![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ, আমরা প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছি এক বিবর্ন সভ্যতায় ।
ছোটবেলায় যখন হাটে গরু কিনতে যেতাম তখন হাটের সব থেকে বড় গরুগুলোর দিকে চোখ থাকত। মনে মনে ভাবতাম ইস্ এই গরুটাকে যদি নিতে পারতাম কত ভালই না হত। কিন্তু মধ্যবিত্ত ফ্যমিলির সদস্য হিসেবে চোখে দেখা এবং কল্পনা করা পর্যন্তই সন্তষ্ট থাকতে হত। অর্থনৈতিক সামর্থ অনুযায়ী বাবা সব্বোর্চ চেষ্টা করতেন যতটুকু পারা যায় বড় গরু / দামী গরু কিনতে। আমরাও নতুন গরু পেয়ে দারুন খুশি, ইচ্ছা মত লতা-পাতা সংগ্রহ করে খাওয়ানো, বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া আরো কত কি। দুই তিন দিনেই তার সাথে এমন ভাব হয়ে যেত যেন বাংলা ছবির মত জনম জনমের প্রেম!! অন্যদিকে সমাজের কিছু সংখ্যক উচ্চবিত্তরা কে কত সংখ্যক কতটা দামি গরু কিনতে পারে তার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হত । একটা সময় সমাজের লোকেরাও বলাবলি করতে থাকে অমুক লোক অত টাকা দিয়ে গরু কিনেছে। লোক মুখে এসব বিশেষন শুনে মালিকপক্ষও তৃপ্তির ঢেকুর তুলত । তারা গরু লালন পালনের জন্য লোক নিয়োগ দিয়েই রিটায়ার্ড নিত।
একটা কথা পরিস্কার করা দরকার আমরা কোরবানী দেই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী এখানে কে কত বড় কত দামী পশু কিনল সেটা কোন বিষয় না । বিষয়টা হল আপনার সামর্থ্য যদি থাকে ১০০০০/৫০০০০ টাকা আর আপনি যদি সে অনুযায়ী পশু কোরবানী দেন তবে আশা করা যায় মহান আল্লাহর কাছে আপনি পরিক্ষায় পাশ করবেন (ইনশাল্লাহ)। এখানে কম দামের কারনে আপনার সওয়াবের কোন হের ফের করা হবে না । কিন্তু যদি লোক দেখানোর জন্য টাকা ধার করেও বড় পশু কিনেন সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। সর্বপ্রথম কথা হল নিয়ত পরিস্কার থাকতে হবে, আপনাকে বুঝতে হবে কোরবানী দিচ্ছেন আল্লাহর জন্য সমাজের লোকেদের দেখানোর জন্য নয়।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) যখন আল্লাহর আদেশে কোরবানী দিতে গিয়েছিলেন তখন দুনিয়ার কোন মানুষ জানত না। অথচ তার এই কোরবানী আল্লাহ সবথেকে বিশুদ্ধভাবে কবুল করেছেন । এখানে দাম, আকার, সংখ্যা এসব কোন কিছুরই মূল্য নেই আল্লাহ শুধু দেখবেন আপনার নিয়ত কতটা বিশুদ্ধ ছিল।
কমবেশি আমরা অনেকেই একটা বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার চেস্টা করি, আর সেটা হল কোরবানীর গোশস্ত বিতরনে ক্ষেত্রে অনেকেই নিজের ফ্রিজের ডিপটাকেই আগে প্রাধান্য দেই। আল্লাহ আপনার গোস্ত নেয়ার জন্য বসে নেই এটা আপনারই থাকবে । আপনাকে শুধু উনার নিয়মানুযায়ী এটা বন্টন করতে হবে। সমান তিন ভাগের এক ভাগ আপনি রাখবেন বাকি দুই ভাগ প্রতিবেশী আত্মীয় ও গরীব মিসকিনদের দিয়ে দিতে হবে। এখানে আপনার মনের মাধুরী মেশানের কোন সুযোগ নেই। গরিব লোকজন যখন আপনার দরজায় কড়া নাড়ে তখন সবথেকে নিম্নমানের গোস্ত টুকরাগুলো তাদের জন্য বরাদ্ধ করে রাখবেন, আর নিজের পরিবারের জন্য ভাল অংশের ভাগটা সংরক্ষিত থাকবে এমন মানসিকতা থেকে মুক্ত না হলে এটা আপনার জন্য শুধু একটা পশু জবাই করাই হয়ে থাকবে কোরবানী বলে গন্য হবে না। পশু কোরবানীটা একটা প্রতিকি মাত্র এখানে আপনার মনের খারাপ ইচ্ছা, লোভ-লালসাকে কতটা কোরবানী করতে পেরেছেন সেটাই মূখ্য বিষয়।
আপনাকে বুঝতে হবে কোন খেলায় কষ্ট করে জিতে ক্রেষ্ট পাওয়া আর দোকান থেকে কিনে ক্রেষ্ট ঘরের ভিতর সাজিয়ে রাখা এক বিষয় না। আপনি কোরবানি আসল টোন টা বুঝতে না পারলে পশু কিনে জবাই করতে পারবেন কিন্তু সেটা দোকান থেকে ক্রেষ্ট কেনার মতই একটা বিষয় হবে। খেলায় জিততে হলে আপনার মনের খারাপ ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাড়ানোর মত সৎ সাহস থাকা চাই।
সবশেষে বলতে চাই, এগুলো নতুন কোন কথা নয় এসব আমরা ছোটকাল থেকেই শুনে আসছি কিন্তু কোরবানি করা পশুর টাটকা গোস্ত দেখা মাত্রই সব নীতিকথা আমাদের মন থেকে কর্পূরের মত উড়ে যায়। সেখানেই আমাদের নৈতিকতার, বিবেকের ও ধর্মীয় মূল্যবোধের পরাজয় ঘটে বার বার।। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরবানীর মহাত্ম বুঝার তৌফিক দান করুক।
©somewhere in net ltd.