নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙ্গলা সালতানাত শাসনামলে বৈষ্ণব সাহিত্য আন্দোলন

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:০৭



গৌড়কে রাজধানী করে স্বাধীন বাঙ্গলা সালতানাত ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা শের শাহ সূরীর অভিযানে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে বিলুপ্ত হয়।

বাঙ্গলা সালতানাত শাসনামলের একটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্যধারা হচ্ছে পদাবলি। এর শুরু চৈতন্যপূর্বযুগেই। রাধাকৃষ্ণের লীলাবিষয়ক এ সাহিত্য ভাব, ভাষা ও ছন্দে অতুলনীয়। এতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আত্মার আত্মীয়রূপে কল্পিত; তাঁর ও ভক্তের মধ্যে কোনো দূরত্ব নেই। পরে রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা এবং চৈতন্যদেবের প্রেমসাধনাকে অবলম্বন করেই বিস্তার লাভ করে মধ্যযুগের পদাবলি বা গীতিকাব্যের ধারা। Gowri Kuppuswamy, Muthuswamy Hariharan থেকে বর্ণিত আছে যে, Jayadeva’s poem quickly achieved renown in every nook and corner of India and from the early thirteenth century became a leading model for all poets who were enthralled by Krishna as God and lover. It was the influence of his work that earned for the poets Vidyapati and Bilvamangaja, who immediately followed him (13 and 14th centuries) the titles of ‘new Jayadeva’ and ‘Abhinava Jayadeva’ respectively.
https://archive.org/stream/in.ernet.dli.2015.108313/2015.108313.Jayadeva-And-Gitagovinda-Study_djvu.txt

বৈষ্ণব পদাবলি বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বের রসভাষ্য নামে খ্যাত এক শ্রেণীর ধর্মসঙ্গীত সংগ্রহ। বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যর সূচনা ঘটে চর্তুদশ শতকে বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস-এর সময়ে তবে ষোড়শ শতকে এই সাহিত্যের বিকাশ হয়। বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান অবলম্বন রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা। বৈষ্ণব পদাবালি সাহিত্যে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দ দাস ছাড়াও যশোরাজ খান, চাঁদকাজী, রামচন্দ বসু, বলরাম দাস, নরহরি দাস, বৃন্দাবন দাস, বংশীবদন, বাসুদেব, অনন্ত দাস, লোচন দাস, শেখ কবির, সৈয়দ সুলতান, হরহরি সরকার, ফতেহ পরমানন্দ, ঘনশ্যাম দাশ, গয়াস খান, আলাওল, দীন চন্ডীদাস, চন্দ্রশেখর, হরিদাস, শিবরাম, করম আলী, পীর মুহম্মদ, হীরামনি, ভবানন্দ প্রমুখ উল্লেখ্যযোগ্য কবি। বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যিক গুণে আসামান্য।

বৈষ্ণব পদাবলীর আকর গ্রন্থ হলো-গীতগোবিন্দম্ যা গৌড়ের রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেব (১১৭০-১২৪৫) কর্তৃক সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি কাব্য। এই কাব্যে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের গোপিনীদের সঙ্গে রাসলীলা— রাধার বিষাদ বর্ণনা, কৃষ্ণের জন্য ব্যাকুলতা, উপালম্ভ বচন, কৃষ্ণের রাধার জন্য উৎকণ্ঠা, রাধার সখীদের দ্বারা রাধার বিরহ-সন্তাপের বর্ণনা গ্রন্থিত হয়েছে। কাব্যের মনোরম রচনাশৈলী, ভাবপ্রবণতা, সুমধুর রাগরাগিণী, ধর্মীয় তাৎপর্য তথা সুললিত কোমল-কান্ত-পদাবলী সাহিত্যিক রসপিপাসুদের অপার আনন্দ প্রদান করে।

দুর্গাদাস লাহিড়ী (১৯১৭) বর্ণনা করেছেন যে, জয়দেবের স্মৃতি নবদ্বীপে উজ্জ্বল হইয়া রহিল। তিনি নবদ্বীপে কৃষ্ণপ্রেমের যে মন্দাকিনী-ধারা প্রবাহিত করিয়া গেলেন, ক্রমশঃ তাহা সহস্রমূখী হইয়া সমগ্র দেশকে প্লাবিত করিয়া তুলিল। মহারাজ লক্ষ্মণ-সেনের প্রাণে-সে প্রেমের এক নূতন তরঙ্গ উত্থিত হইল। রাজকাৰ্য্যে সময় অতিবাহিত করা অপেক্ষা ভগবত্তত্ত্বালোচনায় কালাতিপাত করাই এখন তিনি শ্ৰেয়ঃ বলিয়া মনে করিলেন। দিনের পর যতই দিন যাইতে লাগিল, বৎসরের পর যতই বৎসর অতিবাহিত হইতে লাগিল, কৃষ্ণ-প্রেমের পীযুষ-পানে ততই তাহার প্রাণ বিভোর হইয়া পড়িল। শেষ এমন হইয়া দাঁড়াইল, মহারাজের আর রাজকার্য্যের তত্ত্বাবধান ভাল লাগে না; রাজনীতির কথা কেহ উত্থাপন করিলে মহারাজ বিরক্ত হন।

কৃষ্ণ ও রাধার স্বর্গীয় প্রেম বিষয়ক গীতগোবিন্দম কাব্যের ছাঁচের উপর বিদ্যাপতি (১৩৫২-১৪৪৮) মৈথলী অপভ্রংশে রাধাকৃষ্ণ পদাবলি রচনা করেন। পরবর্তীতে চণ্ডীদাস (জন্ম ১৩৭০-মৃত্যু ১৪৩০) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামে গীতগোবিন্দম্-এর আদলে আখ্যানধর্মী ও সংলাপের আকারে পদাবলি রচনা করেন। এগুলোতে প্রাচীন বাংলা নাটকের ('চিত্রনাটগীতি';) একটি আভাস মেলে। মনে করা হয়, পূর্বতন লোকব্যবহারে অমার্জিত স্থূল রঙ্গরসের যে ধামালী গান প্রচলিত ছিল, তা থেকেই কবি এর আখ্যানভাগ সংগ্রহ করেছিলেন। কাব্যটিতে প্রাকৃত প্রেমের আকর্ষণ-বিকর্ষণ পালাগান বা নাটের ঠাটে উপস্থাপিত। গ্রন্থটি স্থানে স্থানে আদিরসে জারিত ও গ্রাম্য অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট হলেও আখ্যানভাগের বর্ণনা নৈপুণ্য ও চরিত্রচিত্রণে মুন্সিয়ানা আধুনিক পাঠকেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

বিভিন্ন কবির লেখা কিছু পদ এখানে উল্লেখ করা হল-
১. এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর/এ ভরা বাদর মাহ ভাদর/শূন্য মন্দির মোর।।/ঝম্পি ঘণ গন — জন্তি সন্ততি/ভুবন ভরি বরি খন্তিয়া।/কান্ত পাহুন কাম দারুন/সঘনে খন শর হন্তিয়া।।/কুলিশ শত শত পাত-মোদিত/ময়ূর নাচত মাতিয়া।/মও দাদুরী ডাকে ডাহুকী/ফাটি যাওত ছাতিয়া।।/তিমির দিক ভরি ঘোর যামিনী/অথির বিজুরিক পাঁতিয়া।/বিদ্যাপতি কহ কৈছে গোঙায়াবি/হরি বিনে দিন রাতিয়া।। (বিদ্যাপতি)

২. সই কেমনে ধরিব হিয়া।/আমার বঁধুয়া আন বাড়ি যায়/ আমার আঙিনা দিয়া।।/সে বধুঁ কালিয়া না চাহে ফিরিয়া/ এমতি করিল কে।/আমার অন্তর যেমন করিছে/তেমনি করুক সে।।/যাহার লাগিয়া সব তেয়াগিনু/ লোকে অপযশ কয়।/সেই গুণনিধি ছাড়িয়া পিরীতি/আর যেন কার হয়।।/যুবতী হইয়া শ্যাম ভাঙাইয়া/এমত করিল কে।/আমার পরাণ যেমতি করিছে/তেমতি হউক সে।। (চন্ডীদাস)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:১৩

লাতিনো বলেছেন: রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলা যে কন ধর্ম, সমাজ এবং আইনের চোখেই অন্যায় বলে প্রতীয়মান হবে, তা সত্ত্বেও একে এত ধর্মীয় আবহ কেন দেয়া হয়? তৎকালীন সাহিত্যিকদের মধ্যেও এই ঘটনাকে মহান করার প্রবণতা দেখা যায়। কেন?

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:১৫

রেজাউল করিম ফকির বলেছেন: ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক প্রশ্ন। নিশ্চয়ই ধর্মতাত্ত্বিক কেউ এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন।

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: ব্রাহ্মণ-সন্তান শ্রীচৈতন্য তরুণ বয়সে কেশব ভারতীর নিকট বৈষ্ণবমতে দীক্ষা নিয়ে সন্ন্যাসী হন এবং কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর হয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন। তিনিই গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মমতের প্রবর্তক।

৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৩১

পুকু বলেছেন: @লাতিনো,লিলিপুটিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারবুদ্ধি নিয়ে বৈষ্ণব সাহিত্য বোঝার চেষ্টা না করাই ভাল।বিশেষ করে আপনার জন্য তো কোনো মতেই নয়।তার চাইতে ফুটবল খেলুন নয়তো কাবাডি।

৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩৪

অগ্নিবেশ বলেছেন: ধর্মে ধর্মে বিরোধ কইরা লাভ কি? শ্রীকৃষ্ণ ধরাধামে আনন্দ করছেন, মুমিন করবেন বেহস্তে।
ধার্মিকদেরই পোয়া বারো। বিপদে আছি আমরা মুনাফেকরা, ডাইরেক্ট জাহান্নাম,
শুধু আগুন আর আগুন

৫| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৫৯

শোভন শামস বলেছেন: এক যুগের কাব্যের এক ধারা
এভাবেই সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.