![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে সুক্ষ্ম এবং বিপজ্জনক হুমকিগুলোর একটি হচ্ছে ঈঙ্গ-মার্কিন ভাষিক সাম্রাজ্যবাদ। এই আধিপত্য আমাদের দেশের কিছু স্বল্প-চিন্তাশক্তি সম্পন্ন ইংরেজি শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের নানা সুবিধা ও আকর্ষণ দিয়ে নিজ স্বার্থসিদ্ধির পথ করে নিচ্ছে। তারা বিদেশি অনুদান, পঠন-পাঠনে বিদেশমুখিতা, এবং চাকরির সুযোগের লোভে নিজেদের অজান্তেই ভাষিক উপনিবেশবাদের দালাল হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
ঐতিহাসিকভাবে এই সাম্রাজ্যবাদ দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে অস্ত্রের জোরে আমাদের শোষণ করেছে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে অত্যাচার, অপমান ও সম্পদ লুণ্ঠনের শিকার হয়েছেন, তার একটি বড় অংশকেই ছায়া হিসেবে এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আমাদের। আজকের দিনে এই শোষণ ও আগ্রাসন নতুন রূপে ফিরে এসেছে— ভাষিক আধিপত্য হিসেবে। এটি এতটাই কৌশলী যে, অনেকে এটি উপলব্ধি করতেও ব্যর্থ হন।
ইংরেজি আজ কেবল একটি যোগাযোগের ভাষা নয়, এটি হয়ে উঠেছে ক্ষমতার ভাষা— শিক্ষা, চাকরি, গবেষণা, এমনকি সামাজিক মর্যাদার মানদণ্ড। ফলে আমাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও চিন্তাশক্তি প্রতিনিয়ত কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। এর বিরুদ্ধে এখনই সচেতন প্রতিরোধ গড়ে না তুললে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিঃস্ব এক সাংস্কৃতিক শূন্যতার মধ্যে হারিয়ে যাবে।
তবে আশাবাদী হওয়ার কিছু কারণ এখনও আছে। দেশের তরুণ প্রজন্মের শিক্ষকরাই পারেন এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে। ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেও, তারা যদি উত্তর-উপনিবেশবাদী চেতনায় বলীয়ান হয়ে শিক্ষায় একটি স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করেন, তবে তারা ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে এই ভাষিক দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হবেন।
আমাদের প্রয়োজন এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা, যেখানে জাতীয় ভাষা ও সংস্কৃতি থাকবে মূল কেন্দ্রে, আর বিদেশি ভাষাগুলো শিখানো হবে উপযোগিতামূলক প্রয়োজনে, আধিপত্যের মানসিকতা থেকে নয়। তরুণ ইংরেজি শিক্ষকদের দায়িত্ব হতে পারে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সচেতনতা সৃষ্টি করা— যাতে তারা নিজেদের চিন্তা ও লেখনীতে নিজের ভাষাকেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যবহার করে এবং ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আত্মপরিচয় ও সাংস্কৃতিক আত্মমর্যাদায় দৃঢ় থাকে।
সুতরাং, সময় এসেছে ইংরেজি শিক্ষাকে ভাষিক দাসত্বের পথ না বানিয়ে, বরং একে উপনিবেশবিরোধী চেতনার এক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার। জীবন ও সংস্কৃতির স্বাধীনতা রক্ষায় এই শিক্ষকরাই হতে পারেন অগ্রসেনানী।
©somewhere in net ltd.