নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Rawnak Miraj\nDept. Of Law,\nUniversity of Dhaka

লোকাস স্ট্যান্ডাই

পরিচয় দিয়ে কিছুই হয় না, কাজ ই আসল।

লোকাস স্ট্যান্ডাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৭ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৭:১৩


"স্যার, আমার ছবিগুলো একটু সত্যায়িত করা লাগবে,প্লিজ করে দেবেন?"
পেছন ফিরে দেখলেন মাশরুর সাদিক স্যার, নতুন চান্স পাওয়া একজন স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে আছে, ময়লা একটা জামা পরে।
এদেরকে ১০ টায় আসার জন্য বলা হয়েছিল,কিন্তু উত্তেজনা আর আনন্দে সকাল ৭ টায় এসে ডিপার্টমেন্ট এ হাজির হয়েছে, তাদের অবস্থা আর আবেগ স্যার ঠিক বুঝতে পারছেন।
তাই বিরক্ত হলেন না।
সকাল সকাল মাস্টার্স এর একটা ক্লাস নিতে হবে,তাই জলদি চলে এসেছেন,সাধারণত সত্যায়িত করার কাজ গুলো সহযোগী অধ্যাপকগণ ই করে থাকেন,কিন্তু ভাগ্যক্রমে আজকে তারা কেউ নেই।
অধ্যাপক হওয়ার পর শেষ কবে ভার্সিটি টা ঘুরে দেখেছেন মনে নেই।গাড়ীতে করে এসে ডিপার্টমেন্ট এ নামেন,আবার গাড়ীতে করে বেরিয়ে যান,
তাই ভাবলেন আজ একটু হেঁটে দেখবেন ক্যাম্পাসটা।
ক্লাস শেষ করে,নেমে এলেন রাস্তায়, মাঝে ৪-৫ জন ছাত্র আর ডিপার্টমেন্ট এর স্টাফদের সালাম পেলেন।
নীচে নামার সময় থেকেই লক্ষ্য করলেন,নতুন ভর্তি হতে আসা স্টুডেন্টদের তাড়াহুড়ো।বেশীর ভাগ স্টুডেন্টরাই গ্রাম এর,
আজকাল ঢাকার নামি দামি কলেজের এত সুযোগ সুবিধা পাওয়া ছেলে মেয়ে গুলোকে পেছনে ফেলে এরা
বুঝিয়ে দিচ্ছে, যে এই সুযোগ সুবিধা পেলে তারা কি করত!!
স্যার নিজে অবশ্য ঢাকায় ই পড়ালেখা করেছেন,প্রতিদিন ১ টাকা ভাড়ায় বাস এ উঠতেন,সোজা নীলক্ষেত মোড়ে গিয়ে নামতেন।
তবে আজকের দৃশ্য তাকে সত্যি ই অতীত মনে করিয়ে দিচ্ছে।
বিজনেস ফ্যকাল্টি থেকে রেজিস্টার ভবন, সেখান থেকে আবার বিজনেস ফ্যাকাল্টি;জনতা ব্যাংক,টিএসসি শাখা থেকে;সোনালী ব্যাংক,রেজিস্টার অফিস;কলা ভবন এন্যাক্স বিল্ডিং,সোশাল সাইন্স ফ্যাকাল্টি সব আজ মুখরিত।
শত কষ্ট,রোদ,গরম সহ্য করে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা-মা,
তবুও এতটুকু বিরক্তির ছাপ নেই মুখে।
কেউ কেউ মধুর ক্যান্টিন এ নাস্তা করছেন।হাকিম চত্বর,মিলন চত্বর কিংবা, আইবিএ ক্যান্টিন,সব ই সরব।
১৯৮০ সালের ডিসেম্বার এর ঠিক এরকম একটা সময়ে স্যার নিজেও এসেছিলেন ভর্তি হতে। প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ক
ে ছেড়ে যেতে চাননি বলে থেকে গেছেন এখানেই,তবে তার পিছনের পরিশ্রমটা উল্লেখ্য।
তার সময়ে অবশ্য ভর্তি পদ্ধতি এরকম ছিল না, তবে আজ এদের উচ্ছ্বাস দেখে আর একবার ৩৫ বছর আগে ফিরে যেতে মন চাইছে।
হল এর যে বড় ভাইরা পরীক্ষার আগের দিন রাতে নিজেদের বিছানা ছেড়ে,ছোট পরীক্ষার্থী ভাইগুলোকে ঘুমানোর সুযোগ করে দিয়েছে, তারা আজকের দিনেও তাদের পাশে থেকে ভর্তির জন্য দৌড়াদৌড়ি করছে।
এই বড় ভাইদের নামেই অনেক কমপ্লেইন, এরাই নাকি ছাত্রদেরকে দিয়ে নোংরা কাজ করায়।
রাজনৈতিক হ্যারেস্মেন্ট আলাদা বিষয়, ওটা বাংলাদেশের কালচার এ মিশে গেছে।
হার্ভার্ড বিশ্বিবিদ্যালয় যদি বাংলাদেশে হতো,তাহলে সেখানকার হলের বড় ভাইরাও, এমন ভাবেই পলিটিক্যাল মার প্যাচ খেলত।
এত কিছুর পর ও, একটাই অর্জন, স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারা।
কলা ভবন থেকে কার্জন হল এ যাওয়ার সময় হঠ্যাৎ স্যার এর চোখে পড়ল জগন্নাথ হল এর মাঠ,একসময় এই মাঠেই ফুটবল খেলে পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন স্যার।শহীদ মিনার এর সামনে বসে ঝাল মুড়ি খেয়েছেন,কার্জন এর সবুজ ঘাসে শরীর এলিয়ে শুয়ে ছিলেন,রাজু ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে মানব বন্ধন করেছেন অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য।
স্মৃতির পাতাগুলো এভাবেই তাকে বার বার মোহিত করে।
সারা জীবন এর সব খ্যাতি,অর্জন কে বক্সে বন্দী রেখে মানুষ দিন শেষে যেখানে ফিরে আসতে চায়,সেটা হচ্ছে ক্যাম্পাস,
স্বপ্নের ক্যম্পাস, গৌরবের ক্যাম্পাস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.