এমন একটা ভাই আরেকটা কই পাই??

২০ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ১০:৩৭

আমি বাসার ছোট ছেলে,ছোট বলতে এক্কেবারে ছোট। আমার ছোট কোন ভাই তো নাই-ই বোনও নাই। যা আছে সব বড় তাও একটা না তিন তিনটা। দুই ভাইয়া আর এক আপু। এদের আদরের ঠ্যালায় আমার জান যায় অবস্থা। বড় ভাইয়া আমার ষোল বছরের বড়, আপু আর মেজ ভাইয়া যথাক্রমে এগার আর নয় বছরের। বড় ভাইয়া আপুর কথা বাদ দিয়ে আজ আপাতত মেজ ভাইয়ার কথাই বলি, (যাকে আড়ালে আবডালে “হাজী মুহাম্মদ মুহসীন” নামে ডাকা হয় কারন তিনি কাউকে কিছু দিলে আর ফেরত চান না, আর বন্ধুদের জন্য তার জান কোরবান)।

কিন্তু এই একটা মানুষ বোধকরি কোন কালেই আমাকে মানুষ বলে মনে করবে না !! যেখানে বাসার অন্য সবাই আমাকে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মর্যাদায় গুরুত্ব দিয়ে কথা বলে, আর তার বেলায় এখনও “এক চড় দিয়ে সোজা করে দেব”।

তাই এই মধ্য কুড়িতে এসেও চড়ের ভয়ে মুখ বন্ধ করতে হয়। তাতেও সমস্যা ছিলনা, কিন্তু বড় ভাইয়া কি করে যেন টের পেয়ে গেছে যে মেজ ভাইয়া আমাকে, যাকে কথ্যভাষায় বলে “চাইর আনা বেইল দেয় না” এবং সে ইদানিং এটার পুরো উপযোগিতা সাধন করছে, আর আমিও যথারীতি বলির পাঁঠা। আমার ছাত্রজীবন প্রায় শেষ হবার পথে কিন্তু এখনও উপদেশের অমৃত বাণী আমাকে বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিতে হয়। তারপর ইদানিং আবার শুনি সে ষড়যন্ত্র করছে মাস্টার্স শেষ হবার সাথে সাথেই আমাকে এমবিএ তে অ্যাডমিশন নিতে হবে। ওরে মোর খোদা !! এর পর আরও দুই বছর যদি এমবিএ করি তবে চাকরি বাকরি করব কবে আর এম টা বাদ দিব কবে ??





এবার একটু অন্যদের ভাষায় নিজের কথা বলিঃ আমি নাকি বিশাল কিপ্টা, এইটা আমার আপু ভাইয়ারা বলেন তবে আমি মনে করি আমি একজন উৎকৃষ্ট মানের মিতব্যয়ী। ও আচ্ছা!! আমি নাকি ভীষণ অলস!! এইটা আমার রিসার্চ সুপারভাইজার বলে, এইটা নিয়ে কোন মন্তব্য করবোনা। যাইহোক আমার মিতব্যয়ীতার কিছু নমুনা দেই। জগতের তাবৎ বিলাস দ্রব্যের প্রতি আমার এক ধরনের অনাসক্তি কাজ করে। আমার সব সময় মনে হয় যেটা দিয়ে চলে যাচ্ছে সেটার আর উত্তরণের দরকার নেই। আর আপু ভাইয়াদের মতে আমি মানবেতর জীবনযাপন করি, আমি বলি তাতে কি আমার ব্যাঙ্কে তো জমছে। তবে হ্যাঁ !! মেজ ভাইয়ার কিছু সম্পত্তির উপর আমার বেশ অধিকার স্থাপন করেছি, সেটা হোক হক বা বেহক। বেচারাকে প্রতি ঈদে দুটো করে পাঞ্জাবি কিনে আনতে হয়, প্রথমটা দেখামাত্র আমার মন্তব্য “আরে ভাইয়া পাঞ্জাবিটা তো সেই !! তবে আমার বোধহয় বেশ ভালো ফিট হবে তাই না ?”, ব্যস!! ভাইয়া পরদিন আবার একটা নিজের জন্য কিনে আনবে। এভাবে আরও......... শেভিং ফোম থেকে শুরু করে তার যা কিছু আমার পছন্দ হয়। তবে আমার বিশ্ববিদ্যালয় দেশের আরেক প্রান্তে হওয়ায় বেচারা বোধহয় খানিকটা হাফ ছেড়ে বাঁচে। তবুও আমি সুযোগ পেলেই যতটুকু সম্ভব উসুল করতে সচেষ্ট থাকি। মাসের শেষদিকে যখন সেলফোনে রিচার্জ করতে হয়, ভাইয়া কে ছোট্ট একটা এসএমএস পাঠিয়ে দেই “ভাইয়া, আমার ফোন একটু তারল্য সঙ্কটে ভুগছে” ব্যস !! মাসের বাকি সময়ের জন্য নিশ্চিন্ত। মাঝে মাঝে ভাবি আমি তার আদরে কত্ত ভাগ বসিয়েছি, কেননা আমার জন্মের আগের নয় বছর তো সেই সবার ছোট ছিল, আর আমি তো জানি ছোট হবার কি সুখ !! তারপরও বেচারা আমার যাবতীয় আবদার মিটিয়ে যাচ্ছে। তাইতো মাঝে মাঝে বলি আহা !! এমন একটা ভাই আরেকটা কই পাই?? নাহ !! আমার একজনই যথেষ্ট।



বড় ভাইয়া আর আপু তো বাদ পরে গেলেন, তাদের নিয়ে সামনে লেখার ইচ্ছে আছে । সেটা, সেটা আরেকটা গল্প..............

১৮ টি +৪/-০