নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে একা রাখতেই বেশি পছন্দ করি, তারপরও মাঝে মাঝে এক অদৃশ্য অস্তিতকে উপলদ্ধি করি।

বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, হারিয়েছি আবেগ।

বিবর্ন সভ্যতা

বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ, আমরা প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছি এক বিবর্ন সভ্যতায় ।

বিবর্ন সভ্যতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সামর্থ্য থাকার পরও যদি কেউ খালি হাতে দাওয়াতে যান, তো সেটা হয়ে থাকবে এক অসাধারণ উদাহরণ!

০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৩

মেয়ের মায়ের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী মেয়ের বিয়েতে আসবেন না। অথচ তিনি আজীবন মেয়েটিকে ভালবেসেছেন নিজের মেয়ের মত করেই। তাঁদের দুই বান্ধবীর দুই মেয়ে সমবয়সী এবং ফ্রেন্ড! বান্ধবীকে প্রশ্ন করাতে তিনি বুঝিয়ে বললেন, “আমি কী দিবো তোর মেয়েকে? আমি জানি তুই কিছুই মনে করবি না, তবু এত মানুষ আসবে, আমি কিছুই দিত পারবো না, কিভাবে যাই?” তাঁকে বার বার আশ্বস্ত করা হল যে বিয়েতে গিফট আনতে নিষেধ করা হয়েছে। তিনি সেই বিয়েতে যান এবং পরবর্তীতে বলেন যে জীবনে প্রথম একটি বিয়েতে তিনি নিশ্চিন্ত মনে গিয়েছেন, তাঁর ভাবতে হয়নি যে কী নিতে হবে!

আরেকটি বিয়েবাড়ি। বিয়ের পরের দিন সকাল বেলা বর উঠে দেখেন ড্রয়িং রুমে কিসের যেন লিস্ট পড়ে আছে! দেখে তিনি রাগে তা কুটি কুটি করে ছিঁড়লেন! কী ছিল ওতে? কে বিয়েতে কী গিফট দিয়েছে তার লিস্ট! কেন? কারণ যে যা দিয়েছেন, তার সমমূল্যের জিনিস তাঁদের ছেলেমেয়েদের বিয়েতেও দিতে হবে যে! সাধ্য থাকুক, সাধ্য না থাকুক, দিতেই হবে! আর এই চক্র চলতেই থাকবে!
একবার চিন্তা করুন যেই লোকটা (হয়তবা আপানারই অতি নিকটআত্মিয়) সামর্থর অভাবে আপনার কোন অনুষ্ঠানে আসতে হলে তাকে ৭ দিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয় কি নিয়ে যাবে, আর সেই টাকা কিভাবেই যোগার করবে? কারন আপনার সেই সম্ভাষন গেটে আপনি লিষ্ট করছেন কে কি মূল্যের উপহার দিচ্ছে সহজভাবে বললে কার স্ট্যটাস কি সেটা আপনি টাকার বিনিময়ে মাপতে বসেছেন !! এখন আপনার ঐ অত্মিয় আপনার স্ট্যাটাসের সাথে গিফট আইটেমের ব্যালেন্স মেলাতে না পারলে তার সমাজে সম্মান রাখাই দায় !! এই দুঃচিন্তায় তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে কিছুদিন আগে থেকেই।

সারাজীবন দেখেছি মানুষের বাসায় দাওয়াতে যাওয়ার সময় কিছু না কিছু নিয়ে যেতে হয়। কোনদিন সেটাকে বোঝা মনে হয়নি। কারুর বাসা থেকে কিছু খাবার আসলে বাটিটা আমরা ভরে ফেরত দেই। একজন ছিলেন, সবাইকে অনুরোধ করতেন এমনটা না করার। কারণ তিনি খুব ডিপ্রেশানে ভোগেন। তাঁর অসুখটা বাইরে থেকে মানুষ বুঝতে পারে না। কিন্তু তাঁর কিছু করতে খুব কষ্ট হয়। হ্যাঁ, তিনিও করেন, যখন সুবিধা, তখন করেন। কিন্তু মানুষের বাটি ভরে ফেরত দিতেই হবে, এই বোঝা বহন করা তাঁর মানসিক অবস্থায় সম্ভব না! আমিও তখন ভেবেছি, সত্যিই তো– শুধু ডিপ্রেশান কেন, অনেক কারণেই কেউ না পারতে পারেন। এসব যখন নিয়ম হয়ে যায়, তখন তো মুশকিল! ঠিক কতখানি মুশকিল তা আমি বুঝেছিলাম একজনের কথায়। তিনি বলছিলেন, এসব ফ্যামিলি থেকে আসতে হয়। ফ্যামিলিতে যদি কেউ দেখে যে বাবা মায়েরা এসব করছেন, তাহলেই না করতে শিখবে! আমি আঁতকে উঠেছিলাম। আমিও তো পরিবারে অনেক কিছুই দেখেছি। কিন্তু আমি কোনও সামাজিকতা রক্ষায় ভুল করলেই কি বংশের দোষ উঠে আসবে??
তখন আমি শুরু করেছিলাম disposable জিনিসে মানুষের বাসায় খাবার দেয়া। বাটি ফেরত দেয়ার দায়বদ্ধতা নেই! যখন মনে চাইবে, তখন কিছু দিলে সে ভিন্ন কথা। আর হ্যাঁ, লজ্জা লাগলেও, আমিও খালি বাটিই ফেরত দেই। লজ্জাটা তো আসে অভ্যাস থেকে। আসলে তো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই! আমার যখন মনে চাইবে, আমিও নিশ্চয়ই দিবো!

বলতে থাকলে, এমন টুক টাক অনেক কিছু বলা যাবে, যা আমরা প্রতিনিয়তই করি, অন্যের ওপর তার কী প্রভাব পড়ে তা না ভেবেই! ধরুন কারুর সামর্থ্য আছে যে ২০০০ টাকার মিষ্টি নিয়ে যাবে কারুর বাসায় দাওয়াত খেতে। যার বাসায় যাচ্ছেন, তার জন্য হয়ত ৫০০ টাকার মিষ্টি কোথাও নেয়াটা সাধ্যের অতিরিক্ত! যিনি নিলেন ২০০০ টাকার মিষ্টি, তার উদ্দেশ্য কাউকে ছোট করা না, নিজের লেভেল অনুযায়ী presentable কিছু নেয়া। কিন্তু যার জন্য নিলেন, তাঁকে যদি দাওয়াত করেন ভবিষ্যতে, তিনি হয়ত “যোগ্য” কিছু হাতে করে নিতে হবে সেই দুশ্চিন্তাতেই দাওয়াতে যাবেন না! সবাই চায় ভালো কিছু নিতে, নিজের সম্মান বজায় রাখতে। কিন্তু সম্মান যখন সাধ্যের বাইরে মূল্যবান হয়ে ওঠে, তখন কী করবে?
খেয়াল করে দেখলেই দেখা যাবে, এভাবে অনেক কাছের মানুষই দূরে চলে যায়! অন্যের কথা বাদ দেই, “নিতেই হবে” ব্যাপারটা কি আমাদের নিজেদের কখনোই বোঝা মনে হয় না? আজকাল তো ৫০০ টাকার কমে মিষ্টিই নেয়া যায় না কোথাও! খুব ভালোবেসে নিলে ভিন্ন কথা, কিন্তু নিতেই হবে ভেবে নিলে চাপ কি পড়ে না? একটা ছেলে যখন বিয়ে করে, স্বাভাবিক ভাবেই জীবনের শুরুতে হাতে একগাদা টাকা থাকে না। তখন প্রতি দাওয়াতে তাকে দই মিষ্টি নিতে হবে— এটা যে তার ওপর কত বড় বোঝা–সেকথা কি কারুর মনে আসে? বরং কোথাও স্ট্যান্ডার্ড মত কিছু না নিলে আড়ালে কত কথা হবে!

হ্যাঁ, হয়ত বলবেন ভালোবেসে কেউ কারুর জন্য কিছু নিলে কী সমস্যা? নাহ, কোনও সমস্যা নেই। কেবল ভালবাসার সংজ্ঞাটা যে কিছু নিবে, তার ওপর ছেড়ে দেয়াই কি ভালো না? সেটা কি করা হয়? সমাজ ঠিক করে কার বাড়িতে কী নেয়াটা স্ট্যান্ডার্ড! সমাজ! ফলে, একসময় “তোমার সমাজে তুমি থাকো, আমার সমাজে আমি” — এই বিভক্তিটা তৈরি হয়! যাদের সামর্থ্য আছে, তারা কিন্তু এই নিয়মটা ভাংতে পারে খুব সহজে! কারণ, দুনিয়ার হিসাবে তারাই সমাজের মাথা!
আজকে সামর্থ্য থাকার পরও যদি কেউ খালি হাতে দাওয়াতে যান, তো সেটা হয়ে থাকবে এক অসাধারণ উদাহরণ! সমালোচনা করবে লোকে। করুক। কিন্তু কালকে তাঁর দাওয়াতে স্বল্প আয়ের একটি পরিবার যেতে পারবে মাথা উঁচু করে!! আজকে সুস্থ থেকেও যদি আমি মানুষের বাটি খালিই ফেরত দেই, কালকে আরেকজন অসুস্থ ভাবী আমাকে বলতে পারবেন, ভাই আমি তোমার বাটিটা খালিই পাঠালাম, আমার শরীরটা ভালো নেই! আজকে সামর্থ্য থাকার পরও যদি আমরা বিয়ে বাড়িতে খালি হাতে যাই, কাল আমাদের ছেলে মেয়েদের বিয়েতে একজন হয়ত হাল্কা মন নিয়ে আসবেন!

আবারও, আমি বলছি না আমরা উপহারের আদান প্রদান বন্ধ করে দিবো! মনে চাইলেও কারুর জন্য কিছু করবো না! একশো বার করবো! কিন্তু, কোনকিছুকে বাঁধা ধরা নিয়ম বানিয়ে করবো না! প্রথা বানিয়ে ফেলবো না! আমাদের কাজ যেন অন্যের জীবনটা জটিল করে না দেয়, সেদিকে একটু খেয়াল রাখবো! নিয়ম না বানিয়েও ভালবাসার আদান প্রদান সম্ভব! আমরা সেটার জন্য চেষ্টা করতে পারি!
হয়ত কথাগুলো খুব ছোট মানসিকতা তুলে ধরল। জানি না। কিন্তু আমি দেখেছি মানুষকে নিয়ম রক্ষা করতে যেয়ে কষ্ট করতে, কষ্ট পেতে। দেখেছি কিভাবে আত্মীয় আত্মিয়ের কাছ থেকে দূরে সরে যায় ভালবাসার মূল্য পরিশোধ করার সামর্থ্য না থাকার কারণে! তাই মনে হয়েছে, দিন বদলের সময় এসেছে! জীবনটা সুন্দর! নিজের জন্যে হোক বা অন্যের জন্য, অযথা সবকিছু কঠিন করে দেয়ার তো কোনও প্রয়োজন নেই! নিয়ম-প্রথা এসবের চেয়ে ভালবাসার মানুষগুলো যে অনেক, অনেক দামী! অনেক দামী সেই সম্পর্কগুলো!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩২

ইকরাম উল হক বলেছেন:




হয়ত কথাগুলো খুব ছোট মানসিকতা তুলে ধরল। জানি না। কিন্তু আমি দেখেছি মানুষকে নিয়ম রক্ষা করতে যেয়ে কষ্ট করতে, কষ্ট পেতে। দেখেছি কিভাবে আত্মীয় আত্মিয়ের কাছ থেকে দূরে সরে যায় ভালবাসার মূল্য পরিশোধ করার সামর্থ্য না থাকার কারণে! তাই মনে হয়েছে, দিন বদলের সময় এসেছে! জীবনটা সুন্দর! নিজের জন্যে হোক বা অন্যের জন্য, অযথা সবকিছু কঠিন করে দেয়ার তো কোনও প্রয়োজন নেই! নিয়ম-প্রথা এসবের চেয়ে ভালবাসার মানুষগুলো যে অনেক, অনেক দামী! অনেক দামী সেই সম্পর্কগুলো!


কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরলেন। (কিন্তু মন্তব্য লিখছি আর ভাবছি আপনাকে সমর্থন করায় আমিও ছোট লোক হয়ে গেলাম নাতো !! )
আমাদেরই তো (ব্লগার) দায়িত্ব এসব প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে কথা বলার ।


০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৪১

বিবর্ন সভ্যতা বলেছেন: ভাই এই বিব্রতকর মানষিকতার জন্যই আমরা সম্পর্ক গুলো নষ্ট করছি প্রতিনিয়ত । যেদিন সবাই এই বিষয়টাকে সহজভাবে নিতে পারব সেই দিন সম্পর্কর এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে ইনশাল্লাহ ।

২| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৩

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সিদ্ধান্তে আসা খুব কঠিন। উপহার দিতেও কষ্ট হয় আবার না পেলেও অনেকে কষ্ট পায়। এ এক জটিল সমস্যা। তবে প্রকৃত বন্ধু, আত্মীয় স্বজন কখনো মন খারাপ করা উচিত না এসব ব্যপারে...

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৪৪

বিবর্ন সভ্যতা বলেছেন: মানুষের মন এক অদ্ভুদ বিষয় কখন যে কোন ইস্যুতে মাইন্ড করে বসে বোঝা বড় দায়। তাই মাইন্ড করতে পারে এমন সম্ভাব্য ইস্যুগুলো এড়িয়ে চলাই নিরাপদ মনে করি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.