নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাশেদ রায়হান

রাশেদ রায়হান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেকার স্বপ্নবিলাসী

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৭

ক্লান্ত হিমেল বিমর্ষ হৃদয়ে বের হলো ‘ফরেন এন এম বায়িং হাউজ’ থেকে। পরিশ্রান্ত বেচারা ১১ নং মেইন রোড ধরে হেঁটে হেঁটে মেসে ফিরছে। পকেটে সর্ব সাকুল্যে মাত্র ২৪ টি টাকা। রিকশা ভাড়া দিলে শেষ হয়ে যবে। তাই অগত্যা হেঁটে হেঁটেই বাসার অভিমূখে যাত্রা।

এ পর্যন্ত কম তো ইন্টারভিউ দিলাম না। এ জীবনে চাকরি বাকরি কি আমার সত্যিই হবে না? এদিকে নিলার কড়া হুশিয়ারি, “তাড়াতাড়ি কিছু একটা কর। তা না হলে কিন্তু আমাকে আর পাবা না।” এসব ভাবতে ভাবতেই হিমেলের মনটা আরো খারাপ হতে থাকে। তাছাড়া বেশ কয়েকদিন ধরে নিলা সহজে ফোন ধরতে চায় না। ধরলেও নানান রকম তাল বাহানায় ফোন কেটে দিতে চায়। অথচ বেশ কয়েকদিন আগে ওর বারংবার ফোনের যন্ত্রনায় হিমেলই নানান বাহানা করে ফোন রাখতে চাইতো। সময়ের পরিবর্তনে সবকিছুই বদলে যাচ্ছে। তবে এতো দ্রুত সব বদলে যাবে হিমেল সেটা ভাবতেই পারছে না।

একগাদা চিন্তা, টেনশন মাথায় নিয়ে হিমেল বাসায় পৌঁছল। ক্লান্ত শরীর। তার উপর প্রচন্ড ক্ষিধেও আছে। কিন্তু ও কিছু না খেয়েই থাকবে ঠিক করলো। গেট খুলে ভিতরে ওর রুমে নক করলো। ভিতর থেকে আটকানো! কিন্তু ওর রুমমেট তো গ্রামের বাড়িতে। ওরতো আজ বাসায় ফেরার কথা নয়। আজ সকালেও ওর সাথে হিমেলের কথা হয়েছে। ফিরবে আগামী পরশু। তাহলে ভেতরে কে? পাশের রুমের কেউতো ওর রুমে কখনো উঁকিও দেয় না। কে হতে পারে। হিমেল আবার একটু জোরেই ধাক্কা দেয়। দরজাটা এমনিই খুলে যায়।
- একি নিলা, তুমি?
- কেন? আমি কি আসতে পারি না?
- না, মানে.........
- এতো মানে মানে করতে হবে না।
- বলো, তোমার ইন্টারভিউ কেমন হলো?
- ভালোই....., মানে ভালোই হয়েছে।
- চাকরিটা এবার তাহলে হয়েই যাচ্ছে, তাই না বাবু?
- না........... মানে.......... আমি কী করে বলবো? দেখা যাক।
- আমি জানি এবারও তোমার চাকরি হবে না।
- নিলা, এভাবে বোলো না। আমি তো চেষ্টা কম করিনি।
- আরে, আরে! বাবু বোধয় ভয় পেয়ে গেছ। আরে, আমি এসেছি তোমার জন্য দারুন একটা খবর নিয়ে।
- কী খবর? (রাজ্যের জড়তা নিয়ে)
- আরে দারুন খবর, বললামই তো!
- নিলা, দারুন খবরটা তোমার ভালোর জন্য, না আমার?
- আরো বুদ্ধু, আমাদের দু'জনেরই।
- কি বলো এসব? আমার আবার ভালো খবর আছে নাকি?
- আরে বাবু শুনলেই বুঝবা, ভালো খবর কাকে বলে, আহ হা.....
- আচ্ছা বলো।
- এতা তাড়াহুড়ো করছো কেন। আমি জানি তোমার পকেটে আজ আর কোন টাকা নেই। তাই আসার সময় আমি তোমার প্রিয় কাচ্চি বিরিয়ানি কিনে এনেছি। আগে এগুলো খেয়ে নাউ তার পরে.............।
- কাচ্চি বিরিয়ানি আবার আমার কবে প্রিয় ছিল? আমি তো আলুভর্তা আর ভাতেই বেশ অভ্যস্ত!
- আরে, কোথায় যাচ্ছ? বসো।।
- হাত ধুয়ে আসি।
- না তোমাকে হাত ধুতে হবে না। আমিই তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি। এসো বলছি.......
- আচ্ছা। বসলাম। এবার বলো, দারুন খবরটা।
- আগে একবার মুখে নাউ..............। আমি গতকাল তোমার কথা বাবাকে বলেছি, আমিতো ভেবেছিলাম বাবা কী না কী বলবে। কিন্তু বাবা সব শুনে কী বললো জানো?
- কী বললো?
- বললো, বাবার একটা বায়িং হাউজ আছে, ‘এন এম বায়িং হাউজ’। সেখানে তোমাকে একটা বড় দায়িত্বে বসাতে চায়। আর.....
- কী নাম বললে?
- এন এম বায়িং হাউজ, চেন নাকি?
- না......., না। আমি কোথা থেকে চিনবো? (হিমেল বিষয়টি চেপে যায়।) তারপর......, কী বলছিলে যেন?
- ও হ্যাঁ। আর দুই তিন মাস পরে তোমার একটু এক্সপেরিয়েন্স বাড়লেই একটা সেকশনের পুরো দায়িত্বই তোমাকে দিয়ে দেবে। তারপরে.........
- তারপর আবার কী?
- কী মানে, আমাদের বিয়ে। বাবা বলেছে, তারপরে আমাদের ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে দেবে।
- কিন্তু আমাদের পরিবারিক অবস্থা তাকে জানিয়েছ তো? আমার বাবা কৃষক, মা গৃহিণী, ভাই.................
- আরে বাবু, আমি সব বলেছি। বাবা বলেছে কোন কিছু জানার দরকার নেই। আমার পছন্দই তার পছন্দ।
- তাই? কিন্তু আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
- এখন বিশ্বাস করতে হবে না। আগে খেয়ে নাউ, তারপর...
হিমেলের গলায় খাবার বেধ গিয়ে প্রচণ্ড কাশতে থাকে।
- আর না নিলা। আর খেতে পারবো না।
- না, সবটুকু খেতে হবে।
- না আমি আর খেতে পারবো না।
- আচ্ছা যাও, পানি খেয়ে এসো।

হিমেল ঢকাঢক একগ্লাস পানি খেয়ে নেয়। তারপর হাতে একটু পানি নিয়ে চোখে ঝটকানি দেয়।
সাথে সাথে হিমেলের ঘুম ভাঙে। সামনে তাকিয়ে দেখে পাশের রুমের ছোট ভাই রাহুল দাঁড়িয়ে তাকে কী যেন বলছে।
- কী হিমেল ভাইয়া, সেই কখন এসে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছেন? খেয়ে নেন।
- কিন্তু আমার চোখে পানি মারলো কে?
- রাজ ভাইয়া।
- ও কখন এলো? ওর না আগামী পরশু আসার কথা?
- কী বলেন ভাইয়া! রাজ ভাইয়াতো গতকাল এসেছে, আপনার মনে নেই। কী হয়েছে আপনার?
হিমেল এতোক্ষণে সব পরিষ্কার বুঝতে পারে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.