নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শের উন্মেষ ও বিবর্তন

০৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৩২

বাঙ্গলাবর্তে বিভিন্ন জাতির সাম্রাজ্য বিস্তারের সাথে সাথে তাদের উপনিবেশায়ন ঘটে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিস্তৃতির কালপর্ব পর্যন্ত এ দেশের মানুষ সাম্রাজ্যবাদ ব্যতীত অন্য কোনো রাজনৈতিক আদর্শ সম্পর্কে পরিচিতি ছিলো না। কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কালপর্বে ব্রিটিশ ইষ্টইণ্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক সীমাহীন শাসন ও শোষণে অতীষ্ঠ হয়ে এ দেশের মানুষ তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে। এর ধারাবাহিকতায় শাসন-শোষণে জর্জরিত মানুষের মধ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী বিদ্রোহ দানা বাঁধতে থাকে, যার ফলশ্রুতিতে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বাঙ্গলাসহ সারা ভারত জুড়ে বৃটিশ সশস্ত্র বাহিনীর এ দেশীয় সেনা সদস্যরা ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে। এই সশস্ত্র আন্দোলন সিপাহী বিদ্রোহ নামে খ্যাত হয়। এই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ শাসকগণ দিল্লীতে অবস্থিত মোগল সাম্রাজ্যের শেষ চিহ্নের মূল উৎপাটনে ও মোগল রাজশক্তির অনুসারীদের নিশ্চিহ্নকরণে প্রয়াসী হয়। তারা এ কাজে সামরিক ও কূটকৌশল প্রয়োগ করে এবং তারা এ কাজে সফল হয়। এর সফলতায় ব্রিটিশ ভারতের সমস্ত রাজশক্তি হীনবল হয়ে পড়ে। এর পরম্পরায় বাঙ্গলা দেশে (ব্রিটিশ ভারতসহ) রাজনৈতিক শুন্যতা দেখা দেয়। কিন্তু জনগণের উপর শোষণ, শাসন ও নিষ্পেষণ অব্যাহত থাকে।

ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ায় সংঘটিত এই বিপ্লব বিশ্বজুড়ে সংঘটিত রাজনৈতিক বিপ্লবের শৃঙ্খল-প্রতিক্রিয়া হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। কারণ অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে যে বিপ্লবের ঢেউ উত্থিত হয়, তার শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়ায় এ দেশে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিলো। যদিও বিপ্লবের ইতিহাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৭৭৫-১৭৮৩) ও ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা লাভকে প্রথম বিপ্লব বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে, কিন্তু এর আদর্শিক ভিত্তি রচিত হয়েছিলো ইউরোপে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা লাভের পরপর প্রায় এক শতাব্দী ধরে ইউরোপ জুড়ে বিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে এসব রাজনৈতিক বিপ্লবের ধারাবাহিকতাকে বৈশিষ্টায়িত করতে বিপ্লবের যুগ (the Age of Revolution is a period from the late-18th to the mid-19th centuries) শীর্ষক পরিভাষার প্রবর্তন করা হয়। বিপ্লবের যুগে সংঘটিত উল্লেখযোগ্য বিপ্লবগুলো হলো- ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯-১৭৯৯), হাইতি বিপ্লব (১৭৯১-১৮০৪), ইউনাইটেড আইরিশম্যানের বিদ্রোহ (১৭৯৮), সার্বিয়ান বিপ্লব (১৮০৪-১৮৩৫), লাতিন আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৮০৮-১৮৩৩) এবং গ্রীক স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৮২১-১৮৩২)। ইউরোপে শতশত বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক বিদ্রোহ, সংগ্রাম ও বিপ্লব বিস্তৃত হতে থাকলে, এক পর্যায়ে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ জুড়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা হয়। এই জাতীয়তাবাদ হলো জাতীয় জাগরণ, যা কোনও নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জাতিসত্ত্বায় থেকে উৎসরিত চেতনা বিশেষ। মূলত জ্ঞানদীপ্তি (Englightenment) আন্দোলন দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে ইউরোপের জনগণ এই চেতনা লাভ করে। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে উদ্দীপ্ত হয়ে ইউরোপ মহাদেশের নানা প্রান্তে অবস্থিত বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ে সক্রিয় হয়ে উঠে। এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ইউরোপের দেশে দেশে প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রের পতনের সূচনা হয়। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনার কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটে। তার পরম্পরায় এ দেশের (ব্রিটিশ বেঙ্গল) মানুষ নানা রাজনৈতিক আদর্শের সাথে পরিচিত হতে থাকে। বিশেষ করে এ দেশে ইউরোপীয় ঘরাণার শিক্ষাব্যবস্থা চালু হলে এ দেশের মানুষ ইউরোপের নানান রাজনৈতিক আদর্শ, মতবাদ ও আন্দোলনের সাথে পরিচিত হতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইউরোপে উত্থিত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শৃঙ্খল-প্রতিক্রিয়ায় ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ায় সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিলো।

সিপাহী বিদ্রোহের অব্যবহিত পরে শুরু হয় ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন। এ আন্দোলন হলো মূলত: অসংখ্য রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের সমষ্টি, যা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়ে ভারতের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত বিস্তৃত। এই আন্দোলন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করলেও, এটি ছিলো মূলত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনৈতিক অন্দোলন। এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে বাঙ্গলা থেকে। কিন্তু কালক্রমে এই আন্দোলন ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া ব্যাপী বিস্তৃত হতে থাকে। এই আন্দোলনে

ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া জুড়ে বিস্তৃত হলেও, এর সূত্রপাত হয়েছিলো বাঙ্গলায় সংঘটিত বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের রেশ ধরে এক পর্যায়ে স্বরাজ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। ১৯২০-এর দশক থেকে এ স্বরাজ আন্দোলন মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ইণ্ডিয়া ন্যাশানাল কংগ্রেস কর্তৃক পরিচালিত অহিংস আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন ও অনুরূপ আন্দোলনে পরিবর্তিত হয়। একই সময়ে ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ার মুসলমানগণ মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ইত্যাদি নানা রাজনৈতিক সংগঠনাধীনে আত্মনিয়ন্ত্রণের আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থগত দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ ইণ্ডিয়াসহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশসমূহে অনুরূপ সাম্রাজ্যবাদী আন্দোলনের স্ফূরণ ঘটে ও এ এর বিস্তৃতি চলতে থাকে।

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর, পরবর্তী কয়েক দশকে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ইউরোপীয় উপনিবেশভুক্ত দেশসমূহ স্বাধীনতা লাভ করে। সে সময় ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া থেকে ভারত ও পাকিস্তান নামক যথাক্রমে হিন্দু ও মুসলমান অধ্যুষিত দু'টি নতুন দেশের অভ্যুদয় ঘটে।

উত্তর ঔপনিবেশিক যুগে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ইউরোপীয় উপনিবেশমুক্ত দেশসমূহে রাজনৈতিক শুন্যতার সৃষ্টি হয়। এর সাথে সৃষ্টি হয় ভাষা-রাজনৈতিক শুন্যতা। এর কারণ, সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত এ সব দেশসমূহে জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসাবে কোনো নির্দিষ্ট ভাষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রসমূহের নেতৃত্বের কাছে সে সময় ছিলো সাম্রাজ্যবাদের উত্তরাধিকার হিসাবে লব্ধ ইংরেজি, জাপানি ও ফরাসি ইত্যাদি ভাষা, আবার ছিলো বিভিন্ন জনগোষ্ঠি কথিত স্থানীয় ভাষাসমূহ। সাম্রাজ্যবাদের উত্তরাধিকার হিসাবে লব্ধ ভাষাসমূহ যদিও ছিলো বিজাতীয় ভাষা, এগুলো এ সব দেশসমূহে সর্বোচ্চ প্রায়োগিকতা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত এ সব দেশসমূহ ছিলো নানা জনগোষ্ঠী কথিত নানা ভাষা। কিন্তু এগুলো গঠনগত দিক থেকে ছিল অপরিপূর্ণ এবং প্রায়োগিকতা ছিলো অঞ্চল ভিত্তিক। আবার প্রত্যেক জনগোষ্ঠির ভিন্ন ভিন্ন ভাষা তাদের প্রত্যেকের জন্য মর্যাদার প্রতীক ছিলো বিধায় তারা কেউ অন্য ভাষাকে নিজেদের ভাষার চেয়ে অধিকতর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিরুদ্ধে ছিলো। অর্থ্যাৎ দেশীয় যে কোনও একটি ভাষাকে জাতীয় বা রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা ছিলো, অন্য ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর ভাষাকে উপেক্ষা করার সামিল। এসব উপনিবেশোত্তর দেশসমূহে বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠির অবস্থান, তাদের যে কোনও একটি ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে স্বীকৃতিকে ঘিরে ভাষা-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। তখন, এসব দেশসমূহ রাজনৈতিক নেতৃত্ব এসব সমাজ-ভাষিক আদর্শের নিরিখে ভাষা-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসমূহ নিরসনে সচেষ্ট হয়।

ইউরোপে উত্থিত জাতীয়াবাদী রাজনৈতিক আদর্শের স্ফূরণ এবং তার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে অনুঘটিত বিপ্লবের শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়া হিসাবে উত্থিত আন্দোলনসমূহ থেকে অনুপ্রেরণা এবং ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে উত্থিত বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন এবং এর প্রতিক্রিয়ায় উত্থিত স্বদেশী আন্দোলন। তার প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলন, আবার তার প্রতিক্রিয়ায় ধর্ম নির্ভর দ্বি-জাতিতাত্ত্বিক রাজনৈতক আদর্শের স্ফূরণ, বাঙ্গলার মানুষ ইত্যাদি নানা রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে আবর্তিত হতে হতে তাদের রাজনৈতিক চিন্তাধারা ছাঁচীকৃত হতে থাকে। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শ থেকে উদ্ভূত হয় হিন্দু-মুসলমান বিভাজন ভিত্তিক দ্বি-জাতি তত্ত্ব এবং একই সাথে উদ্ভূত হয় জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শ। এসব জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শের মধ্যে অন্যতম হলো-বেলুচ জাতীয়তাবাদ, তামিল জাতীয়তাবাদ, পশতু জাতীয়তাবাদ, নাগা জাতীয়তাবাদ ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ। কিন্তু ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শের উপজাত হিসাবে উদ্ভূত সমস্ত রাজনৈতিক আদর্শের উর্ধে উঠে আসে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন ভিত্তিক দ্বি-জাতি তত্ত্ব, যার ফলশ্রুতিতে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ রাজনৈতিক আদর্শ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে পড়ে। বাঙ্গালী বলে কথিত বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শ অন্তত: চারটি রাজনৈতিক আদর্শে বিভাজিত হয়ে পড়ে; সেগুলো হলো- বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, মুসলমান জাতীয়তাবাদ, হিন্দু জাতীয়তাবাদ, যার মধ্য অবস্থানে আন্ত:বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন আরো অনেকগুলো জাতীয়তাবাদী আদর্শের অস্তিত্ত্বও রয়েছে। এসব আদর্শের একটি হলো মুসলমান জাতীয়তাবাদ, যা পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের সাথে মিশে যায়। কারণ পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের মূল প্রতীক ছিলো ইসলাম ধর্ম ও উর্দু ভাষা। ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া ব্রিটিশরাজ থেকে স্বাধীনতা লাভ করলে, দ্বিধাবিভক্ত মুসলমান জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চল পাকিস্তান হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। এই অঞ্চলের নাম থেকে বাঙ্গলার হিন্দু ও মুসলমান জনগোষ্ঠী পাকিস্তানী হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। অন্যদিকে ভারতের বাংলা ভাষাভাষী হিন্দু-মুসলমান জনগোষ্ঠী ভারত রাষ্ট্রের নাম অনুসারে ভারতীয় হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পূর্ব-পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার হলে, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের পুনর্জন্ম ঘটে। এই জাতীয়তবাদ থেকে উত্থিত আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ নামক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। এই জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশে ও ভারতের বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রেরণা যুগিয়ে এক দশকের মধ্যে নি:শেষ হয়ে পড়ে। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটলে, পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের আদলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের উ্ত্থান ঘটে। এভাবে বাংলাদেশে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের পতন সূচীত হলে, ভারতীয় যুক্তরাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী রাজ্যসমূহে এর প্রাসঙ্গিকতা নিস্প্রভ হয়ে যায়।

বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ অতীতে উক্ত বাস্তবধর্মী রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে বিধায়, তাদের জাতীয়তাবাদী আদর্শিক চিন্তাধারায় দোষ প্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জাতি সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী একাধিক সংজ্ঞা উপস্থাপিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে জাতি সম্পর্কে ইউরোপে উত্থিত জাতীয়তাবাদ রাজনৈতিক আদর্শ যে অর্থ বহন করতো তার বিপরীতে এর নতুন ব্যাখ্যা উপস্থাপিত হয়েছে। এভাবে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞায়নে দুষ্টতা ও জাতি ধারণার অপব্যাখ্যা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠাকরণের ওজর তৈরি সহজসাধ্য হয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.