নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

সবাইকে আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ শীতের পিঠা খাওয়ার আমন্ত্রণ

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬

শীতকালের সবচেয়ে মজার খাবার কি-এই প্রশ্ন যদি সবাইকে করা হয় তবে আমার ধারণা বেশীরভাগ মানুষের উত্তর হবে ‘পিঠা’। সত্যি শীতকালের রসালো ও সুমিস্ট নানা রকমের নানা পদের পিঠার স্বাদ যে পায়নি তার জীবন বৃথা।



পিঠা আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের একটি অংশ। শীতের আগমন ঘটলেই সবার মনে পরে যায় শীতের পিঠার কথা। পিঠা ছাড়া বাংলার শীত পরিপূর্ণ হয় না। কনকনে শীতের সকালে কাঁপতে কাঁপতে পিঠা খাওয়া গ্রামের অতি পরিচিত দৃশ্য। শীতের পরিচিত এই অনুষঙ্গ পিঠার চল ইদানিং রাজধানীতেও দেখা যায়। পাড়ার মোড়ে মোড়ে নানা ধরণের পিঠার পসরা সাজিয়ে অস্থায়ী দোকান খুলে বসেন অনেকেই। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এই সব পিঠার দোকানকে অনেক নোংরা মনে হলেও এসব দোকানে কিন্তু বিক্রি-বাট্রা মোটেও কম হয় না। ছেলে-মেয়ে, বুড়ো-বুড়িসহ সকল বয়সের, সকল পেশার মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পরখ করেন ভাপা, চিতই পিঠার স্বাদ।



অনেক সময় দেখা যায় এই সব দোকান থেকেই পিঠা অর্ডার দিয়ে তৈরী করে বাড়িতে বসে পরিবারের সবাই মিলে তা মজা করে উপভোগ করেন। আসলে ব্যস্ত নাগরিক জীবনে ঘরে পিঠা বানানোর সময় মেলা ভার। বাইরের দোকানই ভরসা। তাই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ এসব পিঠার দোকানই আমাদের শহুরে জীবনের পিঠা রসনার অন্যতম ভরসা। অবশ্য এখন ঢাকায় অনেক নামী-দামী হোটেলেও হরেক রকমের শীতের পিঠা পাওয়া যায়।



যাইহোক, আমার উদ্দেশ্য কিন্তু শহুরে পিঠা নিয়ে নয়। আমি বলতে চাইছি শীতকালে আমাদের এলাকায় বা আমাদের বাড়িতে কি কি পিঠা খেতাম। চলুন একে একে মজা করে খাই নানা স্বাদের পিঠা।



দুধ পিঠাঃ



শীতকালীন পিঠার রাজা হলো দুধ পিঠা। এর স্বাদ তুলনাহীন। আমাদের বাড়িতে শীতের সিজনে মাঝে মাঝেই এই পিঠা বানানো হত। মনে পড়ে যেদিন পিঠা বানানোর কথা থাকত সেদিন মনের ভেতরে সবসময় আনন্দ কাজ করত। খেলাধুলার জন্য বাইরে গেলেও বাড়ি ফেরার একটা তীব্র তাড়া অনুভব করতাম। অবশেষে বাড়ি ফিরেই হাত-মুখ ধুয়ে সোজা পিঠা খেতে বসা। তবে দুধ পিঠা সবচেয়ে মজা লাগে শীতের সকালে। এত্ত স্বাদ! কি আর বলব। ঠান্ডায় দুধ সমেত পিঠাগুলো প্রায় জমে যেত। হাতও ঠান্ডায় জমে যাবার যোগার হত। তবু এর স্বাদ যে অমৃত! তাই ঠান্ডা ভুলে খেতে বসে যেতাম। খাওয়ার পরেই ঠকঠক করে গা কাঁপত; সাথে দাঁতে দাঁতে ঠোকাঠুকি। এরপর রোদ পোহানোর উদেশ্যে ভো দৌড়। সত্যিই সে এক মজার অভিজ্ঞতা।



গ্রামের একটা কমন ব্যাপার হলো ‘দাওয়াত খাওয়ানো বা খাওয়া’। যেদিন বাড়িতে পিঠা বানানো হত সেদিন বাড়ি লোকে গমগম করত। আমরা আত্বীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের পিঠা খাওয়ার দাওয়াত দিতাম। তাদের প্রায় সবাই অতি উতসাহ সহকারে পিঠা খেতে আসতেন। আমরা বাড়ির সবাই মিলে আনন্দের সাথে তাদের আপ্যায়ন করতাম। সবাই মিলে মজা করে পিঠা খাওয়া হত। আমরাও মাঝেই মাঝেই দাওয়াত পেতাম। সানন্দে হাজির হতাম পিঠার রস আস্বাদনে। আহা! বড়ই মধুর ছিল সেই সময়গুলো।



আর একটা কথা। নতুন বা পুরাতন জামাই আপ্যায়নের জন্য দুধ পিঠার জুড়ি নেই। যারা এখনও বিয়ে করেননি তারা এই শীতকে কাজে লাগান। ;););)

পথে-ঘাটে প্রায়ই দেখা যায় পিঠার হাড়ি হাতে আত্বীয়ের বাড়ি যাচ্ছে মানুষ।



চেখে দেখেন এক প্লেট দুধ পিঠা।



(অনেক দিন হলো চেস্টা করেও ছবি আপলোড করতে পারছি না। আপনারাই বলেন এই ধরণের পোস্টে ছবি না দিলে চলে? দয়া করে দুধ পিঠার কল্পনা করে কাজ চালিয়ে নিন)। /:)/:)



পুলি পিঠা বা কুশলি পিঠাঃ



স্থানীয় ভাষায় আমরা এটাকে বলি ‘কুশলি’ পিঠা। এটি চালের গুড়া দিয়ে তৈরী করা হয়। সুন্দর ডিজাইন করে এটা তৈরী করা হত। কুশলি পিঠার আসল মজা এর ভেতরের সুস্বাদু নারকেলের মিশ্রণ। কুড়ানো নারকেল, খেজুর গুড় ও নানা পদের মশলা দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে পরিমাণ মত জ্বাল দিয়ে তৈরী করা হত এই মিশ্রণ। কুশলি পিঠা অনেকেই তেলে ভেজে খায়। আবার দুধ পিঠার সাথে একই পাত্রে ভিজিয়ে খাওয়া হয়। দুধে মিশ্রিত কুশলি পিঠার স্বাদ একেবারে অনন্য।



ভাপা পিঠাঃ



অতি পরিচিত ও সুস্বাদু আরেকটি শীতকালীন পিঠা। ভাপা পিঠা মানেই গরম গরম খেতে হবে। ঠান্ডা ভাপা পিঠা আর পান্তা ভাত একই জিনিষ। মনে পড়ে আমার আম্মা খুব সকালে উঠেই হাতের কাজ শেষ করে ভাপা পিঠা বানাতে শুরু করতেন। একটা-দুটা হলেই আমাদের ডাক পড়ত। আমরা দৌড়ে যেতাম চুলার ধারে। খুব মজা করে খেতাম। পিঠার ঠিক মাঝখানে থাকত পাটালী গুড় মিশ্রিত কুড়ানো নারকেল। সাথে থাকত খেজুরের গুড়। আহা! সে কি স্বাদ! আমাদের বাড়িতে বেশ বড় সাইজের পিঠা বানানো হত। কাজেই একটা খেলেই পেট ভরে যেত।



ভাপা পিঠা নিয়ে গ্রামে নানান মজার ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। নতুন বা পুরাতন জামাই যাই হোক না কেন শ্যালিকা বা ভাবীরা প্রায়ই ভাপা পিঠার ভেতরে গুড়-নারকেলের বদলে মরিচের গুড়া দিয়ে জামাইকে আচ্ছামত হেনস্তা করতেন। এ নিয়ে একটা বিখ্যাত গানও আছে।



তেল পিঠা বা পুয়া পিঠাঃ



এটিও বেশ মজার ও সুস্বাদু পিঠা। শীতকাল ছাড়াও অন্যান্য সময়েও এটার প্রচলন আছে। যাইহোক, এই পিঠা তৈরী করতে কিন্তু বিশেষ দক্ষতা থাকতে হয়। এটা না ফুললে তেমন মজা নেই। দেখতেও সুন্দর লাগে না। এটা গরম গরম যেমন মজা আবার শীতের সকালেও যথেস্ট ভাল লাগে। তবে এই পিঠায় তেলের ব্যবহার বেশী বলে কেউ কেউ এড়িয়ে চলেন। তবে আমি এটিও খুব পছন্দ করি।





ছৈ পিঠা ও মুঠোঃ



আমার ধারণা এটি অনেকের কাছে অপরিচিত। বা এমনও হতে পারে এটি ভিন্ন নামে পরিচিত। আমাদের এলাকায় (পাবনা) যেটা বানানো হয় সেটার আকার অনেকটা সেমাইয়ের মত চিকন। চালের গুড়া দিয়ে তৈরী করা হয়। মনে পড়ে আমার আপারা আগের দিন রাতে এটা তৈরী করে রাখত। অনেক সময় লাগত এটি বানাতে। পরের দিন কড়া রোদে এগুলোকে উত্তমরুপে শুকানো হত; যাতে রান্নার সময় একটার সাথে অন্যটি লেগে না যায়। সন্ধ্যার দিকে রান্না হত। পাটালী গুড় মিশ্রিত দুধের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হত। এরপর ভাল করে জ্বাল দাও। কিছুক্ষণ পরে মজা করে খাও। অনেক সময় এর সাথে বেশ মোটা করে কিছু ছৈও মিশানো হত। এটাকে আমাদের এলাকায় ‘মুঠো’ বলা হয়। প্রথমে আঙ্গুল সমান একহারা একটা টুকরোকে ডান হাত দিয়ে মুঠি করে চাপ দিয়ে এটা তৈরী হত। যেজন্য এটাকে ‘মুঠো’ বলা হয়। এটিও গরম বা ঠান্ডা-দুটোই মজা।



আরো হরেক রকমের পিঠা এলাকাভেদে খাওয়া হয়। তবে আমার মনে হয় শীতকালীন পিঠা বলতে বেশীরভাগ মানুষই এইসব পিঠাকেই বোঝে।



এখন আর আগের মত করে পিঠার স্বাদ নেয়া সম্ভবপর হয় না। কারণ আমার আম্মার বয়স হয়েছে। আমরাই বরং তাঁর কস্ট হবে বিধায় আর এগুলো করতে দেই না। মা আমার ভীষণ কস্ট পায় তাঁর ছেলে-মেয়েদেরকে এসব খাওয়াতে না পেরে। তবু শীতের সিজনে বাড়ি গেলে আপাদের বদৌলতে আবার স্বাদ পাই নানান পদের পিঠার।



সবাইকে পিঠার দাওয়াত রইল।



ধন্যবাদ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:১৩

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
আপনার কথার সাথে অনেক কিছুর
সাদৃশ্য পেলাম,

কিছুদিন আগে পিঠা খেয়ে এসেছি..
এবার আপনার বাড়িতে যাবো..

কোন জেলা আর কি ই বা গ্রাম..?

ভালো থাকুন ।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০২

ইছামতির তী্রে বলেছেন: কি কি পিঠা খেলেন?
আমি এবার তেল পিঠা আর ঢাকার চিতই ছাড়া কোন পিঠাই খেতে পারলাম না। দেশের যা অবস্থা বাড়ি যাওয়াই ঝামেলা।

আমার বাড়ি কোন জেলায় তা লেখা আছে। আরেকবার কস্ট করে পড়তে হবে। হাহাহা
থানাঃ বেড়া, সদরেই বাড়ি।

আমাদের বাড়িতে আপনাকে সু-স্বাগতম।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫

অদিব বলেছেন: এবার শীতে প্রায় সব পিঠাই খাওয়া হয়েছে! আমার বাড়িও ইছামতির তীরে, পাবনা শহরে! :D :D :D পিঠাগুলোর নামও তাই খুব পরিচিত লাগলো! :-0 :-0 :-0

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আমি এবার পিঠা খেতে পারছি না।

আপনার বাড়ি পাবনা-র কোথায়? উপরে আমার বাড়ির কথা বলেছি।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.