নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিন্দুর মাঝে সিন্ধু দর্শনের আশায় পথ চলি...

রিদওয়ান হাসান

শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।

রিদওয়ান হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় সংগীত কেন তুলনারহিত সংগীত

০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৩:৪২

লেখাটি শুরু করতে চাই একটা প্রশ্ন দিয়ে, আমাদের জাতীয় সংগীতে কি প্রকৃতপ্রস্তাবে কোনো দেশঘৃণাত্মক উপাদান আছে?

যদি নাই থাকে, তাহলে রবীন্দ্রনাথ রচিত 'আমার সোনার বাংলা' একটি দেশধর্মের অংশ এবং বাঙালী জাতির অস্তিত্বের একটি অংশ মানতে অসুবিধা কোথায়? খোদ প্রিন্স মাহমুদও ফেসবুকওয়ালে লিখেছেন, জাতীয় সংগীত আমাদের অস্তিত্ব।

যদিও জাতীয় সংগীতে 'বাংলাদেশ' এর স্পেসেফিকলি নামটি নেই। আর প্রিন্স মাহমুদ রচিত 'বাংলাদেশ' গানটির টাইটেল ন্যামই বাংলাদেশ। তাই বলে জাতীয় সংগীতের চেয়ে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে এই বাংলাদেশ গানটি, একথা বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কি?

যখন বিশ্বব্যাপী 'আমার সোনার বাংলা' বাজে, সবার মনে তখন বাংলাদেশের নামটি উঁকি দিয়ে যায়। গানটির শব্দও উচ্চারণ হবার প্রয়োজন হয় না, স্রেফ সুরের লহরীতেই শ্রদ্ধাবনত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় দেশপ্রেমীরা। এটি বাংলাভাষার জাদুকরী শক্তি। এমনকি ভারতের জাতীয় সংগীতও বাংলাভাষায় রচিত। ভারতীয়রা তা সংস্কৃত ভাষায় উচ্চারণ করেন। রবীন্দ্রনাথের গান ও সুর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারই ছাত্র আনন্দ সামাকুরনের 'নমো নমো শ্রীলংকা মাতা' শ্রীলংকার জাতীয় সংগীত হিসেবে বরিত। বলা হয়ে থাকে, এটিও বাংলা থেকে অনুবাদ করা হয় সিংহলি ভাষায়। এমনকি অনেকে শ্রীলংকার জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন বলে থাকেন, কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কথা হলো, নোবেল বলেছে, জাতীয় সংগীতের চেয়ে প্রিন্স মাহমুদের বাংলাদেশ গানটি বেশি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে। এখানে অনেকে নোবেলের স্রেফ রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে দাবি করছেন। উদাহরণ দিয়ে বলছেন যেন সে বলেছে, তার কাছে কাঁঠালের চেয়ে আম বেশি ভালো লাগে, তাই বলে তো জাতীয় ফল কাঁঠালকে আমের সাথে তুলনা করছে না। তাই এটা তার ব্যক্তিগত রুচির ব্যাপার।

এখানে রুচির কিছু নেই। জাতীয় সংগীত হিসেবে যেই গানটি বিশ্বব্যাপী সাদরে বরিত। সেখানে যদি দেশপ্রেম থাকে, দেশাত্মবোধক বর্ণনা থাকে, দেশঘৃণাত্মক কোনো উপাদান না থাকে, তাহলে এর সাথে অন্য কোনো সংগীত তুলনারহিত। এরপরে অন্য কোনো সংগীত বাংলাদেশকে দেশপ্রেমের চূড়া দেখাতে পারে, দেশাত্মবোধের শিখরে নিতে পারে। কিন্তু শেকড়ে যে স্বীকৃতি ও সমাদৃতার বীজ প্রোথিত, সেটা ভুলে যাওয়া বোকামি। তাই জাতীয় সংগীতের সাথে অন্য কোনো গানের তুলনা একপ্রকার ধৃষ্টতা বৈকি! নোবেল ঠিক এ জায়গাতে এসে ভুলটা করেছেন। দেখুন, মায়ের চেয়ে খালা বেশি ভালোবাসতে পারে, কিন্তু মা সে তো মা-ই।

জাতীয় সংগীত একটি দেশধর্মের মতো, একটি বিশ্বাসের মতো, এমনকি খোদ দেশের মতো। এখন যদি দেশের সাথে ভুস্বর্গ কাশ্মীরের তুলনা করেন, কেমন লাগবে, বলুন? প্রত্যেকটি জিনিস নিজ নিজ জায়গায় স্বমহিমান্বিত। এখানে রুচির কোনো দ্বিমত নেই। দেখুন, ৭ মার্চের ভাষণের পর যে তার চেয়ে বেশি জ্বালাময়ী ভাষণ দ্বিতীয়টি হয়নি, এমন নয়। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণ জনমনে এখনো সমানভাবে বরিত ও সমাদৃত, এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, এটি এর তাৎপর্যকে আরো মহিমান্বিত করেছে! ঠিক তেমনি আমাদের জাতীয় সংগীতও।

এবার বাংলাদেশ গানটির প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করুন। সেখানে একাত্তর পরবর্তী বর্ণনা বিদ্যমান। তার মানে কি, একাত্তরের আগে বাংলাদেশ ছিল না?

বাংলাদেশ শব্দটি খুঁজে পাওয়া যায় ২০শ শতাব্দীর শুরুর দিকে, যখন থেকে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'নম নম নম বাংলাদেশ মম' ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে' এর মতো দেশাত্মবোধক গানগুলোর মাধ্যমে সাধারণ পরিভাষা হিসেবে নামটি সূচিত হয়।

দ্বিতীয়ত, কোনো জাতীয় সংগীতে কখনো নেতাদের নাম উল্লেখ হয় না। বাংলাদেশ গানটিতে শেখ মুজিব, শহিদ জিয়া, ভাষানী, শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দি প্রমুখের নাম উল্লেখ রয়েছে। তাহলে কি করে প্রিন্স মাহমুদের রচিত বাংলাদেশ গানটি দেশকে বেশি রিপ্রেজেন্ট করে?

লেখাটি শেষ করবো একজন ফেসবুক বন্ধুর সাথে আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে। একজন ফেসবুক বন্ধু বললেন, জাতীয় সংগীতে কী থাকতে হয়? দেশপ্রেম তো থাকতে হয়! দেশপ্রেম কি কখনো একজন বিদেশীর বেশি হয়?

আমি বললাম : আপনি বললেন, জাতীয় সংগীতের মধ্যে দেশপ্রেম থাকতে হয়। কিন্তু আপনে তো দেশপ্রেম খুঁজতেছেন সংগীত রচয়িতার মধ্যে! কেমনে কি?

ফেসবুক বন্ধু বললেন : রচয়িতার মধ্যে প্রেম না থাকিলে কি কাব্যে প্রেম থাকিতে পারে!? এটি শুধুমাত্র একটি বিষয় বলিলাম.. আরো অনেক কিছুই তো বাকি আছে!

আমি বললাম : কাব্যে যা থাকে রচিয়তার মধ্যে তা সব সময় না-ও থাকতে পারে। যেমন, কবিতায় অনেক সময় পাষণ্ডী আচরণও দেখা দেয়, যদিও রচয়িতার মধ্যে তা থাকাটা বিধিবদ্ধ নয়।
কবি একটা প্রতীকি চিত্র দাঁড় করাতে কবিতার জন্ম দেয়, তার চরিতার্থের জানান দেয়ার জন্য নয়।


ফেসবুক বন্ধু বললেন : অনেকসময় যা হয়... তা এখানে হয়নি।

দেখুন, সে নিশ্চিতভাবে ধরেই নিয়েছে, রবীন্দ্রনাথের মধ্যে দেশপ্রেমের অনুপস্থিতি জাতীয় সংগীতকেও দেশপ্রেম থেকে মুক্ত রেখেছে। অনেক সময় এ নীতির বিধিবাম হলেও রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

আমি তার সাথে আর কথা বাড়াইনি।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৪:৪১

ভাবুকলাল বলেছেন: বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম প্রক্রিয়ার সাথে রবি ঠাকুরের রচনা করা জাতীয় সংগীত টি অবিচ্ছেদ্য ভাবে মিশে আছে , এ নিয়ে যেকোন হীন প্রচেষ্টাকেই শক্ত হাতে দমন করতে হবে

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৯:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের জাতীয় সঙ্গীত বারবার আমার চোখে জল আনে।

৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৯:১১

রাজীব নুর বলেছেন: একটা শ্রেণি অনেক আগে থেকেই জাতীয় সংগীত হিসেবে ‘সোনার বাংলা’র বিরোধিতা করে আসছে। জাতীয় সংগীত প্রথম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয় খুনি মোশতাক সরকার। মন্ত্রীপরিষদের নথি থেকে জানা যায়, ৭৫-এর ২৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় অনুযায়ী জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটিকে ‘এক মাসের মধ্যে পরিবর্তিত জাতীয় সংগীত’ প্রস্তাব করতে বলা হয়।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৫

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: ইতিহাস সত্য

৪| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১০:৪১

একে৪৭ বলেছেন: সহজভাবে নিন।
জাতীয় সংগীত, তা কেবলই একটা সংগীত, যা জাতীয় ঘোষনা করা হয়েছে, এবং আপনি আমি আবেগে মিশিয়ে নিয়েছি।
আজ যদি অন্য কোন গানকে জাতীয় সংগীত ঘোষনা করা হয়, আমাদের মেনে নিতে একটু কষ্ট হবে বৈ কি, কিন্তু গাইতে গাইতে এটাও একসময় আবেগে যায়গা করে নিবে।

মা'কে ওভাবে ভালোবাসেন বলেই 'মা' শব্দটা অত আবেগের।
যে দেশে আমাদের 'মা' কে 'ইবু' ডাকে, তাদের আবেগটা 'ইবু'র মধ্যেই। মা'কে খালা আর খালাকে 'মা' ডাকতে শুরু করলে আবেগটা খালাতেই চলে যাবে।

সংগীতটাকে সন্মান করি, সংগীতের সাথে দাড়িয়ে সন্মান জানাই, কারন রাষ্ট্রিয়ভাবে তা আমাদের জাতীয় সংগীত।
রাষ্ট্রিয় সন্মান হাড়ালে কিন্তু তা কেবলই আরেকটা সংগীত! সুর বলেন, কথা বলেন, আর রচনার প্রেক্ষাপট বা লেখকের কারনেই বলেন, একটা সংগীত কারও ভালো নাই লাগতে পারে!

০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০১

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: হ্যাঁ। আমি এটাই বলেছি। যখন যেটা জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃত হয়। তখন সেটা অন্যান্য গানের তুলনা থেকে বাইরে। যে কোনো গান ভালো না লাগা রুচির ব্যাপার। কিন্তু একটা সংগীত যখন জাতীয়তার পরিচয় বহন করে, তখন সেটায় রুচিগত দৈন্যের পরিচয় দেয়াটা বোধয় দেশ অপ্রেমের শামিল। তবে যদি জাতীয় সংগীতে দেশ ঘৃণাত্মক কোনো উপাদান থাকে, সংস্কৃতির বিকৃত উপস্থাপন থাকে, ঐতিহ্যের পরিচয় সংকটে থাকে, তাহলে সেটা প্রথমত জাতীয় সংগীত হওয়ার উপযোগী না। দ্বিতীয়ত, সেটায় রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটা বৈধ।

৫| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ২:৪০

ঢাবিয়ান বলেছেন: মাত্র ২২ বছরের নোবেল দেখছি একেবারে সারা ফেলে দিয়েছে কথাটা বলে। তবে তার কথা একেবারে অযৌক্তিক নয় , কারন জাতীয় সঙ্গীত হওয়া উচিৎ এমন গান যেটা সেই দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে। রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় কবি হিসেবেই পরিচিত এবং তার অমর সৃষ্ট '' আমার সোনার বাংলা'' মুলত পুরো বেঙ্গল প্রদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে , বাংলাদেশকে নয়।

বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসনের এই কঠিন সময়ে নোবেল এর সাহসকে স্যলুট জানাই। বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্রোহী কবি নজ্রুল ইসলামকে সে সারে গামা পায় যেভাবে রিপ্রেজেন্ট করেছে , তা এক শব্দে বলা যায় '' অতুলনীয়''।

তবে এটাও ঠিক যে জেমসের কন্ঠে গাওয়া '' বাংলাদেশ'' গানটি কখনই জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পাওয়ারও যোগ্য নয়।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১০

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: জেমসের বাংলাদেশ গানটির লিডলিরিক্স হলো, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। তারপরে বাংলার কিছু মহামনীষীদের গুণকীর্তন ছাড়া আর কিছু নাই। এ গানটি বাংলাদেশের নির্দিষ্ট একটা প্রেক্ষাপটকে সাইন করে, গোটা বাংলাদেশের আবহমান চিত্রকে তুলে ধরতে অক্ষম। পক্ষান্তরে বরীন্দ্রনাথের জাতীয় সংগীত গোটা বাঙালী জাতিকে তুলে ধরলেও সেখানে সিংহভাগ বাংলাদেশের আবহমান চিত্র উঠে আসে।

৬| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২২

ঢাবিয়ান বলেছেন: নোবেল ২২ বছরের এক রিয়েলিটি শো এর গায়ক । সে তার একটা ব্যক্তিগত অভিমত জাস্ট ব্যক্ত করেছে এর বেশি নয়। কিন্ত তার ছোট্ট একটি কমেন্ট নিয়ে এত মাতামাতি প্রমান করে যে বাঙ্গালী কি পরিমান হুজুগপ্রিয় । জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনীয় কোন বিষয় নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.