নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ডায়েরি

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি

আত্মকেন্দ্রিক, একা থাকতে খুব ভালো লাগে এবং একাকীত্ব আমি দারুণ ভালবাসি এবং উপভোগ করি ।

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গয়না ।

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৩০

কয়দিন থেইকা বজলুর মনডা আর শরীরডা দুইটাই খারাপ। কাম কাজ আর আগের মত নাই। টানাটানির সংসারে প্রতিদিন বউডার লগে ঝগড়াতো আছেই। একটা মহিলা সারাদিন কাম কইরা যা রোজগার করে তা দিয়াতো সংসার আর ঠিকমতো চলেনা। বজলু বুঝে বউডার কষ্ট সব বুজে কিন্তু কি আর করবো? যে কাম শিখছে এডা ছাড়া আরতো কিছু করবার পারেনা। কামডাই বা আর কি মানুষের জিনিষ পানিতে পড়লে খোঁজ পড়ে বজলুর, পানিতে ডুব দিয়া জিনিষ উডাই দিবার পারলে টাকা আর না পারলে বৃথাশ্রম আর মানুষের কথার খোডা তো আছেই। এই কাম দিয়া কি সংসারে চলে মাসে দুই কি একবার আবার কোন মাসে ডাক ও পরেনা।



এদিকে মাইয়ডা দিনে দিনে ডাঙ্গর হইয়া গেছে বিয়ার প্রস্তাব ও আইছে একখান। পোলাডা পাশের গ্রামে ভ্যান গাড়ি চালায় দেখতেও ভালো। কামাই পাত্তি খারাপ না সবচেয়ে বড় কথা একমাত্র মাইয়ডা সুখে থাকবো না খাইয়াতো আর কষ্ট কইরা থাকন লাগবোনা এডা চোখের সামনে ভাইসা উঠলে যা শান্তি লাগে মনে। পোলাপক্ষের চাওয়া পাওয়া বেশী না মাইয়ার লগে এক জোড়া সোনার কানের দুল আর একটা কালার টিভি দিলেই হইবো।



এমনিতে কাম কাজ নাই টিভি আর সোনার কানের দুল কিনার টাকা পাইবো কই। এই নিয়া চিন্তায় কয়দিন থেইক্কা নাওয়া খাওয়া হারাম হইয়া গেছে। একটাই উপায় আছে পৈতৃকসুত্রে পাওয়া বসতবাড়িডা বিক্রি ছাড়া আর কোন গতি দেখতে আছেনা। মা মড়ার আগে কইছিলো বাজান যাই করিস বাপের ভিটাখান কোনোদিন বিক্রি করিসনা ধ্বংস হইয়া যাইবি তাইলে।



এদিকে বউ সারাদিন কানের সামনে ঘ্যানর ঘ্যানর করে বাড়ি দিয়া কি করমু? আমরা কইদিন বা আর বাচমু আমার বাড়ির দরকার নাই আমি আমার মাইয়ডার শান্তি চাই। কি আর করা মায়ের কথাডা মনে হয় আর রাখতে পারবো না বজলু। বারিডা তাইলে বিক্রি কইরাই দিতে হইব শেষ পর্যন্ত।



বজলু শেষ পর্যন্ত সিধান্ত লইলো বিক্রি কইরা দিবো আর যা টাকা পাইবো তা দিয়া পোলাপক্ষর চাহিদা আর বিয়া বাবদ যা খরচ হইবো আর বাকিডা দিয়া ব্যাবসার চেষ্টা করবো। পোলাপক্ষর লগে কথা শেষ সামনের মাসের প্রথম রবিবার বিয়ার দিন ধার্য করা হইছে ।



কইতে না কইতে রবিবার আইসা পরলো। আজ মাইয়ডার বিয়া হইবো ভাবতেও বজলুর খুব ভালো লাগতেছে । বাড়ির চারদিকে রঙিন কাগজ লাগানো । জামাইয়ের বসার জন্য আলাদা ভাবে প্যান্ডেল টাঙ্গানো হইছে বাবুর্চি রান্না করতাছে অনেক আত্মীয় স্বজন আইছে। একটা উৎসবের ভাব বিরাজ করতাছে বারিডার চারদিকে। মহাজনরে কথা দিছে এই মাসের মধ্যে চইলা যাইবো বাড়ি থেইক্কা। সবচেয়ে বড় কথা মাইয়ডার চোখেও খুশীর ভাব দেইক্ষা মনডা ভালো হইয়া গেছে। যা হইছে ভালো হইছে মাইয়ডার ভবিষ্যৎ হইলো একটা।



পোলাপক্ষ আইবো দুপুর তিনটার পড়ে এখন বাজে ১২টা অনেক দেরি আইতে। যাইহোক সব কিছু ঠিকমতো চলতাছে।



- বজলু ভাই বাড়িতে আছো?



কেডা? ও গনি ভাই কেমন আছো যাহোক ভাল একটা দিনে আইসা পরছো। আজকে আমার মাইয়ডার বিয়া খাইয়া তার পর যাবা।



- নারে ভাই ববার পারুম না রহমপুরের চেয়ারম্যান সাহেব যাইতে কইছে আমার লগে। চেয়ারম্যান সাহবের বৌয়ের আজকে কানের দুল আর সোনার চেইন গোসলের সময় পুকুরে পইড়া গেছে। তোমারে লইয়া যাইবার কইলো লগে কইরা।



আজকে এমন দিনে কামে যামু আজকে আমার একমাত্রও মাইয়ডার বিয়া।



- কি কমু কউ অনেক দামী জিনিষ নাকি। ৩ ভরি সোনার দুইডা কানের দুল আর দেড় ভরির একটা সোনার চেইন। চেয়ারম্যান কইছে ভালো বকশিস দিবো। লও ভাই কি আর করবা। দুইডার আগে তোমারে বাসায় পাডাই দিমু চিন্তা কইরোনা।



কি আর করা চেয়ারম্যান সাহবের কাম না কয় কেমনে। আচ্ছা দাড়াও গনি ভাই তোমার ভাবীরে কইয়া আই।



- আচ্ছা তাড়াতাড়ি করো। ইঞ্জিন নৌকা লইয়া আইছি যাইতে আধা ঘণ্টা লাগবো।



বউ?



কি হইছে?



রহমপুরের চেয়ারম্যান সাহেব লোক পাডাইছে হের বৌয়ের নাকি সোনার গয়না পুকুরে পইড়া গেছে। যাইবার কইছে। ভালো বকশিস নাকি দিবো। চেয়ারম্যান সাহেব ইঞ্জিন নাউ পাডাইছে লগে গনি ভাইও আইছে। কইলো দুইডার মধ্যে ছাইড়া দিবো যামু নাকি?



যাও। তাড়াতাড়ি আইয়া পইরো। এমনি হাতের টান কিছু আইলে দোষ কি? সময়ের আগে আইয়া পইরো।



আচ্ছা।



তিন ঘণ্টার উপর বজলু পানিতে ডুবাইতেছে। কিন্তু কিছু পাইতেছে না এদিক চারটার উপর বাজে, জামাই পক্ষ আইসা যদি হেরে না পায় কি হইবো। এদিকে চেয়ারম্যান সাহেব ও নাছোড়বান্দা কইছে যেভাবে হোক আজকে জিনিষ আমার তুইলা দেওয়ান চাই। আবার বাজে বাজে গালি দিতাছে।



বজলুর মাথা খারাপ হইয়া গেছে মাইয়াডার চিন্তায়। এইবার শেষ ডুব দিবো পাইলে ভালো না পাইলে যা কপালে আছে চইলা যাইবোগা। শেষ ডুব দিলো বজলু, এবার কাঁদার মধ্যে হাতে জানি কি বাজতাছে হ এইতো পাইছে কানের দুল জোড়া পাতার তলায় আছিলো আর একটু হাতড়াইতে চেইনটাও পাইলো।



- কিরে হুমুন্দির পোলা কিছু পাইছস?



না চেয়ারম্যান সাহেব কিছু পাই নাই। আমি আর পারুম না আজকে আমার মাইয়াডার বিয়া দরকার হইলে কালকে আমু। আজকে আমারে মাফ কইরা দেন। বজলু পুকুর থেইক্কা উইঠা লুঙ্গির কাছা খুললো। সব কিছু লুঙ্গির সামনের কোঁচের মধ্যে লুকানো। জীবনেও কোনোদিন চুরি করে নাই কিন্তু আজকে যে কে এই কাম করলো মাথায় আসতেছেনা।



- বজলু ভাই? লও সিগারেট টানো।



না ভাই ভালো লাগতেছেনা। এদিকের বজলু চিন্তায় অস্থির বিয়া বাড়িতে কি হইতাছে কেডা যানে অনেক বাইজ্জা গেছে এখনো নাউ এর মধ্যে বওয়া। অবশেষে নাও পারে লাগলো। বজলু লাফ দিয়া নাইম্মা তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো।



একি তার মাইয়ডা উঠানে এমন চুপচাপ হইয়া শুইয়া আছে কেন। মা ওমা ওঠ কি হইছে তোর। বউ ও বউ আমার মাইয়াডা কথা কয় না কেন।



গ্রামের সবাই আলাপ করতাছে পোলার নাকি আগে একটা মাইয়ার লগে প্রেম আছিলো বাপ মা জোর কইরা বিয়া দিবো দেইক্ষা তাই বিয়ার দিন প্রেমিকারে লইয়া পালাই গেছে। এখবর শুইন্না বজলুর মাইয়া বিষ খাইছে।



বজলু আর তার বউ তার মেয়ের লাশের পাশে বিলাপ করছে। ওইদিকে বজলুরু লুঙ্গীর কোঁচে লুকানো চেয়ারম্যান সাহেবের বউ এর গয়না।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮

মামুন রশিদ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন । গল্প ভালো লেগেছে ।

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০১

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: ভাই বেশী ছোট করে ফেলেছি। আরো অনেক কিছু অ্যাড করা যেতো। নতুন নতুন তো তাই বেশী রিস্ক নেইনি।

২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৮

রাকীব হাসান বলেছেন: Click This Link

৩০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: রাকীব ভাই লিংক দেখেছি আমরাও এর সাথে সহমত প্রকাশ করছি।

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৪১

আমিনুর রহমান বলেছেন:



সুন্দর গল্প।

৩০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৩৯

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: ধন্যবাদ আমিনুর ভাই। গল্পটা একটু বড় করতে পারলে ভালো লাগতো।

৪| ৩০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৪৬

এহসান সাবির বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

৩০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৪২

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: ধন্যবাদ সাবির ভাই। গল্প লেখায় এখনো হাত চালু হয়নি। ভুল হলে মার্জনা করিবেন।

৫| ৩০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:২৯

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: মিষ্টি একটি গল্প --- যেমন শিরোনাম ঠিক তেমনি বর্ণনা--- সাবলীল

৩০ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৭

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: লাইলী আরজুমান খানম লায়লা @ ধন্যবাদ আপু।

৬| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:২৩

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: গল্পটাতে গয়নার ব্যাপারটা এতো আগে উন্মোচন করে না দিয়ে একেবারে শেষে করতে পারলে ভালো হত মনে হয়। পাঠক আগেই বুঝে ফেলেছে যে বজলুই গয়নাগুলো লুকিয়েছে। তবে তার মিথ্যা এবং লোভের কারণেই হয়তো মেয়েটাকে হারাতে হল, যার ইংগিত গল্পের মাঝখানেই পেয়েছিলাম। মায়ের কথার অবাধ্য হয়ে ভিটাখান যখন বিক্রি করে দেয়। কারণ বজলুর মা আগেই তাকে সাবধান করেছিল যে, ভিটাখান বিক্রি করেল সে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
গল্প ভালোই লিখেছেন। তবে ঠিক মতো সময় দিতে পারলে আরও ভালো হতে পারতো। ধন্যবাদ রথি।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৫৩

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: ভাই তাড়াতাড়ি করে লিখেছি। এটা আমি আরো অনেক বড় করতে পারতাম। কিন্তু অলসতার কারনে অনেক সংক্ষিপ্ত করে ছেড়ে দিয়েছি।

বজলু তো তার মেয়ের জন্য গয়না আর টিভি আগে কিনে ফেলেছে তার সম্পত্তি বিক্রি করে। কিন্তু কাজে গিয়ে সে জীবনের প্রথম চুরি করেছে। পাঠক বুঝেনি ভাই।

এটাকে আরো বড় আরো সুন্দর করবো।

ভালো থাকবেন।

৭| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪৭

নীল জোসনা বলেছেন: গয়না র গল্পো ভালো লাগলো । আরও লিখবেন আশা করি ।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৪০

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: নীল জোসনারি ভাই আপনার উত্তরের নোটিফিকেশন এই মাত্র পেলাম। দেরিতে উত্তর দেওয়ার জন্য দুঃখিত। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.