নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিভ্রান্তিমূলক ওয়াহাবীবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের বিকাশ:আমাদের ঐতিহাসিক পরিজ্ঞান

১৮ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:১৭

বাঙ্গলায় ইসলাম ধর্ম ও হিন্দু ধর্মের আজকের যে রূপ আমরা দেখি, পূর্বকালে সে রকম রূপ ছিলো না। ইসলাম ধর্ম ও হিন্দু ধর্ম― এগুলোর নানা ধারা রয়েছে। পূর্বকাল থেকে এ অঞ্চল ছিলো অনার্য জনসংখ্যা অধ্যুষিত। তারা ছিলো প্রাকৃতিক ধর্মালম্বী, যারা বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিক হওয়ার প্রক্রিয়াধীনে ছিলো। কিন্তু তাদের প্রাকৃতিক ধর্মও পৌরাণিক ধর্মে রূপান্তের প্রক্রিয়ায় ছিলো। বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যেও আবার লৌকিক পর্যায়ে খাঁটি বৌদ্ধধর্ম কোন সময়ই ছিলো না। পাল শাসনাআমলে থেকে বৌদ্ধধর্ম এবং মনসা পূজা ও ঠাকুর পূজা ইত্যাদি লৌকিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাথে শৈব উপাদান যুক্ত হতে থাকে।

বাঙ্গলাবর্তে সুলতানী শাসন (১৩৫২-১৫৭৮ খ্রিস্টাব্দ) শুরু হলে সর্বপ্রথম এ দেশের মানুষ নতুন দু‌'টি ধর্মে দীক্ষিত হওয়া শুরু করে। তার একটি হলো খানকা-মাজার-মসজিদ কেন্দ্রিক সূফী ইসলাম ধর্ম ও অন্যটি হলো আখড়া কেন্দ্রিক ভাববাদী বৈষ্ণব হিন্দু ধর্ম। বর্তমানে যে- হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হয় সেটি বৈষ্ণব হিন্দু ধর্মেরই প্রথা বিশেষ। হরিনাম সংকীর্তন বলতে যে বৈষ্ণব হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, তা বাঙ্গলার সুলতানগণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রচলন ঘটেছে। তখনও কালীপূজা ও দূর্গা পূজা শুরু হয়নি।



পরবর্তীকালে ব্রিটিশ আমলে ফরায়েযী আন্দোলনের সময় সুন্নী ইসলাম ধর্ম গতি পায়। একই সময়ে কালী পূজা প্রবর্তনের মাধ্যমে মুসলিম বিদ্বেষী নতুন ধারার শাক্ত হিন্দু ধর্মের প্রবর্তন ঘটে। উল্লেখ্য যে ব্রাহ্মণগণ ভাববাদী বৈষ্ণব হিন্দু ধর্ম ও কালীপূজা কেন্দ্রিক শাক্ত হিন্দু ধর্ম― এই উভয়েরই বিপক্ষে ছিলো। অন্যদিকে বৈষ্ণবগণ কালীপূজাকে ঘৃণার চোখে দেখতো। কালীপূজার পরে প্রবর্তিত হয় দূর্গাপূজা। বর্তমানে যে সার্বজনীন দূর্গা উৎসব পালিত হয়, তা আগে সার্বজনীন ছিলো না। সব বর্ণের হিন্দুদের সামাজিক সমন্বয়ের লক্ষ্যে ব্রিটিশ আমল থেকে রাজনৈতিক অভিজাতবর্গ দৃর্গা পূজাকে সার্বজনীন উৎসব হিসাবে চালু করে।

হিন্দু ধর্ম প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি লেখা প্রণিধানযোগ্য। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯০৮) তাঁর আত্মজীবনীতে [দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। আত্মজীবনী। প্রকাশসাল ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৫ বঙ্গাব্দ), কলকাতা। পৃষ্টা. ১০০।] বর্ণনা করেছেন যে, “আমি পূর্বে জানিতাম যে মোট ১১ খানি উপনিষৎ আছে এবং তাহা শঙ্করাচাৰ্য্য ভাষ্য করিয়াছেন। এখন দেখি, শঙ্করাচাৰ্য্য যাহার ভাষ্য করেন নাই এমন অনেক উপনিষৎ আছে। অণ্বেষণ করিয়া দেখিলাম যে, ১৪৭ খানি উপনিষৎ রহিয়াছে। যে সকল প্ৰাচীন উপনিষদের শঙ্করাচাৰ্য ভাষ্য করিয়াছেন, সেইগুলিই প্রামাণ্য। তাহাতেই ব্ৰহ্ম জ্ঞান, ব্রিহ্মোপাসনা, এবং মুক্তির সোপানের উপদেশ আছে। সকল শাস্ত্রের মধ্যে এই উপনিষৎ বেদের শিরোভাগ বলিয়া এবং সকলের শ্রেষ্ঠ বলিয়া যখন সর্বত্র মান্য হইল, তখন বৈষ্ণব ও শৈব সম্প্রদায়গণ উপনিষৎ নাম দিয়া গ্ৰন্থ প্রচার করিতে লাগিল এবং তা হাতে পরমাত্মার পরিবর্তে আপন আপন দেবতাদের উপাসনা প্রচার করিতে লাগিল। তখন গোপাল তাপনী উপনিষৎ প্ৰস্তুত হইল। তাহাতে পরমাত্মার স্থান শ্ৰীকৃষ্ণ অধিকার করিলেন। সেই গোপাল তাপনী উপনিষদে মথুরাকে ব্ৰহ্মপুর এবং শ্ৰীকৃষ্ণকে পরব্রহ্ম উল্লেখ করা হইয়াছে। আবার একটা গোপীচন্দনোপনিষৎ আছে। তাহাতে কেমন করিয়া তিলক কাটিতে হয়, তাহার উপদেশ আছে। বৈষ্ণবেরা এইরূপে আপনাদের দেবতার মহিমা ঘোষণা করিল। আবার শৈবরা স্কন্দোপপনিষৎ নাম দিয়া আর এক গ্রন্থে শিবের মহিমা ঘোষণা করিল। সুন্দরী তাপনী উপনিষৎ, দেবী উপনিষৎ, কৌলোপনিষৎ প্রভৃতিও আছে। তাহাতে কেবল শক্তির মহিমা প্রচার। এমন কি উপনিষদের নামে যে কেহ, যাহা তাহ প্রচার করিতে লাগিল। আকবরের সময়ে হিন্দুদের মুসলমান করিবার জন্য আবার একটা উপনিষৎ প্ৰস্তুত হইয়াছিল, তাহার নাম আল্লোপনিষৎ।” এভাবে হিন্দু ধর্ম ব্যাপক রূপন্তরের ফলে এখন যে মিশ্র হিন্দু ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে, তাতে যুক্ত হয়েছে নানা ধারার ধর্ম যার মধ্যে অন্যতম হলো শাক্ত ধর্ম, ঠাকুর ধর্ম, শৈব ধর্ম, পৌরাণিক ধর্ম ও বৈষ্ণব ধর্ম।



অন্যদিকে বাঙ্গালায় যখন ইসলাম ধর্ম প্রচার শরু হয়। তখন ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র ছিলো -খানকা ও মাজার। খানকাগুলো হিন্দু-মুসলিম উভয়ের জন্যই উন্মুক্ত ছিলো। যদিও সন্নিহিত মসজিদগুলো শুধু মুসলমানগণ নামাজ আদায়ে ব্যবহার করতো। বর্তামানে খানকাহসমূহ বিলুপ্তির পথে। কিন্তু খানকাহ সংশ্লিষ্ট মাজারগুলো এখনও টিকে আছে। এসব মাজারের সংখ্যা আধিক্য থেকে অনুমেয় যে এ এদেশে খানকাহ কেন্দ্রিক সূফী ইসলাম ধর্মের ব্যাপকতা কেমন ছিলো। ফরায়েযী আন্দোলন ও ওয়াহাবী আন্দোলনের ফলে সূফী ইসলাম ধর্ম বাঙ্গলার দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেছে।

সর্বশেষ কথা হলো এ দেশে সুলতানী আমলেই যুগপৎভাবে ইসলাম ও হিন্দু এই উভয় ধর্মের প্রসার ঘটেছিলো। স্মর্তব্য যে, যারা এ দেশে হিন্দু ধর্ম ও ইসলাম ধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন সে সব ধর্মবেত্তা, শাস্ত্রকার ও ধর্ম গুরুগণ সবাই ছিলো পশ্চিম দেশ থেকে আগত। ঠিকই একইভাবে যারা এই ধর্মগুলো প্রতিষ্ঠায় পৃষ্টপোষকতা করেছিলেন সেই মুসলমান সুলতানগণও ছিলেন পশ্চিম দেশ থেকে আগত। কিন্তু পশ্চিম দেশ থেকে আগত এই জনগোষ্ঠীর কেউই আর পশ্চিমে ফিরে যাননি। তাঁরা ও তাঁদের উত্তর পুরুষগণ এই দেশেই স্থায়ী আবাস গড়েন। এবং এক সময় এই জনগোষ্ঠীর সাথে মিশতে শুরু করেন। যতোটুকু অবিমিশ্রতা রয়েছে, সেটুকুও ব্রাহ্মণ্যবাদের ফসল। যে কারণে, মুসলমান সমাজে আন্তর্বিবাহের প্রথা থাকলেও, হিন্দু সমাজে সে প্রথা তেমন নেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মে, ২০২১ রাত ৮:১৩

কামাল১৮ বলেছেন: ইসলামে মূল দুটি ধারা একেবারে সুরু থেকেই ছিল।একটি হলো মক্কার ইসলাম,অন্যটি হলো মদিনার ইসলাম।মক্কার ইসলামে মারামারি কাটাকাটি নেই,বাস্তবতা ছিল না।তাই দেখি তোমার ধর্ম তোমার আমার ধর্ম আমার।১০৯:৬
মদিনার ইসলাম পুরাটাই অন্য রকম।তখন তোমারটা কোন ধর্মই না,ইসলাম ছাড়া বাকি সব অধর্ম।ওরা জাহান্নামী

২| ১৮ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: পৃথিবী থেকে ধর্মকে বাদ দিতে হবে। ধর্মের এত এত ভাগ অসহ্য। সারা দুনিয়ায় একটাই ধর্ম থাকবে- সেটা হলো মানবধর্ম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.