নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুফীবাদ

এসো মোরা মাওলাইয়াত কে গড়ে তুলি।

রেজভী শরীফুল ইসলাম

রেজভী শরীফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রেজভী নামে'র দর্শন ২য় পর্ব

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩২


৪ নং আয়াতে কারীমাঃ


قَالَ اللّهُ هَذَا يَوْمُ يَنفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِين
فِيهَا أَبَدًا رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
(Allah said, `This is the day in which their truthfulness will benefit the truthful, for them, are Gardens beneath which rivers flow, they small abide therein for ever. Allah is pleased with them and they are pleased with Allah. This is the great success.)

(কানযুল ঈমান ইংরেজী ভার্সন কতৃক)

অর্থাৎ, আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, এটা হচ্ছে সেদিন, যেদিন সত্যবাদীগণ তাঁদের সততার জন্য উপকৃত হবে, তাঁদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশ নহরসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তারা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। আল্লাহ তাঁদের প্রতি রাজী বা সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট (অর্থাৎ, তাঁরা রেজভী)। এটাই মহান সফলতা।
-সূরা মায়েদা, আয়াত-১১৯

৫ নং আয়াতে কারীমাঃ

لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبً
(Surely, Allah was pleased with the believers when they were swearing allegiance to you under the tree, and Allah knew what were in their hearts, so he sent down on them tranquility and rewarded them with a near victory.)
(কানযুল ঈমান ইংরেজী ভার্সন কতৃক)

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনগণের প্রতি খুশি বা সন্তুষ্ট হয়েছেন (তাই তাঁরা রেজভী), যখন তাঁরা বৃক্ষের নীচে বসে আপনার নিকট বায়াত গ্রহণ করেছিলেন। সুতরাং তাঁদের অন্তরে যা ছিল, আল্লাহ তা জানেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁদের উপর সান্তনা প্রদান করলেন এবং প্রতিদান (স্বরূপ) দিলেন তাঁদেরকে অতি নিকটতম একটি বিজয়।

- (সূরা ফাতহ, আয়াত-১৮)

উল্লেখিত আয়াতে কারীমা সমূহে রেজভীগণের পরিচয় দেয়া হয়েছে এভাবে অর্থাৎ, রেজভীগণের অন্তর্ভূক্ত তাঁরাই, যারাÑ
* ঈমানদার হবে,
* আমলে সালেহা বা নেক কাজ করবে,
* মুহাজির সাহাবীগণ,
* আনসার-সাহাবীগণ,
* এছাড়াও অন্যান্য সকল সাহাবীগণ,
* যারা সাহাবাগণের আদর্শে প্রতিষ্ঠিত,
* আখেরাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে,
* আল্লাহ-রাসূল ও ধর্মের বিধানাবলীর বিরুদ্ধচারণকারীদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না, যদিও সে পিতা, পুত্র, ভাই বা নিকটজন যেকেহ হোক না কেন,
* তাঁদের অন্তরে ঈমানের মোহর অংকিত থাকবে,
* আল্লাহকে অধিক ভয় করবে,
* সত্যবাদী হবে এবং সত্যবাদীদের সাথী হবে,
* নবীর নিকট শায়খে কামেলের মাধ্যমে বায়াত গ্রহণ করবে।
উপর্যুক্ত গুণাবলী সম্পাদনের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট অর্থাৎ, তারা রেজভী (কুরআন কারীমের আলোকে)। আর এ রেজভীদের জন্য রবের পক্ষ হতে যে প্রতিদান রয়েছে তা হলো-
* এমন জান্নাত সমূহ, যার নিচ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়েছে এবং যাতে তাঁরা চিরস্থায়ী হবে।
* আল্লাহ আপন রূহ দ্বারা তাঁদেরকে সাহায্য করেন।
* তাঁদের মর্যাদা হল সকল সৃষ্টির উত্তম।
* তাঁদের উপর আল্লাহ প্রশান্তি অবতীর্ণ করেন।
* তাঁদেরকে অসত্যের বিরুদ্ধে বিজয় দান করেন।
* এগুলোই তাঁদের সবচেয়ে বড় সফলতা।
মোটকথা, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট রয়েছেন এবং যারা আল্লাহর বিধানাবলী সন্তুষ্ট চিত্তে পালন করে, এদের সকলেই কুরআনের ভাষায় রেজভী।

মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সময় রেজভী

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

وَلَمَّا جَاء مُوسَى لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ رَبِّ أَرِنِي أَنظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَن تَرَانِي وَلَـكِنِ انظُرْ إِلَى الْجَبَلِ فَإِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَانِي فَلَمَّا تَجَلَّى رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا وَخَرَّ موسَى صَعِقًا فَلَمَّا أَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُؤْمِنِينَ.
(And when Musa came to our appointed time and his lord spoke to him, he submitted, `O my lord! Show me your sight that I may behold You, Said He, you shall never see me: but look towards this mountain, if it remains standing at its place, then soon you will see me. Then when his lord made his light shine on the mountain, he broke it into pieces, and Musa fell down unconscious. Then when he came to senses, he said, hollowed be you turn towards you and I am the first the Muslims.)

(কানযুল ঈমান ইংরেজী ভার্সন কতৃক)

অর্থাৎ, যখন মূসা আমার দেয়া নির্ধারিত সময়ে হাজির হলেন এবং তাঁর রব তাঁর সাথে কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, হে আমার রব! আমাকে দেখা দাও, তোমাকে আমি এক নজর দেখব। আল্লাহ বললেন, তুমি আমাকে কখনো দেখতে পারবে না। তবে তুমি দৃষ্টি দাও পাহাড়ের (তূর) প্রতি। যদি তা স্বস্থানে স্থীর থাকে, তবে তুমি আমাকে দেখতে পাবে। যখন তাঁর রব পাহাড়ের উপর স্বীয় জ্যোতি প্রকাশ করলেন, তখন নূরের জ্যোতি পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা অচেতন হয়ে গেলেন। অতঃপর যখন অনুভূতি ফিরে আসল, তখন বলল, পবিত্রতা তোমারই। আমি তোমাতেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনগণের মধ্যে আমিও সর্ব প্রথম।

-সূরা আরাফ, আয়াত-১৪৩

আলোচ্য আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যয় সুবিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে রুহুল বায়ান শরীফ, ৩য় খন্ড, পৃ: ২৪৯, তাফসীরে মাযহারী শরীফ, ৪র্থ খন্ড, পৃ: ৩৮৩ এবং তাফসীরে ইবনে কাসীর ৮ম খন্ড ৩৮৮ পৃঃ এ উল্লেখ রয়েছে যে, আল্লাহর নূরের ঝলকে (আজমতে) যে পর্বতটিতে মূসা (আলাইহিস সালাম) অবস্থান করছিলেন সে তূর পর্বতটি ৬টি খন্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। যার ৩টি খন্ড মক্কায় এবং বাকী তিনটি খন্ড মদীনায় পতিত হয়।

* মক্কায় যে তিনটি খন্ড পড়েছে এদের নাম হল-
(১) ছূর
(২) ছাবীর
(৩) হেরা
* আর মদীনায় যে ৩টি পড়েছে এগুলোর নাম হলো-
(১) উহুদ
(২) রিক্বান
(৩) রাযওয়া বা রেজভী
অর্থাৎ, আল্লাহর নূরের ঝলক প্রাপ্ত একটি পাহাড় খন্ডের নাম হল রেজভী এবং এর আশপাশের বাসিন্দাদেরকেও রেজভী বলা হয়। যা আল্লাহর কুদরতের নিশান হিসেবে মদীনা ও ইয়াম্বুয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত রয়েছে।

হুজুর পাকের খাদেমা হিসেবে রেজভী

(সিফাতুছ্ ছাফওয়া) নামক কিতাবের ১ম খন্ডের ৬০ পৃষ্টায় আল্লামা ইমাম আবুল ফরজ আব্দুর রহমান ইবনে জওযী হুজুর পাক সাহেবে লাওলাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জাহেরী জিন্দেগীতে যে ক’জন খাদেমা তাঁর পবিত্র খেদমত আঞ্জাম দেয়ার পরম সৌভাগ্য অর্জন করেছেন তার একটি তালিকা দিয়েছেন। যথা-
(১) উম্মে আয়মন, তাঁর অপর নাম ছিল বারাকাহ
(২) আমীমাহ
(৩) খাদ্বরাহ
(৪) রেজভী
(৫) রায়হানাহ
(৬) সালমা
(৭) মারিয়াহ
(৮) মায়মূনাহ বিনতে সা’দ
(৯) মায়মূনাহ বিনতে আবি উসাইব
(১০) উম্মে দ্বুমাইরাহ
(১১) উম্মে আয়াশ (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা)
এখানে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একজন সম্মানিতা খাদেমার নামও ছিল রেজভী।

দু’ জন সম্মানিত ইমামের নামে রেজভী

আল্লামা ফিরোজুদ্দীন সাহেব তার বিখ্যাত উর্দু অভিধানগ্রন্থ ফিরুজুল লুগাত-এ রেজভী বা রেজভীয়া যাদেরকে বলা হয়, এ মর্মে বলেন যে,
অর্থাৎ, ইমাম আলী রেযা এর সাথে সম্পর্কিত কোন ব্যক্তিকে রেজভী বা রেজভীয়া বলা হয়। আর তার আওলাদদেরকেও রেজভী বা রেজভীয়া বলা হয়।
আবার কেহ ইমাম আলী মূসা রেজার অনুসারীদেরকেও রেজভী বা রেজভীয়া বলে থাকেন।

আ’লা হযরত কিবলার অনুসারী হিসেবে রেজভী

পবিত্র কালামে এলাহী কুরআন কারীমে এরশাদ হয়েছে-


لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءهُمْ أَوْ أَبْنَاءهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُوْلَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُوْلَئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

(You will not find a people who believe in Allah and the last: Day taking as their friends those who opposed Allah and His Messenger, even though they be their fathers or their sons or their brothers or their kinsman. These are they in whose hearts Allah has inscribed faith and helped them with a spirit from himself, and will make them enter gardens beneath which flow streams, abiding therein, Allah is pleased with them and they are pleased with Allah. This is Allah’s party. Do you hear? It is Allah’s party that is successful.)

(কানযুল ঈমান ইংরেজী ভার্সন কতৃক)

অর্থাৎ, আপনি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোন সম্প্রদায় পাবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধবাদীগণকে ভালবাসে, যদিও হোক না ঐ বিরুদ্ধচারীগণ তাঁদের পিতা বা তাঁদের পুত্র অথবা ভাই অথবা তাঁদের আত্মীয়স্বজন। তাঁরা হচ্ছে ওই সব লোক যাদের অন্তরগুলোতে আল্লাহ ঈমান অংকিত করে দিয়েছেন এবং তাঁদেরকে সাহায্য করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা। আর তিনি তাঁদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার তলদেশ নহরসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তারা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। আল্লাহ তাঁদের প্রতি রাজী বা সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট (অর্থাৎ, তাঁরা রেজভী)। আর এরাই হচ্ছে আল্লাহর দল আর আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।

(সূরা মুজাদালাহ, আয়াত-২২)

কুরআনের উল্লেখিত আয়াতাংশের

أُوْلَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ
(These are they in whose hearts Allah has inscribed faith and helped them with a spirit from himself.)

(তাঁরা হচ্ছে ওই সবলোক, যাদের অন্তর গুলোতে আল্লাহ ঈমান অংকিত করে দিয়েছেন এবং তাঁদেরকে সাহায্য করেছেন তার পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা)
এ অংশকে প্রসিদ্ধ ‘আবজাদ’ হিসাব অনুযায়ী চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দীদ ইমামে আহলে সুনড়বাত আ’লা হযরত শাহ আহমদ রেযা খাঁন (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) নিজের জন্ম সাল জ্ঞাপক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আর প্রকৃতই এ আয়াতের মর্মার্থ আ’লা হযরতের জীবনে প্রতিফলিত হয়েছে। এমনকি অত্র আয়াতাংশের পরের অংশে রয়েছে যে, (আল্লাহ তাঁদের উপর রেযা বা সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট বা রেযা) আর তাঁর বরকতময় নামটিও তাঁর সম্মানিত পিতামহ মাওলানা শাহ রেযা আলী খাঁন (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) নির্ধারণ করেছেন মুহাম্মদ আহমদ রেযা খাঁন হিসেবে।
আর সেই কালামে এলাহী হতে গৃহীত আয়াতাংশের বাস্তব প্রয়োগ হিসেবে ইমামে আহলে সুনড়বাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, আ’লা হযরত কিবলার সাথে সম্পৃক্ত তথা তাঁর বরকতময় রেযা নামের সাথে সম্পর্কিতরাও রেজভী বা রজভী হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ, কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক তাঁর মসলকের (মতাদর্শের) অনুসারীদেরকেও রেজভী বলা হয়।
অতএব, উল্লেখিত সকল আলোচনার দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, যাদের মধ্যে ঈমানের নূর রয়েছে, আমলে সালেহা রয়েছে, সাহাবায়ে কিরামের আদর্শ রয়েছে, সর্বোপরি কুরআন- সুন্নাহ ভিত্তিক আ’লা হযরত কিবলার বরকতময় মতাদর্শের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ যাদের মধ্যে রয়েছে তাঁরাই রেজভী আর তাঁদের উপর রয়েছে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি এবং তারাও আল্লাহর সকল বিধানে সন্তুষ্ট।

( চলবে......।)







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.