নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্থনীতিবিদ

অর্থনীতিবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কে দায়ী?

০৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪


মাহাবুব মফস্বলে একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করে। তার বর্তমান বয়স প্রায় 44 বছর। স্ত্রী গত হয়েছে সাত বছর হলো। এরপর থেকে এই দীর্ঘ সময়টা সে একাকীই পার করেছে। কোন সন্তানাদি না থাকায় শুধু কাজের মধ্যে ডুবে থেকেই সে সময় পার করার চেষ্টা করছে। এমনিতে কোন সমস্যা না হলেও খাওয়া দাওয়ায় মাঝে মাঝে সমস্যা হয়ে যায়। তাছাড়া কখনও কখনও সে বুকের মধ্যে এক ধরণের নিঃসঙ্গতাও অনুভব করে। মনে হয় এখন যদি পাশে কেউ থাকতো তাহলে সময়টা আরো ভালো কাটতো। প্রচুর ঘোরাঘুরি করায় তার শরীরের গঠন এখনও বেশ মজবুত। হালকা পাতলা গঠনের কারণে প্রকৃত বয়স 35 এর বেশি মনে হয় না। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা প্রায় সময়ই বিয়ের জন্য বলে। কিন্তু সে বরাবরই বিষয়টিকে এড়িয়ে যায়। পছন্দমতো কাউকে না পাওয়াটাও এর পিছনে একটা মস্ত কারণ।

২০১৬ সালের এইচ এস সি পরীক্ষা চলছে। সাংবাদিক হওয়ার কারণে মাহাবুবকে প্রায় সময়েই বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে যেতে হয়। এমনি এক কেন্দ্র পরিদর্শন করার সময় তার চোখ এক ছাত্রীর উপর আটকে যায়। মেয়েটিকে দেখে সে বুকের মধ্যে এক ধরণের দোলা অনুভব করে। মনে মনে সে নিজের উপর যথেষ্ট বিরক্ত হয়। এই বয়সে কন্যাসম এক মেয়ের প্রতি তার এমন অনুভূতি মানায় না। মেয়েটিকে শেষ এক নজর দেখে সে কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। মেয়েটি এসবের কিছুই টের পেল না। সে একমনে লিখে যাচ্ছিল। তার ভাগ্য যে ঐ এক নজরে পরিবর্তিত হয়ে গেল তা সে ঘুনাক্ষরেও টের পেল না।

মাহাবুব শহরে একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে একাকীই থাকে। এমনিতে বাড়িওয়ালারা ব্যাচেলারদের ফ্যামিলি বাসা ভাড়া দিতে রাজী না হলেও মাহাবুবের বেশ নাম ডাক থাকায় তার জন্য বাসা ভাড়া নিতে কোন সমস্যা হয় নি। বাসায় ফিরে বুয়ার রান্না করে রেখে যাওয়া ঠান্ডা খাবার খেয়ে সে নিঃশব্দে শুয়ে পড়ে। ঠান্ডা, বিস্বাদ খাবার, একাকী ঘর তাকে এতদিন কোন পীড়া দিতে না পারলেও আজকে হঠাৎ করে তার মনটা কেন যেন বিষাদে ছেয়ে গেল। কেবলই মনে হতে লাগলো আজকে যদি তার স্ত্রী পাশে থাকতো তবে কথা বলার জন্য একজন সঙ্গী পাওয়া যেত। নিজের মৃতা স্ত্রীর কথা তার খুব একটা মনে পড়ে না। পরিবর্তে ঘুরে ফিরে কেন যেন পরীক্ষার হলে দেখা সেই মেয়েটার মুখটাই চোখের সামনে ভেসে উঠে। এক সময় মেয়েটির কথা ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরেরদিন ছিল শুক্রবার। মাহাবুব সারাটা দিন ছটফট করে কাটালো। কোন কাজেই তার মন বসলো না। দিনটা কখন শেষ হবে এই প্রত্যাশা নিয়ে সে বারংবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিজের ঘাড় আর হাত ব্যথা করে ফেললো। এবং পরেরদিন সে নিজেকে তার স্বপ্নের মেয়েটির পরীক্ষার হলের কেন্দ্রের সামনে দেখতে পেয়ে খুব একটা অবাক হলো না। দুরুদুরু বুকে সে মেয়েটির কক্ষের দিকে এগিয়ে গেল। কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করার পরে মেয়েটিকে দেখে তার বুকের ভিতর যেন এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টি বয়ে যায়। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে সে হলের পরিবেশ দেখার ভান করে আস্তে আস্তে দুই সারি বেঞ্চের মাঝ দিয়ে হেটে যায় মেয়েটির দিকে। যাওয়ার পথে দু’একজনের খাতা উল্টে পাল্টে দেখে, দু’একজনকে পরীক্ষা কেমন হচ্ছে, প্রশ্ন কেমন হয়েছে এসব প্রশ্ন করে সে মেয়েটির কাছে পৌছে যায়। মেয়েটি লেখায় ব্যস্ত ছিল। মাহাবুব মেয়েটিকে বলে, দেখি তোমার অ্যাডমিট কার্ডটা দাওতো, বৃত্ত ভরাট ঠিকমতো করেছো কিনা চেক করে দেখি। মেয়েটি মাহাবুবের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের পরীক্ষার খাতা ও অ্যাডমিট কার্ডটা বাড়িয়ে ধরে। মাহাবুব বৃত্ত ভরাট চেক করার উছিলায় মেয়েটির নাম, বাবার নাম ও কলেজের নামটা মুখস্ত করে ফেলে। মেয়েটির নাম লিপি আক্তার। কলেজের নাম দেখে সে বেশ খুশী হয়। কলেজটি তার বাসা থেকে খুব দূরে নয়। আবার সেখানকার কয়েকজন শিক্ষকের সাথেও তার বেশ দহরম মহরম আছে। সর্বোপরি কলেজটি এমপিও ভুক্ত। এর অর্থ এটি স্থানীয় এমপির অধীনে পরিচালিত হয়। এমপির সাথে মাহাবুবের বেশ ভালো সম্পর্ক। এমপির তরফ থেকেই সে মেয়েটির পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে মনস্থ করে। এমপির তরফ থেকে কোন প্রস্তাব পেলে তা অমান্য করার সাহস যে মেয়েটির পরিবারের হবে না তা সে ভালোই বুঝতে পারে। সবকিছু অনুকূল ধারণা করে, আসন্ন স্ত্রী লাভের চিন্তায় তার শরীর মন পুলকিত হয়ে উঠে।

পরের কয়েকটা দিন মাহাবুবের বেশ ব্যস্ততার মধ্যে কেটে যায়। লিপির কলেজে গিয়ে সেখানকার এক শিক্ষকের সাথে আলাপ করে মাহাবুব লিপির বাসার ঠিকানা বের করে ফেলে। পরিবারটি সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে লিপি মেজ। বাবা সাধারণ চাকুরে। মাহাবুব চলমান পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পরই লিপির পরিবারে বিবাহের প্রস্তাব পাঠাতে মনস্থ করে। এর পূর্ববর্তী সময়টায় সে নিজেকে গুজিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাসায় কিছু নতুন ফার্নিচার ক্রয় করে, পুরনোগুলোর কিছু ফেলে দেয়, কিছু মেরামত করে, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনদের পুনঃবিবাহের বিষয়টা জানিয়ে রাখে। এভাবেই তার একমাস কেটে যায়।

এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ হলে মাহাবুব স্থানীয় এমপির পিএ-এর মাধ্যমে লিপির পরিবারে বিবাহের প্রস্তাব পাঠায়। লিপির বাবা মাহাবুবের বয়স বেশি বলে একটু আপত্তি করলেও তা মুখ ফুটে প্রকাশ করতে সাহস পেলেন না। লিপিও কোন আপত্তি করলো না। বস্তুত মফস্বলে ও গ্রামে মেয়েদের বেশ তাড়াতাড়িই বিয়ে হয়ে যায়। লিপিও জানতো তার যে কোন সময় বিয়ে হয়ে যাবে। তার ক্লাশমেট মেয়েদের মধ্যে বেশির ভাগেরই বিয়ে হয়ে গেছে, বাকীরাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পথে। এক শুভ দিন দেখে মাহাবুবের সাথে লিপির বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়। ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিবাহের কাজটি নির্বাহ হয়। বিয়ের কয়েক দিন পরেই মাহাবুব লিপিকে নিজ বাসায় নিয়ে আসে। সেখানে দু’জনের সংসার জীবনের সুদীর্ঘ যাত্রা শুরু হয়।

বিয়ের প্রথম কয়েক মাস মাহাবুবের স্বপ্নের মতো কেটে যায়। তার এলোমেলো জীবনটা ছকবাধা রুটিন জীবনে পরিণত হয়। বাহিরে কাজের জন্য গেলেও, দুপুরের পর পরই তার মন ছটফট করতে থাকে কখন বাসায় ফিরবে, কখন বৌয়ের হাতের রান্না খাবে। লিপিও অনুগত স্ত্রীর মতো মাহাবুবের পছন্দমতো খাবার রান্না করে স্বামীর আসার অপেক্ষা করতো। দেরী হলে মোবাইলে ফোন দিতো। মাহাবুব লিপিকে খেয়ে নিতে বলতো। এভাবে সুখে শান্তিতেই তাদের বৈবাহিক জীবন অতিবাহিত হচ্ছিল।

তবে কথায় আছে সুখ বেশিদিন সয়না। ফুলের বাগানে সাপ ঢুকতেও সময় লাগে না। মাহাবুবের সুখের জীবনেও সাপ ঢুকলো। একদিন তার পরিচিত একজনের কাছ থেকে জানতে পারলো, বিয়ের আগে লিপির জন্য তার কলেজেরই ক্লাশমেট একটা ছেলে পাগল ছিলো। বিভিন্ন সময়ে সে লিপিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে গেছে। তবে লিপি সে প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে কিনা তা ঐ পরিচিতজন বলতে পারেনি। তবে এটুকু বললো, লিপি কখনো জোরালোভাবে নাও করেনি। মাহাবুব পুরো দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেলো। হ্যাও করেনি, নাও করেনি-এটা আবার কেমন হলো? তবে কি লিপির সায় ছিলো ঐ ছেলেটির প্রস্তাবে? লিপি কি ঐ ছেলেটিকে মনে মনে পছন্দ করতো? কিন্তু মুখ ফুটে সাহস করে বলতে পারেনি, লিপি কি এখনও ঐ ছেলেটিকে পছন্দ করে? তাদের মধ্যে কি এখনও যোগাযোগ হয়? এরকম বিভিন্ন প্রশ্ন মাহাবুবকে কুড়ে কুড়ে খেতে লাগলো। বাড়ি ফিরে সে লিপিকে সরাসরি প্রশ্ন করলো, তুমি কি বিয়ের আগে কাউকে পছন্দ করতে? লিপি এরকম প্রশ্নের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলোনা। সে একটু হকচকিয়ে গেলো। তবে দৃঢ় স্বরে জানালো, বিয়ের আগে সে অন্য কাউকে পছন্দ করতোনা। মাহাবুবই তার জীবনের প্রথম পুরুষ। তারপর বললো, তুমি যখন বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলে আমার বাসায়, তখন অনেকেই না করেছিলো, কিন্তু আমি কিন্তু না করিনি, যদি আমার সাথে অন্য কারো সম্পর্ক থাকতো তবে আমি কি তোমার প্রস্তাবে রাজি হতাম? আমি তো যার সাথে সম্পর্ক থাকতো তার কথাই বাসায় বলতাম। মাহাবুব লিপির উত্তর শুনে আশ্বস্ত হলো এবং নিজের বৌকে ভুল বুঝতে পারার জন্য যারপরনাই লজ্জিত হলো।

মাহাবুব সাংবাদিক থাকায় খবর সংগ্রহের জন্য প্রায় সময়েই তাকে দূর দূরান্তে যেতে হতো। সেখান থেকে আসতে আসতে কখনও কখনও তার রাত বারোটাও বাজতো। সে সময় সে ফোন দিয়ে লিপিকে নিজের অবস্থার কথা জানাতো এবং খেয়ে নিতে বলতো। মাঝে মাঝে সে লিপির ফোন বিজি পেতো। প্রথমদিকে সে কিছু মনে করতোনা। ভাবতো লিপি হয়তোবা তার মা বা বোনের সাথে কথা বলছে। তবে যতদিন যেতে লাগলো মাহাবুবের মনে সন্দেহ দেখা দিতে লাগলো যে লিপি বুঝি সেই কলেজের ছেলেটির সাথে কথা বলছে। তার এই সন্দেহের আগুনে ঘৃতাহুতি দিলো তারই এক সহকর্মী। ঠাট্টাচ্ছলে সেই কলিগ একদিন বললো, কিহে! ঘরে জোয়ান বৌ রেখে বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছো? বৌ অন্য কারো সাথে ফস্টিনস্টি করে কিনা সে খবর রাখো? রাগ হলেও মাহাবুব সেটা প্রকাশ করলো না। শান্ত স্বরে সে বললো, আমার বৌ এমন না। সহকর্মী বললো, বিয়ের আগে কিন্তু তার একটা সম্পর্ক ছিলো। মাহাবুব মাথা নাড়লো, উহু, বিয়ের আগে লিপিকে একটা ছেলে পছন্দ করতো, কিন্ত ঐ পর্যন্তই, কোনো সম্পর্ক-টম্পর্ক ছিলো না। সহকর্মী তার কথায় অটল। বললো, খোঁজ নিয়ে দেখো, সম্পর্ক থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তুমি বাইরে বাইরে থাকো। এই সুযোগে যদি তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রাখে তুমি ধরতেই পারবে না।

কথাটা মাহাবুবকে বিদ্ধ করলো যেন। আসলেই তো। সে থাকে বাইরে বাইরে। লিপি থাকে ঘরে একা। এই সুযোগে যদি তারা পরস্পরের সাথে যোগযোগ করে, তবে কে জানতে পারবে? লিপিকে সে ফোন দিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে লিপি তখন তার মার সাথে কথা বলছিলো। মাহাবুব ফোন বিজি পেলো। কল্পনায় সে লিপিকে হেসে হেসে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলো। তার মাথায় আগুন ধরে গেলো। লিপির মোবাইলে সে ক্রমাগত ফোন দিয়েই চললো। লিপি মাহাবুবের ফোন দেখে তার মার সাথে তাড়াতাড়ি কথা শেষ করে মাহাবুবের ফোন রিসিভ করলো। হ্যালো বলতেই মাহাবুব প্রায় ধমকের সুরে জানতে চাইলো, কার সাথে এতক্ষণ কথা বলছিলে? লিপি বললো, মা’র সাথে। কিন্তু মাহাবুব তাতে শান্ত হলো না। সে রাগান্বিত স্বরে বললো, মা’র সাথে না অন্য কারো সাথে? লিপি আশ্চর্য হয়ে গেলো। সেও রাগত স্বরে বললো, অন্য কারো সাথে মানে? আমি তো মা’র সাথেই কথা বলতেছিলাম? তুমি এভাবে প্রশ্ন করছো কেন? মাহাবুব প্রায় চিৎকার করে বললো, তুমি নিশ্চয়ই কোনো ছেলের সাথে কথা বলতেছিলা? সেজন্যই আমার ফোন রিসিভ করতে তোমার দেরি হয়েছে। লিপি এরকম মিথ্যা অভিযোগে স্তব্ধ হয়ে গেলো। সেও জেদী কম না। চিৎকার করে সে বললো, আজ পর্যন্ত তুমি দেখছো আমাকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে? বিশ্বাস না হলে মাকে ফোন দাও। তাহলেই সত্য জানতে পারবে। এরকম আউল-ফাউল কথা বলবে না। মাহাবুবের রাগ চরমে উঠলো, কী! আমি আউল-ফাউল কথা বলি? দাড়া, বাসায় আসি, তোরে মজা বুঝাবো। রাগের মাথায় মাহাবুব তুই-তোকারি শুরু করে দিলো।

মাহাবুব বাসায় আসার পরে তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হলো। একপর্যায়ে সে লিপির গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো। তাদের দাম্পত্য কলহের শুরুটা হলো এখান থেকেই। এরপর থেকে তাদের মধ্যে মোবাইল নিয়ে প্রায় সময়ই ঝগড়া হতো। লিপি তার জন্য পাগল সেই ছেলেটির সাথে যোগাযোগ করেছিলো কিনা সে সম্পর্কে কোনো শক্ত প্রমান না পেয়েই মাহাবুব ক্রমাগত সন্দেহের বশে লিপিকে দোষারোপ করে যেতো। একদিন মাহাবুব সেই ছেলেটিকে তাদের বাসার কাছে ঘোরাঘুরি করতে দেখে লিপির প্রতি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো। লিপি রাগ করে একদিন তার বাবা-মার কাছে চলে গেলো। মাহাবুবও রাগ করে লিপিকে ফিরিয়ে আনার কোনো চেষ্টা করলো না। এভাবে ক্রমে ক্রমে ছয় মাস কেটে গেলো। তাদের সংসার আর জোড়া লাগলো না। বিভিন্ন বৈঠকের পর অবশেষে তাদের মধ্যে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।

এক বিকেলে মাহাবুব ডিভোর্স লেটার হাতে পেলো। এরপর নদী পার হওয়ার জন্য সে নৌকায় উঠলো। নৌকা মাঝ নদীতে আসলে তার বড় ভাই তাকে ফোন দিয়ে ডিভোর্সের সত্যতা জানতে চাইলেন। মাহাবুব অল্প কথায় ডিভোর্সের কথা জানিয়ে ফোন কেটে দিলো। তার বুকের মধ্যে কেমন যেন শূন্যতা। তবে কি তার ভুল ছিলো সবই? কেন এমন হলো? সবই কি তার দোষ? মাহাবুব তার হাতে ধরা মোবাইল ফোনটার দিকে বিতৃষ্ণ নয়নে তাকালো। তারপর মাঝির বিস্মিত দৃষ্টির সামনে সর্বশক্তি দিয়ে ফোনটা নদীতে ছুড়ে মারলো। টুপ করে ফোনটা ডুবে গেলো। খাঁ খাঁ শূন্যতা নিয়ে মাহাবুব দূরে তাকাল। কয়েকটা সাদা বক উড়ে যাচ্ছে। দিগন্তে মেঘের আভাস। বৃষ্টি আসবে মনে হয়। (শেষ)
[সত্য ঘটনা অবলম্বনে]

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৪৭

স্রাঞ্জি সে বলেছেন: ডিভোর্স শব্দটা শুনলেই কেমন জানি লাগে।

০৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৫১

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ডিভোর্স কাম্য নয়। বরং সহনশীল মনোভাব নিয়ে সংসার করাটাই মঙ্গলময়। স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া দরকার। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:২৯

সিগন্যাস বলেছেন: দানবীয় পোষ্ট।দাঁড়ান।পড়া শেষ করে আসছি

০৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৫

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: শুভেচ্ছা নিন ভাই। লিখতে লিখতে কখন যে এত বড় হয়ে গেছে টের পাইনি :-)

৩| ০৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২৫

কানিজ রিনা বলেছেন: সত্য ঘটনা হলে বলব এত বয়সে এসে কন্যা
সমতুল্য মেয়ে বিয়ে করতে কেন পিতৃত্ব জাগল
না। মেয়ের পিতা যাতে রাজী হয় সেই কারনে
ক্ষমতাবান লোকের আশ্রয় নেওয়াকে ধিক্কার
জানাই। তারপর সন্দেহ বশত আবার মেয়েটাকে
ডিভোর্স এটা কেমন পুরুষ। এখানে পুরুষরা
ভেবে দেখার বিষয় হোল কন্যা সমতুল্য একটি
মেয়েকে ক্ষমতাধরদের হাত ধরে বিবাহ করে
ডিভোর্স দিয়ে আরএক পিতাকে অসহায় করে
মেয়ে ঘরে ফিরিয়ে দেওয়া। এই বিকৃত চরিত্র
সমাজে অহরহ ঘুরে ফিরে বেড়ায়। এখানে
কি বলার আছে সাংবাদীকতার ক্ষমতা কি
পাড় পায়। ধন্যবাদ।

০৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৫

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: আপনি আমার মনের কথাগুলোই বলেছেন। এই সংসার ভাঙ্গার জন্য আমি পুরুষ চরিত্রটিকেই দায়ী করবো। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ০৬ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: কোন পত্রিকার প্রতিনিধি বলেন তো?
মফস্বলের কোনো প্রতিনিধির আর্থিক অবস্থা ভালো না।

০৬ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৪

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: মাহাবুব (ছদ্মনাম) তার নিজ জেলার স্থানীয় একটি পত্রিকার প্রতিনিধি। কোনো জাতীয় দৈনিক নয়।

৫| ০৬ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সন্দেহ জিনিসটা খুবই খারাপ। এটা সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। তবে মেয়ের পিতা কেন এত বয়স্ক বিপত্মীক ব্যক্তির সাথে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা নেই...

০৬ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৩৭

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: সন্দেহ অনেক সুন্দর সম্পর্ককেও নষ্ট করে দেয়। আর কোনো বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কাউকে অপরাধী মনে করাটাও অন্যায়। পোস্টে উল্লিখিত মাহাবুব এই অন্যায় কাজটিই করেছে। এমপির পিএ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলো। পাছে এমপির বিরাগভাজন হতে হয় এই ভয়ে মেয়ের পিতা রাজী হয়ে যায়। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ০৭ ই জুলাই, ২০১৮ ভোর ৫:২৫

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


সংসার ভাঙ্গার জন্য অসংখ্য কারণ থাকতে পারে; এর সঠিক ব্যাখ্যা শুধু তারাই বলতে পারবে। বাইরে থেকে এগুলো বুঝতে পারাটা মুশকিল। আমরা যা বলবো তাই অনুমান নির্ভর। সংসার জটিল জায়গা; এর হিসাব-নিকাশও জটিল।

০৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:২৬

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই। সংসার আসলেই জটিল জায়গা। এই জটিল জায়গায় স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই অনেক সহনশীল মনোভাব নিয়ে থাকতে হয়। পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকতে হয়। তবেই না একটা সংসার সুন্দর হয়। আমরা সবাই মিলে দোয়া করি যেন কারো সংসার না ভাঙ্গে। সবার বিবাহিত জীবনই যেন সুন্দর ও সুখী হয়।

৭| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৩৭

বলেছেন: সংসার ভাঙ্গার জন্য পুরুষের চেয়ে মহিলারা বেশী দায়ী
UK তে Bangali familyতে তাই দেখি/

১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১:২৮

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: সংসার ভাঙ্গা কাম্য নয়। প্রয়োজন সহনশীল মনোভাব। সবার সংসার টিকে থাকুক এই কামনা করি।

৮| ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:৪২

রাকু হাসান বলেছেন: খারাপ লাগলো শেষ টা পড়ে ।বিয়ের পর আগের প্রেম ভুলে যাওয়াই উচিত । মাহবুব কি সেই একাকিত্বের জীবন পার করবে !

১৩ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০০

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ঠিক বলেছেন। আর মাহাবুবেরও কিছু দোষ আছে। সমাপ্তিটা আসলেই দুঃখজনক। সংসার ভাঙ্গা কাম্য নয়। সবার সংসার যেন সুখে শান্তিতে থাকুক এই দোয়া করি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই। শুভকামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.