরা এবং আন্তর্জাতিক অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিস্মিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান অনানুষ্ঠানিকভাবে সরকারকে আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিল যে, যোগ্যতার সার্টিফিকেটবিহীন একটি কোম্পানিকে এমন স্পর্শকাতর ইস্যুতে কার্যাদেশ দিলে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই ‘কনভিন্স’ করানো যায়নি ভিটামিন সংগ্রহের সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, অলিভ হেলথ কেয়ারকে মনোনীত করার বিরুদ্ধে কানাডিয়ান ব্যানার ফার্মা করপোরেশনের বাংলাদেশের এজেন্ট এস এস সায়েন্টিফিক করপোরেশন বিশ্বব্যাংকের কাছেও এ ব্যাপারে অভিযোগ উত্থাপন করে তুলে ধরে। এটা নিয়ে পরে উচ্চ আদালতে রিটও করা হয়েছিল।
জানা গেছে, এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে ভিটামিন সরবরাহের জন্য যেসব যোগ্যতা থাকা দরকার অলিভ হেলথ কেয়ার তা জমা দেয়নি কোম্পানিটিকে বারবার তাগাদা দেয়ার পরেও। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) অবশ্য পালনীয় জিএমপি সার্টিফিকেটও ভারতীয় অলিভ হেলথ কেয়ার জমা দিতে পারেনি।
সূত্র জানিয়েছে, পরে অবশ্য অলিভ হেলথ কেয়ার দরপত্র দাখিলের প্রায় ছয় মাস পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি জিএমপি সার্টিফিকেট জমা দেয়। সেই সাথে নাইজেরিয়ায় ভিটামিন ‘এ’ সরবরাহের কার্যাদেশ জমা দেয়। আন্তর্জাতিক বিশ্বের খবর রাখেন এমন সবাই জানেন আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় চলছে চরম অরাজকতা। এই দেশটি বিশ্বের দুর্নীতিবাজ দেশের শীর্ষ তালিকায় অবস্থানকারী একটি দেশ। সেখানে টাকার বিনিময়ে সবই করা সম্ভব। সে দেশের কার্যাদেশ পাওয়ার কাগজ সরবরাহে অনেকের মনে সন্দেহ হয়। এমনকি বিশ্বব্যাংক তা প্রথমে আমলে নেয়নি।
অলিভ হেলথ কেয়ারের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পরে বিশ্বব্যাংক সিএমএসডিকে জানিয়েছিল যে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এর ক’দিন পরই আন্তর্জাতিক কোনো একটি শক্তি ও সেই সাথে ভারত সরকারের চাপের তাছে নতি স্বীকার করে বিশ্বব্যাংক ও কার্যাদেশ না দেয়ার যে চিঠি বিশ্বব্যাংক দিয়েছিল তা প্রত্যাহার করে নেয় এবং সিএমডিকে কার্যাদেশ দেয়ার জন্য সুপারিশ করে। কার্যাদেশ পেয়ে অলিভ সাড়ে ১৫ কোটি টাকা মূল্যমানের প্রায় ১০ কোটি পিস ভিটামিন সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। এভাবেই বাংলাদেশের হাজার হাজার শিশুর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে বিশ্বব্যাংক, ভারতীয় অলিভ হেলথ কেয়ার ও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের একটি মহল।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের (আইপিএইচএন) পরিচালকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=139664
©somewhere in net ltd.