![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অর্ণব। রম্য গল্প লিখতে ভালোবাসি। নিজে সবসময় হাঁসি খুশি থাকি এবং অন্যদের রাখার চেষ্টা করি।
পরীক্ষার দিন সকালে বাপে মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার জন্য দাড় করালো। বললো, "ঐ খারা। কি পরীক্ষা দিস দেখি আগে আমি বই থাইকা কিছু প্রশ্ন ধরি উত্তর দে....
.
আমি তো কাচামাচু অবস্থা। বললাম, "ইয়ে মানে আইজ পরীক্ষার দিন ডাবল প্যারা না দিলে হয় না?
.
"না হয় না। সারাজীবন পরীক্ষা দিয়া আইসা কস পরীক্ষা ভালো হইছে। পরে যাস সবডিতে ফেল। কই দেখি বই দে। আইজ তরে প্রশ্ন ধরমু, তুই উত্তর দিবি।
.
কি আর করার উপায় না পেয়ে বই তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। সে প্রশ্ন করার জন্য বই খুলে উল্টেপাল্টে দেখে তো হার্ট এটাক করার মত অবস্থা....
.
বললাম, "কি বাজান? প্যাটে কি কামড় দিছেনি? মুচরাও ক্যান?
.
অমনি বই দিয়ে ইয়া জোরে বারি, "হারামি এইডা করছোস কি?
.
"এইডা কি ওইলো বাজান? কি করছি?
"কি করছোস বুঝোস নাই? সব পৃষ্টা অর্ধেক ক্যান? প্রশ্ন কই?
"ইয়ে মানে বাজান।
"কি ইয়ে মানে?
"না মানে কাইল স্বপ্ন দেখছিলাম তুমি প্রশ্ন ধরবা তাই...
"তাই কি? তুই আমারে বলদ পাইছোস না? তুই করবি নকল আর কইতাছোস স্বপ্ন দেখছোস?
"ইয়ো মানে বাজান....
"ফহিন্নর ঘরের ফহিন্নি। খ্রা দেহাইতাছি তোরে....
.
জানাতাম। আমি জানতাম এমন কিছুই হবে, তাই দৌড়ের প্রস্তুতিও নেয়াই ছিলো। এক দৌড়ে গেটের কাছে গিয়া কইলাম, "ফহিন্নির ঘরে তো ফহিন্নিই হইবো। নিজে বড়লোক হও তাইলে আমিও, বড়লোকের পুত বড়লোক হইয়া যামু.....
"খ্রা তোরে দেহাইতাছি......
.......
.
পরীক্ষার হলে বসে আছি। সবার পিছনের ব্যাঞ্চে। প্রশ্ন দেখে চোখ তো নয় যেন মারবেল হয়ে গেছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখবো মাথায় আসছে না। সবই কমন। কমন না হয়েও উপায় নেই। পুরা বই যে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লেপ্টে আছে। স্যার মহোদয় সামনের চেয়ারে বসে মোবাইল টিপছে। তার আবুল মার্কা হাঁসির হাব ভাব দেখে বুঝাই যাচ্ছে গার্লফ্রেন্ডের সাথে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত। এখন আমি নকল কেন? তার মাথায় বারি দিলেও সেদিকে তার বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ থাকবেনা। এই খুশিতে লেখার চিন্তার বিপরীতে মাথায় কবিতার লাইন গিজগিড করছে,
.
স্যার মহোদয় রহিয়াছে
ব্যস্ত চ্যাটিংয়ে,
নকলের বাহাড় আনিয়াছি
শরীরের ফিটিংয়ে,
লিখিবো সব দেখে দেখে
খাতার গেটিংয়ে,
পাশ হয়তো করিবো এবার
ফাইভ পয়েন্ট রেটিংয়ে।
.
ধন্য ওগো ধন্য জুকার
তোমারে জানাই সালাম,
তুমি বিহনে কেমনে করিতাম,
নকলের মার্ক কামাই?
.
ফেসবুক তোমার না থাকিলে,
স্যার করিতো জ্বালা।
সারা ক্লাস ঘুরিতো সে-তো,
করিতো পাইতারা।
.
দূর ছাই এ কি করলাম? এ দেখি কবিতাখানা পরীক্ষার খাতায় লিখে ফেলছি। যাহ বাবা। বড্ড ভুল হয়ে গেছে। পায়ের ঘাম মাথায় ফেলা নোবেল জয়ী কবিতাখানা কাটতেও কষ্ট হচ্ছে। তবুও বাদ্ধ হয়ে গিজগিজ করে কেটে দিয়ে মহা আনন্দে নকল করতে শুরু করলাম। এ অবস্থায়, "আহা কি আনন্দ আঁকাশে বাতাসে" গানের বিপরীত গানটা গাইতে ইচ্ছে করছে "আহা কি নকল যে চিপাতে চাপাতে। কিন্তু সময় সংক্ষিপ্ত, তাই পাত্তা দিলাম না। গান মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে লেখায় মন দিলাম।
.
বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঝড়ো বাতাস। স্যার মহোদয় বসা থেকে উঠে আমার পিছনের খালি চেয়ারটার দখল নিয়েছে। উঠার আগে অবশ্য বলে উঠেছে, "ওহ শিট। শিট শব্দে তিনি ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে বুঝিয়েছেন। কেননা বেশ কয়েকবার দেয়ালের দিকে তাঁকিয়ে চার্জের পয়েন্ট খুজার চেষ্টা করেছেন লক্ষ করেছি। এদিকে তার চার্জ ডাউনের সাথে সাথে আমার লেখার স্পিডও ১০০ থেকে ০০ তে নেমে এসেছে। লিখতে না পেরে রাগে মাথা দিয়ে ধোয়া বের হওয়ার মত অবস্থা। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ হলে বৃষ্টিস্নাত এই সময়ে পরীক্ষার চিন্তা বাদ দিয়ে হয়তো লিখতেন,
.
বৃষ্টিবাদল এই সয়মে,
মন বসে না নকলে,
চলনা সখি ভিজি দুজন,
প্রেম খেলিবো গোপনে।
.
লেপ্টে যাওয়া তোর বদনখানি,
দেখিবো চোঁখ ভরিয়া।
তোর পিপাসায় পিপাসী আমি,
একলা যে যাই মরিয়া।
.
কিন্তু আমি তো রবীন্দ্রনাথের মত প্রেম পিয়াসু নই। মাথায় আমার বিরাট টেনশান। পাশ না করলে যে বাপে ব্যাক সাইডে উষ্টা দিয়ে বলবে, দূর হইয়া যা। বার বার তাই দুঃখের কবিতার লাইন মাথায় এসে হামাগুড়ি দিচ্ছে, "
.
মোবালই হালায় করলি একি?
করলি একি ভুল?
আর কিছুক্ষন চার্জ রাখিলে,
হইতো এমনকি চুল?
.
তুই যাওয়াতে ফোনটা যে অফ,
স্যার বসেছে পিছে,
নকল এখন কেমনে সরাই?
সে যে খাতার নিচে।
.
আকার যদি হইতো ছোট,
তবেই ছিলো কথা,
পৃষ্টা যে ভাই আস্থো বড়,
কেমনে উঠাই খাতা?
.
এবার আর খাতায় লেখার মত দ্বিতীয় ভুল করলাম না অবশ্য। হুট করে এমন সময় বেধে বসলো মহাকান্ড। ঝড়ো বাতাসে খাতা গেলো উল্টে। নকল বেচারাও খাতার নিচ থেকে মুখ বের করে উকি দিয়ে জানান দিলো, "স্যার আমি এই যে। তারাতারি খাতা টেনে নকলকে ঝাড়ি দিয়ে বলার চেষ্টা করলাম, "ঐ হালা চুপ থাক। কিন্তু তার আর হলোনা। স্যার মহোদয় খারি দিয়ে উঠলো, "এই এই এই দেখি দেখি তোমার খাতার নিচে কি?
.
"ক কই স্যার কিছু নাতো...
" না না না কিছু তো আছেই দেখি দেখি।
.
স্যার খাতা টেনে নকল বের করে ফেললো। বললো, এ্যা এত্তবড় সাহস তুমি নকল করছো? যাও বেরিয়ে যাও।
.
স্যার হন হন করে খাতা নিয়ে সামনে চলে গেলেন। আমিও বসে থেকেই ডেকে বললাম, "স্যার এইটা তো আজকের না। আগের পরীক্ষার.....
.
"কিহ এইটা আগের পরীক্ষার না? আগের পরীক্ষার? তার মানে সব পরীক্ষায় তুমি নকল করো?
.
মনে মনে বললালাম, "স্যার নকল ছাড়া পরীক্ষার হলে ঢুকা আমার শরম করে।
.
"কি হলো কথা বলো না কেন? আর এই যে সব হাইড্রলিক্স লেখা। আর আমি হাইড্রলিক্স শিক্ষক। আমায় হাইড্রলিক্স শিখাও? বোকা পাইছো আমায়?
"ইয়ে মানে স্যার....
"চুপ করো বেয়াদব। যাও এক্ষনি বেরিয়ে যাও নকলবাজ কোথাকার।
.
মনে মনে বললাম, "হালারপুর ক্যান দুনিয়ায় কি আর কোন সাবজেক্ট নাই যে তোরে হাইড্রলিক্স- নেয়া লাগলো। বাংলা,ইংলিশ আছে। পদার্থ আছে। রসায়ন আছে। আরো কত কি আছে। ওইগুলা নে। মরার নেয়া হাইড্রলিক্স কেন নিতে হলো? এইটা না নিলে তো আর ধরা খাইতাম না। আর এমন ভাব করতাছোস যেন দেইখা দেইখা আর কেউ লেখে না। আমি নকলবাজ হইলে, যারা একে অন্যেরে থাইকা দেইখা লেখে সবগুলাই নকলবাজ। তারচেয়ে অন্যেরে খুচাখুচি কইরা ডিস্টার্ব না কইরা বই কাইটা আইনা দেইখা লেখাই মানসম্মত মনে করি। এটারে অবশ্যই শ্রদ্ধা করা উচিৎ। এতে করে যার যার মত সে সে মাথা নিচু কইরা ঘাপটি মেরে বসে লিখবে। কথাবার্তা বলবেনা। খুচাখুচি করবেনা। তাতে হল ঠান্ডা থাকবে।
.
"ঐ কি হলো তুমি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? মনে মনে কি বলো? দেখি এদিকে আসো, তোমার কাছে নিশ্চই আরো নকল আছে।
.
কি আর করার? বসা থেকে উঠলাম সামনে যাওয়ার জন্য। আমার শরীরে এখন চিরুনি চালান হবে। আমিও প্রস্তুত। দিলাম হাঁটা। অমনি পিছনের জন ধরলো শার্ট টেনে। মেজাজ তো একশোতে একশো। সালা আমি আছি প্যারায়, এ আবার ধরে শার্ট টানে। কেমন লাগে? দিবো নাকি একটা ভাবতে ভাবতে বললো, "ঐ হালা বয় বয় তোর পিছনে নকল।
.
অমনি ঘটাস করে বসে পরলাম, "কসকি হালায়? বাইর হই গেছেনি?
"হ তারাতারি সরা।
.
নকল ঐটা তারাতারি স্যান্ডেলের ভিতর ঢুকিয়ে আবারো উঠে দাঁড়ালাম। অমনি আবারো টান, "ঐ হালা কলার ঠিক কর। নকল দেহা যায়। দূর বাবা। প্যারার উপর প্যারা। করলাম তাও ঠিক। এবার গেলাম স্যারের সামনে। স্যার সারা শরীর চিরুনি চালান দিয়ে ১৭ খান বাইর করে সামনে রাখলো। তার চোঁখ চক্ষুবড়া হয়ে আছে। সাথে বক্তৃতা তো আছেই, "এহ এত্তবড় সাহস? আমি অনেকের নকল ধরেছি আমার বয়সে। দু একটা। তাও ছোট ছোট। তুমি তো দেখি আস্ত পেজ কেটে কেটে আনছো। বাপরে বাপ.... ব্লা ব্লা ব্লা...
.
আমি নিরব দর্শকের মত চুপটি করে দাঁরিয়ে মনে মনে বললাম, "ভাইরে এই কয়টা দেখেই তোর যে অবস্থা। তাতে মুজার ভিতর। জ্যামিতির ভিতর। আর বেঞ্জের নিচে ফাঁকফোকর দিয়ে দেখলে আমি নিশ্চিত, পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই পুলিশ ঠুলিশ এসে আমারর কলার ধরে বলবে, "হ্যান্ড'সআপ। নকল দেখে সম্মানিত স্যার মহোদয় হার্টএটাক করে ইন্তেকাল করায় তোকে গ্রেফতার করা হলো। লেট'স গো....
.
স্যারে বক্তৃতা শেষ হয়েছে। মনে হয় পানির পিপাসা লেগেছে। অবশ্য লাগারও কথা। কম তো নয়। বিরতিহীন ভাবে পাক্কা ১২ মিনিট এক টানা ঘ্যানঘ্যান করা চারটে খানে কথা না। এত কথা জীবনে লেকচারেও শুনিনি। ভাবলাম, শান্ত যখন হইছে তখন দেখি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে। অবশ্য সত্য কবে বলছি তাও ভুলে গেছি। বললাম, "স্যার ভুল হইয়া গেছে। এবারের মত দিয়া দেন।
.
"না দেয়া যাবেনা। যাও তোমার পরীক্ষা দিতে হবেনা। এডমিট নিয়ে বিদেয় হও।
"স্যার আমি গরিব মানুষ। পার্ট টাইম জব কইরা খরচ চালাই। পড়ার টাইম তেমন পাইনা। বুঝেন তো পরের কাম। এবারের মত দিয়া দেন।
.
নরম কথায় মনে হয় এবার চিড়া ভিজলো। স্যার কিছু বললো না। সেকেন্ড ত্রিশ মুখে কস্টেপ লাগিয়ে রেখে
বললো, "যাও বসো। ৩০ মিনিট পরে পাবে।
"স্যার এখন দেয়া যায় না?
"বেশি কথা বললে পাবেই না।
"জ্বী জ্বী আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি স্যার স্যার...
"হু যাও....
.
আমি পিছন ঘুরে হাটা দিলাম। ওমনি কপাল দোষে স্যান্ডেল আর পায়ের গোড়ালির সংঘাতে স্যান্ডের নিচে রাখা নকলটা খটাশকরে উপরে দিকে লাফিয়ে উঠলো। পরলো তো পরলো জমদ্রুতের সামনে পরে জানান দিলো, "স্যার স্যার আপনার চিরুনি চালান সম্পূর্ণ ভাবে সফল হয়নাই। আমি এই যে....
.
স্যার বেচারা এবার সত্যিই হার্টএটাক করার ভঙ্গি চেয়ার ছেড়ে লাভ দিয়ে উঠে খ্যাঁত করে উঠলো, "আরো আছে?
.
আমি স্যারের দিকে চেয়ে ফকলা একখান হাসি দিয়া বললাম, "ইয়ে মানে স্যার। এইটাই লাষ্ট। আর নাই। হাচাই কইতেছি।
.
"যাহ বাপ যা। তোর মত নকলবাজ আমি জীবনে দেখছি বলে মনে হয় না। মাফ কর। যা খুশি তাই কর যা। সামনে থেকে অন্তত্য সর আমার....নকলবাজের তালিকায় নোবেল দেয়ার সিস্টেম থাকলে, সাক্ষাত আমি নিজে তোর জন্য এপ্লিকেশন করতাম।
.
মনে মনে বললাম, "থ্যাংকু স্যার। থ্যাংকু। সব আপনার দয়া :p
©somewhere in net ltd.