নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিন্দুর মাঝে সিন্ধু দর্শনের আশায় পথ চলি...

রিদওয়ান হাসান

শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।

রিদওয়ান হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনা ভাইরাস কি মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব?

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৩৫

প্রথমে প্রশ্ন উঠেছিল, আমেরিকা করোনা ভাইরাস তৈরি করে চীনে ছেড়ে দিয়েছে। এরপর বলা হলো, এটা চাইনিজদের অপকর্মের একটা প্রতিফল। কেউ কেউ বলেছিল, চাইনিজরা বাদুর, কুকুর, সাপের মতো নানান অখাদ্য খায় তাই এসব হচ্ছে। তারও কিছুকাল পরে চীনে গণহারে মুসলিম নিধনের জন্য ‘আল্লাহর গজব’ বলতেও শোনা গেলো এই করোনা ভাইরাসকে। সর্বশেষ বেশি শোনা যাচ্ছে এবং কয়েকটি টিআরপি-বুভুক্ষু মিডিয়া বেশ ফলাও করে প্রচার করে যাচ্ছে, এটি চাইনিজদের তৈরি বায়ো-ওয়েপন বা জৈবিক মরণাস্ত্র।

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই এই করোনা ভাইরাস আক্রমণ করেছে। আমাদের দেশেও করেছে। এই ব্লগ লেখার আগপর্যন্ত শোনা সংবাদে জানা গেছে, আক্রান্তের সংখ্যা ৪২৪, মৃতের সংখ্যা ২৭, আর সুস্থের সংখ্যাটা বললাম না। আসলে ওটা কখনো দেখাই হয় না। দেখা হোক না হোক, এই পরিসংখ্যান যে ক্রমবর্ধ্বমান, সেটা না দেখেই ধারণা করা যায়। এই পরিস্থিতিতে দেশের রাষ্ট্রীয়পর্যায়ের লোকেরা এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত। আর কিছু কিছু জনগণ ঘরে বসে বসে এই ভাইরাস নিয়ে নানা কল্পনা-জল্পনার কাহিনি বুনে যাচ্ছেন।

তাহলে এবার আসুন, একটু বিজ্ঞানের আলোকে জেনে নেয়া যাক, করোনা ভাইরাস কি মানুষের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব কিনা?

কোনোভাবেই করোনা ভাইরাস মানুষের সৃষ্ট না, হতেও পারে না। এটি প্রাকৃতিক। এই ভাইরাস মানুষের পক্ষে তৈরি প্রায় অসম্ভব, এখনও অবধি অসম্ভব চিন্তাও। করোনা ভাইরাস অনেক আগে থেকেই আছে। এটা একটা ফ্যামেলি ভাইরাস গোষ্ঠী; অর্থাৎ করোনা নামে অনেকগুলো ভাইরাস রয়েছে।

কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) আসলে তেমন অচেনা নয়; এটা একটা বড় ভাইরাস দলের সদস্য, যার নাম করোনা। এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। এক দশক আগে ২০০৩ সালে যে ‘সার্স ভাইরাস’ (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম) এর সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও ছিল এক ধরনের করোনা ভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজারের বেশি লোক। এটির উৎপত্তিস্থলও চীনের দক্ষিণাঞ্চল গুয়াংডং-এ। এ কারণে চীন যখন প্রথম এই ভাইরাসের কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানায়, তখন এর নাম রাখে, SARS-CoV-2।

যদিও এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিভাবে শুরু হয়েছিল তা এখনও নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে গবেষকদের ধারণা, সম্ভবত কোনো প্রাণী এর উৎস ছিল। প্রাণী থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি কোনো মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে, এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। ঠিক যেভাবে সার্স ভাইরাসটি প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে ঢুকেছিল।

এবার সন্দেহ উঁকি দেয় যে, তাহলে সেই মারণ ভাইরাস কি কেউ আবার ইচ্ছে করে তৈরি করছিল, জৈব অস্ত্র বানাবে বলে?

সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় এই সন্দেহ একেবারে উড়িয়ে দিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রোটিনের যে আঁকশি দিয়ে কোভিড-১৯ মানুষের দেহকোষের গ্রাহক স্থানে (রিসেপ্টর এসিই-২) অতি সুচারূভাবে নিজেকে আবদ্ধ করে, সেই প্রোটিন আঁকশি গবেষণাগারে চটজলদি তৈরি করা সম্ভব নয়। একমাত্র প্রাকৃতিক নির্বাচনেই এই সূক্ষ্ম বিবর্তন সম্ভব। তাছাড়া, কোভিড-১৯ এর মৌলিক জিনটি করোনা সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও তার বিন্যাস অন্যান্য মানব করোনা ভাইরাসের বদলে বাদুড়ের করোনা ভাইরাসের সঙ্গে বেশি মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গবেষণাগারে কেউ মারণ অস্ত্র বানাতে চাইলে সে বাদুড়ের এই নিরীহ মৌলিক জিনটিকে কেন বেছে নেবেন?

এবার তাহলে আরও একটা বিষয় সামনে আসে, বাদুড়ের সঙ্গে মানব সংস্পর্শ তো অত্যন্ত কম, তাহলে এটা কোন প্রাকৃতিক নিয়মে মানুষের দেহে লাফিয়ে এলো এবং বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় এমন ভয়ঙ্কর রূপ নিলো?

চীনের নাঙ্কাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুয়ান জোশু এবং তার সহ-গবেষকরা কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে একটা সাংঘাতিক বিষয় লক্ষ করেন। মিউটেশনে রূপান্তরিত ভাইরাসটির প্রায় ৮০ শতাংশ সার্স ভাইরাসের সঙ্গে মিলে যায়, কিন্তু এই ভাইরাসের আর একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে। এটা রিসেপ্টার এসিই-২ ছাড়াও ফিউরান নামে মানবকোষের আরেকটি প্রোটিনকে পরিবর্তিত করে সংক্রমণ জারি রাখতে পারে। এই বদগুণটি নাকি এইডস ভাইরাসেরও আছে এবং এতেই এদের মারণশক্তি আরও হাজার গুণ বেড়ে যায়। এজন্যই মূলত ভ্যাকসিন তৈরি নিয়ে যত সমস্যা।

ওষুধ বা প্রতিষেধক যা-ই হোক না কেন, তাকে এই দুটো আক্রমণ পদ্ধতিই নিষ্ক্রিয় করতে হবে। এখানেই প্রশ্ন থেকে যায় যে, তাহলে কি বাদুড় আর মানুষের মধ্যে আর একটা না-মানুষ আছে, যে এই রূপান্তর ঘটিয়েছে এবং সে এখনও অন্ধকারে? নাকি আছে বিজ্ঞানের আরো এক অন্ধকার অধ্যায় বা একটা গবেষণার দুর্ঘটনা? সে কথা এখনও আমাদের অজানা।

করোনা ভাইরাসের প্রাণভোমরা হচ্ছে একটা জিন বা আরএনএ, যা তার বংশগতি রক্ষা করে বা বংশবৃদ্ধির জন্য দায়ী। এই জিনে জৈব রাসায়নিক ভাষায় ভাইরাসের চরিত্র লেখা থাকে মাত্র চারটি অক্ষর ব্যবহার করে, এবং ধরে নিন এই জিনটার দৈর্ঘ্য ৩০,০০০ শব্দের।

বংশগতি-বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী, যদি এই অক্ষর এবং শব্দাবলি (জেনেটিক কোড) কোনোক্রমে বদলে যায়, তাহলে ভাইরাসের চরিত্রও পাল্টে যাবে। ভাইরাসের মারণশক্তি নির্ভর করে তার প্রাণভোমরার ওপর। সেটাই ভাইরাসের অবয়বের প্রোটিন বর্ম এবং যা মানবকোষের গায়ে তাকে আটকে রাখার আঁকশি তৈরি করে, যাকে বলা হয় আরবিডি প্রোটিন।

ভাইরাস আসলে একটা নির্জীব রাসায়নিক বস্তু, কিন্তু জীব কোষে থাকাকালীন সে কোষের বিপাক প্রক্রিয়া বা মেটাবলিজম ধার নিয়ে দ্রুত প্রজনন করার ক্ষমতা ধরে রাখে। এই দ্রুত প্রজননের সময় সে তার ৩০,০০০ শব্দের লেখাটাকে টুকতে গিয়ে প্রচুর বানান ভুল করে বসে, কেননা সজীব প্রাণীর মতো তার সেই লেখার কোনো প্রুফ রিডিং হয় না। এই ভুল বানানের ফলে নিয়ত তার চরিত্র পাল্টায়। একেই আমরা বিজ্ঞানের ভাষায় পরিব্যক্তি বা মিউটেশন হিসাবে চিনি বা জানি।

এই তো কিছুদিন আগেই সুইজারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানী অধ্যাপক রিচার্ড নেহের ‘দ্য সায়েন্টিস্ট’ পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে জানান, কোভিড-১৯ ভাইরাসটি বিগত ৪ মাসে প্রায় ৮ বার নিজেকে পাল্টেছে। সে যদি ১৫ দিনেরও কম সময় এভাবে নিজেকে পাল্টায়, তাহলে এই অসুখ মহামারীর রূপ নেবেই।

আজ আমরা সেই আতঙ্কেরই দোরগোড়ায়। কিন্তু এই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ভাইরাসটির প্রাণভোমরা যে প্রতিটা পরিবর্তনেই আরও ভয়াবহ বা প্রাণঘাতি হয়ে উঠবে, সে কথা কিন্তু বিজ্ঞান বলছে না।

বুদ্ধি দিয়ে ভাবলে বোঝা যাবে, সে বরং খারাপ না হয়ে উল্টো আরো ভালো মানুষও হয়ে উঠতে পারে এবং সেই সম্ভাবনার হারও বলা যেতে পারে ৫০ শতাংশ। কাজেই আতঙ্কিত হয়ে লাভ নেই। একথাও অবশ্য সত্যি যে, আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউনিটি যদি এই পরিবর্তিত ভাইরাসটা চিনতে না পারে, তাহলেও আরেক বিপদ আছে। ভাইরাসটা তখন নতুন করে উৎপাত আরম্ভ করে দেবে আবার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-এর মতে, প্রতিটি সংক্রমণ ৫-৬ দিনের মাথায় আরও ২.৬ জন লোককে সংক্রমিত করে এবং এই সূত্র ধরে চললে দশটা সংক্রমণ চক্রে, অর্থাৎ ৫০ দিনের মাথায় প্রায় ৩,৫০০ জন ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা যদি একটু চেষ্টা করে এই সংক্রমণ চক্রটিকেই ভেঙে দিতে পারি, তাহলেই বিজয় কিন্তু আমাদের মুঠোয়। বিজ্ঞানীরা সেভাবেও চেষ্টা চালাচ্ছে আরকি!

এবার শেষ কথা বলি, অ্যান্টনি ফাউচি যিনি বর্তমানে খুবই পরিচিত মুখ আমেরিকায় ও বিশ্ববাসীর কাছে। তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউ অব এলার্জী এন্ড ইনফেকষনস ডিজিসেস এর ডিরেক্টর এবং হোয়াইট হাউজ করোনাভাইরাস টাস্কফোর্স-এর একজন মেম্বার। তার ভাষায়, “গবেষণায় উঠে এসেছে মূলত শীতের সময়েই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা যেটা দেখছি আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে এবং দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে শীতের সময়েই এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। শীতের মৌসুমেই ছড়িয়েছে, এটার ভিত্তি যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে আগামী শীতের মৌসুমের আগে আমাদের প্রস্তুত থাকতেই হবে। এই কারণেই আমরা একটা ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছি। দ্রুত পরীক্ষা করে সেটাকে যাতে আগামী শীতের আগেই চূড়ান্ত করে ফেলা যায়, তার চেষ্টা চালাচ্ছি। বর্তমানে দুটি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে—একটি আমেরিকায়, আরেকটি চীনে। কিন্তু সেটা চূড়ান্ত হতে এক থেকে দেড় বছর লাগবে। চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের তোড়জোড়ও চলছে। অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া ড্রাগ ক্লোরোকুইন এবং হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের সাফল্যও নজরে রয়েছে। আমরা হয়ত এখন এই ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সফল হব। কিন্তু আগামী বছরের এই সময়ের জন্যও আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

তথ্যসূত্র :
১. নেচার পত্রিকার সাম্প্রতিক গবেষণা
২. চীনের নাঙ্কাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোয়ান জোশুর গবেষণা : পিডিএফ
৩. দ্য সাইন্টিস্ট পত্রিকায় রিচার্ড নেহের-এর গবেষণা
৪. অ্যান্টনি ফাউচির গবেষণা

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: বিজ্ঞানের কথাই যদি ধরেন, বিজ্ঞানের ছাত্র কিংবা শিক্ষক কেউই বিজ্ঞান মনস্ক নয়।

১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০৬

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: খোদ বিজ্ঞানটাই তার বৈজ্ঞানিক আচরণের ব্যাপারে বিজ্ঞানমনস্ক নয়। ছাত্র শিক্ষক তো আরো দুরকিবাত।

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৪

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: দারুণ লিখেছেন। +

১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০৬

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:০৬

নতুন বলেছেন: ++ ভালো বলেছেন।

এখন মানুষ সকালে বাংলাদেশে নাস্তা করে দুপুরে খাবার দুবাই এবং রাতের খাবার ইউরোপে খেতে পারে। এই ভ্রমন সহজ হবার ফলে সংক্রামন ছড়িয়েছে দ্রুত।

যেহেতু লক্ষন শদি` কাশির মতন তাই মানুষ বুঝতে পারেনাই।

১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:০৭

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: করোনা থিকা ভালো হইলেই মানুষ ধুমায়া কইতেছে, অমুকের সাথে ব্রেকফাস্ট করবো, তমুকের সাথে লাঞ্চ করবো, বিকালে কফি খাইব আবার আরেকজনের লগে। রাতের ডিনারটাও করবো অন্য জায়গায়। এরপরে আবার নাকি লংড্রাইভেও যাইবো।

চিন্তা কইরা দেখেন একবার তাদের খায়েশটা কি?

করোনা কি মনে করছেন এমনে এমনেই এত দ্রুত ছড়াইছে?

একটা দিনে একজন মানুষ এত জায়গায় গেলে তো করোনা ছড়াইবোই। হিসাব তো ঠিকই আছে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.