নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষিক সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে আমাদের জাতীয় অজ্ঞতা

০৩ রা আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:০৬



ভাষা প্রধানত: সংজ্ঞাপনের মাধ্যম হলেও, এটি সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গও বটে। ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বিশেষ। কেননা, ভাষা যেমন জাতীয়তাবাদের প্রতীক, তেমনি এটি সাম্রাজ্যবাদীদের তাদের অধিকৃত উপনিবেশে প্রাধান্য বিস্তারে সহায়ক হাতিয়ার। রাজনৈতিক অনুষঙ্গ হিসাবে ভাষার জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ও সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষা হলো নিম্নরূপ:
i) জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষা হলো―ক) বৃহত্তর জাতীয় সমাজে আত্তীকরণের মাধ্যম, খ) সামাজিকীকরণের মাধ্যম, গ) জাতীয়তাবাদের প্রতীক, ঘ) সভ্যতার বাহন, ঙ) সামাজিক সম্পদ ও চ) সাংস্কৃতিক সম্পদ।
ii) সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষা হলো―ক) সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার, খ) ভিন সংস্কৃতিকে কলুষিত করার হাতিয়ার, গ) অন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে পরাধীন করার হাতিয়ার বিশেষ।

কাজেই ভাষা হলো সাম্রজ্যবাদীদের একটি মোক্ষম অস্ত্র। এই অস্ত্র ব্যবহার করে, একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অন্য একটি অনুবর্তী জাতির ভাষার গঠন, মর্যাদা ও প্রায়োগিকতা নষ্ট করার মাধ্যমে তার জাতীয়তাবাদী চেননাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে ভাষাকে বিশেষ করে ইংরেজি ভাষাকে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রবণতা রয়েছে। কারণ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষা হলো―ক) সংজ্ঞাপনের মাধ্যম, খ) আভিজাত্যের প্রতীক, গ) জ্ঞান-গর্বের প্রতীক, ঘ) পাশ্চাত্যে অভিবাসনের সুযোগ ও ঙ) সামাজিক গতিশীলতার সিঁড়ি। কিন্তু অর্থনৈতিক লাভালাভ বিবেচনায় বিদেশি ভাষাকে দেশি ভাষা হিসাবে ব্যবহারের নানারূপ বিপদ রয়েছে। বিষয়টি বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ভ্রমণপিপাসু মাত্রই জানেন যে, বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ ও সর্ব উত্তরের স্থানিক বিন্দু হলো- যথাক্রমে টেকনাফ ও তেতুলিয়া, যা যথাক্রমে কক্সবাজার ও পঞ্চগড় জেলায় অবস্থিত। ধরা যাক, পরাশক্তি সম্পন্ন দেশ 'ক' ও 'খ' এসে বললো যে, এই দু'টি জেলার উন্নয়নে নিচের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করা হবে:
ক) বাড়িঘর নির্মাণের জন্য নগদ অর্থ দান করা হবে।
খ) প্রয়োজন অনুযায়ী রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হবে।
গ) স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে এবং তা পরিচালনার দায়িত্ত্ব নেওয়া হবে।
ঘ) প্রত্যেককে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী দেওয়া হবে।
ঙ) আধুনিক শিল্প ও কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

কিন্তু শর্ত হলো যে-
১) এই দুই জেলায় যথাক্রমে 'ক' ও 'খ' ভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হবে।
২) বেসরকারী অফিসসমূহও এই ক ও খ ভাষায় পরিচালনা করা হবে।
৩) এই দুই জেলায় কোন বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা থাকবে না।

তাহলে কী ঐ দুই জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে 'ক' ও 'খ' দেশের এই প্রস্তাবগুলো মেনে নেওয়া যায়? সবাই অথবা অধিকাংশই সম্ভবত: উত্তর দিবেন যে, অর্থনৈতিক সুবিধা বিবেচনায় বাংলাদেশে বিদেশি ভাষা চাপিয়ে দেয়া সঠিক হবে না। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক কুফলের বিষয়টিকে উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক সুবিধা বিবেচনায় বাংলা ভাষার চেয়ে ইংরেজি ভাষাকে মর্যাদা ও প্রায়োগিকতায় প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:১৪

খোলা জানালা। বলেছেন: অসাধারণ একটা লেখা পড়লাম। ভালো লাগলো বেশ।

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:০৬

মি. বিকেল বলেছেন: সুন্দর

৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৮:৪৪

এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: ইংরেজি একসময় সাম্রাজ্যবাদী ভাষা ছিল, কিন্তু এখন ইংরেজি প্রয়োজন। কাজেই উদাহরণটি যুতসই হলো না পোস্টে। বাংলাকে গৌণ করে যদি ইংরেজির প্রসার হয়ে থাকছে, তা কি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা করছে, নাকি বাংলাদেশীরা করছে? বাংলাদেশীরা করলে সাম্রাজ্যবাদীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।

৪| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:২৮

জাতিস্মরের জীবনপঞ্জী বলেছেন: "ইংরেজি একসময় সাম্রাজ্যবাদী ভাষা ছিল, কিন্তু এখন ইংরেজি প্রয়োজন। কাজেই উদাহরণটি যুতসই হলো না পোস্টে। বাংলাকে গৌণ করে যদি ইংরেজির প্রসার হয়ে থাকছে, তা কি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা করছে, নাকি বাংলাদেশীরা করছে? বাংলাদেশীরা করলে সাম্রাজ্যবাদীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই" - সহমত। পোস্টের লেখক ভাষা সাম্রাজ্যবাদ বলে যা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন তা বর্তমানে নেই। ভাষা এখন শুধুই যোগাযোগ, বাণিজ্য (বাণিজ্যের ব্যাপারটা আদি আমল থেকেই চলে আসছে, ভবিষ্যতেও থাকবে), শিক্ষা ও কালচারাল এক্সচেঞ্জের ব্যাপার। আপনি এলাকাভিত্তিক যে উদাহরণ দিলেন ক ও খ রাষ্ট্রের, সেই ধরণের রাষ্ট্র নিজেরাও জানে ইংরেজি ছাড়া কারো খাওয়া নাই, সেটা প্রায় সারা দুনিয়াতেই। এই ধরণের শর্তের কথা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পর আর শুনি নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.