নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা দেখেও না দেখার ভান করি, আজ থেকে চলুন তাই দেখি।

রিয়াদ আল সাহাফ

রিয়াদ আল সাহাফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতিরিক্ত আদর ও তার কুফল

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪০

বাবা মায়ের আদরের সন্তান হাসমত। বাবার আছে অঢেল সম্পদ আর মায়ের বুক ভরা ভালোবাসা একমাত্র সন্তান হাসমতের জন্য। হাসমতের ঘর ভরা খেলনা। হাসমত একটা একটা রাগ করে ছুড়ে মারে, ভেঙ্গে চুরমার করে আর বাবামা ছেলের রাগ দেখে হাসে। একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বলে, দেখো, তোমার ছেলের রাগ দেখো। একটা খেলনা ভাঙ্গলে আরোও দশটা কিনে দেন। টাকার তো আর অভাব নেই।

পাঁচ বছর পর-

হাসমত আরেকটু বড় হল। বাবার সাথে বাহিরে যাওয়া শিখলো। রাস্তায় এটা ওটা পছন্দ হয়, কিনে না দেয়া পর্যন্ত ওটা আকড়ে দাড়িয়ে থাকে, নিজের ছোট ছোট হাতে বাবা মাকে মারে। অঢেল টাকার মালিক বাবা কোনটাই না করতে পারেন না। যতই হোক একমাত্র আদরের সন্তান। বাবামা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে।

আরোও পাঁচ বছর পর-

হাসমতের বয়স এখন দশ। বাবার কাছে বায়না ধরেছে স্মার্টফোন কেনার। কিনে না দেয়া পর্যন্ত কোন কিছু না খাওয়ার হুমকি। বাবার তো টাকার অভাব নেই, চাহিবা মাত্রই পণ্য হাজির। ছেলে মোবাইলে আঙ্গুলের জাদুতে গেম খেলে। বাবামা অবাক হয় আর একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে।

আর পাঁচ বছর পর-

আজকাল হাসমতের একটা ল্যাপটপ না হলেই না। নতুন বায়না ল্যাপটপের জন্য। প্রথম বার বাবা মা মানা করলেন। হাসমত রাগ করে দুদিন বাড়ি ছাড়া হল। বাবা মা আদরের সন্তানকে এখন আর না করলেন না। ছেলে সারারাত ইন্টারনেটে কি যেন করে, বাবা মা জিজ্ঞেস করতে সাহস পান না তবে আধুনিক যন্ত্রে ছেলের দক্ষতা দেখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসেন।

পরের বছর-

হাসমল এখন ষোলতে। হাসমতের নজর এখন মোটরসাইকেলে। সমস্যা নাই। বাবা মা কিছুতেই না করেন না। আদায় হয়ে যাবে। অনেক আদর করেন কিনা। মোটরসাইকেলের কথা বলতেই বাবা রেগে গেলেন। হাসমত ও কম যায় না। সে রেগে বাসায় টিভি, আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। না পেরে বাবা মা মোটরসাইকেল কিনে দিলেন। বাবা মা এখনোও একে অপরের দিকে তাকান তবে হাসতে পারেন না।

চার বছর পর-

এখন প্রায়ই হাসমতের দশ হাজার, বিশ হাজার টাকা লাগে। বাবা মা কিছু জিজ্ঞেস করেন না। আসলে জিজ্ঞেস করতে সাহস পান না। জিজ্ঞেস করলে রক্ত গরম চাহনি ছাড়া আর কিছুই পান না। বাবা মা একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। মুখে হাসি আসে না।

কয়েক দিন পরের কথা

হাসমত এখন একটা মাদকাসয় নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি। বাবা মা একে অপরের দিকে তাকিয়ে কাঁদেন। একে অপরকে দোষ দেন।

হাসমতেরই বা কি দোষ? বেচারা জন্মের পর যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। না পেলে জোড় করে আদায় করে নিয়েছে। সে শিখে নিয়েছে এটাই নিয়ম। ওর তো আজো এই কাজগুলো দোষের মনে হয় না। নিয়ম বদলে সে নিজেই অবাক।

এখন হাসমতের বাবা মা নিজেদের ভুল ঠিকই বুঝতে পারেন। যদি ছেলের শৈশবে একটু শাষণ আর কৈশোরে একটু ধমক দিতেন তাহলে আজ হয়তো এমন হত না। হাসমতকে মানুষ করার উপায় এখন বাবা মা শিখে গেছেন কিন্তু এখন হাসমতের লাগাম আর বাবা মায়ের হাতে নেই।

নতুন অন্য এক হাসমতের জন্ম হয় নতুন অন্য এক পরিবারে। হয়তো আরোও দশটি পরিবারে, নাহয় প্রায় সব পরিবারেই। হাসমতের গল্পের পুনরাবৃত্তি হতেই থাকে। হতেই থাকে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৪

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: মাতৃ-পিতৃ স্নেহের তুলনা নাই, কিন্তু অতি স্নেহ সন্তানের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনে............ এটাই প্রমানিত।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৫

রিয়াদ আল সাহাফ বলেছেন: ধন্যবাদ, জাকির ভাই। আজকাল আমাদের আশেপাশে ছেলেদের বখে যাওয়ার পিছনে এটাই অন্যতম প্রধান।

২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮

মেহেদী হাসান নাহিদ বলেছেন: অতিরিক্ত কোনোকিছুই ভালো না

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৬

রিয়াদ আল সাহাফ বলেছেন: মেহেদী ভাই, উপরের ঘটনাটা আমার দেখা একটা সত্য ঘতনা। আজকাল এটা খুবই কমন।

৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৪

দ্র্রীঘাংচু বলেছেন: হাসমতের গল্পের পুনরাবৃত্তি হতেই থাকে। হতেই থাকে।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৭

রিয়াদ আল সাহাফ বলেছেন: আমাদের চারপাশে এর অহরহ প্রমান আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.