নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাশেদ রায়হান

রাশেদ রায়হান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন পুরুষ বা একজন পিতা

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৬

২০০৪ সালের কথা। মাসের নামটা ঠিক মনে নেই। আমি কখন ঢাকায় নতুন। থাকি মামার বাসায়। যেমন থাকা যায় আর কি। আমার মেয়ের জন্মের পর প্রথম ঈদ। দুইটা টিউশনি করে পেতাম ৪০০০ টাকা। এতোগুলো টাকা একবারে আগে সম্ভবত হাতে ধরে দেখিনি কখনো। আমিতো মহা খুশি! বাড়িতে যাবো ঈদ করতে, বউ আর মেয়ের জন্য নতুন পোশাক কিনে নিয়ে যাবো! আমি তখন ভীষণ রোমাঞ্চিত। মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে হতকারদের দোকান থেকে বউ এর জন্য একটা থ্রি-পিচ কিনলাম। কাপড়টা আমার আগেই পছন্দ ছিল। রোজ দেখতাম আর ভাবতাম, বেতন পেলে বউ এর জন্য ঐ কাপড়টাই কিনবো। সত্যি সত্যি কাপড়টা এক সপ্তাহ পরেও ছিল। চুড়িদার কাপড়ের ওপর বাটিকের কাজ। রঙটা ছিল খয়েরি। ওর গায়ের রং কালো। তাই খয়েরিতে ওকে দারুন মানায়। বাসায় ফিরে বারবার কাপড়টা ধরে ধরে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, ওকে কেমন মানাবে, ও দেখে নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে-এসব।

এবার মেয়ের পোশাক কেনার পালা। মিরপুর-১ থেকে মেয়ের জন্যে একটা পোশাক কিনলাম। দাম ১৩০ টাকা। সাদা জর্জেটের ওপর লাল-লাল ফুল। আমারতো খুবই পছন্দ হলো। মহা আনন্দে বাড়িতে গেলাম। যেতে যেতে ভাবছিলাম ও নিশ্চয়ই দেখে খুব খুশি হবে। বিয়ের পর এই প্রথম আমার নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে ওর জন্য পোশাক কিনেছি। কিন্তু কপালে বিপত্তি থাকলে আর কি করা। পোশাক পছন্দ হেলেও আমার সাড়ে ৫ ফিট উচ্চতার বউয়ের গায়ে পোশাক হলো ছোট (বর্তমানের স্টাইল হলে ওটাই সাইজে নিশ্চিত বড় হতো)। আর মেয়েরতো এখনো বোঝার বয়স হয়নি। কিন্তু বাড়ির সবাই বলল পোশাকটা নাকি অসম্বব সুন্দর হয়েছে। সত্যিই সেবার ঈদ খুব ধুমধাম করে কাটিয়েছিলাম।

এখন ২০১৫ সাল। আবার সেই রোজার ঈদ। আমার ছোট্ট সেই মেয়ে এখন নিজেই পছন্দ করে, কালার ম্যাচিং করে পোশাক কিনতে পারে। দামটাও লাগে আগের চেয়ে ২৫-৩০ গুণ।(উপার্জনও আগের চেয়ে ১০-১২ গুণ বাড়ার কারণে সমস্যা হয় না।) মেয়ে এখন তার পছন্দ করা, ডিজাইন করা পোশাক পরে আমার সামনে হাঁটে। ভালোই লাগে। মনে হয়, এইতো সেদিন ঢাকায় এসেছিলাম সচ্ছলতার সন্ধানে। এখন আমি একজন পরিপূর্ণ সংসারি মানুষ।

ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। মা’র কাছ থেকে কান্নাকাটি করে ৫টা টাকা নিয়ে কত কিছু কিনে খেতাম! মা হয়তো ২৫ পয়সা বা ৫০ পয়সা করে জমানো টাকাটাই দিয়ে দিত।

এখন আমিও একজন জন্মদাতা। জানিনা পিতা হতে পেরেছি কি না। তবে, রাতে বাসায় ফেরার সময় ক্লান্ত শরীরে অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে রিকশা ভাড়া বাঁচিয়ে মেয়ের পছন্দের ফুচকা বা চটপটি নিয়ে যখন বাসায় ফিরি তখন মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে, ওর হাসি মুখটা দেখে পথের সব ক্লান্তি কোথায় যেন হারিয়ে যায়!! এ এক অদ্ভুত ভালো লাগা। আহা! জীবনটা বোধয় এমনই। কোন এক লেখক তার এক লেখায় বলেছিলেন, “জন্মে দিলেই জন্মদাতা হওয়া যায়। আর পিতা হতে হয় দায়িত্ব পালন করে।” আমি পিতা হব, এটাই যেন এখন আমার ব্রত।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৭

রাশেদ রায়হান বলেছেন: মন্তব্য খারাপ হলেও বুঝবো, কেউ তো পড়েছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.