নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ডায়েরি

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি

আত্মকেন্দ্রিক, একা থাকতে খুব ভালো লাগে এবং একাকীত্ব আমি দারুণ ভালবাসি এবং উপভোগ করি ।

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটবেলার কিছু স্মৃতি রোমন্থন

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:০০

আমরা আগে প্রতিবছর ঈদ অথবা কোরবানির ছুটিতে বরিশাল বা পটুয়াখালী যেতাম। তখন স্কুল বন্ধে এক মাসের এক লম্বা ছুটি পেতাম। আর আমাদের যাওয়ার স্টাইল ও ছিলো সেরকম। তোষক, বালিশ, কাঁথা, মশারী বিশাল এক গাঁটটি, সে এক এলাহি কাণ্ড। লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা ৬ টা কি ৭ টায় আমরা দুপুরের আগে লঞ্চে গিয়ে হাজির। থাকার জায়গা দখল করতে হবেনা। সেসময় কেবিনও ছিলো হাতেগোনা কয়েকটা। আর রাত্রের দুপুরের খাবার আমরা বাসা থেকে টিফিন ক্যারিয়ার করে নিয়ে যেতাম।



সারারাত টেনশনে ঘুম হতনা কখন বরিশালে যাবো কখন নানাবাড়িতে পৌছাবো। আহা বরিশাল সে সময় ছিল আমার কাছে স্বপ্নের শহর এখনো আমার কাছে স্বপ্নের শহর। বরিশাল আমার কাছে ভালোবাসা বা ভালোলাগা সবটুকুই। আমার দাদা বাড়ি পটুয়াখালী হলেও আমার নানাবাড়ি বরিশাল আর আমার জন্ম বরিশাল শহরে। তাই বরিশালে সাথে আমার এক নাড়ির টান এক অমোঘ টান। আমাদের ঈদ বা কোরবানি বেশীরভাগ আমরা বরিশাল করতাম।



যদি লঞ্চে যেতাম তাহলে বরিশাল পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল সাড়ে চারটা কি পাঁচটা বাজতো আর স্টিমার এ গেলে ছয়টার উপরে লাগতো। লঞ্চ ঘাটে ভেরার সাথে সাথে নামার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। আমাদের সাথে অনেক জিনিষ থাকতো আমরা সব গুছিয়ে গুছিয়ে আস্তে আস্তে নামতাম। এক্ষেত্রে আমার তাড়া থাকতো খুব। কখন নামবো কখন নামবো।



লঞ্চ থেকে প্রথম পা যখন বরিশালের মাঠিতে পড়তো আহা মনে হত এটা আমার স্বর্গ এর থেকে আনন্দ আর কিছু নেই। একটি বাচ্চাছেলের ভালোলাগা যে কত মধুর তা ভাষায় বুজানো যাবেনা। আমার বরিশালে নামার সময় এখনো ছোটবেলার সেই ফিলিংস কাজ করে।



নামার পর আব্বা দুইটা অথবা তিনটা রিক্সা ভাড়া করতো। যে সময় নামতাম বেশীরভাগ সময় ফজরের আযান শোনা যেত মসজিদ থেকে।

লঞ্চঘাট থেকে আমার নানাবাড়ি যেতে বড়জোর ১০ মিনিট লাগে। আমাদের যাওয়ার পথে বাজার রোড পড়তো। যাওয়ার পথে দেখতাম ভোর বেলা তখন রাস্তায় ঝাড়ুদাররা ঝাড়ু দিচ্ছে আর বাজার রোড এর কিছু ব্যাকারি তখন খোলা থাকতো আহা কি সুন্দর সেই ঘ্রান ভেসে আসতো ব্যাকারি থেকে।



বরিশালের রুটির মতো আমি এতো সুন্দর রুটি কোথাও কোনোদিন খাইনি, এতটাই মোলায়েম ছিল। আর এই রুটির বৈশিষ্ট্য ছিল রুটিগুলা সবসময় তিন কোনা হত। রুটির সাথে আবার মাখন ও কিনতাম। আমরা নানা বাড়ি গেলে এটা আমাদের নিত্য দিনকার সকালের নাস্তা ছিল।



যাহোক নানাবাড়ির সামনে রিক্সা থেকে নামার পর শুরু করতাম দরজা ধাক্কাধাক্কি। বেশীরভাগ সময় দরজা খুলতো আমার খালাতো ভাই। আমার নানারা অনেক বড় যৌথ পরিবার ছিল। আস্তে আস্তে সব মামারা ঘুম থেকে উঠে যেত আমাদের বরন করার জন্য। সে সময়কার বরিশাল শহরের বারিগুলোর কাঠামো আলাদা ছিল। বেশীরভাগ বাড়ি ছিল দোতালা টিনের ঘর।



সকালে নাস্তা করার পর ভাইদের সাথে বেড়িয়ে যেতাম। খালাতো ভাইগুলো আমার চেয়ে চার কি পাঁচ বছরের বড় ছিল। আর মামাতো ভাই ছিলো সমবয়েসি। চলে যেতাম টাউন স্কুলে ফুটবল খেলা দেখার জন্য অথবা কোন মামার সাথে বাজারে। দুপুর বেলা গোসল করতাম টাউন স্কুলের পুকুরে অথবা পাশেই একটা খাল ছিল ঐখানে। নানাবাড়ির সামনে ছোট একটা মাঠ ছিল ঐখানে দুপুরে বসে থাকতাম। বরিশাল আমার কাছে ছিল স্বপ্নের শহর আমার ঘোর কাঠতো না সহজে সবসময় একটা ভালোলাগার ঘোরের মধ্যে থাকতাম। বিকাল বেলা হলে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য বায়না ধরতাম। এক টাকায় একটা আইসক্রিম পাওয়া যেত নাম সোনালি আইসক্রিম। বরিশালের খুব নাম করা আইসক্রিম ছিল। এতোটাই মজা ছিল। আর আইসক্রিম না খেলে খেতাম চাপরাসির দোকানের মিষ্টি। আহা এখনো স্বাদ লেগে আছে জিব্বাতে।



বরিশালে ঐ সময় একটা জিনিষ চালু ছিল। একুশে ফেব্রুয়ারীর সময় প্রতিটি বাসার সামনে সবাই শহীদ মিনার বানাতো। আমরা ভাইয়েরা মিলেও ইট দিয়ে বানাতাম। আর এলাকার বড় ভাইরা আমাদের নানাবাড়ির মেইন রোডে বড় করে একটা শহীদ মিনার বানাতো।



সবচেয়ে মজা হত রাত্রে বেলা, আমরা গেলেই মেজ মামা সব সময় ভিসিআর ভাড়া করে আনতো। সেই পুরানো উত্তম সুচিত্রা, অমিতাভের আখেরি রাস্তা আরো কত ছবি, ঘুমাতে ঘুমাতে একবারে ভোর।



বিকাল বেলা নদীর ঘাটে ঘুরতে যেতাম অথবা ভাইদের সাথে খেলার মাঠে। এভাবে যে কিভাবে সময় চলে যেয়ে আসার সময় এসে পড়তো। আসার সময় আমার কান্না থামানো খুব কঠিন ছিল। আমি মনে মনে প্রার্থনা করতাম ইশ আমরা যেন লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখি লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছে অথবা আজকে লঞ্চ ছাড়বে না। কিন্তু ভাগ্য আমার সবসময় নিম্নমুখী এরকম কোনদিন হয়নি আমার সাথে বা আমাদের সাথে।



যাহোক পরিশেষে বলবো বরিশাল আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। আমার বাবার কবর যদি ঢাকায় না হত তাহলে আমি বলতাম আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যেন বরিশালেই হয়।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:১৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


স্মৃতিগুলো খুব মধুর হয়। +++

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:২৩

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: সব সময় ভাই। আমি মনের দিক দিয়ে এখনো বাচ্চা।

২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:১৮

পথহারা নাবিক বলেছেন: অনেক সুন্দর ভাবে আপনার অনুভুতিগুলো তুলে ধরেছেন!!

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:২৪

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: ধন্নবাদ নাবিক ভাই। লেখার সময় ও আমার অনুভূতি গুলো কাজ করছিলো।

৩| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৯

দালাল০০৭০০৭ বলেছেন: Dil to bacha he ji . valo laglo apnar chele bela. thanks for your

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৩

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: দালাল ভাই হাতে পায়ে ঠিকি বড় হয়েছি। বয়স ও বেড়েছে। ঐদিন আয়নাতে দেখলাম চুলেও কিছুটা পাক ধরেছে। তারপরও যে আমি অনেক অনেক ছোট একটি ছেলে।

৪| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:১৮

নীল জোসনা বলেছেন: শৈশব সব সময় ই মনের স্মৃতি কোঠরে উজ্জল থাকে ।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:১৬

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: নীল জোসনা @ ফিরিয়ে দেন আমার শৈশব আমি আবার স্কুলে যেতে চাই। আমি আমার বাবাকে চাই। আর কিচ্ছু চাইনা আমার বাবাকে এনে দিতে পারবেন নীল জোসনা ভাই।

৫| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৫২

মামুন রশিদ বলেছেন: স্মৃতিচারণ ভালো লেগেছে । ছোটবেলার স্মৃতি এমনি মধুর ।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:২১

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: মামুন ভাই অনেক অনেক ধন্যবাদ। বড় হওয়া মানে দায়বদ্ধতা। ভাই আমি মুক্তি চাই এই সমাজ থেকে এই দায়বদ্ধতা থেকে। একটা অদৃশ্য জালে আটকিয়ে আছি।

৬| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৩৭

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: স্মৃতি গুলো এমনই কখনও হাসায় আবার কখনও কাদায়

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:১৯

দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: মোমেরমানুষ ভাই মনে অনেক কষ্ট। বড় হওয়া জীবনের সবচেয়ে বড় পাপ। আমি এই পাপ থেকে মুক্তি পেতে চাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.