![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি জানি আজ কালের মধ্যে আমার কাছে একটা ফোন আসবে। ফোনটা করবে একজন নারী। প্রতি বছরই এই দিনে ফোনটা আসে (বিগত ছয় বছর ধরে আসছে)। অপর প্রান্ত থেকে ভারী কন্ঠের কিছু কথাবার্তা। আসলে তাকে বলার মতো কিছু আমার থাকে না। কারণ আমি জানিনা একজন মা কে তার সন্তান হারানোর দু:খে কিভাবে সান্ত্বনা দিতে হয়?
২০০৭ সালের কথা। আমার অডিট পরীক্ষার আগের দিন রাতে হঠাৎ বাবু ভাইয়ের (আমাদের সিনিয়র কিন্তু রিএড নিয়ে আমাদের সাথেই পড়তো) ফোন যে রক্ত দিতে হবে। আমি বল্লাম আমার পরীক্ষা আপনি অন্য কাউকে বলেন। কিন্তু বাবু ভাই নাছোড় বান্দা, বল্লো জীবনে পরীক্ষা অনেক দিতে পারবা কিন্তু একসাথে দুইটা জীবন বাঁচানোর সুযোগ সবসময় পাবে না। এছাড়া রোগীর অবস্থা সিরিয়াস। এক ব্যাগ এ কিছু হবেনা ৩-৪ ব্যাগ লাগবে তাই পরীক্ষার পর রক্ত দিতে হবে। অগত্যা পরীক্ষার পর গেলাম বাবু ভাইয়ের সাথে রক্ত দিতে। গিয়ে দেখি হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে এক নারী! রক্ত শূন্যতারর কারণে তাকে আরো ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে! পাশে তার স্বামী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হবে অপারেশন থিয়েটারে।
রক্তের স্যাম্পল দেয়ার পর ম্যাচিং এর জন্য কিছু সময় লাগে। তখন কথায় কথায় জানতে পারি ছেলেটির নাম চন্দন এবং মেয়েটির নাম অপর্না। তারা ক্লাসমেট ছিল এবং নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করে। কোন পরিবারই এই বিয়ে মেনে নেয়নি। টিউশনি করে কোন রকমে সংসার চালাতো তাই স্ত্রীর দিকে খেয়াল রাখতে পারেনি। একেতো অভাবের সংসার তার উপর মেয়েটার যত্ন করার বা সময়মতো খাওয়া দাওয়া করানোর মানুষ ও ছিলোনা। তাই অবহেলা অযত্নে মেয়েটার আজ এই অবস্থা!
অপর্ণাকে নিয়ে যাওয়া হলো ওটিতে। আমার রক্ত নেয়া হলো কিন্তু বাবু ভাই আরেকজন যে ডোনার নিয়ে আসছিলেন তার রক্ত ম্যাচ করেনাই।
কিছুক্ষণ পর অপারেশন থিয়েটার থেকে কান্নার আওয়াজ পেলাম। একজন নার্স এসে বলে গেলো মেয়ে হইসে।এরপর ডাক্তার বের হয়ে বলে গেলো আরো দুই ব্যাগ রক্ত রেডি রাখতে। এটা শুনার পর বাবু ভাই কে আরো চিন্তিত মনে হলো আর চন্দন দা পুরাই দিশেহারা! চন্দন দা মনে হয় এখানের সবকিছু ভালোমতো চিনে না। তাই বাবুভাই আর চন্দন দা গেল ব্লাড ব্যাংকের দিকে। এরই মধ্যে একজন নার্স একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে এসে হাজির। সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু যে এতো সুন্দর হতেপারে আমার ধারণাই ছিলোনা। আমি বাচ্চাটাকে কোলে নিতেই দেখি বাচ্চাটা মিটমিট করে আমার দিকে তাকালো। গাল দুটো আপেলের মতো টকটকে লাল। মাথা ভর্তি চুল।যে আমি কিনা বাচ্চা কোলে নিতে ভয় পেতাম সেই আমারই কিনা বাচ্চাটাকে কোল ছাড়া করতে ইচ্ছা করছে না।একটা অদ্ভুত মায়া পড়ে গেছে বাচ্চাটার জন্য।
বাচ্চাটাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। একটা নাম দরকার।তার বাবা মা তার জন্য কি নাম ঠিক করে রেখেছিল জানি না।যেহেতু এটা তাদের প্রথম সন্তান, তাই বাচ্চাটাকে আমার দেয়া সূচনা নামেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এইদিকে চন্দন দা আর বাবু ভাই রক্তের ব্যবস্থা করতে ব্যার্থ।এমন অবস্থায় আমি আমার বড় ভাইকে ফোন দিলাম যে ভাই একজন মুমূর্ষু রোগী কে বাঁচানোর জন্য রক্ত লাগবে। আমার ভাই আগে কখনো রক্ত দেয়নি তাই ও কিছুতেই রাজি হয়না। শেষে বাবু ভাইয়ের সেই বিক্ষাত ডায়লগে বড় ভাই রাজি হলো। এবার ফোন দিলাম আমার আরেক বন্ধুকে যার বাবার অপারেশনের সময় আমি রক্তদান করেছিলাম। ও আর আমি একাধিক বার একত্রে রক্তদান করেছি। তাই ও আর না করলো না। রক্তদান শেষে আমি আর আমার বড়ভাই বাসায় চলে আসি। দুদিন পর আরেকটা পরীক্ষা আছে তার প্রিপারেশন নিতে হবে।
বাসায় আসার পরও মনের মধ্যে একটা আনন্দের অনুভূতি কাজ করছিলো। সারাক্ষণ বাচ্চাটার চেহারা চোখের সামনে ভাসতে থাকে। পরদিন আমি নিজেই চন্দন দা কে ফোন দিলাম কি অবস্থা জানার জন্য। দাদার কাছ থেকে যা শুনলাম তা মোটামুটি দুঃসংবাদ ই। অপর্ণার অবস্থা একটু ভালো কিন্তু বাচ্চাটা ভালো নেই। ইনকিউবেটার এর মতো একটা যন্ত্রের মধ্যে রেখে তাপ দেয়া হচ্ছে। এটা শুনার পর মনটা খারাপ হয়েগেল।
পরদিন পরীক্ষার দিয়ে সোজা পিজি হাসপাতালে চলে গেলাম। অপর্ণা বৌদির অবস্থা কিছুটা ভালো কিন্তু সূচনার কোন উন্নতি হচ্ছেনা। নার্সদের মধ্যে আলাপ করতে শুনলাম এই ওয়ার্ডের সবচেয়ে সুন্দর বাচ্চা হচ্ছে সূচনা। অথচ তার কি না এই অবস্থা?
ডাক্তার নার্সদের সকল প্রচেষ্টা এবং আমাদের সকল প্রার্থনা কে ব্যার্থ করে দিয়ে সূচনা পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।(মাত্র চারদিনের অতিথি অক্টোবর ১৫ থেকে ১৯)। কিন্তু এই চার দিনে এই পৃথিবীর এতগুলো মানুষের বুকে যে মায়া লাগায় যায় তা কখনো ভুলা সম্ভব না।
সূচনা, চন্দন দা বা অপর্ণা বৌদি কেউ আমার কোন আত্নীয় না, পূর্ব পরিচিত ও নয়। কিন্তু তবুও সূচনা আমাদের মধ্যে এক অদৃশ্য বন্ধন তৈরি করে দেয়। আমার সাথে কোন রক্তের সম্পর্ক না থাকে সত্যেও আমার যে খারাপ লাগা তা দিয়ে হয়ত খুব সামান্য ই অনুভব করতে পারি যে একজন মার কাছে তার সন্তান হারানোর ব্যাথা কেমন? হোক সেটা চারদিন, চার মাস, চার বছর! মাকে তো তার সন্তান কে ঠিক ই ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করতে হয়!
তাই একজন মা তার সন্তানের জন্য করা সামান্য একটু উপকারের জন্য চিরদিন কৃতজ্ঞ অথচ আমরা আমদের মার প্রতি কতইনা অকৃতজ্ঞ!
২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৪১
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: স্পর্শী...........
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৬:২০
Shahjahan Ali বলেছেন: আমরা কেউ কারোর নই, আবার সবাই সবার। এই রক্তদাতাদের দেখলেই বোঝা যায় দেশে এখনো মানুষ আছে। যারা নিঃস্বার্থ।