নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্থনীতিবিদ

অর্থনীতিবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাসে আগুন ও একপাটি জুতো

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৮


দেলোয়ার হোসেন সাইদি সাহেবের ফাঁসীর রায় হয়েছে। রায় ঘোষণার পূর্ব থেকেই এর প্রতিবাদে জামাত-শিবির মাঠে সক্রিয় ছিল। রায় ঘোষণার পর তারা সম্পূর্ণ উন্মত্ত হয়ে উঠে এবং একের পর এক লাগাতার হরতাল দিয়ে জনগণের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। সে সময় তারা যে পরিমান নাশকতা করেছে তা বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন দেশের যে কোন নাগরিককে আতঙ্কগ্রস্ত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। গাড়ি ভাংচুর, গাড়িতে আগুন দেওয়া ছিল জামাত-শিবিরের নিকট ডালভাত। হরতালের দিন বা হরতালের পূর্বের দিন বাহিরে বের হওয়া ছিল অতি সাহসিকতার কাজ। কারণ জীবনের নিরাপত্তা নেই। পুলিশ বাহিনী নিজেরাও যে খুব নিরাপদে ছিল তাও বলা যাবে না। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?

তাছাড়া হরতালের পূর্বের দিন গাড়িতে, বাসে আগুন দেওয়ার আরেকটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা চালু হয়েছে। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে বাসের ভিতরে, প্রাইভেট কারে মানুষ মৃত্যুবরণ করছে বা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তাই হরতাল সংগঠিত হওয়ার পূর্বের দিন আগুন লাগা কোন ঘটনার শিকার হতে হয় এই ভয় মাথায় নিয়ে মানুষ দারুন উৎকন্ঠার মধ্যে রাস্তায়, গাড়িতে চলাচল করে। এমনি এক সময়ে আমি মালিবাগ থেকে টঙ্গী আসার পথে আগুন লাগা এক ঘটনার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি।

জামাত-শিবির আগামী দুইদিন হরতালের ডাক দিয়েছে। হরতালের দিন বা হরতালের পূর্বের দিন আমি সাধারণত বাসা থেকে বের হইনা। তাছাড়া যে কলেজে শিক্ষকতা করি সেটি ঠিক বাসার সামনে হওয়ায় ঢাকার দিকে খুব বেশি আসতেও হয় না। কিন্তু সেদিন মালিবাগে কিছু কাজ থাকায় হরতালের পূর্বের দিন হওয়া সত্ত্বেও বাসা থেকে মালিবাগের পথে বের হলাম। সকাল থেকে রাস্তায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক ছিল। চিরাচরিত জ্যাম, বাসে হ্যান্ডেল ধরে ঝোলা, কন্ডাকটরের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কতিপয় যাত্রীর বাকবিতন্ডা ইত্যাদিও স্বাভাবিক ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ী চলাচলের সংখ্যা কমে আসতো থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি বাস স্টপেজে ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগলো। কর্মক্ষেত্র থেকে বের হওয়া মানুষদের মধ্যে চাঞ্চল্য বৃদ্ধি পেতে থাকলো এবং যে কোন প্রকারে ঘরে ফেরার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠল। তাই কোন একটি বাস আসা মাত্রই লোকজন বাসটিকে ঘিরে দাড়াত এবং ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি করে পূর্বে থেকেই ভরে আসা বাসটিতে উঠার জন্য প্রানান্ত পরিশ্রম করতো। ভাগ্যবান কয়েকজন উঠতে পারতো, বাকীরা কপাল ঠুকে আরেকটি বাসের জন্য অপেক্ষা করতো।

এই ঘর ফেরৎ মানুষদের মধ্যে আমিও একজন যে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার আবুল হোটেলের সামনে দাড়িয়ে আছে। বিকেল বেলা। রাস্তায় গাড়ি চলাচল অত্যন্ত কম। রিকশা চলছে, কিছু সিএনজি যাত্রী নিয়ে উর্ধশ্বাসে ছুটছে আর প্রাইভেট কারগুলো যেভাবে চলছে দেখে মনে হচ্ছে তাদের লেজে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কোন বাস আসছে না। দাড়িয়ে থাকা লোকজন বলাবলি করছে খিলগাঁও বৌদ্ধমন্দির এলাকায়, আরামবাগে নাকি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পরও যখন কোন বাস পেলাম না তখন আবুল হোটেলের ভিতরে গিয়ে বসলাম। সিনিয়র ওয়েটারদের সবার সাথেই পরিচয় আছে। তাদের মধ্যে একজন একটি ছেলেকে ডেকে টেবিল মুছে দিতে বললো এবং সে নিজে আমার জন্য চা নিয়ে আসলো। দীর্ঘক্ষণ হোটেলে বসলাম। আমার আশে পাশের টেবিলে পুলিশের অসংখ্য সদস্যকে অলসভাবে বসে থাকতে দেখলাম। রাস্তায় না থেকে হোটেলে অলসভাবে বসে থাকার পিছনে কী রহস্য কাজ করছে বুঝতে পারলাম না।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল। দেখলাম রাস্তায় মোটামুটি একটি দুটি করে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। তাই আর দেরী না করে হোটেল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলাম এবং অপেক্ষমান আরো যাত্রীর সাথে আমিও একজন হয়ে একটি বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরই ছালছাবিল পরিবহনের একটি বড় বাস আসলো এবং মোটামুটি অনায়াসেই বাসের ভিতরে উঠতে পারলাম। রামপুরা পার হওয়ার পরেই জানালার পাশে একটি খালি সীটে বসার সৌভাগ্য হলো। এত ভীড়ের মধ্যে থেকেও সীট পাওয়ায় আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করলাম। হরতালের পূর্বের দিন হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই বাসে আগুন লাগা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন। যাহোক রাস্তা ফাঁকা থাকায় বাসটি পূর্ণগতিতে চলতে লাগলো। রাস্তার বিপরীত পাশে শুধু রিকশা ব্যতীত অন্যকোন পরিবহন দেখতে পেলাম না। ব্যাপারটি একটু খটকা লাগলেও মেরুল বাড্ডা পার হওয়ার পরে রহস্যটা বুঝতে পারলাম। দেখলাম রাস্তার মাঝে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস দাউ দাউ করে জ্বলছে। আগুনের লেলিহান শিখা বাসের ভিতরটা পুড়িয়ে এখন জানালা দিয়ে বের হয়ে উদ্বাহু নৃত্য জুড়ে দিয়েছে। দূরে কিছু সংখ্যক মানুষ দাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাওয়া আগুনের এই সর্বগ্রাসী হুংকারকে অসহায়ের মতো অবলোকন করছে। এই দৃশ্য দেথে বাসের ভিতরে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লো। আমার পাশের যাত্রীকে বিড় বিড় করে দোয়া দুরুদ পাঠ করতে দেখলাম।

বাসের ড্রাইভার, হেলপারও এই জরুরী অবস্থাটা বুঝতে পারলো এবং যত সংক্ষেপে পারা যায় যাত্রী উঠানো নামানোর কাজটি করে তারা বাস নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলো। রাস্তা ফাঁকা থাকায় বাস বেশ দ্রুতই চলছিল এবং কোনরূপ ভয়ভীতি ছাড়াই আমরা নতুন বাজারে এসে উপস্থিত হলাম।

নতুন বাজার সিগনালে বাস থেমে দাড়ালো। আমাদের বাসটির সামনে আন্তঃজেলা পরিবহনের আরেকটি বাস ছিল। আমার সীটটি জানালার পাশে হওয়ায় বাহিরে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি 4/5 টি ছেলে আন্তঃজেলা পরিবহনের বাসটির পাশে এসে দাড়ালো। একজন পিঠের ব্যাকপ্যাক থেকে একটি ইট বের করে দড়াম করে কাচের জানালা বরাবর মারলো। কাচের জানালাটি ঝনঝন করে ভেঙ্গে পড়ল। তাদের মধ্যে আরেকজন হাতে সাদা কাগজ, কাপড় বা ঐ জাতীয় কিছুতে আগুন ধরিয়ে ভাঙ্গা জানালা গলিয়ে বাসের ভিতরে ফেলল। সম্পূর্ণ ঘটনাটি চোখের পলকে ঘটে গেল। আন্তঃজেলা বাসটিতে আগুন দিয়েই তারা আমাদের বাসটির দিকে দৌড়ে আসতে লাগলো। কাচ ভাঙ্গার শব্দে উৎসুক যাত্রীরা সামনে তাকিয়ে তাদের আগুন লাগানোর দৃশ্য দেখতে পায়। এরপর দুর্বৃত্তরা যখন আমাদের বাসটির দিকে দৌড়ে আসতে লাগলো তখনই সেই যাত্রীদের একাংশ আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো এবং বাসের সামনে থাকা যাত্রীরা এবং হেলপার ও কন্ডাকটর দৌড়ে দরজা দিয়ে বের হতে লাগলো। বাসের ড্রাইভার ইঞ্জিন বন্ধ করে তার পাশের জানালা দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়লো। এই আতঙ্ক বাসের অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যেও সংক্রমিত হলো এবং সকলে সীট থেকে উঠে দাড়িয়ে দরজার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু একটি মাত্র দরজা থাকায় এবং বাসের ভিতর অনেক যাত্রী থাকায় শুধু সামনের দিকের যাত্রীরাই হুড়োহুড়ি করে নামার সুযোগ পেল।

বাসের পিছনে থাকা যাত্রীরা যখন বুঝতে পারলো তারা দরজা দিয়ে নামতে পারবে না তখন তারা কাচের জানালা একপাশে সরিয়ে সেই ফাঁক দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়তে লাগলো। কিন্তু এক একটি জানালা দিয়ে একবারে একজনের বেশি নামতে না পারায় বাসের ভিতরে অনেক যাত্রী দাড়িয়ে আতঙ্কে চিৎকার করতে লাগলো। ফলে বাসের ভিতরে ভয়ার্ত চিৎকার, আর্তনাদ, আতঙ্ক আর বিভীষিকার এক দুর্বিষহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো।

এদিকে বাসের দিকে দৌড়ে আসা দুর্বৃত্তরা যখন দেখল দরজা, জানালা দিয়ে সবেগে মানুষ নেমে আসছে এবং তাদের চারপাশে লোক সমাগম বাড়ছে তখন তারা আর অপেক্ষা না করে তড়িৎ চম্পট দিল। কিন্তু তাদের এই চম্পট বাসের ভিতর থাকা মানুষজন খেয়াল করলো না বা বুঝতে পারলো না। তারা পূর্বের ন্যায় আগুন লাগার ভয়ে ভীত ছিল এবং কীভাবে, কত আগে বাস থেকে নামতে পারবে সেই চেষ্টায় রত ছিল। বাচ্চা কোলে এক মহিলা দরজা দিয়ে নামার জন্য পাগলের মতো ঠেলাঠেলি করছিল। তার কোলে থাকা বাচ্চা মেয়েটা হঠাৎ এই হুড়োহুড়ি দেখে ভয় পেয়ে গেল এবং তারস্বরে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল। কালো বোরখা পড়া মাঝবয়সী এক মহিলা ও আল্লাগো, নামে না ক্যা, তাড়াতাড়ি নামে না ক্যা, আইজক্যা পুইড়া মরমু, ও আল্লাগো, তুমি বাচাও ইত্যাদি বলে আর্তনাদ করতে লাগলো। লাঠি হাতে সফেদ পাঞ্জাবী পড়া শুশ্রুমন্ডিত এক বৃদ্ধ ও কামাল, ও কামাল, কই গেলিরে বলে কামাল নামে কাউকে ডাকতে লাগলো। 8/9 বছরের ছোট একটি ছেলে আব্বা, আব্বা বলে চিৎকার করতে লাগলো।

বাসের জানালা দিয়ে দ্রুত নামতে গিয়ে এক ব্যক্তি হুমড়ি খেয়ে রাস্তায় পড়লো। সে যখন উঠে দাড়ানোর চেষ্টায় রত তখন একই জানালা দিয়ে অপর এক ব্যক্তি লাফ দিয়ে প্রথম ব্যক্তির পিঠের উপর পড়লো। জানালা দিয়ে নামতে না পেরে আতঙ্কে এক ব্যক্তি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে হাতে থাকা স্টিলের টিফিনকারি বাটি দিয়ে কাচ ভেঙ্গে নিচে লাফ দিলো। কিন্তু জানালার কাচ সম্পূর্ণ ভাঙ্গা না থাকায় তার হাত, পিঠ, পা কেটে ফালাফালা হয়ে গেল। উচুঁ জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে এক ব্যক্তি তার পা মচকে ফেললো। এভাবে যে যেভাবে পারে বাস থেকে নেমে ফুটপাথে দাড়ালো।

এবার আসি এই অবস্থায় আমি কি করেছি। আমি বাসের পিছনে জানালার পাশে একটি সীটে বসে ছিলাম। যে কোন পরিস্থিতিতে আমার অনুত্তেজিত মনোভাবের কারণে বন্ধুরা আমাকে আইসকুল বলে ডাকে। (ব্যক্তিগতভাবে আমি আইসকুল সাবানটি পছন্দ করি এবং নিয়মিত ব্যবহার করি।) আমি আমার উপাধিটির সার্থকতা প্রতিপন্ন করে যখন দেখলাম দুর্বৃত্তরা বাসের উদ্দেশ্যে দৌড়ে আসলেও আগুন দিলনা তখন আতঙ্কগ্রস্ত যাত্রীদের বাস থেকে নামার কাতারে শামিল না হয়ে সীট থেকে উঠে অন্যান্য যাত্রীদের জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামার সুযোগ দিলাম এবং দু’একজনকে জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামতে সাহায্য করলাম। এভাবে অতি দ্রুতই একসময় বাসটি খালি হয়ে গেল এবং আমি রবিনসন ক্রুসোর মতো একাকী বাসটির মধ্যে একটি সীটে বসে রইলাম।

কিছু সময় পরে পরিস্থিতি নিরাপদ দেখে বাসের ড্রাইভার, হেলপার ও কন্ডাকটর ফিরে আসলো। ড্রাইভার তার সীটে বসে ইঞ্জিন স্টার্ট দিলো এবং হেলপার চিৎকার করে ফুটপাথে দাড়িয়ে থাকা যাত্রীদের ডাকতে লাগলো যে বাস আর দেরী না করে এখুনি ছেড়ে যাবে। হেলপারের ডাক শুনে যাত্রীদের মধ্যে্ পুনরায় বাসে উঠা নিয়ে দ্বিধা দেখা গেল। তবে একজন দু’জন ঠিকই আবার বাসে উঠতে লাগলো।

বাসে পুনরায় উঠা যাত্রীদের মধ্যে একজনকে দেখলাম বাসের মধ্যে ব্যাকুল হয়ে কি যেন খোঁজাখুঁজি করছে। প্রতি সীটের নিচেই সে উকি দিয়ে দেখছে এবং এভাবে দেখতে দেখতে সে আমার সীটের নিচেও উকি দিল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কী খুজছেন? সে তার হাতে থাকা একপাশ ছেড়া একটি শপিং ব্যাগ দেখিয়ে বললো, এই শপিং ব্যাগে তার একজোড়া চামড়ার স্যান্ডেল ছিল যা সে তার বাবার জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। হুড়োহুড়ি করে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে নিচে নামার পরে সে দেখে তার শপিং ব্যাগটি ছিড়ে গেছে এবং ভিতরে থাকা জুতো জোড়ার মধ্যে একপাটি জুতো হারিয়ে গেছে। ছেলেটির বলার ভঙ্গি দেখে মায়া লাগলো। ফলে তার সেই একপাটি জুতোর সন্ধানে আমিও বাসের ভিতরটা খুজে দেখতে লাগলাম। কিন্তু দুজনে মিলে অনেক খুজেও একপাটি জুতোর কোন হদিশ পেলাম না। ইতোমধ্যে বাসের ভিতরে আরো অনেক যাত্রী উঠে এসেছে এবং তারাও একপাটি জুতার বৃত্তান্ত জেনে ইতিউতি তাকাতে লাগলো সেই জুতার সন্ধানে। কিন্তু জুতার কোন খোজ পাওয়া গেল না। ছেলেটির মলিন চেহারা দেখে তাকে বললাম নিচে গিয়ে আরেকবার দেখে আসতে যে পাওয়া যায় কিনা। ছেলেটি নিচে নেমে গেল এবং বাসের নিচ, ফুটপাথে এবং আশেপাশে একপাটি জুতার খোজ করতে লাগলো। হেলপার তাকে ডেকে বললো যে বাস এখুনি ছেড়ে দেবে এবং সে যদি এই মুহুর্তে বাসে না উঠে তবে তাকে ছাড়াই বাস রওয়ানা দেবে। ছেলেটি জানালো অপর এক পাটি জুতা ছাড়া সে বাসে উঠবে না। হেলপার এই কথা শুনে ড্রাইভারকে বাস চালাতে বললে ড্রাইভার বাস ছেড়ে দিল। আমি জানালা দিয়ে যতক্ষণ পারা যায় ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। দেখলাম ছেলেটি সেই ছেড়া শপিং ব্যাগটি যার মধ্যে একপাটি জুতো আছে সেটি শক্ত করে একহাতে চেপে ধরে উদভ্রান্তের মতো এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে হারানো অপর পাটি জুতোর সন্ধান করে চলেছে।

পাঠক, আসুন আমরা এখানে কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নেই। ছেলেটির বেশভূষা দেখে বলা যায় ছেলেটি হয় নিম্ন মধ্যবিত্ত অথবা দরিদ্র স্তরের। ঢাকা শহরে সে ছোটখাট কোন কাজ করে যেখান থেকে তার খুব অল্প আয় হয়। এই আয় থেকে সে তিল তিল করে কিছু অর্থ জমিয়েছে তার পিতার জন্য। তার পিতার জুতো জোড়া ছিড়ে গেছে অনেক আগেই। নিয়মিত বিরতিতে হয়তো সেটাকে মুচির কাছে নিয়ে যেতে হয়। আর্থিক দুর্দশার কারণে নতুন একজোড়া কেনার সার্মথ্য হয়ে উঠে না। এ অবস্থায় ছেলেটির অনেক দিনের স্বপ্ন সে তার পিতাকে একজোড়া নতুন জুতো কিনে দেবে। নতুন জুতো পেয়ে আনন্দে পিতার চোখে অশ্রু এসে যাবে। অশ্রু লুকানোর জন্য সে ছেলেকে মৃদু ধমক দিয়ে বলবে এত টাকা খরচ করে জুতা আনার কি দরকার ছিল। নতুন জুতো পায়ে দিয়ে পিতা বাইরে বের হবে। সবাইকে দেখিয়ে বলবে দেখো আমার ছেলে আমার জন্য নতুন জুতো কিনে এনেছে। একজোড়া জুতার মাধ্যমে এই দরিদ্র পরিবারটিতে যে আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি হতো তা আঁচ করে বিধাতা মনে হয় অলক্ষ্যে হেসেছিলেন। তাইতো একদল দুর্বৃত্ত এসে বাবার প্রতি ছেলের এই ভালবাসার বহিঃপ্রকাশকে ধূলিসাৎ করে দিল। তাইতো সেই ছেলে এখন অশ্রুসজল চোখে উদভ্রান্তের মতো একপাটি জুতোর খোজ করে চলেছে। আর থেকে থেকে তার দীর্ঘশ্বাসে কেঁপে উঠছে সন্ধ্যার আকাশ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০১

এম আর ইকবাল বলেছেন: ওস্তাদের সাগরেদ রা জানিয়ে যাচ্ছে ওস্তাদ কেমন ছিল । আর তারই তার যোগ্যতম সাগরেদ ।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১৪

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: যারা গাড়িতে, বাসে আগুন দিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করে তারা যে দলেরই হোক না কেন, তারা জঘন্য মনোবৃত্তির একদল হিংস্র ঘাতক।

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৫

রাসেলহাসান বলেছেন: জামাত এইসব বাড়াবাড়িই করতেছে। এইসব ঠিক নয়,

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: কাদের মোল্লার রায়ের পরে তারা আবারও হরতাল দিয়ে অরাজকতার পথে হাটতে প্রবৃত্ত হচ্ছে।

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৭

মামুন রশিদ বলেছেন: ভয়ন্কর পরিস্থিতি । যাক ভালোয় ভালোয় পৌছতে পেরেছেন ।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২০

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ধন্যবাদ। কাদের মোল্লার রায়ের পর সামনেই সম্ভবত আবার হরতাল আসছে। অনুগ্রহ করে সতর্কতার সাথে চলাফেরা করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.