![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অক্সিজেনকে ভালবাসি, তাই বলে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ঘৃণা করতে পারিনা। কারণ আমি যার কাছ থেকে আমার ভালবাসাকে পাই সে তো কার্বন ডাই- অক্সাইডকেই ভালবাসে।
পাঁচ।
আজকাল নিজেকে লুকিয়ে রাখে পিউয়ের মা সুনন্দা রায়। বিশেষ করে পাড়া প্রতিবেশিদের কাছ থেকে।
পরিচিত কারও সাথে দেখা হলেই বলে উঠবে, ‘মেয়েটা ফিরে এসেছে তাই না! তাতে কি হয়েছে। ওইটুকু বয়স। বিয়ে দিয়ে দাও বউদি, সব ঠিক হয়ে যাবে।’
কথাগুলো শুনে রাগে গা জ্বলে যায় তার। মনে হয় উত্তরে দু’কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু চেপে যান তিনি।
ভাবেন, ওরা তো খারাপও কিছু বলেনি। কারও জীবন তো কারও জন্য থেমে থাকে না। যে যার মতো সুখ খুঁজে নেয়। তাহলে পিউ কেনো দুঃখের বোঝা বয়ে বেড়াবে!
মেয়েটি যখন পালিয়ে গিয়েছিল, তখন মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল সুনন্দা রায়ের। কাউকে বুঝতে দেয়নি সে ব্যথা। মায়েরা ব্যথা প্রকাশ করে না। নীরবে একা ব্যথা পুষে যায়।
তার ইচ্ছে ছিল, ধুমধাম করে এলাকার মানুষ জানিয়ে মেয়ে বিয়ে দেবে। সব মায়েদের যেমন ইচ্ছা থাকে। পদ্মায় যে সে ইচ্ছার শলীল সমাধি হবে, তার সে কখনও ভাবেনি।
ইচ্ছাটা যে কেবল সুনন্দা রায়ের ছিল তা নয়। পিউয়ের বাবারও একই রকম ইচ্ছা ছিল। প্রায়ই বলত, ‘দেখে নিও সুনন্দা, মেয়ের বিয়েতে কি করি! এলাকার মানুষ তাকিয়ে থাকবে।’
মেয়ের বিয়ের জন্য আগে টাকা জমিয়ে রেখেছিল। পেনশনের টাকাও তুলে নেবে বিয়ের সময়। একমাত্র মেয়ে বলে কথা।
‘কি ভাবছ মা?’—পিউ পেছন থেকে এসে ডাক দিয়ে বললো।
‘কিছু না। সারাদিন একা একা বসে থাকিস। যা না বাইরে থেকে ঘুরে আয়। পাশেই তো পল্লবীর বাসা। যা একদিন দেখা করে আয়। পরশু তোকে ফোন করে খুঁজেছিল। তোকে বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম।’
‘যাব মা। তার আগে চলো তোমাকে নিয়ে হেঁটে আসি। অনেক দিন তোমার সাথে হাঁটি না। মনে আছে মা, ছোটাবেলা আমাকে হাঁটিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতে। রিক্সায় যাব বললে বলতে, ওইটুকু তো পথ। রিক্সায় যাবার কি দরকার!’
‘অথচ সেই হাতটা তুই ভার্সিটিতে উঠে ছেড়েই দিলি।’
‘আমি আবার তোমার হাতটি ধরতে চাই মা।’
মায়ের হাত ধরলো পিউ। টেনে উঠিয়ে বাইরে নিয়ে এলো। মায়ের সাথে হাঁটা যে পৃথিবীর সবথেকে বড় সুখ সেটা আজ অনুভব করছে সে।
ওরা দু’জন পার্কের ভেতর হাঁটছে। এই পার্কটিতে সচারচর তেমন লোক থাকে না। হাতে গোনা কয়েকজন লোক হাঁটতে আসে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা।
‘মা তোমার ডায়াবেটিস কতো এখন?’
‘১৪’
‘এত কেনো? নিজের খেয়াল কেনো রাখছ না ? আমি আসার পর একদিনও তো হাঁটতে দেখলাম না।’
‘তোর বাবার সাথে হাঁটতে আসতাম। চলে যাওয়ার পর একা আর আসতে ইচ্ছা করে না।’
‘এখন আমি আছি মা। আমি তোমাকে প্রতিদিন হাঁটতে নিয়ে আসব।’
সুনন্দা রায় খেয়াল করলো, সামনে থেকে মিসেস মজুমদার হেঁটে আসছেন। ওনার ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পিউ রাজি ছিল না। পিউয়ের বাবাও রাজি ছিল না। বলত, মজুমদার বাবুর লাফাঙ্গা ছেলের সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে কখনও দেব না।’
ওনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। কথাবার্তার ইঙ্গিত ভালো না। ঠ্যাস মেরে কথা বলেন। দেখা হলেই নানারকম কথা বলবে। যা সহ্য করা সম্ভব নয়।
‘বউদি কেমন আছেন? অনেকদিন পর দেখা। সেই কবে দেখা…! ভুলেই গেছেন।’
মিসেস মজুমদার কথা বলার সময় থুতু ছিটে। যা দেখলে যে কারও ঘেন্না ধরে যাবে। সুনন্দা রায়ের তেমনটাই লাগছে। তবুও মুখে হাত দিয়ে বললো,
‘আমি ভালো আছি। ভুলে যাইনি। আসলে পিউয়ের বাবা চলে যাওয়ার পর সেভাবে বাইরে বের হওয়া হয় না।’
‘পিউ তুমি কেমন আছে? চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে ধকল গেছে জীবনে।’
‘না তেমন কিছু না। মা তোমরা কথা বলো। আমি সামনে এগোচ্ছি।’
‘তখন যদি আমার ছেলের সঙ্গে বিয়েটা দিতেন তাহলে আজ এই দশা হতো না। সুখেই থাকত।’
তার কথার উত্তর না দিয়ে সুনন্দা রায় বললো,
‘আমার একটু কাজ আছে। যেতে হবে। পরে কথা হবে। আপনি বাসায় আসবেন।’
পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যারা কাঁটা ঘায়ে লবনের ছিটা দিতে ভালোবাসে। এটা করে তারা পৈশাচিক আনন্দ পায়। মিসেস মজুমদার ওইরকম মানুষ।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: সব বাপের স্বপ্ন থাকে মেয়ের বিয়ে নিয়ে।
সুন্দর লেখা। লেখা খুব সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছে।