নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভবোঘুরে বাউল

উদ্ভট অনুর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত অহেতুক উৎকট কষ্ট কল্পনামাত্র!

ভবোঘুরে বাউল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমর একুশ Vs সামাজিক অবচেতন

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৬

আমি গর্বিত যে একুশের প্রথম প্রহরে জাতীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করে ভাষাশহীদ সকল ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী যখন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তারপর একে একে বিভিন্ন দলীয় নেতা-নেত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর পুস্প অর্পণ পর্ব চলতে থাকে।

বাংলা ভাষার প্রতি ও ভাষাশহীদদের প্রতি মানুষের অপার শ্রদ্ধাবোধ আর ভালবাসা দেখে খুব গর্ব অনুভব করছিলাম। সাথে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গানটি শুনে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান ব্যক্তি মনে হতে লাগল। কারণ আমি বাঙ্গালী। ভাবছিলাম আমার ভাইয়েরা কতটা ভালবাসা হৃদয়ে ধারণ করলে মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির জন্য জীবন বিসর্জন দিয়ে গেছেন।

তবে একটা বিষয় দেখে খুব অবাক হলাম যে, প্রধানমন্ত্রী ও বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিগণ যখন পুস্প অর্পণ করে গেছেন তারপর থেকে যত নেতা-নেত্রী বা সংগঠন এসেছিল প্রত্যেকে নিজ নিজ দলীয় বা সংগঠনের ব্যানার নিয়ে এসেছিল। মাইকে বার বার তখন ঘোষণা করা হচ্ছিল “অমুক থানার তমুক দল আপনারা আপনাদের ব্যানার গুটিয়ে ফেলুন, অমুক সংগঠনের ব্যানার আমরা দেখতে পাচ্ছি আপনারা আপনাদের ব্যানার গুটিয়ে ফেলুন, এবারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন অমুক, এবারে তমুক!”

আমার ধারনা মতে আমার সোনার বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত যত বড় বড় আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে আর যেসব সংগ্রামে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করতে পেরেছি কোন সংগ্রামে দলীয় ব্যানার ব্যাবহারের প্রয়োজন হয়নি। দল, মত, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা একটা ব্যানারের নিচে অবস্থান করে সংগ্রাম করেছি। আর সেই ব্যানারের নাম ছিল “বাংলাদেশ”। তবে আজ আমাদের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ব্যানার লাগবে কেন? রফিক, সফিক, সালাম, বরকত সহ যত শহীদ ভাইয়েরা আমাদের কল্যাণের জন্য জীবন দিয়েছেন তারা কি এটা কখনো চেয়েছিলেন যে পরবর্তী প্রজন্ম যখন তাদের শ্রদ্ধা জানাতে আসবে তখন যেন কে কোন দল করছে বা কোন সংগঠন করছে সেটা তাদের প্রদর্শন করে?

এবার একটু আসি অন্য প্রসঙ্গে। রাত কেটে গেল অতঃপর দিনের আগমন। দিনের বেলা শহীদ মিনারে বিশাল জনতার ভিড়। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ শহীদ মিনারে এসেছে শহীদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেন পা ফেলার সামান্যতম জায়গাও নেই। এতো মানুষের শ্রদ্ধাভক্তি আসলেই অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু বিপত্তি অন্য জায়গায়। আমার কাছে মনে হল একুশে ফেব্রুয়ারি সম্ভবত শহীদ দিবস বা শোক দিবস না। ওই দিন সম্ভবত কোন মেলা টেলা হচ্ছিল শহীদ মিনারে আর উৎসুক জনতা (অধিকাংশ কপোত-কপোতী) হাসিমুখে একে অন্যের হাত ধরে মেলা দেখতে যাচ্ছিলো। অনেক আনন্দ তাদের মনে। শহীদ মিনারে গিয়ে সেলফি তুলতে হবে আর তা ফেইসবুকে আপলোড দিতে তারা অনেক বেশি ব্যাতিব্যাস্ত। অনেকে আবার ক্যামেরাম্যান সহ ফটোশুট করতে ব্যাস্ত। কি আজব দৃশ্য।

বিশ্ব আজ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য যতটুকু না জানে তার থেকে বেশি জানে মাতৃভাষা বাংলার জন্য আমাদের ত্যাগের মহিমার কথা। আর এই ত্যাগের কথা স্মরণ করে সমগ্র বিশ্ব এই দিনটি আন্তর্জাতিক ভাবে পালন করে এমনকি বিশ্বের বহু দেশে এখন শহীদ মিনার আছে। আর এই দিনে অনেক বিদেশীও শহীদ মিনারে গিয়ে আমার ভাইদের শ্রদ্ধা জানাতে মাথা নত করে শহীদ মিনারের সামনে। আর সেখানে আমরা গর্বিত হয়েও নির্বোধের ন্যায় কাজ করতে কোন লজ্জা পাইনা। ভাষা আন্দোলনের দিন বাংলা কত সন, কত তারিখ, কি বার, কোন সময় ছিল আমরা হয়তো ৯৫ ভাগ বাঙ্গালী সে সম্পর্কে অজ্ঞাত। বাঙ্গালীর এই অজ্ঞাত স্বভাব দূর হোক এই প্রত্যাশা আমার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.