![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভূমিকা
বাংলাদেশের ইতিহাসে কিছু চরিত্র বিতর্ক ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উঠে আসে। মেজর শুভ আফ্রিদী তেমনই এক ব্যক্তিত্ব, যিনি একদিকে জনগণের নায়ক, অন্যদিকে কিছু মহলের কাছে প্রশ্নের মুখে। তাঁর আদর্শিক লড়াই এবং "One Man Army" ইমেজ তরুণদের অনুপ্রাণিত করলেও, তাঁর কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অনুকূলে কাজ করতে পারে কি না—এটি গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
প্রারম্ভিক জীবন: দেশপ্রেম নাকি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি?
শুভ আফ্রিদীর রাজশাহীর মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রশ্নাতীত। তবে, তাঁর বিপ্লবী চেতনা কতটা গভীরভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিলতা বুঝে চলেছে? সামরিক বাহিনীতে তাঁর প্রশিক্ষণ তাঁকে কৌশলগত যুদ্ধবিদ্যা শিখিয়েছে, কিন্তু বৈশ্বিক শক্তিসাম্য ও গোপন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতনতা কি যথেষ্ট?
গেরিলা বাহিনী গঠন: বিপ্লব নাকি অস্থিতিশীলতার সুযোগ?
শুভ আফ্রিদীর অনুপ্রেরণায় গড়ে ওঠা গেরিলা বাহিনী স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় হলেও, এটি একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ইতিহাস বলে, বহু বিপ্লবী আন্দোলন শুরুতে জনকল্যাণের নামে সংগঠিত হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো সেগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে।
লিবিয়া, সিরিয়ার উদাহরণ: পশ্চিমা শক্তিগুলো স্থানীয় বিদ্রোহীদের "স্বাধীনতাকামী" বলে সমর্থন দিয়েছিল, কিন্তু শেষমেশ তা দেশগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল।
ভেনেজুয়েলা ও হাইতি: আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও গোপন এজেন্ডার মাধ্যমে বিপ্লবীদেরকে প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার বানানো হয়েছে।
শুভ আফ্রিদী যদি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাত্রা না বুঝে জনগণকে সংগঠিত করেন, তাহলে তাঁর আন্দোলনও বিদেশী শক্তির হাতে খেলার পুতুল হয়ে যেতে পারে।
লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ: আদর্শিক সংগ্রাম নাকি অজান্তে বিভাজনের সৃষ্টি?
তাঁর "লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ" কর্মসূচি দেশপ্রেমের প্রতীক হলেও, এটি অদৃশ্য শক্তিগুলোর হাতে কাজে লাগতে পারে। বাংলাদেশে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়, তখন বিদেশি শক্তি সেটিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। শুভ আফ্রিদীর সংগ্রাম যদি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে দুর্বল করে, তাহলে তা প্রকৃতপক্ষে দেশপ্রেমী জনগণের বিরুদ্ধেই যেতে পারে।
সামাজিক মাধ্যম ও প্রোপাগান্ডা: অনুপ্রেরণা নাকি বিভ্রান্তি?
শুভ আফ্রিদীর YouTube চ্যানেল ও সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে। কিন্তু, এই প্ল্যাটফর্মগুলো আন্তর্জাতিক প্রভাবকের হাতিয়ারও হতে পারে:
মিসইনফরমেশনের ঝুঁকি: তাঁর বার্তাগুলো বিকৃত করে বিদেশী এজেন্ডা চালানো হতে পারে।
গেরিলা বাহিনীর অপব্যবহার: যদি তাঁর অনুসারীরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তারা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির হাতে পড়তে পারে।
উপসংহার: সতর্কতা ও দূরদর্শিতার প্রয়োজন
মেজর শুভ আফ্রিদীর দেশপ্রেম ও সাহস প্রশংসনীয়, কিন্তু তাঁর আন্দোলনকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের চক্রান্ত থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। ইতিহাসের শিক্ষা হলো—বিপ্লবের নামে শুরু হওয়া অনেক আন্দোলনই পরোক্ষভাবে বিদেশী শক্তির হাত শক্তিশালী করেছে। শুভ আফ্রিদীকে এখনই তাঁর কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, যাতে তাঁর সংগ্রাম প্রকৃতপক্ষে দেশ ও জনগণের স্বার্থেই থাকে, কোনো গোপন এজেন্ডার হাতিয়ার না হয়।
"স্বাধীনচেতা নেতারা ইতিহাস গড়েন, কিন্তু অজ্ঞানতা ইতিহাসকে ধ্বংসও করতে পারে।"
— শুভ আফ্রিদীর পথ যেন বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়, অভিশাপ না।
©somewhere in net ltd.