![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাষা হচ্ছে মানুষের নিজেকে প্রকাশ করার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। আবার সবচেয়ে কঠিন মাধ্যম ও বটে। কারন আলাপচারিতায় দু’জনের ভাষা একই হওয়া নিতান্তই প্রয়োজনীয়। অন্যথায় নিজেদের বানরের জাত ভাই প্রমান করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।
এত কথা অবতারনা করার কারন হচ্ছে বর্তমানে এই ভাষা জিনিসটা আমাদের খুবই ভোগাচ্ছে। মাতৃভাষায় পূর্ন দক্ষতা এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও একটি আর্ন্তজাতিক ভাষায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা না থাকার মূল্য দিতে হচ্ছে অনেককে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা একটি বিদেশী ভাষা শেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। একবারও মূল্যায়নের চেষ্টা না করে যে তার বাস্তব সুফল কতখানি।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফল একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে ফেল করার বিষয় হিসেবে ইংরেজি সবার আগে আছে। বিটিভি’র কল্যাণে সংসদে উত্থাপিত বিলের নিষ্পত্তির দৃশ্য সবাই দেখে থাকবেন। সংসদ সদস্যরা গলা ফাটিয়ে হ্যা / না বলেন। আর কিসের ভিত্তিতে জানিনা স্পীকার ঘোষনা দেন যে হ্যা কিংবা না জয়ী হয়েছে। তবে প্রতিক্ষেত্রেই এটা বলেন,“আমার মনে হয় হ্যা(/ না) জয়যুক্ত হয়েছে।” দেখুন তবে আমাদের ১৪ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে স্পীকারের মনে হওয়ার উপর , কোন গ্রহনযোগ্য পদ্ধতির দ্বারা নয়। এখানে সংসদ বিষয়ে কথা বলা এই কারনে যে দেশের শিক্ষাবিদরা নিশ্চয় সংসদ সদস্যদের মত অর্বাচীন নন। তারা রীতিমত পি.এইচ.ডি করা তাও আবার সরকারি টাকায় এবং অধিকাংশক্ষেত্রে বিদেশ হতে। অন্তত তাদের তো এটা খেয়াল করা উচিৎ যে শুধুমাত্র একটি বিদেশি ভাষায় ফেল করার জন্য অনেকের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
আবার অনেকে ব্যর্থতার জ্বালা সইতে না পেরে আত্নঘাতী হচ্ছে। মানুষের চাহিদার ক্রমটা এরকম : বেচে থাকা, অন্ন ,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি। কিন্তু শিক্ষার জন্য যখন জীবন বিপন্ন তখন শিক্ষার দরকার কি? এরকম প্রশ্ন কিন্তু করা যেতেই পারে।
জ্ঞান অর্জনের জন্য ভাষা একটি শক্তিশালী মাধ্যম। কিন্তু একটি বিশেষ ভাষা জানার উপর জ্ঞানের পরিধি নির্ভর করে না।
আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নয়নের জন্য ইংরেজি একমাত্র মাধ্যম নয়। যদি তাই হত ফ্রান্সে রেঁনেসা হত না আর আজকের এই শিল্পোন্নত পৃথিবী ও থাকত না। আর ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান এবং সাউথ কোরিয়া কিংবা আজকের চায়নার মত দেশগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এত উন্নত অবস্থানে থাকত না। কারন এই দেশগুলোর সবাই নিজেদের মাতৃভাষাতেই জ্ঞান অর্জন ও তা বাস্তবায়ন করছে। আর আমরা ইংরেজি শিক্ষাকে সাফল্য লাভের অব্যর্থ উপায় মনে করে এর সাধনা করে চলেছি।
যখন সমগ্র বিশ্ব সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করে তখন আমরা ভূল শিক্ষানীতির খপ্পরে পড়ে বেশ দ্রুতগতিতেই পিছনের দিকে দৌড়ে চলেছি। এর থেকে মুক্তির উপায় কি? সবার আগে যা করা জরুরি তা হল যে ডালের উপর বসে আছি তা কাটা বন্ধ করা । তারপর মূল্যায়ন করা দরকার সামগ্রিক পরিস্থিতি। মাধ্যমিক ও উচ্চ- মাধ্যমিক এবং সেই সাথে আজকের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল বিপর্যয়ের একটি বড় কারন ইংরেজি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় অন্য সব বিষয়ে পাশ করলেও ইংরেজিতে ফেল করছে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী। এই ফলাফল বিপর্যয়ের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব অতি সহজেই। আর তা হলো ইংরেজি শিক্ষাকে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিয়ে। এর বিপরীতে জীবনমুখী বিভিন্ন বিষয়কে পাঠ্যক্রমে অর্ন্তভুক্ত করে। ইংরেজি , আরবি সহ সব ভাষা শিক্ষাকে পাঠ্যক্রমের বাইরে রাখতে হবে।
তাহলে প্রশ্ন হতে পারে এসব আর্ন্তজাতিক ভাষা জানা না থাকলে বর্তমান যুগে আমরা টিকে থাকব কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র চালু করতে হবে। যেখানে ইংরেজি , আরবি সহ অন্যান্য ভাষা শেখার ব্যবস্থা থাকবে। যার যার দরকার সে তার প্রয়োজন মত ভাষাটি শিখে নেবে। এছাড়া বাংলা একাডেমির মাধ্যমে সাহিত্য থেকে শুরু করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উচ্চ শিক্ষার বইপত্র বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ভাষা হতে
বাংলায় অনুবাদ করতে হবে। এর ফলে একদিকে যেমন বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হবে অন্যদিকে জ্ঞানার্জনও হবে সহজতর ।
©somewhere in net ltd.