নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা দেখেও না দেখার ভান করি, আজ থেকে চলুন তাই দেখি।

রিয়াদ আল সাহাফ

রিয়াদ আল সাহাফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ট্রাঙ্কের জীবনী

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০২

যারা হল অথবা মেসে থাকে প্রায় সবার ই সাধারণত একটা ট্রাঙ্ক থাকে। আমার দেখা প্রায় সবার ট্রাঙ্কই নতুন। কিন্তু, আমারটা অনেক পুরনো। সেটার গল্পই আজকে বলছি।
উত্ত্বরাধীকার সূত্রে ট্রাঙ্কের মালিক আমি। এর বয়স এবং ইতিহাস অভিজ্ঞতা যে এতো বেশী তা আমি নিজেই জানতাম না। বাড়ির বাইরে মেস বা হল জীবন যাপন করছি প্রায় সাত বছর হলো। এই সাতটি বছর আমার সঙ্গী এই ট্রাঙ্কটি। হল লাইফ প্রায় তিন বছর হলেও হলে আমার রুমে আব্বা এলেন এই প্রথম। আব্বা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, বাড়ি থেকে কি তুই কোন ট্রাঙ্ক নিয়ে এসেছিলি?
আমি হাত দিয়ে চৌকির নিচে দেখিয়ে দিয়ে বললাম, হ্যা, এইতো এটা।
-এটা দেখেই জিজ্ঞেস করলাম। এটা কার ছিলো জানিস?
-না। কার?
তারপর আব্বা কাহিনী বললেন। কাহিনিটা এরকম...
আব্বা এসএসসি পরীক্ষা দেন ১৯৬৬ সালে। তখন আব্বার স্কুল গাজীপুরে থাকলেও পরীক্ষার সীট পড়ে ঢাকায়। নারিন্দা গভঃ হাই স্কুলে। পরীক্ষা দিতে এসে উঠলেন সদরঘাটে এক পরিচিতের বাসায়।
সেখান থেকেই পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় ইসলামপুর থেকে ১৪ টাকায় কেনেন এই ট্রাঙ্কটি।
১৯৬৮ সালে অন্যের বাড়িতে লজিং থেকে এই ট্রাঙ্ক নিয়েই আব্বা গাজীপুর ভাওয়াল কলেজ থেকে এইসএসসি পাশ করেন।
১৯৭১ সালে আব্বা যখন ডিগ্রির ছাত্র তখন ফিরে আসেন বাড়িতে। আমাদের গ্রামে তখন বাড়িঘর জ্বালানো পোড়ানো হচ্ছে খুব। তখন আব্বা উনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সার্টিফিকেট, বাড়ির দলিলপত্র এই ট্রাঙ্কে করে রেখে আসেন আরেকটু নিরাপদ জায়গা; আব্বার মামার বাড়ি।
কিন্তু, সেখানেও একসময় পাকিস্তানীরা পৌছে গেলো। আব্বার মামা তখন মাটি খুড়ে এই ট্রাঙ্ক মাটির নিচে পুতে রাখলেন।
ট্রাঙ্কটি কয়েক মাস মাটির নিচেই ছিলো।
দেশ স্বাধীন হবার পর ট্রাঙ্কটি উদ্ধার করে নিয়ে আসা হলো আমাদের বাড়িতে।
তারপর কেটে গেলো অনেকগুলো বছর।
আব্বা পাশ করলেন।
চাকরি নিয়ে রাজশাহীতে গেলেন। ট্রাঙ্কটি পড়ে রইলো বাড়িতেই।
২০০১ সালের দিকে বড় আপু যখন অনার্স পড়তে ভাওয়াল কলেজে ভর্তি হলো তখন এই ট্রাঙ্কটিই সে নিয়ে আসলো।
বড় আপু পাশ করার পর উত্ত্বরাধীকার সূত্রে এর মালিক হলো দোয়েল আপু (আমার মেজো বোন)।
তারপর, আমি।
আব্বা লেখাপড়া করে, চাকরী জীবন শেষ করে, নিজের ডিউটি শেষ করে, এখন অবসরে আছেন। কিন্তু, ট্রাঙ্কটার ডিউটিও শেষ হয়না অবসরও আসে না।
হায়রে ১৪ টাকার ট্রাঙ্ক! পাড় করে দিলে ৪৮টি বছর, ২টি প্রজন্ম।
কে জানে, হয়তো আমার পরবর্তী প্রজন্মও এটা দিয়েই ছাত্রজীবন পাড় করে দিবে!!!
দোয়া রইলো, ট্রাঙ্ক, বেঁচে থাক আজীবন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২

সুমন কর বলেছেন: হায়রে ১৪ টাকার ট্রাঙ্ক! পাড় করে দিলে ৪৮টি বছর, ২টি প্রজন্ম।

স্মৃতিচারণ ভালো লাগল। প্লাস।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৯

রিয়াদ আল সাহাফ বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.