![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অক্সিজেনকে ভালবাসি, তাই বলে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ঘৃণা করতে পারিনা। কারণ আমি যার কাছ থেকে আমার ভালবাসাকে পাই সে তো কার্বন ডাই- অক্সাইডকেই ভালবাসে।
দুই।
রাহুল কখনও অনুশোচনা করে না। এমনকি নিজের করা ভুলের জন্য কোনও অপরাধবোধও কাজ করে না। সে সবসময় মনে করে, যা হয় ভালোর জন্য হয়। অনুশোচনা করার কিছু নেই।
এই যেমন, পিউ চলে যাওয়ায় রাহুলের কোনো অনুশোচনা নেই। তাকে দেখে যে কারও মনে হবে, বোঝা নেমে গেছে তার উপর থেকে। এখন কেবলই শান্তি।
অথচ রাহুলই একটা সময় পিউয়ের জন্য পাগল ছিল। সেবার যখন কলকাতায় কলেজস্ট্রীটে পিউকে প্রথম দেখেছিল, তখন মনে হয়েছিল এই মেয়েটিকে ছাড়া জীবন অচল। তাই মোটেও সময় নষ্ট না করে, ভালোবাসার কথা বলে দিয়েছিল।
পিউয়ের মতো মেয়ে প্রথম দিনে ভালোবাসা গ্রহণ করবে না এটা জানত রাহুল। তারপর টানা সাত দিন ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অপেক্ষা করেছে। পিউকে বোঝাতে চেয়েছে তার সত্যিকারের ভালোবাসা।
রাহুল সফল হয় তাতে। তবে পিউয়ের শর্ত থাকে, প্রথমে বন্ধুত্ব তারপর প্রেম। শর্ত লুফে নেয় রাহুল। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম—বেশি সময় লাগেনি।
******
কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙলো রাহুলের। ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেখল ফরিদ এসেছে। দরজার ওপাশ থেকে ফরিদ বেশ উচ্চকণ্ঠে বললো,
‘পিউয়ের সঙ্গে কাজটা তুই ঠিক করিসনি। তোর অনুশোচনা হওয়া উচিত।’
রাহুলের ছোটবেলার বন্ধু ফরিদ। তাই ওর জীবনের সবকিছুতে ফরিদ ঢুকে যায়। সোজা কথায়, নাক গলায়। রাহুলের পুরো উল্টো স্বভাবের চরিত্র ফরিদ। তাইতো পিউয়ের চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না সে।
এক গ্লাস মদ ঢাললো রাহুল। ফরিদকে ইশারা করলো খাবে কিনা! ফরিদ ‘না’ সূচক মাথা নাড়লো। গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে বললো,
‘আমার কখনও অনুশোচনা হয় না ফরিদ। এটা তুই ভালো করে জানিস। ছোটবেলা থেকে তো দেখে আসছিস।’
‘যে মেয়েটা তোর জন্য দেশ ছেড়ে আসলো। একটু একটু করে সংসার সাজালো। তার চলে যাওয়া তোর কাছে কিছুই না!’
‘না, কিছুই না। এত যখন ভালো লাগে ওকে। তা তুই কলকাতা গিয়ে ওকে বিয়ে করে আমাকে উদ্ধার কর।’
রাহুলের কথা শুনে প্রচন্ড রকম রেগে গেলো ফরিদ। এরকম একটি কথা বলবে রাহুল, ঘুনাক্ষরেও ভাবেনি। ওর প্রতি খুব ঘৃণা হতে লাগলো ফরিদের।
‘তুই থাক তোর মতো রাহুল। আমি চললাম। আজকের পর থেকে তোর সাথে আর কখনও কথা বলার ইচ্ছা নেই। আর ডাকলেও আমাকে পাবি না।’
ফরিদ চলে গেলো। রাহুল তাকে আটকানোর চেষ্টা করলো না। কারণ সে জানে, রাগ কমলে আবার সে ফিরে আসবে। পিঠে একটা খোঁচা মেরে বলবে, ‘চল দোস্ত সিনেমা দেখে আসি।’
তিন দিন কেটে গেলো। ফরিদের কোনো খোঁজ নেই। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না ওকে। এই মুহূর্তে ফরিদকে খুব দরকার।
তিন।
দমদম এয়ারপোর্টে নেমে ট্যাক্সি ধরল পিউ। এখান থেকে বাড়ি যেতে বড়জোর ২০ মিনিট সময় লাগবে।
তিন বছর প্রিয় শহর দেখছে পিউ। এই চেনা শহর। শহরের মানুষ তার বড্ড বেশি আপন। তবে শহরটা বদলে গেছে অনেক। বদলে তো যাবেই। মুহূর্তেই যেখানে মানুষ বদলে যায়, সেখানে শহর বদলাতে তিন বছর তো অনেক সময়।
ট্যাক্সি থেকে গলির মোড়ে নামলো পিউ। সরু গলিতে গাড়ি ঢুকলে আর বের হতে পারবে না। দুই মিনিট হাঁটলেই বাড়ি। ভাড়া চুকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।
সন্ধ্যেবেলায় গলিতে কেউ নেই। আশেপাশের বাড়ি থেকে উলু ধ্বনি কানে ভেসে আসছে। কতদিন এই শব্দ শোনে না পিউ! সন্ধ্যা হলে প্রদীপ জ্বালানো হয় না!
ধর্মের ব্যাপারে কোনো চাপ দেয়নি রাহুল। কখনও বলেনি, মুসলিম হতে হবে। চাইলে সে পূজো অর্চনা করতে পারত। কিন্তু করত না।
বরং রাহুলকে খুশি করার জন্য, নিজের ধর্মটাকে ত্যাগ করেছিল পিউ। মুসলিম সব আচার পালন করত আনন্দের সাথে।
আজ পিউর কেবলিই মনে হয়, সেদিন সে ভুল করেছিল। জীবনে কাউকে খুশি করার জন্য কিছু করতে নেই। বিশেষ করে যে তার মূল্যায়ন করতে পারে না।
সামনে নীপেন কাকার চায়ের দোকান। নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে লোকটা। কিন্তু তাকে এড়িয়ে যেতে চাইলো পিউ। দেখা হলেই নানান রকম প্রশ্ন করবে, যা এখন শুনতে মোটেই ভালো লাগবে না।
বিধি বাম। মুখ লুকিয়ে দু’ পা সামনে এগোতে পেছন থেকে ডাক,
‘কে যায়, আমাদের পিউ না? কাকার সাথে দেখা না করেই চলে যাচ্ছ!’
‘খুব ক্লান্ত কাকা, সকালে কথা বলি?’
দোকান থেকে বেরিয়ে পিউয়ের কাছে এগিয়ে এলো নীপেন কাকা। ভালো করে পিউয়ের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো।
‘একি হাল হয়েছে তোর মা? আমি তো ভেবেছিলাম সুখেই আছিস। সেদিন তোর মায়ের কাছে সব শুনলাম। শুনে বুকটা ফেটে গেলো।’
‘কাকা, ছাড়ো ওসব কথা। তুমি সেই আগের মতো চা বানাও? কতদির তোমার হাতের চা খাই না!’
‘তুই ঘরে যা। আমি এক্ষুনি তোর জন্য চা পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
বাড়ির চৌকাঠে পা দিতেই বুকটা ভারী হয়ে উঠলো। দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। মাও নিজেকে সামলাতে পারেনি। দু’জনের কান্নার শব্দে ভারী হয়ে উঠলো বাতাস।
‘সেই তো এলি। বাবা বেঁচে থাকতে একবার কেনো আসলি না?’
মায়ের করা প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারে না পিউ। কিইবা উত্তর দেয়ার আছে! সেদিন বাবা’র কথা শুনলে আজ হয়ত এমন পরিনতি ভোগ করতে হতো না।
পিউ বুঝতে পারে, বাবা—মা কখনও সন্তানের খারাপ চায় না। সন্তানের নেয়া সিদ্ধান্তের ভালো—মন্দ তফাৎটা বুঝতে পারে।
(চলবে….)
২| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: অনুসূচনা থাকা ভালো। অনুসূচনা না হলে মানুষ মন্দ কাজ বেশি করে।
পিউ নামটা সুন্দর দিয়েছেন।
৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৫১
করুণাধারা বলেছেন: পড়তে ভালো লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:১০
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: এ দুনিয়াতে কারো জন্যই ,যে কোন পরিস্থিতিতেই নিজের মূলের সাথে সম্পর্ক ছিনন করা উচিত নয়। বিশেষ করে প্রেমের ক্ষেত্রে এবং প্রেমের জন্যত নয়ই।
ক্রস সংযোগ ঘটলে মাঝে মাঝে হ্য়ত রোমাঞ্চ পাওয়া যায় কিন্তু তাতে জীবনে অনেক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ও তৈরী হয়। যা সামাল দেয়া বা মেনে নেয়া মুশকিল হয় । পিউ এখন নিজের হাতে রোপন করা বিষের গাছের ফল ভোগ করছে।