![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক লোক চাকরির পরীক্ষা দিতে এসেছে। ফাইলে প্রবেশপত্র, সকল পরীক্ষার সার্টিফিকেট, মার্কশীটের সত্যায়িত ফটোকপি। কিন্তু পরীক্ষকের চোখ আটকে গেলো সত্যায়িত সিলের দিকে। তিনি সত্যায়িত সিলে বেগুনি রঙে জ্বলজ্বল করতে থাকা নামটার দিকে ইঙ্গিত করে পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি কি উনাকে চিনেন?" স্বভাবতই লোকটি বললো হ্যা। পরীক্ষার্থীকে ওই নামের লোকটার বর্ণনা জানতে চাইলে কিছু একটা মনগড়া বর্ণনা পওয়া গেলো। তখন পরীক্ষক বললেন যে সিলের নামটা আরো কারোর না, এটা স্বয়ং তিনিই।
পরবর্তীতে উনার চাকরিটা হয়েছিলো কিনা আমার জানা নেই তবে সত্যায়ন করার এরকম আর কোন বিরম্বনার কথা আমার জানা নেই। বিরম্বনা হবার কোন কারণও নেই। সত্যায়িতের সত্যতা কখনো যাচাই করা হয়না তো। একটা স্বীকারোক্তি করি?
আমার বিগত জীবনে যত কাগজপত্রের সত্যায়ন করার প্রয়োজন হয়েছে সেসবের বেশিরভাগ কিন্তু আমি নিজেই করেছি।
না, না। আমি কোন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা নই। নীলক্ষেত আমাকে সত্যায়ন করার অধিকার দিয়েছে।
তখন সবেমাত্র এইসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। দেশের ভালো ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি আবেদন করতে হবে। প্রায় প্রতিটা আবেদনেই সার্টিফিকেট, মার্কশীটের সত্যায়িত ফটোকপি সাথে একাধিক সত্যায়িত পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগে।
চিন্তা করেন একবার, আমি যদি কোন ব্যাস্ত সরকারী কর্মকর্তার কাছে দিয়ে ২০ থেকে ৩০ টা পাসপোর্ট সাইজ ছবি আর বিভিন্ন কাগজের ৫০ থেকে ৬০ টা কপি নিয়ে স্বাক্ষর করতে বলি, তিনি কি করবেন?
হয় তিনি ফিট খাবেন নাহয় কুত্তা খ্যাদানির লাঠি দিয়ে দৌড়ানি দিয়ে আমাকে ফিট খাওয়াবেন। তাই আর রিস্ক নিলাম না। নীলক্ষেত থেকে ৫০ টাকা দিয়ে একটা সিল আর ৪০ টাকা দিয়ে একটা কালির প্যাড কিনে আনলাম।
এখন মহানন্দে নিজেই সত্যায়িত করি। আর একলা মনে মনে হাসি। আমি মনে হয় খুব চালাকির পরিচয় দিলাম। সবাই সত্যায়িত করার জন্য ছোটাছুটি করুক আমার কোথাও যেতে হবে না।
হঠাৎ পাশের বাসার সুন্দরী মেয়েটা এসে জিজ্ঞেস করলো, "এই, তোমার কাছে কি সত্যায়িত করার সিল আছে?"
"আমি সিল কই পাবো? আমি কি বিসিএস ক্যাডার নাকি?"
"এজন্য ক্যাডার হতে হয়না। সিল সবার কাছেই থাকে। আমার কাছেও ছিলো। কিন্তু এখন খুজে পাচ্ছি না। তুমি গাঁধা বলে তোমার কাছে নেই।"
আমি তো অবাক। হায়! হায়! সবার কাছেই যদি সিল থাকে, সবাই যদি নিজে নিজে সত্যায়িত করে তাহলে সত্যায়িত করার প্রয়োজন কি?
একটু অপমানিত হলেও সুন্দরীকে তা বুঝতে দিলাম না। বত্রিশ পাটি দাত বিকশিত করে বললাম, "জ্বী না। আমি গাঁধা না। আমারো সিল আছে। নিয়ে আসো সাইন করে দেই।"
অতঃপর সুন্দরী গোটা চল্লিশেক কাগজের ফটোকপি নিয়ে এলো সাথে অনেকগুলো ছবি। দিয়েই চলে গেলো। বললো, "সাইন করে, সিল দিয়ে রেখো। আমি রাতে নিয়ে যাবো।"
তখন আমার অবস্থা হলো সেই বিসিএস ক্যাডারের মতো। ইচ্ছা করছিলো, কুত্তা খ্যাদানি লাঠি দিয়ে বান্দরীরে একটা দৌড়ানি দেই।
ভাগ্য ভালো আমাকে কেউ কখনো দৌড়ানি দেয়নি। তাই বান্দরীকে ক্ষমা করে দিলাম।
তারপর দেখি সবাই আমার মতো চালাক। সবার কাছেই সিল আছে। সবাই নিজের কাগজপত্র নিজে সত্যায়িত করে।
করবে না কেন? সত্যায়িত বা সত্যায়ন মানেটা কি?
মানে হলো, কাগজে যা লেখা তা সত্য আর ছবির পিছনে যার নাম লেখা এটা তিনিই, বলে স্বীকৃতি দেয়া। তাহলে যার পরিচিত সরকারী কর্মকর্তা আছেন তিনি হয়তো সত্যায়িত করতে পারবেন। তার কাজ হয়ে যাবে।
কিন্তু যার চৌদ্দ গুষ্ঠির মধ্যে কোন সরকারী অফিসার নেই, তিনি কি করবেন? তার কাগজের বা ছবির সত্যতা যাচাই করবেন কে? তাহলে কি তারা পাসপোর্ট করতে পারবেন না? তারা কি কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে না? তারা কি চাকরির আবেদন করবে না?
করবে না কেন? অবশ্যই করবে। এবং হাজারে হাজারে, লাখে লাখে হচ্ছেও।
আমি আমার পাসপোর্ট করার সময় এক শিক্ষকের কাছে সত্যায়িত করতে গেলাম। আমি তখন ফার্স্ট ইয়ারে। বড় চাকরি , করেন তেমন কেউ পরিচিত নেই। যারা আছেন তারাও হাতের কাছে নেই। স্যার বললেন, "কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনি না। আপনি বরং আপনার পরিচিত কারোও কাছ থেকে সত্যায়িত করুন।"
আমি বললাম, "স্যার, তাহলে যার পরিচিত বড় কোন অফিসার নেই তার কি পাসপোর্ট হবে না?"
স্যার এবার একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন। বললেন "তাহলে আমাকে পাসপোর্ট অফিস থেকে ফোন করলে কি বলবো?"
বললাম, "স্যার, এসব ব্যাপারে কখনো কাউকে ফোন করা হয়েছে বলে তো শুনিনি।"
স্যার বললেন, "আপনার কথায় অবশ্য যুক্তি আছে। ঠিক আছে নিয়ে আসুন। সিগনেচার করে দিচ্ছি।"
স্যার আমাকে চিনেন না তবু সাইন করলেন। আমার পাসপোর্ট হলো। ভিসা হলো। সবই হলো।
একবার ভেবে দেখুন। স্যার আর আমি, আমরা দুজনই কিন্তু যার যার অবস্থান থেকে সঠিক। তবুও আমাদের যুক্তি যেহেতু বিপরীত; আমার যুক্তি ঠিক হলে স্যার ভুল, স্যার ঠিক হলে আমি ভুল। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
মেইন সমস্যা আসলে সিস্টেমে। সত্যায়িত করার সিস্টেমটা শুধুই ফরমালিটি এবং ঝামেলা। বাস্তবে কোনই প্রয়োগ বা সত্যতা নেই। আসলে যার নামে সত্যায়িতকারীর নাম, সিল বা সিগনেচারেরই তো সত্যতা নেই।
কিছুদিন আগে এক বড় ভাই বিসিএস ক্যাডার হলেন। তিনি যখন ঢাকা আসলেন হলে নিজের রুমের সব ছোট ভাইকে নিজের নামের সিল দিলেন। বললেন, "সত্যায়িত করতে লাগবে। রেখে দে।"
আমরা যখন কোথাও আবেদন করি তখন বিভিন্ন ফোন পাই, "এই তোর কাছে কি সিল আছে?"
"না রে। হারিয়ে গেছে। ওমুকের কাছে আছে।"
জনাব ওমুক আবার তার মামার সিল ব্যবহার করে। তার মামা ক্যাডার কিনা। নিজেও সত্যায়িত করে, অন্যকেও করতে দেয়।
এভাবেই সবার বিসিএস হচ্ছে, সরকারী চাকরি হচ্ছে, ব্যাংকে চাকরি হচ্ছে।
"তাহলে সত্যায়িত করার দরকারটা কি?"
"কি আবার? নিয়ম!"
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৩৮
রিয়াদ আল সাহাফ বলেছেন: তবে আশার কথা, সরকারি পর্যায়ে এটা বাতিল করার ব্যাপারে বিবেচনা করা হচ্ছে।
২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪৬
প্রবাসী দেশী বলেছেন: " হয় তিনি ফিট খাবেন নাহয় কুত্তা খ্যাদানির লাঠি দিয়ে দৌড়ানি দিয়ে আমাকে ফিট খাওয়াবেন। তাই আর রিস্ক নিলাম না"
কথাটা যে সত্য নয় তা আপনার অভিজ্ঞতা থেকেই বললেন আপনার লেখায় তাহলে কেন লিখলেন !!!
নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তো তাই বলে।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৩৮
রিয়াদ আল সাহাফ বলেছেন: এই লাইনটাকে এতো সিরিয়াসলি নেয়ার কিচ্ছু নেই। শুধু কথায় একটু রসবোধ আনার জন্য বিরক্তির মাত্রা প্রকাশ করতে এটা ব্যবহার করেছি। আর বাস্তবে কেউ যতোই বিরক্ত হোক না কেন? দৌড়ানি নিশ্চয়ই কেউ দিবে না।
৩| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৫৪
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন:
অরিজিনাল সত্যায়ন গাছে ধরে না! চাইলেই পাওয়া যাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশে এমন অনেক গ্রাম, মহল্ল আছে যেখানে একজন ফা+র+স্ট ক্লাস অফিসার জন্ম গ্রহন করেনি। সে সমস্ত এলাকার ছেলেপেলে আশে পাশে এলাকার ১ নং অফিসার থেকে কাগজ সত্যায়ন করতে গেলে কি রকম বিড়ম্বনার স্বীবীকা হতে হয় এক মাত্র যার বংশে নাম্বার ওয়ান মামু, খালু অফিসার নেই সেই জানে।
ডিজিটাল যুগে এই সত্যায়ন সিস্টেমটি রিমুভ করা দরকার
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৪১
রিয়াদ আল সাহাফ বলেছেন: এটা রিমুভ করার জন্য আলোচনা হচ্ছে বলে শুনেছি। রিমুভ হলে আমরা এতিম সম্প্রদায়ের একটু সুবিধা হবে।
৪| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০২
আহা রুবন বলেছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি সেই কোন আদ্দিকালের করা একটা আইন আছে, কোনও ছাত্রী অন্য ছাত্রের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। সত্যায়ন বিষয়টাও তেমনি!
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৪৪
রিয়াদ আল সাহাফ বলেছেন: হ্যা। ব্রিটিশ আমলের সব নিয়মের প্রয়োগ না থাকলেও আইনগুলি বিদ্যমান। ছেলে মেয়ে কথা বললে, পঁচিশ পয়সা জরিমানা। তবে অতি প্রয়োজনে শিক্ষকের অনুমতি সাপেক্ষে শিক্ষকের সামনে কথা বলা যেত।
৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০২
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আসলেই অগুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট দিয়েছেন। এই হাস্যকর সিস্টেম টা বন্ধ করা উচিত। এখন সবার ন্যাশনাল আই ডি আছে। সব কিছুই ডিজিটালাইজড হচ্ছে ধীরে ধীরে। সার্টিফিকেট, ছবি সত্যায়িত ব্যবস্থা তুলে দেয়ার সময় এসেছে...
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৪৬
রিয়াদ আল সাহাফ বলেছেন: উন্নত দেশগুলোতে এসব প্রয়োজন হয়না। তবে কেউ খুব সচেতন হলে মেইন কপি চাইতে পারে। বাস্তবে তারও প্রয়োজন হয়না।
৬| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৫৮
মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: ভাই এক্কেরে মনের কথাটা বলসেন। বেহুদা এই সিস্টেমটার আদৌ কি দরকার আছে আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্কে ঢুকে না। যেখানে সবাই জানে যে সবাই-ই দুইনাম্বারি করে সত্যায়ন করছে। খামাখা জিনিস!
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৪৯
রিয়াদ আল সাহাফ বলেছেন: আমাদের দেশে সরকারী কাজগুলোয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ভরপুর। এটাও ঠিক তাই। শুধুই আনুষ্ঠানিকতা।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪৯
ঢাকাবাসী বলেছেন: বাংলাদেশের মত দেশেই সত্যায়িত করার সিস্টেমটা এখনো আছে। আজকাল নিলকেত টাইপ সত্যায়িতটাই বেশী হয় আবার ম্যালা 'আইএম জিপিএ ফাইভ' মার্কা নতুন অপিসাররা বেশ উৎসাহের সাথেই না বুঝেই সত্যায়িত করেন। আজব!