নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বি-জাতি তত্ত্ব এবং বাংলা ভাষাভাষীদের ত্রিধাবিভক্ত জাতীয়তাবাদ: বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, মুসলমান-হিন্দু জাতীয়তাবাদ, ভারতীয়-বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ

১১ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১১:১৩

ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় ধর্ম নির্ভর দ্বি-জাতিতাত্ত্বিক রাজনৈতক আদর্শের স্ফূরণ, বাঙ্গলার মানুষ ইত্যাদি নানা রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে আবর্তিত হতে হতে তাদের রাজনৈতিক চিন্তাধারা ছাঁচীকৃত হতে থাকে। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শ থেকে উদ্ভূত হয় হিন্দু-মুসলমান বিভাজন ভিত্তিক দ্বি-জাতি তত্ত্ব এবং একই সাথে উদ্ভূত হয় জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শ। এসব জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শের মধ্যে অন্যতম হলো-বেলুচ জাতীয়তাবাদ, তামিল জাতীয়তাবাদ, পশতু জাতীয়তাবাদ, নাগা জাতীয়তাবাদ ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ। কিন্তু ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শের উপজাত হিসাবে উদ্ভূত সমস্ত রাজনৈতিক আদর্শের উর্ধে উঠে আসে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন ভিত্তিক দ্বি-জাতি তত্ত্ব, যার ফলশ্রুতিতে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া ব্যহত হয়ে পড়ে। বাঙ্গালী বলে কথিত বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শ অন্তত: চারটি রাজনৈতিক আদর্শে বিভাজিত হয়ে পড়ে; সেগুলো হলো- বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, মুসলমান জাতীয়তাবাদ, হিন্দু জাতীয়তাবাদ, যার মধ্য অবস্থানে আন্ত:বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন আরো অনেকগুলো রাজনৈতিক আদর্শের স্ফূরণ ঘটে। এসব আদর্শের একটি হলো মুসলমান জাতীয়তাবাদ, যা পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের সাথে মিশে যায়। কারণ পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের মূল প্রতীক ছিলো ইসলাম ধর্ম ও উর্দু ভাষা। ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া ব্রিটিশ রাজ থেকে স্বাধীনতা লাভ করলে, দ্বিধাবিভক্ত মুসলমান জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চল পাকিস্তান হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। এই অঞ্চলের নাম থেকে বাঙ্গলার হিন্দু ও মুসলমান জনগোষ্ঠী পাকিস্তানী হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। অন্যদিকে ভারতের বাংলা ভাষাভাষী হিন্দু-মুসলমান জনগোষ্ঠী ভারত রাষ্ট্রের নাম অনুসারে ভারতীয় হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পূর্ব-পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার হলে, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের পুনর্জন্ম ঘটে। এই জাতীয়তবাদ থেকে উত্থিত আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ নামক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। এই জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশে ও ভারতের বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রেরণা যুগিয়ে এক দশকের মধ্যে নি:শেষ হয়ে পড়ে। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটলে, পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের আদলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের উ্ত্থান ঘটে। এভাবে বাংলাদেশে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মৃত্যু ঘটলে, ভারতে এর প্রাসঙ্গিকতা নি:শেষ হয়ে যায়।

বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ অতীতে উক্ত বাস্তবধর্মী রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে বিধায়, বাংলাদেশের মানুষের জাতীয়তাবাদী আদর্শিক চিন্তায় দোষ প্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জাতি সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী ব্যাখ্যা উপস্থাপিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে জাতি সম্পর্কে ইউরোপে উত্থিত জাতীয়তাবাদ-এর মূল ব্যাখ্যার বিপরীতে নতুন ব্যাখ্যা উপস্থাপিত হয়েছে। এভাবে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞায়নে দুষ্টতা ও জাতি ধারণার অপব্যাখ্যা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠাকরণের ওজর তৈরি সহজসাধ্য হয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.