নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির, অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ \nআধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় e-mail: [email protected]

রেজাউল করিম ফকির

অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রেজাউল করিম ফকির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙ্গলা সালতানাত (১৩৫২–১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দ)-এর পতন ও বি-বাঙ্গালীআয়ন প্রক্রিয়ার সূচনা

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:০৪

বাঙ্গলা সালতানাত ভেঙ্গে গেলে মূলত বি-আত্তীকরণ প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। অর্থ্যাৎ বাঙ্গলা সালতানাত ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে বাঙ্গালার রাজনৈতিক শক্তির বিগঠন ও পুনর্গঠন শুরু হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় বি-বাঙ্গালিআয়ন প্রক্রিয়াও শুরু হয়। বাঙ্গলা ভেঙ্গে গেলে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় যথাক্রমে মুঘল সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। বাঙ্গলা সালতানাতের পতনের সূত্রপাত হয় ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে শেরশাহ সূরীর কাছে গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহের পরাজয়ের মাধ্যমে। কিন্তু ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বাঙ্গলা সালতানাত সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়। এই বিলুপ্তির ফলে বাঙ্গলা মুঘল সাম্রাজ্যের একটি সুবাহ বা প্রদেশে রূপান্তরিত হয়। বাঙ্গলা যথন মুঘল সাম্রাজ্যের আওতায় আসে, বাঙ্গলাবর্তের প্রায় সমস্ত অঞ্চল একক শাসন ব্যবস্থায় আত্তীকৃত হয়। বাঙ্গলায় তখন শাসন ও শোষণ উপযোগী একটি একক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো বিদ্যমান ছিলো। সেজন্য মুঘল শাসকদের নতুন করে কোনও প্রকার আত্তীকরণ নীতি গ্রহণ করতে হয়নি। সেজন্য মুঘল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রে অনুসৃত নীতি দ্বারাই বাঙ্গলার ধর্ম ও ভাষা প্রভাবিত হতো। উল্লেখ্য যে, মুঘল সাম্রাজ্য কর্তৃক অনুসৃত ধর্ম ও ভাষা বিষয়ক নীতি বাঙ্গলার ধর্ম ও ভাষা বিকাশের প্রতিকূলে ছিলো না। কিন্তু বাঙ্গলার ধর্মীয়-সংস্কৃতি বিকাশের রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা হ্রাস পায়। তাছাড়া মুঘল সাম্রাজ্যের কেন্দ্র দিল্লীতে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে মুঘল সাম্রাজ্য দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে থাকে, তখন বাঙ্গলার উপর মুঘল শাসকদের কর্তৃত্ব হ্রাস পায়। সেজন্য মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ পর্যায়ে মুঘল সাম্রাজ্যের অনুমোদন সাপেক্ষে বাঙ্গলায় স্বাধীন নওয়াবী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন মুঘল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রে রাজনৈতিক শক্তি ক্ষীয়মান ছিলো, আর বাঙ্গলায় প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক শক্তি গড়ে উঠেনি। সেই শুন্যতার কারণে বাঙ্গলার উত্তর ও দক্ষিণের বিস্তৃত অঞ্চল যথাক্রমে মারাঠা ক্ষাত্রশক্তি ও মগ-পর্তুগীজ জলদস্যুদের হাতে চলে যায়। ফলশ্রুতিতে বাঙ্গলার রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক শক্তি দুর্বল থেকে আরো দুর্বলতর হতে থাকে। সে সুযোগে ইউরোপ থেকে আগত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাঙ্গলার রাষ্ট্র ক্ষমতা অধিকার করে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাঙ্গলার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে, হাজার বছর ধরে কালক্রমে গড়ে উঠা রাজনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সেই ধ্বংস স্তূপের উপর ইউরোপীয় ধাঁচের সামন্ততন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে, মুসলমান রাজনৈতিক অভিজাত বর্গকে বাঙ্গলার রাজনৈতিক বলয় থেকে ক্রমান্বয়ে বহিষ্কার করে, তৎস্থলে হিন্দুদেরকে সামন্ত প্রশাসন ব্যবস্থায় স্থান দিয়ে উপনিবেশবাদী প্রশাসন ঢেলে সাজায়। তাদের এই উদ্যোগে বাঙ্গলার ধর্ম-পরিস্থিতি ও ভাষা-পরিস্থিতিতে পরিবর্তন সূচীত হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিও ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ও ক্ষমতায় স্থিত হতে নিজস্ব ধাঁচে এ দেশের ধর্ম-পরিস্থিতি ও ভাষা-পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে প্রয়াসী হয়। এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এ দেশের প্রচলিত ধর্ম ও ভাষা উন্নয়নে সহায়ক কোনও আদর্শ পোষণ করতো না। কারণ এই শক্তি ছিলো খ্রিষ্ট ধর্ম ও ইংরেজি ভাষার প্রতিভূ। কাজেই ব্রিটিশ এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে যখন রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করে, তখন হিন্দু ধর্ম ও ইসলাম ধর্ম— এই উভয় ধর্মই কট্টরপন্থী মৌলবাদী ধর্মে রূপান্তরিত হতে থাকে। অন্যদিকে এ দেশীয় সংস্কৃত, পালি ও ফার্সি ইত্যাদি মর্যাদাপূর্ণ ভাষার প্রচলন সীমিত ও রহিত করতে নানা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলশ্রুতিতে হিন্দু ধর্মালম্বী ও ইসলাম ধর্মালম্বীদের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও হানাহানি সৃষ্টি হয়। দেশীয় ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা দাপ্তরিক, শিক্ষা ও গণমাধ্যমের ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যে ধর্মীয় দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে যায়, তার ফলশ্রুতিতে বাঙ্গলা বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম ইত্যাদি অঞ্চলের মধ্যে বিভাজিত হয়ে পড়ে। পরিণামে বাংলা ভাষার অবয়ব, মর্যাদা ও প্রায়োগিকতার অবনমন শুরু হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.