![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই একজন সাধারন মানুষ। আমি চাই এদেশের সকল মানুষ শান্তিতে থাকুক।
২৪ এপ্রিল’১৩ সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে টিভি রিমো্ট নিয়ে নাটক দেখছিলাম। নাটক দেখতে দেখতে কোথায় যে হারিয়ে গেলাম মনে নেই। কিছুক্ষন পর হঠাৎ টেলিভিশনের নিচে ব্রেকিং নিউজ লাল কালিতে লেখা উঠছে সাভারে একটি নয়তলা ভবন ধ্বসে পড়েছে। মনে করলাম হয়তো পুরাতন বা পরিত্যাক্ত ভবন হবে। চ্যানেল ঘুরাতে থাকলাম সকল চ্যানেলে একই সংবাদ। অনেক চ্যানেল ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছে সাভারের নয়তলা একটি গার্মেন্টস ধ্বসে গেছে। তখন আমার বুকের মধ্যে ধড়ফড় শুরু হয়ে গেল। গার্মেন্টস মানেই একটি বিল্ডিং-এ হাজার হাজার নারী,পুরুষ। মনে মনে ভাবতে থাকলাম কত মানুষ না জানি চাপা পড়েছে। কত মানুষ চিৎকার করছে। অনেককে ফোন করলাম টেলিভিশন দেখার জন্য। সাভারের বন্ধুদের অনেককে খোঁজ করার চেষ্টা করলাম দূর্ঘটনার পাশে আছে কিনা। একে বারে অস্থির হয়ে গেলাম প্রকৃত খবর জানার জন্য। প্রায় এক ঘন্টা পর টেলিভিশন ক্যামেরা লাইভ দেখানো শুরু করলো। যারা বের হতে পেরেছে তারা বলতে লাগলো সবাই যখন গার্মেন্টস্ এ ঢুকতে শুরু করেছে ঠিক তখন বিকট শব্দে ভবনটি ভেঙ্গে পড়েছে। অনেকে বের হয়ে তার আপন জনকে খুঁজতে লাগলো। কেউ বলল আমার বোন, কেউ বলল আমার মা, কেউ বলল আমার ভাই, কেউ বলল আমার পিতা,কেউ বলল আমার ছেলে,মেয়ে ভিতরে আটকা পড়েছে। চারপাশে তখন এক বিভীষিকাময় অবস্থা। ইতিমধ্যে যারা আটকা পড়েছে তাদের স্বজনরা আসতে শুরু করেছে। সবাই চিৎকার করছে। এদিকে সেনাবাহিনী,সাধারন জনতা সবাই উদ্ধার তৎপরতায় নেমে পড়েছে। সেদিন যে বিষয়টি দেখলাম তা হল সাধারন জনগণ নিজ দায়িত্বে উদ্ধার তৎপরতায় শামিল হয়েছে। প্রথম দিন রাত দিন পরিশ্রম করে সকলে অনেককে জীবিত উদ্ধার করেছে আবার অনেক লাশ উদ্ধার হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন অসংখ্য লাশ এবং জীবিত মানুষ উদ্ধার হতে থাকে। চতুর্থদিন শাহানা নামে এক মহিলার কন্ঠ শোনা গেল বলল আমাকে বাঁচান আমার এক বছরের একটি বাচ্চা আছে, আমি না বাঁচলে আমার বাচ্চা দুধ খাবে কিভাবে,কার কাছে থাকবে। সেনাবাহিনী,সাধারন স্বেচ্ছাসেবক সকলে গ্রিল কাটা মেশিন দিয়ে ছাদ ও রড কেটে শাহানাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন। হঠাৎ আগুন ধরে শাহানা মৃত্যুবরন করলেন। সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সকলের কান্নায় তখন চারপাশ ভারি হয়ে ওঠে শাহানাকে না বাঁচাতে পেরে। এভাবে ৬দিন পর ঘোষনা আসল আর জীবিত মানুষ নেই। শুরু হল ভারি যন্ত্রপাতি দিয়ে বিল্ডিং সরানোর কাজ। প্রতিদিন এখন শুধু লাশ পাওয়া যেতে থাকে। অসংখ্য জীবিত মানুষ উদ্ধার হল। সতের দিনের মাথায় রেশমা নামে একজন জীবিত উদ্ধার হল। আলোড়ন পড়ে গেল সারা বিশ্বে যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আন্তরিকতায় সতের দিন পর জীবিত উদ্ধার হল। সবশেষে জানা গেল মোট ১১৩৫জনকে মৃত এবং ৩০০০জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকে লাশ পাননি আবার অনেক লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সরকার আশ্বাস দেয় সবাইকে ক্ষতিপূরন দেয়া হবে। এই দিনের কথা স্মৃতিতে আসলে ঠিক থাকা কঠিন হয়ে যায়। যাদের শ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল আছে তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে আমরা এত উদাসীন কেন?
©somewhere in net ltd.