![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভূমিকা
বুদ্ধিবৃত্তিক ঔপনিবেশিকতা আধুনিক যুগের একটি সূক্ষ্ম কিন্তু শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এটি প্রত্যক্ষ সামরিক বা রাজনৈতিক দখলদারিত্বের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত এবং মতাদর্শিক প্রভাবের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর আধিপত্য বিস্তার করে। বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা এই বুদ্ধিবৃত্তিক ঔপনিবেশিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক ঔপনিবেশিকতার সংজ্ঞা ও প্রকৃতি
মূল বৈশিষ্ট্য
মানসিক নিয়ন্ত্রণ: এটি মানুষের চিন্তাধারা, মূল্যবোধ এবং বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করে। স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের চেয়ে বিদেশী মডেলকে "আধুনিক" ও "উন্নত" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
জ্ঞানের একচেটিয়া অধিকার: পশ্চিমা জ্ঞানব্যবস্থাকে একমাত্র "বৈজ্ঞানিক" ও "যৌক্তিক" জ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়, যখন স্থানীয় জ্ঞানব্যবস্থাকে "অবৈজ্ঞানিক" বা "পশ্চাৎপদ" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা: এমন অর্থনৈতিক মডেল চাপিয়ে দেওয়া হয় যা উন্নত দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কাঁচামাল সরবরাহকারী ও শিল্পজাত দ্রব্যের ভোক্তা হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখে।
কৌশলগত পদ্ধতি
থিঙ্কট্যাংক ও নীতি-নির্ধারণ: আন্তর্জাতিক থিঙ্কট্যাংকগুলো "গবেষণা" ও "বিশেষজ্ঞতার" নামে এমন নীতি প্রস্তাব করে যা মূলত তাদের দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি: শিক্ষা কারিকুলাম, গবেষণা পদ্ধতি এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিদেশী মূল্যবোধ ও চিন্তাধারা প্রচার করা হয়।
মিডিয়া ও তথ্য নিয়ন্ত্রণ: আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে বিশ্বমতামত গঠন করা হয় যা উন্নত দেশগুলোর স্বার্থের অনুকূল।
বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাস
ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার
ব্রিটিশ আমলের ভিত্তি: লর্ড ম্যাকলের শিক্ষানীতি (১৮৩৫) থেকে শুরু করে ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা এই উপমহাদেশে চালু হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি শ্রেণী সৃষ্টি করা যারা "রক্তে ও বর্ণে ভারতীয় কিন্তু রুচি, মতামত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তিতে ইংরেজ"।
স্বাধীনতা-পরবর্তী ধারাবাহিকতা: স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো মূলত অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। বরং সময়ের সাথে সাথে এর প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
আধুনিক রূপান্তর
আন্তর্জাতিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়: ব্রিটিশ, আমেরিকান এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কারিকুলাম অনুসরণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো "মানসম্পন্ন শিক্ষা" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
উচ্চশিক্ষার বিদেশমুখিতা: উচ্চশিক্ষার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোতে পড়াশোনাকে "সাফল্যের চূড়ান্ত প্রতীক" হিসেবে দেখা হয়।
কর্পোরেট শিক্ষা: বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা পরিকল্পনা করা হয়, যা স্থানীয় উন্নয়নের চাহিদাকে উপেক্ষা করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক ঔপনিবেশিকতার প্রভাব
মানসিক দাসত্ব
হীনমন্যতা সৃষ্টি: ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ধারণা সৃষ্টি করে যে স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি এবং জ্ঞানব্যবস্থা "নিম্নমানের" এবং শুধুমাত্র পশ্চিমা শিক্ষাই "উন্নত" ও "আধুনিক"।
পরিচয় সংকট: শিক্ষার্থীরা নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতি অবজ্ঞা পোষণ করে এবং পশ্চিমা জীবনযাত্রাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে।
সৃজনশীলতার অভাব: স্থানীয় সমস্যার সমাধান খোঁজার পরিবর্তে পশ্চিমা সমাধানের অন্ধ অনুকরণ করা হয়।
অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা
মেধা পাচার: সেরা শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যায় এবং সেখানেই কাজ করে। ফলে দেশ তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হারায়।
বিদেশী বিনিয়োগের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা: স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরির পরিবর্তে বিদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য দক্ষ কর্মী তৈরি করা হয়।
প্রযুক্তি নির্ভরতা: নিজস্ব গবেষণা ও উন্নয়নের পরিবর্তে বিদেশী প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়।
সাংস্কৃতিক অবক্ষয়
ভাষার অবমূল্যায়ন: বাংলা ভাষাকে "গ্রাম্য" বা "পশ্চাৎপদ" হিসেবে দেখা হয় এবং ইংরেজিকে "আধুনিকতার" প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।
ঐতিহ্যের প্রতি অবজ্ঞা: স্থানীয় শিল্প, সাহিত্য, দর্শন এবং জীবনযাত্রার প্রতি অবজ্ঞা পোষণ করা হয়।
সামাজিক বিভাজন: ইংরেজি শিক্ষিত এবং বাংলা শিক্ষিতদের মধ্যে একটি কৃত্রিম শ্রেণী বিভাজন তৈরি হয়।
শিক্ষা ব্যবস্থায় বুদ্ধিবৃত্তিক ঔপনিবেশিকতার প্রকাশ
পাঠ্যক্রম ও বিষয়বস্তু
পশ্চিমা জ্ঞানব্যবস্থার প্রাধান্য: পাঠ্যক্রমে পশ্চিমা দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য এবং বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, যখন স্থানীয় জ্ঞানব্যবস্থাকে উপেক্ষা করা হয়।
সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি: পশ্চিমা সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিকে একমাত্র "বৈজ্ঞানিক" পদ্ধতি হিসেবে শেখানো হয়, স্থানীয় পদ্ধতিগুলোকে "অবৈজ্ঞানিক" বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়।
মূল্যবোধ ও নৈতিকতা: পশ্চিমা ব্যক্তিতন্ত্র এবং প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতাকে "আধুনিক" হিসেবে প্রচার করা হয়, যখন সম্প্রদায়ভিত্তিক মূল্যবোধকে "পশ্চাৎপদ" বলে চিহ্নিত করা হয়।
শিক্ষা পদ্ধতি
রোট লার্নিং: সৃজনশীল চিন্তাভাবনার পরিবর্তে মুখস্থ করার উপর জোর দেওয়া হয়, যা স্বাধীন চিন্তাভাবনার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
গবেষণার অভাব: স্থানীয় সমস্যা নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে পশ্চিমা গবেষণার অনুকরণ করা হয়।
সমালোচনামূলক চিন্তার অভাব: বিদেশী মতামত ও নীতিকে প্রশ্ন ছাড়াই গ্রহণ করার প্রবণতা তৈরি করা হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
প্রশাসনিক কাঠামো: ব্রিটিশ আমলের প্রশাসনিক কাঠামো এখনও বহাল রয়েছে, যা কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ এবং আমলাতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল।
পরীক্ষা পদ্ধতি: পশ্চিমা পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় যা স্থানীয় প্রয়োজন ও প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেও পশ্চিমা পদ্ধতির অনুকরণ করা হয়।
সমসাময়িক প্রভাব
সামাজিক শ্রেণী বিভাজন
এলিট শ্রেণী সৃষ্টি: ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা একটি এলিট শ্রেণী সৃষ্টি করে যারা নিজেদের সাধারণ জনগণের চেয়ে উন্নত মনে করে।
বৈষম্য বৃদ্ধি: শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য আরও প্রকট হয়।
সামাজিক গতিশীলতার বিকৃতি: প্রকৃত যোগ্যতার পরিবর্তে ইংরেজি জানার উপর ভিত্তি করে সামাজিক অবস্থান নির্ধারিত হয়।
রাজনৈতিক প্রভাব
নীতি-নির্ধারণে বিদেশী প্রভাব: নীতি-নির্ধারকরা প্রায়শই পশ্চিমা মডেল অনুসরণ করেন স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করে।
জাতীয় সার্বভৌমত্বের ক্ষয়: বিদেশী পরামর্শদাতা এবং এনজিওগুলোর অতিরিক্ত প্রভাব।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিকৃতি: জনগণের মতামতের চেয়ে "বিশেষজ্ঞ" মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
অর্থনৈতিক পরিণতি
দেশীয় শিল্পের অবনতি: বিদেশী পণ্যের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ এবং স্থানীয় পণ্যের প্রতি অবজ্ঞা।
কৃষি ও ঐতিহ্যবাহী শিল্পের অবমূল্যায়ন: "আধুনিক" পেশার প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ এবং কৃষি ও কুটির শিল্পের প্রতি অবজ্ঞা।
আর্থিক নির্ভরশীলতা: বিদেশী ঋণ ও সাহায্যের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা।
প্রতিরোধ ও সমাধানের পথ
শিক্ষা সংস্কার
বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা: বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং গবেষণার ব্যবস্থা করা। জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স এবং চীনের মতো দেশগুলো নিজস্ব ভাষায় উচ্চশিক্ষা প্রদান করে উন্নতি করেছে।
স্থানীয় জ্ঞানব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি: ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান, কৃষি পদ্ধতি, চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং কারিগরি দক্ষতাকে আধুনিক শিক্ষার সাথে সমন্বয় করা।
সমালোচনামূলক চিন্তা বিকাশ: বিদেশী মতামত ও নীতিকে প্রশ্ন করার এবং বিশ্লেষণ করার দক্ষতা বিকাশ করা।
সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ
ভাষার মর্যাদা: বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং এর আন্তর্জাতিক ব্যবহার বৃদ্ধি।
সাংস্কৃতিক গর্ব: স্থানীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের প্রতি গর্ব ও সম্মান বোধ সৃষ্টি।
আধুনিক ব্যাখ্যা: ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ ও চিন্তাধারার আধুনিক ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা
স্থানীয় গবেষণা ও উন্নয়ন: নিজস্ব গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং স্থানীয় সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা।
উদ্যোক্তা সৃষ্টি: চাকরি-প্রত্যাশীর পরিবর্তে উদ্যোক্তা তৈরি করার শিক্ষা ব্যবস্থা।
কৃষি ও কুটির শিল্পের আধুনিকীকরণ: ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সমন্বয় করা।
রাজনৈতিক সচেতনতা
জাতীয় স্বার্থের প্রাধান্য: নীতি-নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া এবং বিদেশী পরামর্শের অন্ধ অনুকরণ পরিহার করা।
জনগণের অংশগ্রহণ: নীতি-নির্ধারণে জনগণের মতামত গ্রহণ এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: সরকারি নীতি-নির্ধারণে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
সফল উদাহরণ
এশিয়ার অভিজ্ঞতা
জাপান: মেইজি পুনর্জাগরণের সময় জাপান পশ্চিমা প্রযুক্তি গ্রহণ করেছিল কিন্তু নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা করেছিল। জাপানি ভাষায় সব ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রদান করা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া: কোরিয়ার দ্রুত উন্নয়নের পেছনে রয়েছে নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতি গর্ব।
চীন: চীন পশ্চিমা শিক্ষা গ্রহণ করলেও নিজস্ব দর্শন এবং মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়েছে। চীনা ভাষায় সকল বিষয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
আফ্রিকার অভিজ্ঞতা
দক্ষিণ আফ্রিকা: বর্ণবাদের পতনের পর দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের স্থানীয় ভাষাগুলোকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছে এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
ইথিওপিয়া: ইথিওপিয়া কখনও সম্পূর্ণভাবে ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল না এবং নিজস্ব লিপি ও ভাষা সংরক্ষণ করেছে।
চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
আন্তর্জাতিক চাপ: আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দাতা সংস্থাগুলো প্রায়শই পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণের জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
প্রযুক্তিগত নির্ভরশীলতা: আধুনিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের অধিকাংশই ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়।
বৈশ্বিক বাজার: চাকরির বাজারে ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
অভ্যন্তরীণ বাধা
মানসিক দাসত্ব: দীর্ঘদিনের মানসিক দাসত্বের কারণে অনেকেই পরিবর্তনে অনিচ্ছুক।
আর্থিক সীমাবদ্ধতা: বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব।
রাজনৈতিক অনিচ্ছা: রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে পরিবর্তনের অনিচ্ছা।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য
বহুভাষিক শিক্ষা: ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব স্বীকার করে বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা।
সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ: স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি গর্ব ও সম্মান বোধ সৃষ্টি।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা: বিদেশী নির্ভরশীলতা কমিয়ে স্বনির্ভরতা অর্জন।
তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ
শিক্ষা নীতি সংস্কার: বর্তমান শিক্ষা নীতির সমালোচনামূলক পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার।
গবেষণা ও উন্নয়ন: স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং স্থানীয় সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা।
সচেতনতা বৃদ্ধি: বুদ্ধিবৃত্তিক ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
উপসংহার
বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক ঔপনিবেশিকতা একটি গুরুতর সমস্যা যা আমাদের জাতীয় উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা এই সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে আমাদের ইংরেজি শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করতে হবে। বরং আমাদের প্রয়োজন একটি সুষম শিক্ষা ব্যবস্থা যা:
• বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করে
• স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে
• সমালোচনামূলক চিন্তা বিকাশে সহায়তা করে
• স্থানীয় সমস্যার সমাধানে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে
• জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়
এই পরিবর্তন সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলো এই পথে হেঁটে সাফল্য অর্জন করেছে। আমাদেরও একই পথ অনুসরণ করে বুদ্ধিবৃত্তিক ঔপনিবেশিকতার শিকল থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে পারি।
এই সংগ্রামে সরকার, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ জনগণ সকলেরই সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। শুধুমাত্র একটি সমন্বিত জাতীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।
©somewhere in net ltd.