নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের জন্য সুখবর: ঢাবিতে বিদেশি শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা চূড়ান্ত

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩৩


বিদেশি ভাষার শিক্ষা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে ১ জুলাই, ১৯৭৪ সালে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট (আভাই)-এর যাত্রা শুরু হয়। বিদেশি ভাষা হলো ভিনদেশে কথিত কোনো মানব বুলি, যা কোনো না কোনো দেশের সাংবিধানিক আইনে রাষ্ট্রভাষা বা দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি রয়েছে। আভাই ১৯৭৩ সালে জারিকৃত অধ্যাদেশের ৬ষ্ঠ সংবিধি অনুসরণে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু এর আগে ১৯৬৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানের কাঠামো তৈরি হয়। সে সময় এর নাম ছিলো— বিদেশি ভাষা বিভাগ, যা তখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাথে একান্নবর্তী বিভাগ হিসাবে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অঙ্গীভূত ছিলো। এই বিদেশি ভাষা বিভাগকে ১৯৭৪ সালে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট নামে বর্তমান শিক্ষাভবনে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ভাষা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো যুক্ত-পাকিস্তানের ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা কায়েমের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসাবে। আভাই-এর সংবিধি অনুযায়ী এখানে আরবি, বাংলা (বিদেশিদের জন্য), বর্মী, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, হিন্দি, ইন্দোনেশিয়ান, ইতালীয়, জাপানি, মালয়, নেপালি, ফার্সি, রুশ, সিংহলি, স্পেনীয়, সোয়াহিলি, তামিল, থাই, তুর্কি এবং উর্দু ইত্যাদি ভাষার পঠন-পাঠন ও গবেষণা হওয়ার কথা।

কিন্তু আভাই তার উদ্দেশ্য সফল করতে যা প্রয়োজন, তার মধ্যে অন্যতম হলো বিদেশি ভাষার শিক্ষক। তবে সুষ্ঠু বিদেশি ভাষা শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য আবার মাতৃভাষী (native speaker) বিদেশি শিক্ষক প্রয়োজন। অথচ যে সব বিদেশি ভাষার শিক্ষক প্রয়োজন, সে সব বিদেশি ভাষার শিক্ষক দেশে নেই। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢা.বি.)-এর বর্তমান নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ীও বিদেশি শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ নেই। যে কারণে আভাই-এর জন্য প্রণীত ষষ্ঠ সংবিধি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। যতোটুকু বিদেশি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে, তা বিভিন্ন দেশের বিদেশি ভাষা শিক্ষানীতি আওতায় প্রেরীত শিক্ষা সহায়তার কারণে সম্ভব হয়েছে। অর্থ্যাৎ যে কয়টি বিভাগে বিদেশি ভাষার পঠন-পাঠন হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ বিদেশিদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। আবার ইংরেজি, আরবি ও ফার্সি ভাষার যে শিক্ষা কার্যক্রম দেশীয় শিক্ষিতদের দ্বারা চালু হয়েছে, তা বিদেশি ভাষা শিক্ষানীতির সাথে সাযুজ্যপূর্ণ নয়।
সেজন্য আমাদের নিজস্ব একটি বিদেশি ভাষা শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ন্যুনপক্ষে ষষ্ঠ সংবিধিতে উল্লেখিত ভাষা ও সংস্কৃতি বিদ্যার পঠন-পাঠনের সহায়ক মাতৃভাষী বিদেশি শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সেজন্য আভাই-এর পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে গত (২৬শে পৌষ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ অর্থ্যাৎ ১০ই জানুয়ারি ২০২১ খ্রিস্টাব্দ)লিখিতভাবে আর্জি জানানো হয়। সে আর্জিতে বিদেশি মাতৃভাষী শিক্ষক নিয়োগের পক্ষে নিম্নের যুক্তি উপাস্থাপন করা হয়:

কোনও ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষক ব্যতীত অনুষ্ঠিত হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে বিদেশি ভাষার শিক্ষক নেই বললেই চলে। যে সব শিক্ষক আভাই-তে কর্মরত আছেন তারা বিদেশি দূতাবাস ও সংস্থার পৃষ্টপোষকতায় আভাই-তে শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষক হয়েছেন। সেজন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিদেশি মাতৃভাষী (native speaker) কর্মশক্তির উপর নির্ভর করতে হবে। সেজন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত সকল পদে বিদেশি শিক্ষকদের নিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন। দেশী-বিদেশি শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের আভাই-এর শিক্ষাকার্যক্রমে যুক্ত করতে নিম্নের পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা প্রয়োজন:
ক) প্রতিষ্ঠিতব্য নতুন ভাষা শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালুর প্রাথমিক পর্যায়ে বিদেশি শিক্ষক নিয়োগের বিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
খ) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান বিধি পরিবর্তন করে আভাই-তে বিদেশি ভাষা শিক্ষকদের এক-চতুর্থাংশ বিদেশি শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
গ) বিদেশি শিক্ষক ও গবেষকদের আভাই-এর আকর্ষণের জন্য ৬মাস/১২মাস মেয়াদী কয়েকটি ফেলো (Fellow)-এর পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
ঘ) অনলাইনে পাঠদানের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
ঙ) বাংলাদেশি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তযুক্ত করা প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এই আর্জি পেশের দুই সপ্তাহের মধ্যে গত ১৭ই মাঘ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ অর্থ্যাৎ ৩১ শে জানুয়ারি ২০২১ খ্রিস্টাব্দ অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নিম্নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে:
সিদ্ধান্ত: (ক) বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে বিভাগ/ইনস্টিটিউটগুলো তাদের নিজ নিজ একাডেমিক বিষয়ে খ্যাতিমান বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়/গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক/গবেষকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও গবেষণার কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

উক্ত সিদ্ধান্তটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তটি গ্রহণের ফলে আভাই-তে বিদেশি মাতৃভাষী শিক্ষকদেরকে আভাই-তে বিভিন্ন মেয়াদে শিক্ষক ও গবেষক পদে নিয়োগের বাধা দূর হলো। কাজেই এই নীতিমালার আওতায় আরবি, আমহারিক, বাংলা, বর্মী, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, ডাচ, জার্মান, গ্রীক, হাউসা, হিন্দি, হাঙ্গেরীয়, ইন্দোনেশীয়, ইতালীয়, জাপানি, খেমের, কোরীয়, মালায়া, নেপালি, ফার্সি, পোলিশ, পর্তুগিজ, রুশ, সিংহালি, স্পেনীয়, সোয়াহিলি, তাগালগ, তামিল, থাই, তুর্কি, উজবেক এবং উর্দু ইত্যাদি বিদেশি মাতৃভাষী শিক্ষকদেরকে নিয়োগের দেয়া হলে, এসব ভাষার পঠন-পাঠনে ও গবেষণায় গতি ফিরবে। ফলশ্রুতিতে আভাই একটি পূর্ণাঙ্গ বিদেশি ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে দাঁড়াতে পারবে। এই আভাই-তে বিদেশি ভাষা ও বিদেশ বিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে দেশে বিভিন্ন দেশ সংশ্লিষ্ট চিন্তক-বর্গ (Think-Tank) সৃষ্টি হবে। এই চিন্তক-বর্গ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট সুযোগ আহরণে সহায়ক শক্তি হিসাবে অবির্ভূত হবে। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রাযৌক্তিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে দর কষাকষিতে বাংলাদেশ এই চিন্তক-বর্গকে কাজে লাগাতে পারবে। এভাবে দেশ বৈদশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুবিধা লাভে সক্ষম হবে। কাজেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্ত আভাই-এর উন্নয়নের পক্ষে মাইল ফলক হিসাবে বিবেচিত হবে। সে অর্থে একাডেমিক কাউন্সিলের বিদেশি শিক্ষক নিয়োগ সিদ্ধান্তের ঘটনাটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসাবে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ভাষা আন্দোলনের মাসে বিদেশি ভাষা শিক্ষা ও গবেষণার পীঠস্থান হিসাবে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিটের কাছে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কী হতে পারে? ধন্যবাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভাষা ইনষ্টিটিউটে 'কন্টিনিউইং এডুকেশন' আছে?

২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো উদ্যোগ।

৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ভোর ৪:০৮

মা.হাসান বলেছেন: এইটা সুখবর না খারাপ খবর সময়ে বোঝা যাবে। চাওয়া হইছিলো ভাষা শিক্ষা ইন্সটিট্যুটের জন্য বিদেশি শিক্ষকের অনুমোদন, দেওয়া হলো সকল বিভাগ/ইন্সটিট্যুটের অনুমোদন। এর আগে সম্ভবত ত্রিপুরার সাবরুমে ফেনি নদীর ১.৮২ কিউসেক পানি দেয়ার চুক্তির সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছিলেন চপ-সিঙাড়া ভিসি। ভিসি কিছু চুক্তি/এমওইউ করেন যার মাধ্যমে ঢাবিতে ভারতীয় শিক্ষক আনা হবে বলা হয়। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন- বিদেশ থেকে ডাক্তার ও শিক্ষক আনা হবে। এখন এই অনুমোদনের ফলে ভারতের শিক্ষকদের আসা সহজ হলো।

ভাষা শিক্ষা ইনসটিট্যুটে রাজনীতি করা আদু ভাই ছাড়া প্রকৃত ছাত্র কত জন? এনারা দেশের কোন কোন সেক্টরে অবদান রাখেন জানালে খুশি হবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.