![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৮১ সালে বাবাকে হারিয়েছি। তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। বাবার বেশ কিছু স্মৃতি আমার কাছে এখনো অম্লান। তারই একটি স্মৃতি আজ বন্ধুদের উদ্দেশ্যে উপহার দিতে চাই।
আমার বাবা স্বল্প শিক্ষিত কিন্তু ভারী সামাজিক মর্যাদা ও প্রচণ্ড ন্যায়বোধসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ন্যায় ও মর্যাদার পক্ষে তিনি খুব জেদীও ছিলেন।
আমাদের পাশের আটঘরা গ্রামে ঘানিতে নারিকেল, সরিষা, তিল, ইত্যাদি ভাঙানোর ব্যবস্থা ছিল। বাবা একদিন সেখানে নিজেদের গাছের নারিকেল ভাঙাতে গিয়ে দীর্ঘসময় সিরিয়ালে অপেক্ষার পর একটি বিষয় নিয়ে ঘানি মালিকের সাথে কথা কাটাকাটি হয় যাতে বাবা নিজের মর্যাদা হানি বলে বিবেচনা করেন। এক পর্যায়ে তিনি প্রতিজ্ঞা করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, “জীবনে তোমার বাড়িতে আর ঘানি ভাঙাতে তো আসবই না- এমনকি এ নারিকেলগুলো আমি আমার ঘানিতেই ভাঙাব ইনশাআল্লাহ।”
বাবা বাড়িতে এসে ভারী কণ্ঠে শুধু এটুকু বললেন, “নারিকেলগুলো রোদে দে”- বলেই তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। বুঝতে বাকী রইল না কিছু একটা ঘটেছে! দুপুর-বিকেল গড়িয়ে রাতে বাবা ঘরে ফিরলেন ঠিকই কিন্তু মূল রহস্য খোলাসা করে কিছুই বললেন না। পরের দিন ভোরে আবার তিনি বেরিয়ে গেলেন। দুপুরে রহস্যের জট খুলল। গরুর গাড়িতে করে বাড়িতে হাজির হলো ইয়া লম্বা এক ঘানি সাথে কয়েকজন শ্রমিক। সাথে সাথে জায়গা নির্ধারণ এবং তৎক্ষনাতই বাস্তবায়ন। উঠানের ঠিক মাঝখানে খনন কাজ শুরু হলো তবে রাতের মধ্যে শেষ হলো না। যতদূর মনে পড়ছে পরের দিন দুপুরে ঘানি স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয় এবং বিকেলেই আনন্দ করতে করতে নিজেরা টেনে সেই নারিকেল (আধা সম্পন্ন করে)ভাঙানো হয়। আমার সুস্পষ্ট মনে আছে, পরের দিনই কেশবপুর হাট থেকে ২৩০ টাকা দিয়ে একটি লাল গরু কেনা হয় ঘানি টানার জন্য। ইতোমধ্যে ঘানির ওপরে চালও স্থাপন করা হয়। ব্যস, শুরু হয়ে গেল গুরুত্বপূর্ণ এনালগ ঘানির ঐতিহাসিক যাত্রা-আত্মমর্যাদা রক্ষা ও প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তাই ছিল যার নির্মম সারকথা।
যতদূর মনে পড়ছে প্রায় মাস দুয়েক পর্যন্ত এ ঘানি আমাদের বাড়িতে বিদ্যমান ছিল। তারপর আবার তাকে বিদায় নিতে হয়। বিদায়ের দিন আমরা ভাইবোনেরা আপত্তি করেছিলাম, বলেছিলাম এটা থাক আমাদের বাড়িতে। বাবা বলেছিলেন, “পাগল! এটা কি স্থায়ী রাখার জন্য আমি এনেছি ?” বাবার সেই মর্যাদা বোধ ও সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা আজও আমাকে স্পর্শ করে- আমার মধ্যে তৈরি করে এক নিঃশব্দ উত্তেজনা। আমাদের মরহুম পিতা-মাতার আত্মার মাগফিরাতের জন্য সকলের নিকট দোয়া চাই।
২| ২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:৫১
বিজন রয় বলেছেন: আপনার বাবার জন্য শ্রদ্ধা।
আপনার জন্য শুভকামনা।
৩| ২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৫০
প্রামানিক বলেছেন: সুন্দর কাহিনীই বটে।
৪| ২৫ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩
শামছুল ইসলাম বলেছেন: //বিদায়ের দিন আমরা ভাইবোনেরা আপত্তি করেছিলাম, বলেছিলাম এটা থাক আমাদের বাড়িতে। বাবা বলেছিলেন, “পাগল! এটা কি স্থায়ী রাখার জন্য আমি এনেছি ?” বাবার সেই মর্যাদা বোধ ও সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা আজও আমাকে স্পর্শ করে- আমার মধ্যে তৈরি করে এক নিঃশব্দ উত্তেজনা। আমাদের মরহুম পিতা-মাতার আত্মার মাগফিরাতের জন্য সকলের নিকট দোয়া চাই।//
--- আমীন।
ভাল থাকুন। সবসময়।
৫| ২৫ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩
সুমন কর বলেছেন: আপনার বাবার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।
৬| ২৬ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:০৭
সৈয়দ আবুল ফারাহ্ বলেছেন: গরুর চোখ বেঁধে কাজ করাচ্ছে। আমাদের চোখ বেঁধে কেউ কাজ করায় ?
২৬ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:২৩
সালেহ মতীন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। গরুর চোখ বেঁধে কাজ করানোটা আমার কাছেও অনেকটা অনুচিত পর্যায়ের বলে বিবেচিত। তবে আপনার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও শ্রদ্ধা রেখে বলছি যে, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এনালগ ঘানির বিলুপ্তপ্রায় এই সভ্যতা বহু প্রাচীন কালের। চোখ বাঁধা অবস্থায় কোন প্রতিবাদ ছাড়াই গরু নামক গৃহপালিত এই পশুটি শত শত বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে অাসছে বলে তাকে ঘিরে একটি প্রবচনও তৈরি হয়েছে- ‘কলুর বলদ।’ সৃষ্টি হিসেবে না হলেও প্রাণী হিসেবে আমাদের ও গরুর মধ্যে বিবেক ও উপলব্ধিজাত কিছুটা তারতম্য বোধ হয় আছে। সেজন্য সম্ভবত গরুর চোখ বাঁধা, তাদের দ্বারা কঠিন পরিশ্রম করানোসহ অন্যান্য কাজে মানুষের চাইতে ভিন্ন আঙ্গিক অথবা পন্থা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে আমি মনে করি চোখ খোলা অবস্থায় গরুকে দিয়ে যদি দায়িত্ব পালনে কোন সমস্যা না হয় তবে চোখ বেঁধে দেয়া অবশ্যই অনুচিত। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
৭| ২৬ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৩৬
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভাল লাগল কাহিনিটা জেনে।
৮| ২৬ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:০৫
অদৃশ্য বলেছেন:
চমৎকার ঘটনা... আপনার পিতা-মাতার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া রইলো...
আমাদের পাশের গ্রামে একজন তেল ব্যবসায়ী ছিলেন... তার একটা ঘাঁনি ছিলো আমি ছোটবেলাতে মাঝে মাঝেই যেতাম সেখানে আর বলে কয়ে কিছুক্ষনের জন্য ঘাঁনিতে বসতাম... ঠিক আপনার ছবিতে যেমন কাঠের অংশটার উপর কয়েকটি পাথর দেওয়া আছে তেমন পাথর সেটাতেও ছিলো আমি তার উপর বসতাম আর ঘুরতাম... অল্প কিছুক্ষন ঘুরবার পরই আমার মাথা ঘুরানো শুরু করতো আর আমি আবারো বলে কয়ে আমাকে নামিয়ে দিতে বলতাম... এভাবে অনেকবার সেই মজাটা উপভোগ করেছি...
কিন্তু কিছুকাল পর থেকে একটা বিষয় আমাকে খুব ভাবাতে শুরু করলো, তা হলো, এই ঘাঁনি টানবার জন্য যে গরুগুলো ব্যবহার করা হয় তাদের কষ্টের বিষয়টা... এরা চোখ বন্ধ অবস্থায় কতোটা সময় ধরে ওজন সমেত একটি বস্তুকে নিয়ে ঘুরতে থাকে... এটা আমাকে ভাবাত... আমার ভালো লাগলোনা বিষয়টা... এটা ফিল করবার পর থেকে আমি আর কখনো ঘাঁনিতে উঠিনি বরং সেখানে গেলে যতক্ষন থাকতাম গরুটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতাম একপাশে দাড়িয়ে... আপনার ছবি ও ঘটনা আমাকে অনেক বছর পেছনে টেনে নিয়ে গেলো...
শুভকামনা...
২৬ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৩০
সালেহ মতীন বলেছেন: আমার ব্লগ কুটিরে বেড়াতে আসার এবং দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য আমাকে আরো পেছনে কিয়দক্ষণের জন্য অাটকে রাখল। আপনার জন্য সতত শুভ কামনা রইল। ভালো থাকবেন।
৯| ২৭ শে মে, ২০১৬ ভোর ৬:৪৩
নাইক্যডিয়া বলেছেন: ভালো লাগা
++++++++++
১০| ১২ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬
নাঈম রেজা বলেছেন: আপনার বাবার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। ভাল লাগল স্মৃতির কথা
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:৪১
চিন্তাহীন সামি বলেছেন: গরুটির চোখ বাঁধা অবস্থা দেখে খুব মায়া লাগল