নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রমকে আলাদাকরণের হেতু ও উপায়

২৮ শে মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৪

১. পরিপ্রেক্ষণিকা
রাষ্ট্রব্যবস্থার কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তি বিদেশি ভাষানীতি থেকে ইংরেজি কেন্দ্রিক একক বিদেশি ভাষানীতিতে প্রত্যাবর্তন করলে, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বিদেশি ভাষা বিকাশ শিক্ষা কার্যক্রম বিকাশের পথ রূদ্ধ হয়ে পড়ে। শুরু হয় ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য। ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম বিস্তৃতির সুবাদে, আধুনিক ভাষা ইনস্টিউটে অসংখ্য ইংরেজি শিক্ষকের প্রবেশ ঘটে। ইংরেজি শিক্ষকদের সংখ্যাধিক্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে অপরিকল্পিত ও ব্যাপক এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের মূল চেতনা বিচ্যুত ইংরেজি শিক্ষা কার্ষক্রমের বিস্তৃতি ঘটেছে। এই বিস্তৃতি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের বিদেশি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটস্থ ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রস্তাব’- শীর্ষক নিবন্ধে আধুনিক ভাষা ইনস্টিউটের ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার ও উন্নয়নের রূপকল্প প্রণয়ন করানো হয়েছে।

২. আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তনের পটভূমি
১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে জারীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ মোতাবেক ষষ্ঠ সংবিধি অনুসরণে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১লা জুলাই বিদেশি ভাষা শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠা করা হয়, পূর্বতন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদস্থ বিদেশি ভাষা বিভাগের অবকাঠামোর। অর্থ্যাৎ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মূল চেতনাটি উৎসরিত হয়েছে বিদেশি ভাষা শিক্ষানীতি থেকে। উল্লখ্য যে, বাংলাদেশে প্রণীত প্রথম শিক্ষা প্রতিবেদনে (যা ছিলো শিক্ষানীতির পরিপূরক) শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শেষ পর্ব থেকে একটি বিদেশি ভাষা পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো। সে শিক্ষানীতি অনুযায়ী চীনা, জার্মান, জাপানি, বর্মী, ফরাসি ও থাই ইত্যাদি বিদেশি ভাষার মতোই ইংরেজিকে একটি বিদেশি ভাষা হিসাবে বিবেচনা করা হতো। বিদেশি ভাষা বিভাগ অথবা আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠালগ্নে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম ছিলো না। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে সর্বপ্রথম ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে নন-ডিগ্রী ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়।

কিন্তু আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের মূল শিক্ষা আদর্শকে পাশ কাঁটিয়ে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে এখন ব্যাপক ও সর্বাত্মক ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, এখন এই ব্যাপক ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থাটি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে কারা ও কীভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার একটি বর্ণনা দেয়া যাক। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠা ঘটেছে ইংরেজি শিক্ষকদের প্রচেষ্টায়। এই শিক্ষকগণ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে যে শিক্ষা আদর্শকে বহন করেন, তাকে দু’টি সূচক ধারণা দ্বারা বৈশিষ্টায়িত করা যায়। সেগুলো হলো— সাক্ষরতা ইংরেজি (Literacy English) ও ইংরেজি শিক্ষাদান পদ্ধতি (English Language Teaching)। এই দু’টি সূচক ধারণাই বিদেশি ভাষানীতির সাথে সাংঘর্ষিক। এই সূচক ধারণা দু’টি ইংরেজি ভাষিক সাম্রাজ্যে (Anglophone Countries) পরিচালিত বুনিয়াদি শিক্ষার অংশ হিসাবে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে সাক্ষরতা ইংরেজি পাঠদান ও এই পাঠদানে সহায়ক শিক্ষক শ্রেণি সৃষ্টির চেতনা প্রসূত ধারণা। উল্লেখ্য যে কেনিয়া, ইণ্ডিয়া, পাকিস্থান ও পাপুয়া নিউগিনি ইত্যাদি ইংরেজি ভাষিক সাম্রাজ্যভুক্ত দেশে কোনো প্রমিত ও এজমালি ভাষা নেই। কারণ এসব দেশ বহু ভাষাভাষী ও উপ-ভাষাভাষী জনগোষ্ঠির বাস। সে সমস্ত দেশের বহু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীকে এক শিক্ষাব্যবস্থায় আনয়ন করতে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীতা রয়েছে। অর্থ্যাৎ এসব দেশে দাপ্তরিক, সামাজিক ও শাস্ত্রীয় ভাষা হলো ইংরেজি এবং শিক্ষাব্যবস্থাও হলো ইংরেজিতে। এ সব দেশের এই ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থাকে সহায়তা করতে ইংরেজি ভাষিক সাম্রাজ্যের শীর্ষ দেশসমূহ যেমন- ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ তাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষা অনুষদে ইংরেজি শিক্ষাদান পদ্ধতি ও ইংরেজি শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য অবকাঠামো তৈরি করেছে। আর আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে যারা এই ইংরেজি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা হলেন মূলত যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত উক্ত ধরণের শিক্ষা অনুষদ থেকে ডিগ্রী প্রাপ্তগণ। কাজেই তাঁরা উক্ত সূচক ধারণাগুলো [সাক্ষরতা ইংরেজি (Literacy English) ও ইংরেজি শিক্ষাদান পদ্ধতি (English Language Teaching)] লাভ করেছিলেন কোনো বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি অনুষদে জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নয়। এই ধরণের ধারণা পোষণকারী শিক্ষকগণ আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে বিভিন্ন দেশে স্থানীয় ভাষাকে হটিয়ে ইংরেজি ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট। বাংলাদেশেও ত্রয়োদশ শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি-বাংলা দ্বি-সাক্ষরতা (biliteracy) বিশিষ্ট শিক্ষার অংশ হিসাবে ইংরেজি ভাষা চালু রয়েছে। এখন কার্যত: বহু ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা ও বাংলা ভাষার স্থান দখল করে নিচ্ছে। কিন্তু কোনো ভাষানীতিই দেশীয় ভাষাকে হটিয়ে ইংরেজি ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার কার্যক্রমকে সমর্থন করে না। অথচ বাংলাদেশে কোনো ভাষানীতি না থাকার কারণেই আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে এমন একটি ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা গেছে। কিন্তু আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ভাষানীতি বিবর্জিত একটি ইংরেজি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থাকে সমর্থন করতে পারে না।

৩. আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটস্থ ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যপ্তি ও বৈচিত্র্য
বর্তমানে পরিচালিত আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থাটি নানাবিধ শিক্ষা কার্যক্রমের সমন্বয়ে গঠিত। কিন্তু আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিটের সৃষ্টিলগ্নে কোনো ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো না। কিন্ত ১৯৮০-এর দশক থেকে পর্যায়ক্রমে নিম্নের শিক্ষা কার্যক্রমগুলো চালু করা হয়:

৩.১. ইংরেজি নন-ডিগ্রী শিক্ষা কার্যক্রম
১ক-১গ) জুনিয়র-ডিপ্লোমা: আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সৃষ্টিলগ্নে ইংরেজি জুনিয়র/সিনিয়র সার্টিফিকেট শিক্ষা কার্যক্রম ছিলো না। কিন্তু গত ১৯৯০-এর দশকে বিদেশি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা কাঠামোটিকে ব্যবহার করে ইংরেজি জুনিয়র-সিনিয়র কার্যক্রম চালু করা হয়। এটি চালু করার প্রাক্কালে এ লেখক (বর্তমান পরিচালক) এ শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অযৌক্তিকতা তুলে ধরে চিঠি দিয়েছিলো। কারণ জুনিয়র/সিনিয়র সার্টিফিকেট কোর্স শুন্য থেকে ভাষা শেখা শুরু করা শিক্ষার্থীদের উপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম। কাজেই এই শিক্ষা কার্যক্রমটি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় পর্যায়ে ১২ বছর ইংরেজি শেখা শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী নয়। উপরন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনে সহায়ক ১টি কোর্স চালু করার প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে এর প্রয়োজনীয়তা নি:শেষ হয়ে গেছে। এখন ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রী নয়, এমন শিক্ষার্থীদের সাক্ষরতা ইংরেজি শেখার সুবিধার্থে বিদেশি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠকে ব্যবহার করা সমীচিন হবে না।

১ঘ) ৫০ ঘন্টা মেয়াদী স্বল্পমেয়াদী কোর্স (সান্ধ্যকালীন): এ কোর্সটির ধারণাগত উপাদান নিহিত রয়েছে কথোপকথন ইংরেজি (spoken English) শিক্ষা চেতনাতে। এটি বিপুল ব্যয়ে পরিচালিত উচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সাংঘর্ষিক।

৩.২. ইংরেজি ডিগ্রী শিক্ষাকার্যক্রম
২ক) ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক শিক্ষা কার্যক্রম (English for the Speaker of Other Languages-ESOL): এ শিক্ষা কার্যক্রমটি ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত Common Framework for the Syllabus of Bachelor Programs-এর অনুরসণে চালু করা হয়। উক্ত দলিলে ইংরেজি স্নাতক প্রোগ্রামের নাম English as Foreign Language নির্ধারণ করা হয়েছিলো। উল্লখ্য যে, সেই দলিলটি যথাক্রমে একাডেমিক কমিটি, বোর্ড অব স্টাডিজ ও বোর্ড অব গভরর্ণরস অনুমোদন দিয়েছিলো। এ লেখক এ দলিলটি প্রণয়নের মূল দায়িত্বে ছিলো। কিন্তু অনুমোদিত এই দলিলটির নীতিমালাকে পাশ কাটিয়ে বর্তমান English for the Speaker of Other Languages (ESOL) চালু করা হয়েছে।

২খ) ১ বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রম: Teaching English for the Speaker of Other Languages (TESOL): প্রথমত: এই শিক্ষা কার্যক্রমটি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে মিল নেই। এর নাম থেকে স্পষ্ট যে, এটি ইংরেজি শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিদ্যার ধারণাকে মাথায় নিয়ে চালু করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ শিক্ষাকার্যক্রমের নাম থেকেই স্পষ্ট যে, এই শিক্ষাকার্যক্রম শিক্ষা অনুষদে (উদাহরণস্বরূপ: শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো বিষয়। এর সাথে ২গ)-এর শিক্ষা কার্যক্রমের একটি মিল রয়েছে।

২গ) ১ বছর মেয়াদী শিক্ষা কার্যক্রম (English Language Teaching-ELT) (সান্ধ্যকালীন): এই শিক্ষা কার্যক্রমটি প্রথমে ১ বছর মেয়াদী নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম হিসাবে চালু করা হয়েছিলো। কিন্তু কয়েক বছর পরে এটিকে দেড় বছর মেয়াদী শিক্ষা কার্যক্রমে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর আগে এই নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমটিকে সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রমে রূপান্তর করা হয়।

৪. আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমের পরিমার্জন ও পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, ১ক) থেকে ২গ) পর্যন্ত চালু শিক্ষা কার্যক্রমগুলো সাক্ষরতা ইংরেজি (Literacy English) ও ইংরেজি শিক্ষাদান পদ্ধতি (English Language Teaching)—এই সূচক ধারণাকে মাথায় নিয়ে প্রবর্তন করা হয়েছে। কাজেই আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপ্তি ও এটি প্রবর্তনের পিছনে নিহিত ধারণাগত কাঠামো বিবেচনায় নিয়ে ইংরেজি শিক্ষাকার্যক্রমসমূহ আলাদা করা প্রয়োজন, যেনো ইংরেজি শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমসমূহ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে এবং একই সাথে বিদেশি ভাষা শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমগুলো স্বাধীন অস্তিত্ত্ব নিয়ে বিকশিত হতে পারে।

৫. এক নজরে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে পরিচালিত ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমসমূহ


উপরের চিত্র থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরজি শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। সে অনুসারে এর প্রশাসনিক ব্যাপ্তিও বেশী।

৬. আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে পরিচালিত ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম ও বিভেদের দেয়াল
২ ও ৩ নং অনুচ্ছেদের আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম ব্যপ্তি ও বৈচিত্র্যে ব্যাপক পরিসর নিয়ে বিরাজিত রয়েছে। কিন্তু আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে পরিচালিত নন-ডিগ্রী কোর্সসমূহ কোনো ভাষানীতিতে সিদ্ধ নয়। বাবিমক (BUGC) বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে দক্ষ হয়ে উঠতে যে স্নাতক প্রথম বর্ষে ১০০ নম্বরের ইংরেজি পাঠের যে পরামর্শ দিয়েছে, তা কোনো ভাষানীতি চিন্তাপ্রসূত নয়। Rod Ellis এবং Stephen Krashen-এর মতো বিখ্যাত ফলিত ভাষাবিজ্ঞানীগণ মত প্রকাশ করেছেন যে, ব্যাকরণ ও শুদ্ধ বাক্যগঠন ইত্যাদি ভাষা শিক্ষকগণ শিখাতে পারে; কিন্তু ভাষায় উচ্চতর দক্ষতা অর্জন ঘটে অধিক হারে বিষয়বস্তু পাঠের মাধ্যমে। কাজেই আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন নন-ডিগ্রী কোর্স অথবা বাবিমকের নির্দশিত ১০০ নম্বরের ইংরেজি কোর্স আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিটের উপযোগী নয়। অন্যদিকে ESOL, TESOL বা ELT-এর মতো শিক্ষা কার্যক্রমের চেতনা উৎসরিত হয়েছে সাক্ষরতা ইংরেজি (Literacy English) ও ইংরেজি শিক্ষাদান পদ্ধতি (English Language Teaching) নামক দু’টি সূচক ধারণা থেকে। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এই সূচক ধারণা দু’টি ইংরেজি ভাষিক সাম্রাজ্যের (Anglophone Countries) সৃষ্ট ধারণা। কিন্তু আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট মূলত: একটি বিদেশি ভাষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ইংরেজি বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে বিদেশি ভাষা নয়। যে কারণে এই ভাষাটি দ্বি-স্বাক্ষরতা (bilitearcy) শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে মাতৃভাষার মতোই দেশব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থার অঙ্গীভূত করা হয়েছে। তাই ভাষা শিক্ষাদান পদ্ধতির মতো বিষয় আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে অন্তর্ভুক্ত করার অযোগ্য।

৭. আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা
অনুচ্ছেদ-২ ও ৩-এ বিবৃত ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমগুলো ইংরেজি শিক্ষকদের আগ্রহে প্রবর্তন করা হয়েছে, যা বর্তমানে পর্যালোচনার দাবি রাখে। কিন্তু এই শিক্ষাকার্যক্রমগুলোর পর্যালোচনা করা উচিত জাতীয় শিক্ষানীতি ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ৬ষ্ঠ সংবিধির নিরিখে। বাংলাদেশে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রণীত জাতীয় শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদন (ছায়া শিক্ষানীতি)-এ ইংরেজিকেও অন্যান্য বিদেশি ভাষার মতোই একটি বিদেশি ভাষা হিসাবে গণ্য করা হয়। বর্তমান শিক্ষানীতিতেও বিদেশি ভাষা শিক্ষা প্রচলনের কথা বিবৃত আছে, যদিও তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু আদতে বাংলাদেশের কোনো ভাষানীতিই নেই, যার আলোকে ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম প্রণয়ন করা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশের ইংরেজি ভাষা শিক্ষানীতি নিয়ে বাংলাদেশসহ যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর গবেষণা হয়েছে। এই সব গবেষণা থেকে যা প্রতিভাত হয়, তা হলো বাংলাদেশে একটি অপরিকল্পিত ইংরেজি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা বিরাজিত রয়েছে। কাজেই দেশে বিরাজিত ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমগুলো সঠিকায়নে ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত হবে না। তবে আমাদের হাতে রয়েছে হাতের পাঁচ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ষষ্ঠ সংবিধি। এই সংবিধির মূল চেতনা হলো আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বিদেশি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করা। মূলত: এই চেতনাটি এসেছে বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদনে বিধৃত বিদেশি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রমের দিগনির্দশনা থেকে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ/৫ম শ্রেণি থেকে একটি বিদেশি ভাষা চালুর বিধান রাখা হয়েছিলো। অর্থ্যাৎ সে শিক্ষানীতিতে ইংরেজি ভাষা বাধ্যতামূলক বিষয় ছিলো না, বরং বিভিন্ন বিদেশি ভাষার মধ্য থেকে ইংরজিকে ঐচ্ছিক বিষয় পঠনের জন্য বাছাই করার সুযোগ ছিলো। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর পর্যন্ত এই একই ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো। বিদেশি ভাষা সম্পর্কে এরূপ বিধৃতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিদেশি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রমকে পরিচালনা করতে সক্ষম উপযুক্ত কর্মশক্তির প্রয়োজন ছিলো। কাজেই এই কর্মশক্তি সৃষ্টির লক্ষে বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় (তখন ইংরেজিও একটি বিদেশি ভাষা ছিলো) বিভিন্ন ভাষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রেখে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের জন্য ষষ্ঠ সংবিধি প্রণয়ন করা হয়েছিলো। কাজেই আমাদেরকে ষষ্ঠ সংবিধির নিরিখে পরখ করা প্রয়োজন যে, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থাটি বিদেশি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে কতটুকু সাযু্জ্যপূর্ণ।

৮. ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থার যে সব পরিমার্জন ও পরিবর্তনগুলো আনা প্রয়োজন
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে পরিচালিতি ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থায় যে সব পরিমার্জন ও পরিবর্তনগুলো আনা প্রয়োজন তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সহযোগে নিম্নে পেশ করা হলো:
১ক-১গ) জুনিয়র-ডিপ্লোমা: জুনিয়র/সিনিয়র সার্টিফিকেট কোর্স শুন্য থেকে ভাষা শেখা শুরু করা শিক্ষার্থীদের উপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম। কাজেই আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে পরিচালিত এই শিক্ষা কার্যক্রমটি বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। কোনো শিক্ষা-সংকোচন নীতি প্রসূত চিন্তা-ভাবনা থেকে এগুলো বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি, বরং উচ্চতম আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে বহুল ব্যয়ে সৃষ্ট বিদ্যাপীঠ বিদ্যালয় পর্যায়ের বিষয় পাঠদান অনুপযোগী বিধায় এরূপ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
১ঘ) ৫০ ঘন্টা মেয়াদী স্বল্পমেয়াদী কোর্স (সান্ধ্যকালীন): এ কোর্সটি শিক্ষার মানদণ্ডে বিদ্যালয় স্তরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কাজেই এ ভাষা শিক্ষা কার্যক্রমটি উচ্চশিক্ষা কাঠামো হিসাবে সৃষ্ট আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অংশ হিসাবে পরিচালনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রশাসনের দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। এ শিক্ষা কার্যক্রম আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের খারাপ ভাবমূর্তির উপসর্গও বটে। কাজেই এ শিক্ষা কার্যক্রমটি বন্ধ করে দেয়া শ্রেয়।
২ক) ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক শিক্ষা কার্যক্রম (English for the Speaker of Other Languages-ESOL): ইংরেজি ভাষাকে দেশ ও প্রেক্ষাপটভেদে Lingua Franca, Foreign Language, Second Language, International Language ইত্যাদি নানাভাবে বিশেষায়ন করা যায়। কিন্ত বাংলাদেশে বাংলাদেশে ইংরেজির মর্যাদা কী তা নির্ধারিত নয়। তাছাড়া English for the Speaker of Other Languages-ESOL কোনো স্নাতক শিক্ষা কার্যক্রমের নাম হতে পারে না, কেননা English for the Speaker of Other Languages-ESOL হলো সমস্ত নন-ডিগ্রী ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমের সামগ্রিক নাম। কাজেই নন-ডিগ্রী শিক্ষা কার্যক্রম নাম যার জন্য প্রযোজ্য, ডিগ্রী শিক্ষাকার্যক্রমের এরূপ হওয়া অবাঞ্ছনীয়।
২খ) ১ বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রম-Teaching English for the Speaker of Other Languages (TESOL): স্নাতকোত্তর পর্বে এই শিক্ষা কার্যক্রমের নাম দেয়া হয়েছে Teaching English for the Speaker of Other Languages (TESOL)। অথচ স্নাতক পর্বে এই শিক্ষা কার্যক্রমের নাম দেয়া হয়েছে English for the Speaker of Other Languages-ESOL। অর্থ্যাৎ স্নাতক পর্বের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষা কার্যক্রমের কোনো মিল নেই। এ ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ। কাজেই এই শিক্ষা কার্যক্রমটিকে সঠিকায়নে এ শিক্ষাকার্যক্রমকে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা যেতে পারে।
২গ) ১ বছর মেয়াদী শিক্ষা কার্যক্রম (English Language Teaching-ELT): এ সম্পর্কে অভিমত ২খ)-এর অনুরূপ।

৯. আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা পরিমার্জন ও পরিবর্তনের উপায়
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত পর্যালোচনা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের মূলধারার শিক্ষা কার্যক্রম নয়। তা সত্ত্বেও নানা ধরণের ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমের বিস্তৃতি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি শিক্ষার ব্যপ্তি ও বৈচিত্র্যকেই শুধু বাড়িয়েছে। ফলশ্রুতিতে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট তার শিক্ষা-শাস্ত্রীয় মূল চেতনা থেকে সরে এসেছে। উল্লেখ্য যে, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদস্থ পূর্বতন বিদেশি ভাষা বিভাগ রূপান্তরের মাধ্যমে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। সে অনুসারে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের মূল চেতনা বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতিতে কেন্দ্রীভূত থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম এবং অন্যান্য বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে সৃষ্ট পার্থক্য বিভেদ ও ভেদাভেদের দেয়াল তৈরি করেছে। তাছাড়া বৈচিত্রে ও পরিসরে ব্যাপক এই ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম ও এর শিক্ষকদেরকে অন্যান্য বিদেশি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম থেকে স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছে। এই স্বাতন্ত্র্য সর্বদাই একটি বিভেদের দেওয়ালকে পুরু থেকে পুরুতর করে তুলেছে। তাছাড়া ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যপ্তি ও বৈচিত্র্য প্রশাসনিক জটিলতা এনে দিয়েছে। কাজেই এই শিক্ষাব্যবস্থাকে সামলাতে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট প্রশাসনকে অতিরিক্ত চাপ সামলাতে হয়।
উক্ত কারণে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে পরিচালিত ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমগুলো আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অন্যান্য বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতি কার্যক্রমের আদলে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে পরিচালিত বিভিন্ন ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমের পরিবর্তন, পরিমার্জন ও রহিতকরণের ক্ষমতা রয়েছে বোর্ড অব স্টাডিজের। বোর্ড স্টাডিজের উপরের স্তরে রয়েছে বোর্ড অব গভর্ণরস। বোর্ড অব গভর্ণরসও ইচ্ছা করলে এই শিক্ষা কার্যক্রম পরিবর্তন, পরিমার্জন ও রহিত করতে পারে। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়নের দু’টি বিকল্প উপায় রয়েছে:

৯.১. স্বতন্ত্র English Language Center সৃষ্টি
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, বিদেশি ভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অঙ্গীভূত হওয়ার যোগ্য নয়। তাছাড়া ব্যপ্তি, কলেবর ও বৈচিত্রে ব্যাপক এই ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থাটি স্বতন্ত্র কোনো English Language Institute/Center সৃষ্টি করে, সেখানে স্থানান্তর করা যেতে পারে, যেনো সেখানে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমের সবকিছুই সেখানে পরিচালনা করা যায়।

৯.২. বিদেশি ভাষানীতির অনুসরণে English Language and Culture-এ স্নাতক/স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন
দেশে কোনো বিদেশি ভাষানীতি নেই। কিন্তু বিদেশি ভাষানীতি সম্পর্কিত কিছু গবেষণা রয়েছে। কাজেই আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমগুলো পর্যালোচনা করে, নিম্নের বর্ণনা অনুযায়ী ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন:

৯.২.১. নন-ডিগ্রী শিক্ষা কার্যক্রম: SSC ও HSC সনদ প্রাপ্তরা এমনিতেই ইংরেজিতে Certificte Course প্রাপ্ত। কেননা, Secondary School Certificate (SSC) ও Higher Secondary School Certificate (HSC) দ্বারা মূলত Secondary School Certificate (SSC)/Higher Secondary School Certificate (HSC) in Bangla, English ও Bangladesh Studies ইত্যাদি বুঝায়। তার অর্থ হলো— ইংরেজিতে সার্টিফিকেট কোর্স পাস করা শিক্ষার্থীদেরকে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে পূনরায় ইংরেজি সার্টিফিকেট কোর্স প্রদান করা হচ্ছে। এই কোর্সগুলোর মাধ্যমে মূলত: বিদ্যালয় পর্যায়ের শেখা ইংরেজি আবার নতুন করে শেখানো হয়। অর্থ্যাৎ এ শিক্ষা কার্যক্রমগুলো অনেকটা কোচিং-এর মতো। বিপুল ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা অবকাঠামোর সাথে এ কোর্সগুলো সাযুজ্যপূর্ণ নয়। সুতরাং এই শিক্ষা কার্যক্রমটি যেনো বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় পর্যায়ে চালু ও পরিচালিত হয়, সেজন্য সরকারকে বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় পর্যায়ে ইংরেজি সেন্টার খোলে সেখানে এই ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার পরামর্শ দিয়ে, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে এই ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে।

৯.২.২. ডিগ্রী শিক্ষা কার্যক্রম: ইংরেজি সংস্কৃতি নিরপেক্ষ বা সংস্কৃতি মুক্ত ভাষা- এই ধরণের যুক্তিতে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি ভাষায় ESOL, TESOL বা ELT ইত্যাদি শিক্ষা কার্যক্রমগুলো চালু করা হয়েছে। কিন্তু এরি যুক্তির বিপরীতে প্রতিযুক্তিসমূহ নিম্নরূপ:
i) সংস্কৃতির উপাদান হলো ভাষা। কাজেই ভাষা সংস্কৃতি মুক্ত নয়। সংস্কৃতি মুক্ত মনে করা হলেও, যে কোনো ভাষা তার আপন গতিতে নতুন করে তার সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতিকে সৃষ্টি করে নেয়। বাংলাদেশেও তা সৃষ্টি করে নিয়েছে। বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষা ভাষিক সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার ও রাজনৈতিক শক্তির আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে, বাংলা ভাষা ভিত্তিক ভাষিক জাতীয়তাবাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড়িয়েছে।
ii) এ ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম বহুভাষাভাষী জনগোষ্ঠির দেশ যেখানে এক জনগোষ্ঠি অন্য জনগগোষ্ঠির ভাষা বুঝে না তেমন দেশের জন্য প্রযোজ্য। এটি যে দেশের কোনো এজমালি রাষ্ট্র ভাষা বা জাতীয় ভাষা নেই; অথচ সে দেশের দাপ্তরিক ভাষা ইংরেজি—সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য উপযোগী।
iii) ইংরেজি ভাষা দেশ ও সমাজ ভেদে নানা মর্যাদা ও প্রায়োগিকতায় অভিষিক্ত। দেশ ও সমাজ সব ভাষারই মর্যাদা ও প্রায়োগিকতার নতুন ব্যাখ্যা সম্ভব। এংলোফোন (Anglophone countries) দেশসমূহে ইংরেজি যেমন মর্যাদা ও প্রায়োগিকতার অধিকারী, ফ্রাঙ্কোফোন দেশসমূহে ফরাসি ভাষাও অনুরূপ মর্যাদা ও প্রায়োগিকতার অধিকারী। কিন্তু বিদেশি ভাষা নীতির নিরিখে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ফরাসি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি (French Language and Culture), তদ্রুপ ইংরেজি ভাষা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রমের নামও ইংরেজি ভাষা ও সংস্কৃতি (English Language and Culture) হওয়া বাঞ্ছনীয়। English Language and Culture স্নাতক শিক্ষা কার্যক্রমের জ্ঞান/দক্ষতা ভিত্তিক বিভিন্ন বিষয়ের সর্বমোট ক্রেডিট সংখ্যা (প্রাক্কলিত) হবে ১৩৬ ক্রেডিট, যার নম্বর বন্টন নিম্নরূপ:
১) মূখ্য কোর্স : ১৬ ক্রেডিট
২) ইংরেজি ভাষা দক্ষতা কোর্স : ৫৬ ,,
৩) ইংল্যাণ্ড বিদ্যা : ১৬ ,,
৪) ইংল্যাণ্ডের ইংরেজি সাহিত্য : ১৬ ,,
৫) ভাষা বিজ্ঞান : ১৬ ,,
৬) গবেষণা/অনুবাদ/শিক্ষাদান : ১৬ ,,

১০. শেষকথা
শেষকথা হলো এই যে, ইংরেজি বিদেশি ভাষা কি-না তাই যেখানে প্রশ্নসাপেক্ষ, সেখানে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ব্যপ্তি ও বৈচিত্র্যে বিপুল কলেবর নিয়ে উপস্থাপিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে অন্যান্য বিদেশি ভাষার সাথে তুলনামূলকভাবে ইংরেজি ভাষার মর্যাদা ও প্রায়োগিকতা বিবেচনায় নিলে, ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রমকে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট আলাদা করাই হবে শ্রেয়তর। সেক্ষেত্রে বর্তমান ইংরেজি শিক্ষাকার্যক্রমকে নিম্নের তিনটি বিকল্প ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা যেতে পারে:
ক) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোর ভিতরেই “ইংরেজি ভাষা ইনস্টিটিউট” নামে একটি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে, তার অধীনে এই প্রস্তাবিত ইংরেজি ভাষা ইনস্টিউটের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম ন্যস্তকরণ।
খ) “ইংরেজি ভাষা ইনস্টিটিউট” নামে একটি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে, তা ভিন্ন কোনো শিক্ষাভবনে স্থানান্তরপূর্বক তার অধীনে এই প্রস্তাবিত ইংরেজি ভাষা ইনস্টিউটের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম ন্যস্তকরণ।
গ) চলমান ইংরেজি শিক্ষাকার্যক্রমগুলো বজায় রেখে, তা কলা অনুষদের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অধীনে ন্যস্তকরণ।
ঘ) ইংরেজি শিক্ষকগণের উচ্চতর ডিগ্রীসমূহ শিক্ষা বিষয়ক বিধায়, উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে লব্ধ তাঁদের জ্ঞানের প্রভাবে ইংরেজি শিক্ষাকার্যক্রমগুলোও সেভাবে গঠিত হয়েছে। কাজেই এই ইংরেজি শিক্ষাকার্যক্রমকে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ন্যস্তকরণ।

উক্ত চারটি বিকল্প ব্যবস্থার মধ্যে যে কোনও একটি অনুসরণে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটস্থ বিদেশি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রম থেকে আলাদা করা হলে, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটস্থ বিদেশি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রমে গতি সঞ্চার হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.