নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে বিদেশি ভাষার উপযোগিতা এবং প্রায়োগিকতা

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:৪৯

বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে বিদেশি ভাষার উপযোগিতা এবং প্রায়োগিকতা

ডক্টর এ. বি. এম. রেজাউল করিম ফকির
অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি
পরিচালক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভূতপূর্ব অভ্যাগত অধ্যাপক, কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়
ভূতপূর্ব অতিথি শিক্ষক, টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়
ভূতপূর্ব গবেষণা ফেলো, জাপান রাষ্ট্রভাষা ইনস্টিটিউট

১. বিদেশি ভাষার অর্থ
[/sb
বিদেশি ভাষা হলো- মাতৃভাষা ব্যতীত যে কোনো ভাষা, যা অন্যদেশে কথিত হয়ে থাকে। তবে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে তার দেশের ভাষাটি বিদেশি ভাষা হতে পারে, যেমন— কানাডায় বসবাসকারী কোনও বাঙ্গালির মাতৃভাষা হলো-বাংলা। কিন্তু ইংরেজি ও ফরাসি হলো তার কাছে দেশ ভাষা। তদ্রুপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী কোনো জাপানীর কাছে ইংরেজি হলো একটি বিদেশি ভাষা।
শিশু জন্ম থেকে বা খুব অল্প বয়সেই মাতৃভাষা আয়ত্ত্ব করে থাকে। দেশের ভাষা পরিস্থিতিভেদে একজন শিশুর একাধিক ভাষা শিখতে হতে পারে। ভারত বা বার্মার মতো বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দেশে শিশু অনেকগুলো ভাষা শিখলেও, সেগুলোর কোনোটিই বিদেশি ভাষা হিসাবে ধরা হয় না। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা বা কানাডার মতো দেশে একাধিক দাপ্তরিক ভাষা কথিত ও ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যার কোনটিই বিদেশি ভাষা নয়।
বাঙ্গালিরা কিছু ব্যতিক্রম বাদে একটি সমসত্ত্ব ও প্রতিসম জাতি। বাঙ্গালিদের ভাষা হলো মাতৃভাষা বাংলা। আর গারো, ত্রিপুরা ও সাঁওতালদের মাতৃভাষা হলো যথাক্রমে গারো, টিপেরা ও সাঁওতালি; কিন্তু বংলা তাঁদের কাছে দ্বিতীয় ভাষা, বিদেশি ভাষা নয়। বাঙ্গালি ও উক্ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আমাদের ভাষাসমূহ, যেমন-চীনা, জাপানি ও ফরাসি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা। তবে সংস্কৃত ও পালি ভাষা বিদেশি ভাষা নয়। এগুলো দেশীয় ধ্রুপদী ভাষা।

২. বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে বিদেশি ভাষার প্রায়োগিকতা
বিশ্বায়নের ফলে বাংলাদেশের সাথে বিভিন্ন দেশের সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সম্পর্ক ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেমন বিদেশি ভাষার উপযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি ব্যক্তি পর্যায়েও বিদেশি ভাষার উপযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ দেশের মানুষ এখন কাজ ও শিক্ষার সন্ধানে উন্নত বিশ্বে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ এদেশের মায়া ত্যাগ করে উন্নত জীবনের সন্ধানে বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হচ্ছে। যে, যে উদ্দেশ্যেই বিদেশে গমন করুক না কেন, তার সে দেশের ভাষা জানা প্রয়োজন। ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা থাকলে কোন দেশেই আশানুরূপ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না।

চলমান এই বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে নানান ক্ষেত্রে বিদেশি ভাষার উপযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে ও তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা নিম্নে তুলে ধরা হলো।

ক) জ্ঞানার্জনের মাধ্যম
বাংলাদেশের মানুষ অন্য দেশের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে বিভিন্ন বিদেশি ভাষাকে, যেমন-চীনা, ফরাসি ও জাপানি মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। দেশে শিক্ষা ও গবেষণা কর্মে নিয়োজিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ এজমালি মাধ্যম হিসাবে একটি বিদেশি ভাষা, যেমন-ইংরজি ও আরবি মাধ্যমে হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। এভাবে এ দেশে ইংরেজি ও আরবি সহ জ্ঞানার্জনের মাধ্যম হিসাবে বিভিন্ন বিদেশি ভাষার উপযোগিতা রয়েছে।

খ) কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যম
এক দেশের সাথে আরেক দেশের সম্পর্ক সবসময় স্বাভাবিক থাকে না। দুটি ভিন্ন দেশ অথবা বিভিন্ন দেশের মধ্যে যেমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, আবার সময়ে সময়ে সেই সম্পর্ক শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্কে পরিণত হতে পারে। দুই ভিন্ন দেশ বা বিভিন্ন দেশের মধ্যে এই সম্পর্ক নির্ভর করে মূলত: আধিপত্য ও অর্থনৈতিক লাভালাভের হিসাবের উপর। এই কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও রক্ষার ক্ষেত্রে সাধারণত: ইংরেজি ভাষা ব্যবহৃত হলেও, কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা ইংরেজি ভাষার চেয়ে অধিকতর কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। সে বিবেচনায়, প্রতিবেশী দেশসমূহ, যেমন-ভারত, বার্মা, থাইল্যাণ্ড ইত্যাদি দেশের সাথে কৃটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষায় যথাক্রমে হিন্দি, বর্মী ও থাই ভাষা অধিকতর কার্যকর বিদেশি ভাষা হিসাবে উপযোগিতা রয়েছে।

গ)বাণিজ্যিক বিনিময়ের মাধ্যম
সংজ্ঞাপন মাধ্যমের প্রাযুক্তিগত উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলশ্রুতিতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই অব্যাহত বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উঠেপড়ে লেগেছে। যে কারণে বাণিজ্যিক বিনিময় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাণিজ্যিক বিনিময়ে সাধারণত ইংরেজি ব্যবহৃত হয়ে থাকলেও, বাণিজ্যিক বিনিময়ে ব্যপৃত বিপ্রতীপ দেশের ভাষা বাণিজ্যিক মাধ্যম হিসাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। অর্থ্যাৎ চীন, জাপান ও ফ্রান্সের সাথে বাণিজ্যিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে যথাক্রমে চীনা, জাপানি ও ফরাসি ভাষা বাণিজ্যিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে অধিকতর কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। এভাবে দেশে ইংরেজি ভাষার বিপরীতে বিভিন্ন বিদেশি ভাষার উপযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঘ) সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যম
বিভিন্ন দেশে জনমানুষ লৌকিক পর্যায়ে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়ে থাকে। দেশে দেশে যে শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকগণ সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে কোন না কোন বিদেশি ভাষা ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশের শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকগণ ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক প্রয়োজনে বিভিন্ন বিদেশি ভাষা, যেমন- স্পেনীয়, জাপানি, কোরীয়, মালয়, আরবি, ফার্সি, পালি, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ইত্যাদি ভাষা ব্যবহার করে থাকে। এভাবে সীমিত পর্যায়ে হলেও কিছু অপ্রচলিত বিদেশি ভাষারও উপযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে।

ঙ) চাকরির বাজারে প্রবেশের মাধ্যম
বিশ্বায়নের যুগে এক দেশের জনশক্তি অন্যদেশের উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বে বিদেশি জনশক্তির চাহিদা রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। এসব দেশ তৃতীয় বিশ্ব থেকে সাধারণ শ্রমিক থেকে শুরু করে উচ্চ প্রযুক্তিগত দক্ষতা সম্পন্ন জনশক্তি আমদানী করে থাকে। এর অংশ হিসাবে বাংলাদেশ থেকে এসব দেশে দক্ষ ও অদক্ষ জনশক্তি রপ্তানী হয়ে থাকে। এসব দেশের চাকরির বাজারে প্রবেশ ও সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজ সম্পাদনের জন্য সেসব দেশের ভাষা জানা আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। এভাবে দেশে আরবি, মালয় ও জাপানি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা বিদেশে চাকরির বাজারে প্রবেশের মাধ্যম হিসাবে উপযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে।

৩. উপসংহার
উক্ত আলোচনা থেকে লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে বিদেশি ভাষার উপযোগিতা ও প্রায়োগিতকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই একটি বিদেশি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। অথচ দেশে বিদেশি ভাষা শিক্ষার উন্নত অবকাঠামো আমাদের দেশে নেই। এমনকি আমাদের কোন বিদেশি ভাষা নীতিও নেই। অথচ বিদেশের সাথে অর্থনৈতিক, বানিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি সুষ্ঠু বিদেশি ভাষা নীতির। যুগোপযোগী বিদেশি ভাষা নীতির আলোকে বিদেশি ভাষা শিক্ষা অবকাঠামো তৈরী করা সম্ভব হলে, এদেশের মানুষ প্রয়োজন অনুসারে বিদেশি ভাষা শিক্ষার সুযোগ পাবে। ফলশ্রুতিতে এদেশের একজন নাগরিক যেমন বহির্বিশ্বে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে নিজের লক্ষ্য অর্জনে সফলকাম হবে, তেমনি বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করতে পারবে। তবে বিদেশি ভাষা শিক্ষার পরিস্থিতির এই ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে হবে জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে।

বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে বিদেশি ভাষার উক্ত উপযোগিতা ও প্রায়োগিকতা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, দেশে একটি কার্যকর বিদেশি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজন। কিন্তু এই শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে, সর্বাগ্রে যা প্রয়োজন তা হলো একটি বিদেশি ভাষানীতি। কাজেই দেশে একটি বিদেশি ভাষানীতি প্রণয়ন পূর্বক, তা আলোকে একটি বিদেশি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.