নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনোবিজ্ঞানে মন ও ভাষা

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:২৪

মনোবিজ্ঞান পরিভাষাটি বাংলা ভাষায় ইংরেজি psychology শব্দের অনুবাদ হিসাবে গৃহীত হয়েছে। বস্তুত ইংরেজি psychology পরিভাষাটি ব্যুৎপত্তিগতভাবে গ্রীক প্রত্যয় psyche ও logos এর সমন্বয়ে গঠিত, যার অর্থ যথাক্রমে আত্মা/মন ও জ্ঞান/অনুধ্যান। আর বাংলা ভাষায় মনোবিজ্ঞান পরিভাষাটি একটি সমাসবদ্ধ পদ, যার ব্যাসবাক্য হলো-মনের যে বিজ্ঞান। বৈয়াকরণিক বিশ্লেষণে psychology বা মনোবিজ্ঞান যে ধারণাকেই দ্যোতিত করুক না কেন, মনোবিজ্ঞান মন কেন্দ্রিক ধারণা থেকে বেরিয়ে ইতোমধ্যে সমৃদ্ধ বিজ্ঞানে পরিণত হয়েছে। তবে মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু প্রচলিত ধ্যানধারণা আছে। এ ধ্যানধারণগুলো বাংলাদেশের মানুষ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের ধারায় প্রাপ্ত হয়েছে। এ সব ধ্যানধারণার অনেকাংশে জুড়ে রয়েছে কুসংস্কার। এসব কুসংস্কারের কথা বাদ দিলেও, মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু প্রকাশে মন, চিন্তা, বুদ্ধি, স্মৃতি, চিন্তা, ধারণা, কল্পনা, স্মৃতি, স্মরণ, মনন, ধী ও মনীষাসহ ইত্যাদি যেসব ধারণা এখনও ব্যবহার করা হয়, তার সবই psyche বা মন শব্দেরই প্রতিশব্দ।

কিন্তু আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলাম, তখন আমরা শিক্ষাগুরুদের (ধন্যবাদ আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরুদের) কাছে এ ধারণা লাভ করেছি যে- মনোবিজ্ঞান মনের বিজ্ঞান নয় বরং আচরণের বিজ্ঞান। কিন্তু যতোদিন মনোবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম ততোদিনই লোকজনের কাছে একটি প্রশ্ন শুনতে হয়েছে-মনোবিজ্ঞানে পড়ো, আমার মন সম্পর্কে কিছু বলো। অথচ মনোবিজ্ঞানের যে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা রয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে, মনোবিজ্ঞান হচ্ছে- আচরণ ও মনের সাথে সংশ্লিষ্ট সব ধরণের চিন্তা এবং সচেতন-অসচেতন অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত বিজ্ঞান (Psychology is the science of behavior and mind embracing all aspects of thought as well as conscious and unconscious experience.) । অর্থ্যাৎ বর্তমানে মনোবিজ্ঞান মন সম্পর্কিত বিজ্ঞান না হওয়া সত্ত্বেও, ভাষার চালে মনোবিজ্ঞান এখনও মনের বিজ্ঞান হিসাবেই রয়ে গেছে। আর যারা মনোবিজ্ঞান থেকে পাশ করে মনোচিকিৎসা বা মনোপরামর্শে জড়িত আছেন, তারা সাধারণের কাছে যে সমস্যার কথা শুনেন তার অধিকাংশ জুড়ে থাকে মন সম্পর্কিত শব্দ। যেমন-‘মন ভাল নেই’, ‘মনোমালিন্য চলছে’, ‘পড়াশুনায় মন বসে না’, ‘মন উঠে গেছে’, ‘মনে খটকা লাগে’ ও ‘মনের অসুখ হয়েছে’ ইত্যাকার অনেক কিছু।

ভাষার মারপ্যাঁচে মনোবিজ্ঞান মনের বিজ্ঞান হলেও, ভাষা ছাড়া মনোবিজ্ঞান অচল। আসলে মনোবিজ্ঞানে আলোচ্য বিষয়ের অনেককিছু জুড়ে রয়েছে ভাষা। ভাষা মূলত ভাষাবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। তাহলে কী মনোবিজ্ঞান ও ভাষাবিজ্ঞান উভয়েরই অনুধ্যান ও আলোচ্য বিষয় ভাষা। না, ব্যাপরটি তা নয়। ভাষাবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হলো- ভাষার ধ্বনি, রূপমূল, বাক্যবিন্যস ও অর্থ-এই চার উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত ভাষার ছাঁদ। আর মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হলো-ভাষার সাথে সংশ্লিষ্ট আচরণ অর্থ্যাৎ বাচনিক আচরণ। আর বাচনিক আচরণ বলতে বুঝায় মানুষ বা প্রাণীর-বাকসৃজন, বাকঅনুধাবন ও বাকপ্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি সাংজ্ঞাপনিক আচরণ। বাচনিক আচরণকে অধ্যয়ন করা হয় মনোবিজ্ঞানের যে শাখায়, তার নাম হলো মনো-ভাষাবিজ্ঞান। কিন্তু বাচনিক আচরণ যে শুধু মনো-ভাষাবিজ্ঞানের অনুধ্যানের বিষয় তা নয় বরং সাধারণ মনোবিজ্ঞান, পরিজ্ঞানমূলক মনোবিজ্ঞান ও বিকাশ মনোবিজ্ঞানসহ মনোবিজ্ঞানের নানা শাখায় বাচনিক আচরণ নিয়ে অধ্যয়ন, অনুধ্যান ও আলোচনা করা হয়।

সাধারণ মনোবিজ্ঞানের অধ্যয়নের বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হলো-স্মৃতি, বুদ্ধি ও চিন্তণ যার অনেকটা জুড়েই রয়েছে ভাষা বা বাচনিক আচরণ। মানুষ যা কিছু স্মৃতিতে ধারণ করে তার প্রায়োগিকতা দেখা যায় বুদ্ধি ও চিন্তণে। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে যে অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা লাভ করে তার এক-তৃতীয়াংশ ভাষিক অর্থ বা মর্মার্থ হিসাবে স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে এবং প্রয়োজনে তা পুনরুদ্ধার করে। আর ভাষিক অর্থ হিসাবে স্মৃতিতে সংরক্ষিত এ সমস্ত বিষয় মানুষ প্রয়োজনে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে থাকে। কোন অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা আহরণ এবং তা ভাষিক অর্থ হিসাবে সংরক্ষণ ও প্রয়োজনে তা সমস্যা সমাধানে প্রয়োগ হলো বুদ্ধিমত্তার বহি:প্রকাশ। আর বাচনিক আচরণের আরেকটি দিক হলো- স্মৃতিচারণ যা আসলে চিন্তণের একটি রূপ। এভাবে দেখা গেল যে, স্মৃতি, বুদ্ধি ও চিন্তণ- এসব সাধারণ মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর সাথে ভাষা মিশে আছে। সাধারণ মনোবিজ্ঞানের এসব আলোচ্য বিষয়ের বহুমাত্রিকতা লক্ষ্য করা যায় পরিজ্ঞাপনমূলক মনোবিজ্ঞানে। পরিজ্ঞানমূলক মনোবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় হলো- পরিজ্ঞান যা আদতে বুদ্ধির প্রকারভেদ মাত্র। আর বুদ্ধি প্রপঞ্চটির ছাঁদ একটি এজমালি উপাদান ও অনেকগুলো বিশেষ উপাদান-এই দু’ধরণের উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত বলে কল্পনা করা হয়। বিশেষ উপাদানের মধ্যে রয়েছে-গাণিতিক ক্ষমতা, যান্ত্রিক কৌশলগত ক্ষমতা ও ভাষিক ক্ষমতা ইত্যাদি। পরিজ্ঞানমূলক মনোবিজ্ঞানে ভাষিক ক্ষমতা ভাষামানস নামক একটি আধারে নিহিত রয়েছে বলে ধরা হয়। ভাষামানস হলো-ধ্বনি, রূপমূল, বাক্যবিন্যাস ও অর্থ ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত ভাষাছাঁদ সম্পর্কিত সার্বিক জ্ঞান। এই ভাষামানসে ভাষিক উপাদান-গঠনগত ও প্রক্রিয়াগত তথ্য হিসাবে সংরক্ষিত থাকে। এবং প্রয়োজনে তা বাচনিক আচরণ হিসাবে উৎসরিত হয়। কাজেই ধ্বনি, শব্দ (নাম শব্দ/ব্যাকরণিক শব্দ), বাক্য ও অর্থের অনুধাবন, প্রক্রিয়াকরণ ও সৃজনের বিভিন্ন পর্যায়ে মনের সাথে ভাষার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। এভাবে লক্ষণীয় যে, বৈজ্ঞানিক পরিভাষা ব্যবহার করে যা তুলে ধরা হলো, তাতে মূলত মন ও ভাষার সম্পর্ককেই তুলে ধরা হলো। কাজেই বলা যায় যে-মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হিসাবে মন ও ভাষার সম্পর্ক অনস্বীকার্য।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো পোষ্ট।
খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.