নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইংরেজি ভাষা সমেত বিদেশি ভাষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বনাম ইংরেজি ভাষা ব্যতীত বিদেশি ভাষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২৫

বিদেশি ভাষা নিয়ে আলোচনায় প্রায়ই একটি প্রশ্নের অবতারণা করা হয়, তা হলো- 'বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে ইংরেজি কী একটি বিদেশি ভাষা না-কি ভাষা?'। এর একটি প্রায় গ্রহণযোগ্য উত্তর থাকলেও, ইংরেজি শিক্ষাবিদরা কখনও বলছেন এটি একটি বিদেশি ভাষা, আবার কখনওবা বলছেন এটি বাংলা ভাষার বিকল্প। ইংরেজি শিক্ষাবিদদের বক্তব্য যাই থাকুক না কেনো, ইংরেজি ভাষার তাদের একটি মহাউদ্যোগ জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। সেটি হলো তারা চাচ্ছেন বাংলাদেশের সমস্ত সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক, সমাজকল্যাণমূলক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেনো ইংরেজি ভাষায় চলে। তারা স্পষ্টতই দেশের রাজনৈতিক শক্তির অংশ। তাদের ইংরেজি ভাষা সম্পর্কিত অভিলাষ ও রাজনৈতিক কতৃত্বের কৌশলকে কাজে লাগিয়ে ইংরেজি ভাষাকে বাংলা ভাষা ও বিদেশি ভাষার উপর মর্যাদা আরোপ করে, এটিকে দেশের সবস্তরের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে তারা শিক্ষানীতি থেকে মার্তৃভাষা বাংলা ও বিদেশি ভাষা শিক্ষার বিষয়টিকে অপসারণ করেছেন, যেনো মার্তৃভাষা বাংলা শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যহত করা যায়। অন্যদিকে তারা বিদেশি ভাষা শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়টিকে অপসারণ করেছেনে যেনো দেশে ইংরেজি ভাষার প্রতিদ্বন্দ্বী ও পরিপূরক না থাকে। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো দেশের সব মানুষকে ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় এনে, দেশের ২/৩ কোটি মানুষকে বাঙ্গালি থেকে বাংলিশ জাতিতে রূপান্তর করা যায়। তাদের এই চূড়ান্ত লক্ষ্য বাস্তবায়িত হলে দেশে কার্যত বাঙ্গালি জাতির মধ্যে একটি উপজাতির সৃষ্টি হবে, যারা দেশের জনগণের চেয়ে সংখ্যায় কম হবে কিন্তু বাঙ্গালি জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এভাবে বাঙ্গালি জাতি ও বাংলিশ জাতি-এই দুই জাতির মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভেদের দেয়াল তৈরি হবে। দেশে উন্মেষ ঘটবে নতুন দ্বি-জাতি তত্ত্বের। এই বিভেদের দেওয়ালের একদিকে থাকবে বাঙ্গালি শোষিত শ্রেণি ও অন্যদিকে থাকবে বাংলিশ শোষক জাতি।
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, ইংরেজি ভাষা মাতৃভাষা বাংলা ও বিদেশি ভাষা -এই উভয় ধরণের ভাষার উপরই আধিপত্যবাদী ভাষা হিসাবে অবতীর্ণ হয়েছে। কাজেই ইংরেজি ভাষা এই দুই ধরণের ভাষা বিনাশী ভাষা। একই কারণে বলা যায় যে, ইংরেজি ভাষা সমস্ত বিদেশি ভাষার উপর বিরুদ্ধ ভাষা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।
বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে ইংরেজি ভাষা কোনমতেই বিদেশি ভাষার সহযোগী ভাষা নয় বরং এটি বাংলা ভাষার বিকল্প ভাষা। সে অর্থে বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে এটি একটি দ্বিতীয় ভাষা। কাজেই ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে গৃহীত শিক্ষানীতির দোহাই দিয়ে ইংরেজিকে বিদেশি ভাষার সহযোগী ভাষা-তা বলার কোন উপায় নাই।
কাজেই বিদেশি ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষার সহঅবস্থানের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ যে ভাষা বিদেশি নয় সে ভাষার সাথে বিদেশি ভাষাকে গছিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে, সেই প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যাবে না। বিদেশি ভাষার সাথে ইংরেজি ভাষার চাষ হলো, মুরগীর সাথে শিয়ালের চাষের মতো। সেজন্য ইংরেজি ভাষা মুক্ত বিদেশি ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.