নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদেশে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ সরকারের নৈতিক দায়বদ্ধতা

০৬ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:৪৪



বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ বাংলা ভাষা থেকে উৎসরিত হয়েছে। কাজেই বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম ভিত্তি হলো-বাংলা ভাষা। কিন্তু বাংলাদেশের জ্ঞানদীপ্ত অভিজাত শ্রেণি ক্রমেই বাংলা ভাষা থেকে সরে এসে ইংরেজি ভাষায় অনুরক্ত হয়ে উঠছে। আজ যারা বাংলাদেশের জ্ঞানদীপ্ত অভিজাত শ্রেণি তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কাল থেকে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত এ মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণি হিসাবে দেশ মাতৃকার আলোকবর্তিকা হিসাবে পথ দেখিয়েছে। তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও পাকিস্তানী সামরিক জান্তার শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে জাগিয়ে তুলেছে। তাদের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যে যেমন রয়েছে বুদ্ধিজীবি, সংস্কৃতকর্মী, সাহিত্যিক সমাজ তেমনি রয়েছে উকিল, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও শিক্ষক। কিন্তু এই জ্ঞানদীপ্ত অভিজাত শ্রেণি বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তরকালে পাশ্চাত্যায়নের প্রভাবে আপন দেশের সমাজ ও সংস্কৃতির উত্তরাধিকারের কথা ভুলে নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করছে। নিজেদের জন্য ও নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শান্তির বাসভূমি হিসাবে পাশ্চাত্যের দেশসমূহকে বেছে নিচ্ছে। কোন সমাজের অভিজাত শ্রেণি যে সমাজ ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে। দেশের সমাজ ও সংস্কৃতির স্রোতও সেদিকে প্রবাহিত হয়। ফলশ্রুতিতে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। নব্য ধনিক শ্রেণিও সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে আভিজাত্যের প্রতীক পাশ্চাত্যের ভাষা ও সংস্কতিকে ধারণ করছে। দেশ ধাবিত হচ্ছে এক সাংস্কৃতিক শুন্যতায় ও তমসাচ্ছন্নতায়। আর এই সাংস্কৃতিক শুন্যতা পূরণের জন্য ইসলামি সংস্কৃতি পরিপূরক হিসাবে দাঁড়িয়েছে।
আর পাশ্চাত্যায়নের এই ধারায় বাংলা ভাষাভাষী অভিজাত শ্রেণি পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করছে। তারা পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ, যেমন-যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় স্থায়ী আবাস খুঁজে নিয়েছে, যাদের অধিকাংশই ইতস্তত: বিক্ষিপ্তভাবে পাশ্চাত্য জনসমাজের মধ্যেই বসবাস করছে। ভারতের বাংলা ভাষাভাষীদের অনেকে জীবিকার প্রয়োজনে তাদের মূল রাজ্য ছেড়ে অনেকে ভিন ভাষাভাষী রাজ্যে আবাস গাড়ছে। ভারতের বাংলা ভাষাভাষীদের অনেকে কোণঠাঁসা হওয়ার ভীতি থেকে নিজেদের পরিচয় গোপন করে সে সব রাজ্যের ভাষা রপ্ত করে সেখানের অধিবাসী হয়ে যাচ্ছে। বাংলা ভাষাভাষীদের যারা বিদেশ বিভূঁইয়ে অভিবাসন করছে, তাদের অনেকেই সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করছে। সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করছে এমন একটি বাংলা ভাষাভাষী সমাজ হলো-যুক্তরাজ্যের লন্ডন বারো (টাওয়ার হ্যামলেটস এবং নিউহাম)। পাশ্চাত্যদেশের বিদেশি ভাষা-পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষা মর্যাদা ও প্রায়োগিকতায় যে কোন স্থানীয় ভাষার চেয়ে অগ্রণযোগ্যে। যে কোন কারণে সে সব পাশ্চাত্যদেশে পারিবারিক পরিমণ্ডল ছাড়া, দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ভাষা ব্যবহারের তেমন কোন সুযোগ নেই। যার ফলশ্রুতিতে অভিবাসীদের প্রথম প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষায় দখল থাকলেও, দ্বিতীয় প্রজন্মের সবাই দ্বিভাষী হওয়ায তাদের অধিকাংশই মাতৃভাষা বাংলার চেয়ে বিভাষায় বাচন, শ্রবণ, লিখন ও পঠনে দক্ষ হয়। বাংলা ভাষাভাষী এসব অভিবাসী প্রথম প্রজন্ম নিজেদের মাতৃভূমির প্রতি দরদ থেকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চ্চায় যতটুকু নিয়োজিত হন, কিন্তু দ্বিতীয় প্রজন্মের অধিকাংশই নিজের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হয়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা থেকে সরে আসছে। ভাষা-সংসর্গ তত্ত্ব অনুসারে নতুন প্রজন্মের কাছে এই ভাষা আর মাতৃভাষা নয়, কেবলই ঐতিহ্য ভাষা। প্রজন্মান্তের এই ভাষাই তাদের কাছে হবে এক সময় হবে বিভাষা।
বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে অভিবাসিত হয়েও তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি মমত্ববোধ থেকে ঐতিহ্য ভাষা বাংলা ভাষা চর্চা করে যাচ্ছে। তারা সুযোগে পেলেই টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশের খোঁজ রাখছে। যেখানে যথেষ্ট সংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী রয়েছে, সেখানে কমিউনিটি গড়ে তুলে ভাষা শহীদ দিবস ও পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি অনুষ্ঠান পালন করছে। তারা প্রবাসে থেকেও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করছে। কিন্তু বিদেশে অভিবাসিত দ্বিতীয় বা পরবর্তী প্রজন্ম প্রথম ভাষা হিসাবে অভিবাসিত দেশের ভাষাকে রপ্ত করছে ও ব্যবহার করছে। তারা বাস্তব জীবনে অন্য একটি ভাষা-পরিস্থিতিতে অবস্থান করায়, বাংলা ভাষা ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না। এভাবে প্রবাসে বিদেশি ভাষা-পরিস্থিতিতে বাংলা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঐতিহ্য ভাষা। বাংলা ভাষাকে ঐতিহ্য ভাষা হিসাবে টিকিয়ে রাখতে শুধুমাত্র বাঙ্গালি কমিউনিটির প্রচেষ্টা ও সমর্থন যথেষ্ট নয়। তার জন্য প্রয়োজন বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ থেকে উৎসরিত সরকারি পর্যায়ের প্রচেষ্টা ও সমর্থন। কিন্তু এই সমর্থন বা প্রচেষ্টার দায় কোনমতেই বিদেশি সরকারের উপর বর্তায় না, বরং তার দায়িত্ব বর্তায় বাংলা ভাষাভাষী দেশ ও জনগণের প্রতি। বাংলা ভাষাভাষী দেশ রয়েছে দু’টো-বাংলাদেশ ও ভারত। কিন্তু ভারত যেহেতু যুক্তরাজ্যীয় ভাষা হিসাবে বাংলার চেয়ে হিন্দিকে প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছে, সেহেতু ভারত বিদেশে বাংলা ভাষা প্রচলন ও জনপ্রিয়করণের দায় নিবে না। কাজেই এই দায় বর্তায় বাংলা ভাষাভাষী রাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের কোন ভাষানীতি না থাকায়, বাংলা প্রচলন ও জনপ্রিয়করণের ব্যাপারে সরকার উদাসীন। এ অবস্থায় দেশে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান রাজনৈতিক শক্তির কাছে, বিদেশে বাংলা ভাষার ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে আশা করা বাতুলতা মাত্র। কিন্তু বিদেশে বাংলা অভিবাসিত বাংলা ভাষাভাষী সমাজে ঐতহ্য ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার দায় বর্তায় ভাষা ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বিদেশে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার স্পৃহা রয়েছে। কিন্তু এখন যা প্রয়োজন, তা হলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক ও নৈতিক সিদ্ধান্ত।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখাটি ৫ইমে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আলো নাগরিক সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।
http://nagorik.prothomalo.com

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০২১ রাত ১২:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখা আমি বুঝি না।

০৭ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:৩০

রেজাউল করিম ফকির বলেছেন: আমিও কারো কারো লেখা বুঝি না। যে সব লেখা বুঝি সেগুলো শুধু পড়ে থাকি।

২| ০৮ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৪৮

স্থিতধী বলেছেন: আপনি এখন সময় করে ব্লগে প্রতি মন্তব্য করা শুরু করেছেন এটা একটা ভালো দিক। দয়া করে সময় করে এভাবে মন্তব্যগুলোর উত্তর দেবার চেষ্টা করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.